অভিনয় জগত! এই কথাটির মধ্যে অনেক মানুষের স্বপ্ন লুকিয়ে থাকে। কি! হল হকচকিয়ে হয়ে গেলেন নাকি? বুঝে উঠতে পারছেন না কি বলতে চাইছি? তবে বুঝিয়ে বলি। ছোটবেলা থেকেই অনেকের স্বপ্ন থাকে সিনেমার মতো গ্ল্যামারাস জগতে পা রাখার।
বলিউড কিংবা টলিউড তাদের এই স্বপ্নকে হয়তো আরেকটু উস্কে দেয়। কিন্তু ভাবলেই তো হবেনা যে অভিনয় করব! তার জন্য চাই প্রস্তুতি এবং সঙ্গে কয়েকটি বিষয় অবশ্যই মেনে চলার অঙ্গীকার। চলুন আজ আমরা সিনেমা জগতের প্রথম পদার্পণ করার খুঁটিনাটি অজানা বিষয় গুলি সম্বন্ধে জেনে নিই।
চলুন দেখে নিই অভিনয় জগতে প্রথম পদার্পণ এর আগে কোন 14 টি বিষয় অবশ্যই মাথায় রাখতে হবে?
১) অভিনয় দক্ষতা:
সিনেমা বা অভিনয় জগতে প্রবেশ করার মূল চাবিকাঠি হলো অভিনয় দক্ষতা। অভিনয় দক্ষতা না থাকলে কোনমতেই একজন ভালো এবং সফল অভিনেতা হওয়া যায়না। একটি সুন্দর মুখ কখনোও একজন ভালো অভিনেতার পরিচয় বলে স্বীকার্য নয়। একজন অতি সাধারন মুখের মানুষ ও দক্ষ অভিনেতা হয়ে উঠতে পারেন যদি তার অভিনয় ক্ষমতা দারুন থাকে।
উদাহরন হিসাবে- নওয়াজ উদ্দিন সিদ্দিকীর কথাই ধরে নেওয়া যাক। অতি সাধারন মানুষের মুখের অধিকারী হয়েও তিনি বর্তমানে একজন সফল এবং সুদক্ষ অভিনেতা। এই সাফল্য কিন্তু তার অভিনয় ক্ষমতার জেরেই এসেছে। সুতরাং অভিনয় দক্ষতা থাকতেই হবে।
২) থিয়েটারে বা অভিনয় শেখার ইনস্টিটিউটে যোগদান:
থিয়েটার হ’ল এক অভিনেতার জন্য সবচেয়ে ভাল প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। আপনি অনুভূতি পেতে, চিৎকার করতে এবং সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণভাবে আলোর ব্যবহার উপযোগী ভাবে ব্যবহৃত করতে শেখেন। থিয়েটার আপনাকে অভিনয় – শৃঙ্খলা যা বিশ্বে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, সেই জিনিসটি শেখায়। এছাড়াও আপনি কোন ভালো অভিনয় শেখার ইনস্টিটিউটে ভর্তি হতে পারেন যারা সরাসরি কোন সিনেমা বা সিরিয়ালে কাজ করার সুযোগও দিয়ে থাকে। সেই রকম কয়েকটি ইনস্টিটিউটের নাম তুলে ধরছি আপনাদের সামনে—
- ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন ইনস্টিটিউট অফ ইন্ডিয়া, পুনে
- সত্যজিৎ রায় ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন ইনস্টিটিউট (এসআরএফটিআই) কলকাতা
- ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ ডিজাইন (এনআইডি), আহমেদাবাদ
- হুইসলিং উডস ইন্টারন্যাশনাল, মুম্বাই
- এশিয়ান একাডেমি অফ ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন
- এল ভি প্রসাদ ফিল্ম অ্যান্ড টিভি একাডেমী, চেন্নাই
- সেন্টার ফর রিসার্চ ইন আর্ট অফ ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন (সিআরএফটি), দিল্লি
