রাজতন্ত্র বলে কাকে? আসুন একটু জেনে নিই।
“এক যে ছিল রাজা, তাঁর ছিল এক রাণী”, রূপকথার পাতায় পাতায় যে রোমাঞ্চের স্বাদ নিয়ে কেটেছে আমাদের ছোটোবেলা, তাকে ছোটোবেলায় গল্পের দেশ বলেই জানতাম। একটু বড় হওয়ার পর ইতিহাস বই আমাদের জানিয়েছিল শুধু বইয়ের পাতাতেই নয়, বাস্তবেও ছিল রাজা রাণী রাজপুত্র আর রাজকন্যাদের ভরা সংসার। তবে বাস্তবের রাজপুত্রের ঘোড়ার অবশ্য ডানা থাকত না, বরং তাঁদের জন্ম মৃত্যু আর যুদ্ধের ইতিবৃত্ত মুখস্থ করতে গিয়ে পরীক্ষার আগে পড়তে হত ঘোর বিপদে।
শৈশবে রূপকথা আর কৈশোরে ইতিহাসের পাতায় থাকা রাজা রাণীদের আজ আর দেখা যায় না। ২০২০ সালের পৃথিবীর অধিকাংশ জায়গা থেকেই বিলুপ্ত রাজার রাজত্ব। ব্রিটেনে এখনও পর্যন্ত রাজপরিবারের অস্তিত্ব থাকলেও সে দেশের গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় রাণীর ক্ষমতা যে শুধুই নামসর্বস্ব,তা বলাই বাহুল্য। কিন্তু সত্যিই কি আজ পৃথিবীতে কোথাও রাজার হাতে আর ক্ষমতা নেই? সত্যিই কি পৃথিবীর বুক থেকে নিশ্চিহ্ন রাজতন্ত্র?তা কিন্তু নয়।
আজকের গণতন্ত্রের বাড়বাড়ন্তের মাঝেও পৃথিবীর বেশ কিছু দেশে রয়ে গেছে রাজতান্ত্রিক শাসন, প্রকৃত ক্ষমতা আছে রাজার হাতে। আসুন আজ জেনে নেওয়া যাক সে সমস্ত দেশ গুলির কথা।
১) ব্রুনেই রাজতন্ত্র:
মালয়েশিয়ার কাছে বোর্নিও দ্বীপের উত্তরে অবস্থিত ছোট্ট ব্রুনেই হয়তো চোখেই পড়ে না অনেকের। কিন্তু এখানে আজও আছে রাজতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা। ব্রুনেইয়ের প্রধান বলা হয় সুলতান। এই দেশের একটি সংবিধান এবং জনগণের নির্বাচিত বিধানসভা থাকলেও মূল ক্ষমতা আছে সুলতানের হাতেই। এখানকার তৈল ভান্ডার ব্রুনেইয়ের সম্পদ।
২) সোয়াজিল্যান্ড রাজতন্ত্র:
সাউথ আফ্রিকার পাশে ছোট্ট দেশ সোয়াজিল্যান্ড। এর শাসনব্যবস্থা ব্রুনেইয়ের মতোই। এখানকার বর্তমান রাজার নাম তৃতীয় স্বাতি (Mswati III)। এখানে রাজতন্ত্র বংশানুক্রমিক। কিন্তু মন্ত্রীরা জনগণের ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত হন।
৩) সৌদি আরব রাজতন্ত্র:
পৃথিবীর অন্যতম পরিচিত বংশানুক্রমিক রাজতন্ত্র হল সৌদি আরব। বর্তমান রাজা আবদুল্লাহ ২০০৫ সালে সিংহাসনে বসেছেন। আগে আরবীয় মালভূমির অধিকাংশটাই ছিল এই রাজপরিবারের শাসনের অধীনে। বর্তমানে কেবলমাত্র সৌদি আরবেই তাঁদের শাসন সীমাবদ্ধ।
৪) ভূটান রাজতন্ত্র:
ভারতের উত্তরের প্রতিবেশী দেশ ভূটানের বর্তমান রাজা ওয়াংচুক ২০০৬ সালে ক্ষমতায় এসেছেন। বিশ শতক থেকে ভূটানে ওয়াংচুক পরিবারের শাসন চলছে। নানা বিবর্তনের পরে এখন ভূটানের শাসনব্যবস্থাকে সাংবিধানিক রাজতন্ত্র বলা যায়।
৫) মোনাকো রাজতন্ত্র:
পৃথিবীর দ্বিতীয় ক্ষুদ্রতম স্বাধীন রাষ্ট্র হল মোনাকো। এখানকার রাজার নাম প্রিন্স দ্বিতীয় অ্যালবার্ট। তিনি রাষ্ট্রের প্রধান এবং তাঁর হাতে একাধিক রাজনৈতিক ক্ষমতা রয়েছে। তবে মোনাকোতে জনগণ নির্বাচিত একটি ন্যাশানাল কাউন্সিলও আছে।
৬) বাহরাইন রাজতন্ত্র:
পারস্যের কাছে একটি ছোট্ট মালভূমি হল বাহরাইন। এখানকার বর্তমান সম্রাট শেখ হামাদ ২০০২ সালে সিংহাসনে বসেছিলেন। গত কয়েক বছর ধরে রাজতন্ত্রের বিরুদ্ধে বাহরাইনের বিদ্রোহের জন্য আন্তর্জাতিক খবরের শিরোনামে উঠে এসেছে এই দেশ।
৭) লিশটেনষ্টাইন রাজতন্ত্র:
ইউরোপীয় দেশ গুলির মধ্যে এখনও পর্যন্ত সত্যিকারের ক্ষমতা সম্পন্ন রাজতন্ত্রের মধ্যে অন্যতম লিশটেনষ্টাইন। এখানকার সংবিধান রাজতন্ত্রের অনুপন্থী। সমস্ত রাজনৈতিক মন্ত্রী ও কর্মচারীদের নির্বাচন করে থাকেন রাজাই।
৮) ভ্যাটিকান সিটি রাজতন্ত্র:
আক্ষরিক অর্থে ভ্যাটিকান সিটিতে রাজতন্ত্রের অস্তিত্ব থাকলেও অন্যান্য দেশগুলোর চেয়ে কিছু আলাদা। একে জনগণ নির্বাচিত রাজতন্ত্র বলা যায়।
৯) সংযুক্ত আরব আমিরশাহী রাজতন্ত্র:
সংযুক্ত আরব আমিরশাহীতে বর্তমানে সাতটি আলাদা আলাদা রাজত্বের অস্তিত্ব আছে। প্রতিটি রাজত্বের পৃথক রাজাও রয়েছেন। এদের মধ্যে দুবাই আর আবু ধাবি বিশেষ ভাবে উল্লেখযোগ্য।
১০) ওমান রাজতন্ত্র:
ওমান হল আরবীয় মালভূমিতে আরো একটি দেশ যেখানে এখনও রাজার রাজত্ব আছে। এখানকার রাজাকে বলা হয় ‘সুলতান’। বর্তমানের সুলতান কাবুস সেই ১৯৭০ সাল থেকে ক্ষমতায় আছেন। নিজের বাবাকে তাড়িয়ে তিনি ওমানের সিংহাসন দখল করেছিলেন।