যদি বলি আমাদের দেশে সব বয়সী মহিলাদের সবচাইতে পছন্দের পোশাক শাড়ি, তবে মোটেই ভুল বলা হবে না। খুব ছোট বয়স থেকে ভারতবর্ষের মেয়েদের শাড়ির উপর যে আকর্ষণ জন্মায়, তা রয়ে যায় আজীবন। আর শাড়ি এমনই পোশাক যা পরাও যায় বিভিন্ন ভাবে। শাড়ি পরার বিশেষ দশটি ধরন হল-
আটপৌরে ঘরোয়া ধরনের শাড়ি :
~~বাঙালির সবচাইতে প্রিয় ধাঁচের শাড়ি হল আটপৌরে ঘরোয়া ধরনের শাড়ি। বহুদিন অব্দি বাড়িতে মেয়েরা এইভাবেই পরত শাড়ি। এখনও উৎসব অনুষ্ঠানে এইরকম ভাবে শাড়ি পরার চাহিদা ফ্যাশন সচেতন মহিলাদের মধ্যে তুঙ্গে। প্রথমে একপাক ঘুরিয়ে শাড়ি পরে আঁচলটা অনেক বড় করে দিতে হয়। এরপর হালকা কয়েকটা কুঁচি দিয়ে আঁচলটা বাঁদিক দিয়ে প্লিট করে নিতে হবে। পেছনের লম্বা বড় অংশটা ডান হাতের পেছন দিয়ে ঘুরিয়ে নিয়ে ডান কাঁধের সামনে এনে আঁচলের খুঁটিটা আটকে দিলেই আটপৌরে শাড়ি পরা কমপ্লিট!
মারাঠি ধাঁচের শাড়ি :
~ মারাঠি ধাঁচের পরা শাড়ি ভীষণ আকর্ষণীয়। অনেকটাই ধুতির মত হবে স্টাইল। তাই বেশ বড় শাড়ি হলেই ভালো হয়। ছোট শাড়িতে তেমন ভালো নাও লাগতে পারে। শাড়ির শেষ অংশ থেকে বেশ কিছুটা অংশ ছেড়ে দিয়ে এরপর সামনেটা একটা গিট দিয়ে নিতে হবে। তারপর শাড়ির বেঁচে যাওয়া অংশ ঘুরিয়ে কোমরে গুঁজে দুটো পায়ের ফাঁক দিয়ে ঘুরিয়ে গুঁজতে হবে আবার। আর আঁচল সরু করে প্লিট করে নিলেই ব্যস।
রেট্রো 90’s ধাঁচের শাড়ি :
~পুরনো হিন্দি সিনেমার অনেক স্টাইল এখনও আমরা ফলো করি। তার মধ্যেই একটু হল মুমতাজ স্টাইলের শাড়ি।কোনও বিশেষ অনুষ্ঠানে এটি যে কোনও মহিলাকে করে তোলে আকর্ষণীয়। শাড়ি প্রথমে টাইট করে কয়েকবার জড়িয়ে নিতে হবে। এরপর কয়েকটি পাকে শাড়ি ফোল্ড করে বড় থেকে ছোট সাজাতে হবে যেন একটা একটা স্তর বোঝা যায়। সবশেষে আঁচল সরু করে প্লিট করে কাঁধের ওপর পিনআপ করে নিলেই হয়ে গেলো মুমতাজ স্টাইলে শাড়ি পরা!
রাজমাতা স্টাইলের শাড়ি :
~শাড়িতে রানীর মতন সাজতে কে না চায়! রাজরানী স্টাইলের শাড়ি পরার ধরন তাই সবসময়ই ট্রেন্ডিং। স্বাভাবিকভাবে যেমন করে শাড়ি পরতে হয়, সেভাবেই পরে নিতে প্রথমে। এরপর আঁচলটা প্লিট করে পেছন দিক থেকে সামনে নিয়ে এসে পিন লাগিয়ে আঁচলের একটা কোণা কোমরে পেঁচিয়ে নিয়ে এমনভাবে লম্বা করে রাখতে হবে যেন সামনে থেকে দেখতে ভি-শেপের হয়। কুঁচি থাকবে আঁচলের ঠিক নিচে। খুব কম পরিশ্রমেই হয়ে যাবে রাজরানীর মতো শাড়ি পরা!
