সারা বিশ্বের জনপ্রিয়তম খেলা গুলির মধ্যে প্রথম সারিতেই আছে ক্রিকেট। আর ভারতীয় ক্রিড়াজগতে ক্রিকেটের অবস্থান যে শীর্ষে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। ব্রিটিশ আমলে সেই ১৮৬৪ সাল থেকে ভারতে শুরু হয়েছিল ক্রিকেট খেলা। জাতীয় খেলা হিসেবে কাবাডির নাম থাকলেও আজ ভারতের খেলার দুনিয়ায় কাবাডি, হকি, এমনকি ফুটবলকেও ছাপিয়ে গেছে ক্রিকেট। আর এই জনপ্রিয়তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে একের পর এক ক্রিকেটীয় প্রতিভার জন্ম দিয়েছে ভারত।
প্রাচ্যের যে সমস্ত দেশ ক্রিকেটীয় যুদ্ধে পাল্লা দেয় ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়ার মতো দেশের সঙ্গে বর্তমানে ভারতই তাদের মধ্যে সেরা। বহু বিশ্বমানের ভারতীয় ক্রিকেটার অতীতে রাজত্ব করেছে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে, রাজত্ব করছে বর্তমানেও। কিন্তু তার পাশাপাশি এ দেশের সে সমস্ত ক্রিকেটারকেও দেখেছে গোটা বিশ্ব, যাঁরা প্রতিভা থাকা সত্ত্বেও নিজের কেরিয়ারের সঙ্গে একেবারেই সুবিচার করতে পারেননি। আসুন জেনে নেওয়া যাক এমন ১০ ভারতীয় ক্রিকেটারের কথা, প্রতিভা থাকা সত্ত্বেও যাঁরা হারিয়ে গেছেন ক্রিকেটের জৌলুসময় জগৎ থেকে।
১) দীনেশ কার্তিক:
আইপিএলের সুবাদে কলকাতা নাইট রাইডার্সের প্রাক্তন অধিনায়ক হিসেবে দীনেশ কার্তিক নামটা এখন বেশ পরিচিত ক্রিকেট দুনিয়ায়। কিন্তু জাতীয় দলেও সুযোগ পেয়েছিলেন তিনি। বস্তুত, দীনেশ কার্তিকের নামের সঙ্গে অনায়াসে জুড়ে দেওয়া যায় যে তকমাটি তা হল, “সুযোগ হাতছাড়া করা এক ক্রিকেটার”। ২০০৪ সালে জাতীয় দলের জার্সি গায়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আত্মপ্রকাশের অনেক আগেই অনুর্দ্ধ ১৯ তারকা হিসেবে নজর কেড়েছিলেন চেন্নাইয়ের দীনেশ কার্তিক। প্রথমে উইকেট কিপার হিসেবে থাকলেও ভারতীয় ক্রিকেটে মহেন্দ্র সিং ধোনির উত্থানের পর ব্যাটসম্যান হিসেবেই পরিচিত হন তিনি। কিন্তু ধারাবাহিকতার অভাবে বারবার হারিয়ে যেতে থাকেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে। ফলে ভারতীয় ক্রিকেট দলে জায়গা পাকা হয় না দীনেশ কার্তিকের।
২) রবিন উথাপ্পা:
ভারতীয় ক্রিকেটের অন্যতম উল্লেখযোগ্য প্রতিভার নাম রবিন উথাপ্পা। ২০০৭ সালে কর্ণাটকের এই ক্রিকেটার জাতীয় দলের হয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আত্মপ্রকাশ করেন। কিন্তু ভালো শুরু করেও ক্রমশ আবছা হয়ে যেতে থাকেন রবিন উথাপ্পা। বিরাট কোহলির উত্থান তাঁর প্রতিভাকে ম্লান করে দিয়েছে বলেও মনে করেন অনেকে।
৩) পার্থিব প্যাটেল:
ভারতীয় ক্রিকেটে কনিষ্ঠতম উইকেটকিপার হিসেবে ২০০৩ সালে অভিষেক হয়েছিল পার্থিব প্যাটেলের। উইকেটের পিছনে তাঁর প্রতিভা নজর কেড়েছিল সকলের। ব্যাট হাতেও যথেষ্ট ক্ষমতাবান ছিলেন পার্থিব প্যাটেল। কিন্তু অল্প সময়ের মধ্যেই জাতীয় দল থেকে হারিয়ে যান তিনি।
৪) উন্মুক্ত চাঁদ:
দিল্লির তরুণ ক্রিকেটার উন্মুক্ত চাঁদ ২০১২ সালে ভারতের অনুর্দ্ধ ১৯ দলের বিশ্বকাপ জয়ের অন্যতম কারিগর ছিলেন। আইপিএলেও দিল্লির হয়ে ব্যাট হাতে আশা জাগিয়েছিলেন। কিন্তু প্রতিভা সত্ত্বেও জাতীয় দলে জায়গা করে নিতে পারেননি তিনি।
৫) বিনয় কুমার:
বল হাতে ভারতের জার্সি গায়ে বেশ কিছুদিন আগুন ঝরাতে দেখা গিয়েছিল কর্ণাটকের বিনয় কুমারকে। কিন্তু বেশিদিন সাফল্যের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে পারেননি, অকালেই জাতীয় দল থেকে হারিয়ে যান বিনয় কুমার।
৬) যোগিন্দর শর্মা:
২০০৭ সালে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ফাইনালের শেষ ওভারে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে অধিনায়ক ধোনি যোগিন্দর শর্মার হাতে তুলে দিয়েছিলেন বল। ভারতকে জিতিয়ে মানুষের মন জয় করেছিলেন তিনি। কিন্তু তাঁকে নিয়ে আশা থাকলেও এরপর থেকে আর সেভাবে উল্লেখযোগ্য কিছু করে দেখাতে পারেননি যোগিন্দর শর্মা।
৭) মহম্মদ কাইফ:
২০০০ সালে ভারতীয় দলের হয়ে টেস্টে অভিষেক হয় মহম্মদ কাইফের। সৌরভ গাঙ্গুলির অধিনায়কত্বে মহম্মদ কাইফের প্রতিভার ঝলক দেখেছিল গোটা বিশ্ব। ২০০২ সালে লর্ডসের বিখ্যাত ম্যাচে জয়ের অন্যতম কান্ডারি ছিলেন তিনি। কিন্তু মাত্র ২৬ বছর বয়সেই ভারতের হয়ে শেষ ম্যাচ খেলেন মহম্মদ কাইফ।
৮) দীপ দাশগুপ্ত:
বাংলার প্রতিভাবান উইকেটকিপার ব্যাটসম্যান দীপ দাশগুপ্ত ঘরোয়া ক্রিকেটে অনেক সাফল্য পেয়েছিলেন। সাউথ আফ্রিকার বিরুদ্ধে জাতীয় দলেও অভিষেক হয় তাঁর। কিন্তু অকালে হারিয়ে যান তিনি।
৯) অশোক দিন্দা:
মেদিনীপুরের ফাস্ট বোলার অশোক দিন্দা আইপিএলের পাশাপাশি জাতীয় দলেও অনেক সুযোগ পেয়েছিলেন। কিন্তু সুযোগের সৎ ব্যবহার করতে পারেননি তিনি।
১০) ওয়াসিম জাফর:
২০০০ সালের ভারতীয় ক্রিকেটের অন্যতম প্রতিভা ছিলেন ওয়াসিম জাফর। ওপেনার হিসেবে তিনি নজর কেড়েছিলেন।কিন্তু বেশি দিন স্থায়ী হয় নি তাঁর প্রতিভা।