- আইসিই ইনস্টিটিউট
- কে। আর। নারায়ণন ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ ভিজ্যুয়াল সায়েন্স অ্যান্ড আর্টস (কেআরএনএনআইভিএসএ)
- কলাপূর্ণম ইনস্টিটিউট অফ ভিজ্যুয়াল এফেক্টস এবং অ্যানিমেশন মায়া
এছাড়াও আরও বিভিন্ন রকমের ফিল্ম ইনস্টিটিউট আছে যারা অভিনয় শেখায়।
৩) যতটা সম্ভব অডিশনে যাওয়া:
এটি একটি সহজ পরামর্শের মত মনে হতে পারে তবে আমার উপর বিশ্বাস করুন, বেশিরভাগ লোকেরা তিন-চারটি প্রত্যাখ্যানের পরে অডিশনে যেতে পছন্দ করেন না। আপনি যদি সেই লোকদের মধ্যে থাকেন যাঁরা সহজেই ডিমোটিভেটেড হন তবে আমার পরামর্শ হ’ল আপনার উদ্দেশ্যগুলি পরিবর্তন করুন।
অংশ নেওয়ার স্বার্থে অডিশনে যাওয়ার পরিবর্তে অডিশনগুলিকে এমন জায়গার সমতুল্য মনে করুন যেখানে আপনি অভিনয়ের সুযোগ পাবেন। একটি ক্যামেরা আছে, শ্রোতা আছে তাই সেই সুযোগটি মিস করবেন না। অডিশনগুলিকে আপনার অভিনয়ের অনুশীলনের ক্ষেত্র হিসাবে ভাববেন।
৪) পার্শ্ব স্কিল বাড়ানো:
শুধু অভিনয়ে দক্ষতা থাকলেই একজন সফল এবং নামকরা কি সিনেমার অভিনেতা হওয়া যায় না। তাই অভিনয়ের পাশাপাশি বিভিন্ন রকমের দক্ষতা যেমন নাচ-গান, মার্শাল আর্ট, হাস্যকৌতুক ইত্যাদি’তে দক্ষতা বাড়ানোর চেষ্টা করুন।
৫) চরিত্র সম্বন্ধে জ্ঞান এবং পড়াশোনা থাকা দরকার:
যেকোনো কিছুই শেখার বা করার জন্য মূল ভীত হল শিক্ষা। একমাত্র শিক্ষাই পারে কোনো মানুষকে অন্ধকার থেকে আলোর দিকে নিয়ে যেতে। তাই অভিনয় করার আগেও বিভিন্ন বিষয়ে জ্ঞান এবং পড়াশোনা করা দরকার। কোন চরিত্রটি কেমন হবে, কেমন ভাবে তাকে ফুটিয়ে তোলা যাবে, তা একমাত্র পড়াশোনার মাধ্যমেই বোঝা সম্ভব।
৬) ফটোজেনিক মুখের অধিকারী:
সুন্দর মুখ না হলেও অবশ্যই ফটোজেনিক মুখ হওয়ার দরকার আছে অভিনয় করার জন্য। কারণ সিনেমা বা সিরিয়ালে অভিনয় করতে গেলে অবশ্যই ক্যামেরার সম্মুখীন হতে হয় তাই ক্যামেরা তে যাতে মুখের আদল সুন্দর আসে তার জন্য দিরেক্টর বা প্রোডিউসাররা ফটোজেনিক মুখ-ই খোঁজে।
৭) শারীরিক গঠন এবং ক্ষমতা:
বলা হয় সিনেমাতে অভিনয় করার জন্য শারীরিক গঠন খুবই সুন্দর হতে হবে এবং নিয়ম করে জিমেও যাতায়াত রাখতে হবে। কিন্তু বর্তমানে এই ধারণায় কিছুটা পরিবর্তন এসেছে। হ্যাঁ অবশ্যই গল্পের স্বার্থে রোগা থেকে মোটা কিংবা মোটা থেকে রোগা হতে হয় এবং সাথে সাথে শারীরিক দক্ষতাও বাড়াতে হয়।
কিন্তু বর্তমানে যেকোনো শারীরিক গঠন অনুযায়ী নির্দিষ্ট রকমের চরিত্রে অভিনয় করা সম্ভব। উদাহরণ হিসেবে- সোহিনী সেনগুপ্তের কথাই ধরে নেওয়া যাক। তিনি তার শারীরিক গঠন অনুযায়ী বিভিন্ন রকমের চরিত্রে অতি দক্ষতার সাথে অভিনয় করে চলেছেন এবং তার অভিনয়ের জন্যই তিনি আজ মানুষের মনে জায়গা করে নিতে পেরেছেন।