লেহেঙ্গার ধাঁচে শাড়ি :
~~শাড়ি যে লেহেঙ্গার মতন করেও পরা যেতে পারে কিছু বছর আগেও কেউ ভাবতে পারেনি। কিন্তু এখন বন্ধু বা নিকটাত্মীয়র বিয়ে বা বিশেষ অনুষ্ঠানে লেহঙ্গা স্টাইলে শাড়ি পরে জমিয়ে দিতে পারা কঠিন কিছুই নয়। কোমরের চারদিক দিয়ে ছোট ছোট কুঁচি দিয়ে দিয়ে লেহঙ্গার এফেক্ট আনতে হবে প্রথমে। আঁচল প্লিট করে বাঁ কাঁধের ওপর দিয়ে পিন করে নিলেই কেল্লা ফতে! খুব অল্প সময়ে মোহময় করে সাজবার জন্য এই ধরনের শাড়ির জুড়ি মেলা ভার।
বলিউড স্টাইল শাড়ি :
~~আজকালকার বলিউড স্টাইলও ভীষণভাবে জনপ্রিয়। বিশেষ করে শাড়ি পরার ক্ষেত্রে এই স্টাইল ফলো করেন নানান বয়সের মহিলারা। এই ধরনের শাড়ি পরার জন্য প্রথমে নিয়মিত স্টাইলে কুঁচি করতে হবে। শাড়ির আঁচল প্লিট করার সময় আঁচল খুব সরু করে প্লিট করতে হবে। সুন্দর অথচ বিসদৃশ দেখাবে না কিসে তা জানতে নিজের রুচির উপরেই নির্ভর করতে হবে। সাধারণত শিফন বা নেটের শাড়ি গর্জাস ডিজাইনার ব্লাউজ দিয়ে এই স্টাইলে শাড়ি পরা যায়।
কুর্গ স্টাইল শাড়ি :
~~ শাড়ি পরার কুর্গ স্টাইলও কিন্তু ইদানিং ভীষণ জনপ্রিয়তা পাচ্ছে। প্রাদেশিক ধাঁচের শাড়ি পরা এখন ভীষণভাবেই ইন।সাধারণ শাড়ি পরেন, সেইভাবে পরতে হবে। এইবার আঁচল পেঁচিয়ে ব্লাউজ আর শাড়িতে সেফটি পিন দিয়ে লাগিয়ে নেওয়া দরকার। এরপর আঁচলের একটা কোণা একটু প্লিট করে বাঁ কাঁধের ওপর ফেলে দিয়ে পিন আটকাতে হবে। এইবার ছোট ছোট প্লিট করে আবার পিন দিয়ে গুছিয়ে আটকানো দরকার। সুন্দর ব্রোচ লাগিয়ে নিলে সবমিলিয়ে খুবই পরিপাটি লাগবে।
ড্রাপিং স্টাইলের শাড়ি :
~~আধুনিক মহিলাদের মধ্যে ইদানিং ছড়িয়ে পড়েছে বিশেষ এক ধরনের শাড়ি পরার ধরন। এখানে শাড়ির আঁচল স্কার্ফের মতন করে আটকানো হয়। সাধারণ ভাবে কুচি দিয়ে শাড়ি পরে শাড়ির আচল স্কার্ফ এর মতন পেঁচিয়ে গলায় বেধে নিতে হয়। দেখতে একেকটা শাড়ি একেক রকম, ফলে খুব আলাদা আলাদা লুক আসে এভাবে স্কার্ফ স্টাইলে পরলে।
মৌসুমী স্টাইল :
~শাড়ি পরার বিশেষ আরেকটা ধরন হল মৌসুমী স্টাইল। শাড়ির আঁচল পিছন দিক থেকে সামনের দিকে কুচি করে পিন করে আটকে দিতে হবে শুধু। এতে কিছুটা লেহেঙ্গার মতনও দেখাবে । শাড়ি এভাবে পরলে যেকোনো জায়গায় লাগবে নজরকাড়া।
~~শাড়ি পরার সবচাইতে বেশি প্রচলিত যে ধাঁচ, তাতে সব বয়সের সমস্ত প্রদেশের মহিলাদেরই অত্যন্ত মার্জিত ও স্নিগ্ধ মনে হয়। অফিসে বা অনুষ্ঠানে যেকোনো জায়গায় শাড়ি এভাবে পরে যাওয়া যেতেই পারে। ঝামেলাহীন পরিপাটি এই স্টাইলে প্রথমে আঁচল সুন্দর করে কুচি করতে হবে। তারপর কাঁধের উপর রেখে পিন আটকে দেওয়া দরকার। কুচি হবে সামনে। যারা এক্সপেরিমেন্ট করতে অভ্যস্ত নন, কিংবা শাড়ি সামলানোর দুশ্চিন্তায় ভোগেন তাদের জন্য এটাই সবচাইতে সহজ ও সুন্দর পদ্ধতি।
ভারতবর্ষের সমস্ত রকমের পোশাকের মধ্যে শাড়ি সারা পৃথিবীতে বিশেষ ভাবে সমাদর পেয়েছে। শাড়ি পরার নানান স্টাইলের প্রশংসাও চারদিকে প্রবল। তাদের মধ্যেই শাড়ি পরার এই দশটা ধরন ট্রাই করতে পারেন যে কেউ।