এই মুহূর্তে আইপিএলের বয়স ১২। প্রতি মুহূর্তে পরিবর্তন হয়েছে আইপিএলের নায়ক। এই ক’বছরে ভারতবাসী সহ সমগ্র বিশ্বের ক্রিকেট ফ্যানরা দেখেছে বেশ কিছু অবিস্মরণীয় ইনিংস। দেখে নেওয়া যাক আইপিএল তারকাদের সেরা দশ ইনিংস।
১. ব্রেন্ডন ম্যাকুলাম ( ১৫৮* বনাম রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালোর) – ২০০৮ এর ১৮ ই এপ্রিল। আইপিএলের প্রথম ম্যাচে মুখোমুখি হয় কেকেআর ও ব্যাঙ্গালোর। গাঙ্গুলীর অধিনায়কত্বে কেকেআর প্রথমে টসে জিতে ব্যাট করতে নামে। মাত্র ৭৩ বলে ১৫৮ রানের ঝড়ের ইনিংস দেখা যায় ম্যাকুলামের থেকে। বলা যায় প্রথম ম্যাচেই আইপিএলের সংজ্ঞা বলে দিয়েছিলেন ম্যাকুলাম। সমগ্র বিশ্ব সেদিন দেখেছিল এক অতিমানবীয় ইনিংস। ১০ টি চার ও ১৩ টি ছয়ে সমৃদ্ধ এই ১৫৮ রান বহুদিন পর্যন্ত আইপিএলের ইতিহাসে ব্যাক্তিগত ভাবে সর্বোচ্চ রান হিসাবে সংগৃহীত ছিলো।
২. ক্রিস গেইল ( ১৭৫* বনাম পুনে ওয়ারিয়ার্স ) – ২০১৩ এর ২৩ শে এপ্রিল। টি টোয়েন্টি ফরমাটের ক্রিকেটে ক্রিস গেইল প্রথমের দিকেই অবস্হান করে। পুনে ওয়ারিয়ার্সের বিরুদ্ধে গেইলের এই ইনিংস কার্যত বোলার ও পুনে সমর্থকদের মনে বিভীষিকা এনে দিয়েছিল। মাত্র ৬৬ বলে গেইল ১৭৫ রান করেছিলেন। ১৩ টি চার ও ১৭ টি ছয় সমৃদ্ধ এই ইনিংসে গেইলের স্টাইক রেট ছিল ২৬৫.১৫। আইপিএলের ইতিহাসে ব্যাক্তিগত সর্বোচ্চ রান হিসাবে এটি এখনও বর্তমান। কোনও দিন কি ভাঙতে দেখা যাবে গেইলের এই রেকর্ড?
বীরেদ্র সহবাগ
৩. বীরেন্দ্র সহবাগ ( ১১৯* বনাম ডেকান চার্জাস) – ২০১১ সালের ৫ই মে। ডেকান বনাম দিল্লীর খেলায় প্রথমে ব্যাট করতে নেমে ২০ ওভারে ১৭৫ রান তোলে ডেকান চার্জাস। ব্যাট করতে নেমে মাত্র ২৫ রানে ৩ উইকেট খুইয়ে চাপে পড়ে যায় দিল্লী। সেই মুহূর্তে দলের হাল ধরেন ক্যাপ্টেন সহবাগ। ইশান্ত শর্মা, ডেল স্টেইন সমৃদ্ধ বোলিং লাইনাপের বিরুদ্ধে ১১৯ রানের এক অসাধারণ ইনিংস খেলেন সহবাগ। ১৩ টি চার ও ৬ টি ছয়ের এই ইনিংসে সহবাগের স্ট্রাইক রেট ছিলো ২১২.৫০। আইপিএলের ইতিহাসে এটি একটি স্মরণীয় ইনিংস।
৪. বিরাট কোহলি ( ১০৯ বনাম গুজরাট লায়ন্স ) – ২০১৬ সালের ১৪ ই মে। গুজরাট লায়ন্সের বিরুদ্ধে শুরুটা ধীরে করেছিলেন কোহলি। কিন্তু পরে অসাধারণ খেলেছিলেন এবিডির সাথে পার্টনারশিপে। মাত্র ৫৫ বলে ১০৯ রান সম্পন্ন করেছিলেন কোহলি। ৫ টি চার ও ৮ টি ছয়ের সমন্বয়ে তার এই অসাধারণ ইনিংসটি খেলেছিলেন কোহলি। আইপিএলের ইতিহাসে এই ইনিংস চিরস্মরণীয় হয়ে আজীবন থাকবে।
