উড়িষ্যা বলতেই প্রথম যার কথা মনে আসে তা হল পুরী, আর পুরী মানেই জগন্নাথ দেবের মন্দির। ঐতিহাসিক এই মন্দির ভারতের চারধামের মধ্যে অন্যতম। শুধু তাই নয়, কথিত আছে বাকি তিন ধাম ভ্রমণ করে সব শেষে আসা উচিত এই পুরীর জগন্নাথ মন্দিরে।
পুরীর জগন্নাথ মন্দির বৈষ্ণব সম্প্রদায়ের প্রসিদ্ধ হিন্দুমন্দির। জগন্নাথ মন্দিরকে ‘মর্ত্যলোকের বৈকুন্ঠ’ও বলা হয়। এছাড়া শাকক্ষেত্র, নীলাচল বা নীলগিরি নামেও পরিচিত এই জগন্নাথ মন্দির। ভক্তদের বিশ্বাস, এখানে স্বয়ং ভগবান শ্রীকৃষ্ণ জগন্নাথ রূপে নিজের বড় ভাই বলরাম ও বোন সুভদ্রার সঙ্গে বিরাজ করেন। তিনটি দেবপ্রতিমাই কাঠের তৈরি। ১২ বছর অন্তর এই মূর্তি পরিবর্তনের বিধান রয়েছে।
বৈষ্ণব সম্প্রদায়ের প্রাণপুরুষ শ্রীচৈতন্যদেবের রহস্যময় অন্তর্ধানের সঙ্গে ওতোপ্রতোভাবে জড়িয়ে আছে পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের নাম। কিন্তু তা ছাড়াও পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের আনাচে কানাচে আজও রয়ে গেছে কিছু আশ্চর্য অলৌকিকতার ছোঁয়া, যা ২০২০ সালে দাঁড়িয়েও হার মানায় বিজ্ঞানের সমস্ত যুক্তিকে। আসুন জেনে নিই পুরীর জগন্নাথ মন্দির সম্পর্কে তেমন কিছু অজানা আশ্চর্য তথ্য, যা শুনলে রোমাঞ্চে গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠবে আপনারও।
মন্দিরের ধ্বজা:
পুরীর জগন্নাথ মন্দির সম্পর্কে সবচেয়ে আশ্চর্যজনক তথ্যটি হল মন্দিরের চূড়ায় উড়ন্ত ধ্বজা। এই ধ্বজা সবসময় হাওয়ার প্রতিকূলে ওড়ে। অদ্ভুত এই ঘটনার কোনো বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা মেলে নি। তবে এই ধ্বজা রোজ বদলানো হয়। যে ব্যক্তি এই ধ্বজা বদলে থাকেন, তিনিও উল্টো ভাবে উপরে ওঠেন।
মন্দিরের চক্র:
মন্দিরের চূড়ায় অষ্টধাতু নির্মিত সুদর্শন চক্র রয়েছে। এই চক্রকে নীল চক্রও বলা হয়। এর দর্শন শুভ মনে করা হয়। যে কোন দিক দিয়ে দেখলে চক্র সবসময় আপনার সামনে ও সোজা মনে হবে।
মন্দিরের ভোগ রান্না:
জগন্নাথ মন্দিরের রান্নাঘরকে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় রান্নাঘর বলা হয়ে থাকে। এখানে প্রায় ৫০০ জন রান্নার ঠাকুর ও প্রায় ৩০০ জন সহযোগী মিলে ভোগ-প্রসাদ তৈরি করেন। ভোগ রান্নার জন্য সাতটি বাসন একে অপরের ওপরে রাখা হয়।। মাটির পাত্রে, কাঠের উনুনে ভোগ রান্না হয়। আশ্চর্যের বিষয় হল, এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে ওপরের পাত্রের ভোগ সবার আগে তৈরি হয়, তার পর নীচের দিকে এক এক করে। রোজ ২৫ হাজারের বেশি দর্শনার্থীরা এই ভোগ গ্রহণ করেন। এখানে কখনও প্রসাদ উদ্বৃত্ত থাকে না বা কম পড়ে না।
মন্দিরের মধ্যেকার আবহ:
পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের ভিতরকার আবহ বেশ রহস্যময়। মন্দিরের সিংহদ্বারে প্রবেশ করা মাত্র সমুদ্রের ঢেউয়ের কোলাহল শুনতে পাওয়া যায় না। বিশেষত সন্ধে নাগাদ আরও ভালো ভাবে এই বিষয় লক্ষ করা যায়।
মন্দিরের উপরের আকাশ:
মন্দিরের চূড়ার ওপর দিয়ে কখনও কোনও বিমান যায় না। এমনকি কোনও পাখিকেও এর উপর দিয়ে উড়তে বা এর উপর বসতে দেখা যায় না।
মন্দিরের ছায়া:
আশ্চর্যের কথা হল, সূর্যরশ্মি থাকলেও দিনের কোনও সময়েই চারপাশে কোথাও মন্দিরের ছায়া পড়তে দেখা যায় না!
মন্দিরের হাওয়া:
বিজ্ঞান বলে, সমুদ্রের ধারে সবসময় দিনের বেলায় হাওয়া সমুদ্র থেকে ভূমির দিকে ও সন্ধে নাগাদ ভূমি থেকে সমুদ্রের দিকে প্রবাহিত হয়। কিন্তু জগন্নাথ মন্দিরের ক্ষেত্রে ঠিক এর উল্টোটাই ঘটে। সকালে হাওয়া ভূমি থেকে সমুদ্রের দিকে এবং সন্ধে বেলায় সমুদ্র থেকে মন্দিরের দিকে প্রবাহিত হয়।
এমনই নানা অলৌকিক রহস্যে মোড়া পুরীর জগন্নাথ মন্দির। একুশ শতকে বিজ্ঞান প্রযুক্তি আকাশের চাঁদকেও হাতের মুঠোয় এনেছে ঠিকই, কিন্তু প্রাচীনকাল থেকে চলে আসা পুরীর মন্দিরের এই আশ্চর্য বিষয়গুলির ব্যাখ্যার উত্তরে নীরব থাকতে হয়েছে বিজ্ঞানকে।