৮) কখনও হতাশ হবেন না:
মনোভাব প্রধান বিষয়। আপনি যখন অডিশনগুলিতে যাচ্ছেন তখন উৎসাহী, উদ্যমী এবং ইতিবাচক হন। সবাই ইতিবাচক মানুষের কাছাকাছি থাকতে পছন্দ করে। জর্জ ক্লুনি পদ্ধতিতে আপনার সেরা শট দিন। জর্জ ক্লুনি একবার বলেছিলেন যে, তিনি অডিশনে মুখোমুখি হওয়া প্রত্যাশার কারণে এতটাই বিধ্বস্ত হয়েছিলেন যে অবশেষে তিনি মানসিকতার সাথে নিজেকে বিশ্বাস করে অডিশনে যেতে শুরু করেছিলেন যে তিনিই কাস্টিং ডিরেক্টরের প্রতিটি সমস্যার সমাধান।
কল্পনা করুন যে আপনি সেরা এবং সেই ভূমিকাটি আপনার জন্য রচিত। এতে কতটা আত্মবিশ্বাস দেবে? আপনি যদি এটি না পান তবে ডেমোটিভেটেড করবেন না। একই মনোভাব নিয়ে অন্য অডিশনে যান।
৯) অনেক নিখরচায় কাজ করুন:
প্রথমদিকে আপনাকে প্রচুর অর্থ প্রদান করা হবে না এবং এটি কোনও বিষয় নয়। আপনি সেলিব্রিটি নন তাই বোকা স্বর্গ থেকে বেরিয়ে আসুন। আমি এমন কিছু অভিনেতা দেখেছি যারা আক্ষরিকভাবে কয়েকটি ভূমিকা পালন করেছে এবং ইতিমধ্যে তাদের দাম বাড়িয়েছে। কেউ তাদের এ পরিমাণ দিতে পারে না এবং তারা যে পরিমাণ অর্থ আদায় করে তা দেওয়ার জন্য তারা যথেষ্ট প্রতিভাধর নয়।
এই দুষ্ট চক্রের মধ্যে তারা কখনই কোনও কাজ পায় না। আপনি যত বেশি কাজ করবেন, তত বেশি দৃশ্যমানতা আপনার হবে। আপনার যত বেশি দৃশ্যমানতা তত বেশি লোক আপনাকে লক্ষ্য করবে। যত বেশি লোক আপনাকে লক্ষ্য করবে তত বেশি সফল আপনি পাবেন। আপনি যত বেশি সফল হন, তত বেশি অর্থ প্রদান করা হবে।
১০) পারলে পার্টিতে অংশ নিন:
আপনি যদি কারও সাথে সাধারণত দেখা করেন এবং আপনি একজন অভিনেতা হন তবে তারা আপনার সাথে সুন্দরভাবে কথা বলবে না। অভিনেতাদের সারাক্ষণ কাজ চাওয়ার খারাপ খ্যাতি রয়েছে।বেশিরভাগ অভিনেতা নিজেরাই সর্বত্র পিচ করে চলেছেন, যা কাজ পাওয়ার জন্য মারাত্মক ভুল পদ্ধতি। এটিকে একটি নিয়ম করুন, অডিশন ছাড়াও কখনই কাজের জন্য জিজ্ঞাসা করবেন না।
আপনি যদি যথেষ্ট ভাল হন তবে আপনি এটি পাবেন। সাধারণ পরিস্থিতিতে স্বাভাবিকভাবে কথা বলুন এবং অন্য ব্যক্তিকে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন। পার্টিগুলিতে, আপনি ভাল সংযুক্ত লোকের সাথে দেখা করতে পারেন এবং শিল্পের গুণগুলি দিয়ে আপনাকে লক্ষ্য করে তবে তা আপনার পক্ষে সহায়ক হবে।
১১) ভুল ধারণা থেকে বিরত থাকা:
অভিনয় জগতে নিয়ে অনেক সময় ভুল ধারণা থেকে থাকে। অনেকেই হয়তো ভাবেন যে নতুন মুখ মানে হয়তো সে অভিনয় জগতের নতুন। এ কথা কিন্তু একেবারেই ভুল। কারণ কখনোই নবাগতদের প্রধান চরিত্র প্রদান করা হয় না। তাদের অবশ্যই পার্শ্ব রোল অভিনয়ের ক্ষেত্রে নেওয়া হয়ে থাকে।