৫. বীরেন্দ্র সহবাগ ( ১২২* বনাম চেন্নাই সুপার কিংস) – পাঞ্জাব ও চেন্নাইয়ের এই ম্যাচ আইপিএলের ইতিহাসে ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ। এ বছর প্রথম পাঞ্জাবে যোগ দিয়েছিলেন বীরেন্দ্র সহবাগ। শুরুর দিক থেকে কিছুটা যেন ফর্মে ছিলেন না তিনি। এই ম্যাচে সহবাগ চেন্নাইয়ের বিরুদ্ধে মাত্র ৫৮ বলে ১২২ রান করেছিলেন। ১২ টি চার ও ৮ টি ছয় সমৃদ্ধ এই ইনিংসে সহবাগের স্টাইক রেট ছিলো ২১০.৩৪।
৬. শেন ওয়াটসন ( ১১৭* বনাম হায়দ্রাবাদ) – আইপিএল ফাইনালের ইতিহাসে এখনও পর্যন্ত ব্যাক্তিগত সর্বোচ্চ বেশী রানের রেকর্ডটি করেছেন শেন ওয়াটসন। প্রথমে ব্যাট করতে নেমে চেন্নাইয়ের বিরুদ্ধে ১৭৯ রানের লক্ষ রাখে হায়দ্রাবাদ। ব্যাট করতে নেমে শেন ওয়াটসন খেলাটা ধরতে একটু সময় নেন। এরপর তিনি ৫৭ বলে ১১৭ রানের একটি ঝড় তৈরী করেন। ১১ টি চার ও ৮ টি ছয় সমৃদ্ধ এই ইনিংসে ওয়াটসনের স্ট্রাইক রেট ছিলো ২০৫.২৬। ওয়াটসনের এই ইনিংসের ফলে সে বছর আইপিএল জেতে চেন্নাই।
৭. এ বি ডেভিলিয়ার্স ( ১২৯* বনাম গুজরাট লায়ন্স) – ২০১৬ সালের ১৪ ই মে। ব্যাঙ্গালোর বনাম গুজরাট খেলায় সেদিন বিরাট কোহলির সাথে এ বি ডেভিলিয়ার্সের পার্টনারশিপ ব্যাঙ্গালোরকে জয় নিশ্চিত করে দিয়েছিলো। মাত্র ৫২ বলে ১২৯ রান করেছিলেন এ বি। ১০ টি চার এবং ১২ টি ছয় সমৃদ্ধ এই ইনিংসে এ বি-র স্ট্রাইক রেট ছিলো ২৪৮.০৭।
৮. ডেভিড মিলার ( ১০১* বনাম রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালোর) – গেইল, পূজারা, এ বি-র অসাধারণ ইনিংসয়ের পরে ব্যাঙ্গালোর ২০ ওভারে ১৯০ রান করে। অপরদিকে ব্যাট করতে নেমে ১০ ওভারের মধ্যেই পাঞ্জাব ৪ উইকেট হারিয়ে মাত্র ৬৪ রান তোলে। এ অবস্হা থেকে পাঞ্জাবের হাল ধরেন মিলার। মাত্র ৩৮ বলে ১০১ রান করেন তিনি। ৮ টি চার ও ৭ টি ছয়ের ইনিংসে মিলারের স্ট্রাইক রেট ছিলো ২৬৫.৭৮।
৯. সুরেশ রায়না ( ৮৭ বনাম কিংস ইলেভেন পাঞ্জাব) – ২২৭ রানের পাহাড়ের বিরুদ্ধে চেন্নাই ব্যাটিংয়ে নামলে দ্বিতীয় বলেই তাদের প্রথম উইকেট চলে যায়। সহবাগের সেই বিধ্বংসী ইনিংসের পরে ক্রিকেট ভক্তরা দেখেছিলেন রায়নাকে। মাত্র ২৫ বলের বিনিময়ে ৮৭ রানের অসাধারণ ইনিংসটি খেলেছিলেন রায়না। ১২ টি চার এবং ৬ টি ছয় সমৃদ্ধ এই ইনিংসে রায়নার স্ট্রাইক রেট ছিলো ৩৪৮। এই ম্যাচ চেন্নাই জিততে না পারলেও আপামর ক্রিকেট ভক্তদের কাছে রায়নার এই ইনিংস স্বর্ণখচিত থাকবে।
১০. এ বি ডেভিলিয়ার্স ( ৪৭ বনাম সানরাইজার্স হায়দ্রাবাদ) – হায়দ্রাবাদের বিরুদ্ধে এই ম্যাচে কোহলির দলকে জিততে হলে ১৮ বলে ৩৮ করতে হতো। সে মুহুর্তে স্বদেশীয় ডেল স্টেইনের ওভারে এ বি ২৩ রান তোলেন। এক ওভার বাকি থাকতেই এই ম্যাচ জিতে যায় ব্যাঙ্গালোর। সেঞ্চুরি না হলেও এ বি -র এই ৪৮ রানের গুরুত্ব অনেক বেশি ছিলো। ৫ টি চার ও ৩ টি ছয় সমৃদ্ধ এই ইনিংসে এ বি র স্ট্রাইক রেট ছিলো ২৪৭.৪৬।