কিন্তু ক্যামেরার সঠিক ব্যবহার না জানার কারণে এবং যথেষ্ট পরিমাণে ওয়ার্কশপ না থাকার কারণে নবাগতদের কখনোই প্রধান চরিত্রে অভিনয় করতে দেওয়া হয় না। নতুন মুখ মানেই যে নবাগত এ ধারণা ভ্রান্তিমূলক।
১২) ভুল লোকের খপ্পরে না পড়া:
অবশ্যই মনে রাখা দরকার যে যারা সত্যি কারের কাজ ভালবাসে এবং সত্যিকারের কাজ দেয় তারা কখনোই আপনার থেকে অন্যান্য কিছুর চাহিদা করবে না। অনেক সময়ই অভিনয় জগতে কাস্টিং কাউচ এর মতো ঘটনা ঘটে থাকে।
সে ক্ষেত্রে বলা ভালো তারা ভুল কিছু লোকের হাতে পড়ে যারা কখনোই অভিনয়ের সুযোগ দেবেন না। তাই হঠকারিতার জেরে কখনোই ভুল সিদ্ধান্ত নেবেন না। সব সময় সৎ ভাবে কাজ করুন তাতে আপনার অবশ্যই সাফল্য আসবে।
১৩) অভিনয় কিন্তু 24×7 এর কাজ:
এ কথাটা প্রথমেই মাথায় গেঁথে নিতে হবে যে সিনেমা বা সিরিয়ালে অভিনয়ের ক্ষেত্রে কিন্তু কোনো নির্দিষ্ট সময় সূচি মেনে কাজ হয়না। তাই আপনাকে হতে হবে যথেষ্ট কর্মঠ এবং যেকোনো পরিস্থিতিতে কাজ করার ক্ষমতা রাখতে হবে এবং সেই অনুযায়ী মনোভাবও রাখতে হবে।
১৪) শারীরিক লজ্জা সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা থাকা:
অনেক সময়ই দেখা যায় সিনেমাতে গল্পের স্বার্থে ছোট জামা কাপড় পড়া হচ্ছে কিংবা কোন উন্মুক্ত সিন দেখানো হচ্ছে। আপনি কি চান সেই বিষয়ে একটি সুস্পষ্ট ধারণা রাখা উচিত। যদি আপনার এই সমস্ত জামাকাপড় পড়তে বা সিন করতে অসুবিধা না থাকে তাহলে অবশ্যই করতে পারেন। আবার আপনার যদি এই সমস্ত বিষয়গুলিতে অসুবিধা থেকে থাকে তাহলে আপনি নিঃসংকোচে তা ত্যাগ করতে পারেন।
এই জগতে পদার্পণ করার অর্থ মানে যে অভিনেতা হতে হবে তার কোনো মানে নেই আরও বিভিন্ন রকমের উন্মুখ থাকবে আপনার জন্য। অভিনয় ছাড়া আপনি আর কি কি করতে পারবেন–
- ডিরেক্টর
- প্রডিউসার
- কাস্টিং ডিরেক্টর
- ভিডিওগ্রাফার
- ফটোগ্রাফার
- এডিটর
- সিনেমাটোগ্রাফার
- স্ক্রিপ্ট লেখক
এইসব বিষয়গুলি ও যথেষ্ট সম্মৃদ্ধ। আপনি এর দাড়াও আপনার ক্যারিয়ার বাঁচতে পারেন।
তবে সব জিনিসই কিছু খারাপ ভালো মিশিয়ে গঠিত হয়। প্রায় প্রত্যেক বছর কয়েক লক্ষ ছেলেমেয়ে আসে অভিনেতা হওয়ার জন্য বা অভিনয় করার জন্য। কিন্তু তাদের মধ্যে অনেকজন বিভিন্ন রকমের ভুল সিদ্ধান্ত নেওয়ার কারণে প্রচুর বিপদের সম্মুখীন হয়ে পড়ে। তাই অনুরোধ সমস্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে দু’বার বিবেচনা করে দেখবেন এবং উপরিউক্ত কথাগুলি অবশ্যই মনে রাখবেন।
তাহলে অভিনয়জগতে যাওয়ার আগে কোন জিনিষগুলি মনে রাখা উচিত তা আপনি জেনে গেলেন। আপনার কি ইচ্ছা আছে অভিনয় জগতে পা রাখার? থাকলে সে কথা অবশ্যই জানান নিচের কমেন্ট বক্সে।
আরোও পড়ুন…জানেন কি হিন্দি সিরিয়ালের কোন 7 অভিনেতা জনপ্রিয়তার শীর্ষে পৌঁছেছেন?