শারিরীক অক্ষমতা জীবনে চলার পথে প্রাথমিক বাঁধা সৃষ্টি করতে পারে ঠিকই, কিন্তু তা স্বপ্ন পূরণের চিরস্থায়ী প্রতিবন্ধক নয়। মনের জোর আর অদম্য ইচ্ছার সাহায্যে জীবন যুদ্ধ জয়ের সেই গল্পই বলে জ্যোতি আমগে। তাঁর জীবন কাহিনী পৃথিবীর হাজার হাজার মানুষের কাছে প্রেরণা স্বরূপ।
বাংলা চলচ্চিত্র জগতের জনপ্রিয় পরিচালক কৌশিক গাঙ্গুলী তাঁর ‘ছোটোদের ছবি’ সিনেমায় দেখিয়েছিলেন বামনদের গল্প। যাঁরা উচ্চতায় খাটো, যাঁদের দেহের বৃদ্ধি শারিরীক কারণেই থেমে যায় স্বাভাবিকের চেয়ে অনেকটা আগে, তাঁদের সমাজে প্রতি পদে কীভাবে প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হতে হয়, ‘ছোটোদের ছবি’ দর্শকের কাছে তা তুলে ধরেছিল। কিন্তু বামন বা ‘বেঁটে’ মানুষদের সেই প্রতিবন্ধকতাকে জয় করেছেন জ্যোতি আমগে। নিজের জীবনকে সাফল্যে ভরিয়ে তুলেছেন তিনি।
জ্যোতি আমগে মহারাষ্ট্রের নাগপুরের বাসিন্দা। তিনি পৃথিবীর সবচেয়ে ‘ছোটো’ মহিলা হিসেবে পরিচিত। এই মর্মে ২০১১ সালে মাত্র ১৮ বছর বয়সে গিনিস বিশ্ব রেকর্ডে নাম ওঠে জ্যোতি আমগের। বর্তমানে তাঁর বয়স ২৬ বছর। শুধুমাত্র ভারতেই নয়, জ্যোতি আমগে এখন সমগ্র বিশ্বের বিনোদন জগতেই নিজের নাম পাকা করে নিয়েছেন।
জ্যোতি আমগের উচ্চতা:
গিনিস বিশ্ব রেকর্ডের ২০১১ সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী মহারাষ্ট্রের জ্যোতি আমগের উচ্চতা হল ৬২.৮ সেন্টিমিটার। অর্থাৎ ২ ফুট ৬ ইঞ্চির কাছাকাছি। ১৮ বছর বয়সে বিশ্ব রেকর্ডে নাম ওঠার পর থেকেই জনপ্রিয়তা বাড়তে শুরু করে জ্যোতি আমগের। জানা যায়, তাঁর এই সীমিত উচ্চতা আদতে একটি বংশগত ব্যাধির কারণে, চিকিৎসা বিজ্ঞানে যার নাম অ্যাকোন্দ্রোপ্লাসিয়া।
জ্যোতি আমগের কেরিয়ার:
জীবনের লড়াইয়ে হার না মেনে এগিয়ে চলার শপথ নিয়েছিলেন জ্যোতি আমগে।স্বপ্ন দেখেছিলেন “বড়” হওয়ার। নিজের সেই স্বপ্নকে সফল করেছেন তিনি।অভিনয়কে নিজের কেরিয়ার হিসেবে বেছে নিয়েছেন জ্যোতি আমগে। আর অভিনয় তাঁকে এনে দিয়েছে সাফল্যের স্বাদ।
জ্যোতি আমগের প্রথম ছবি:
২০০৯ সালে চিকিৎসা বিজ্ঞান সংক্রান্ত একটি ব্রিটিশ ডকুমেন্টারি সিরিজে অভিনয় করে নিজের কেরিয়ার শুরু করেন জ্যোতি আমগে। ছবির নাম “বডি শক” (Body Shock)। স্বাভাবিক ছাঁচের বাইরে যে সমস্ত মানুষ, তাঁদের জীবন সংগ্রামের কথা নিয়ে তৈরি হয়েছিল এই ছবি। এখানে তাঁর এপিসোডের নাম ছিল “টু ফিট হাই টিন” (Two feet high teen)।
জ্যোতি আমগের অন্যান্য কাজ:
এরপর ২০১২-১৩ সালে ভারতের জনপ্রিয় টেলিভিশন রিয়েলিটি শো বিগ বসের ৬ নম্বর সিজনে একবার অতিথি হিসেবে উপস্থিত হয়েছিলেন জ্যোতি আমগে। ২০১৪-১৫ সালে আমেরিকান একটি ভৌতিক শো-তে অভিনয় করতে দেখা গিয়েছিল তাঁকে। ওই শো-এর নাম ছিল “আমেরিকান হরর স্টোরি: ফ্রিক শো” (American Horror Story: Freak Show)। এছাড়া ২০১৮ সালে ‘মাথারাম’ নামের একটি স্বল্প দৈর্ঘ্যের ছবিতেও অভিনয় করতে দেখা গেছে জ্যোতি আমগেকে।
ধৈর্য্য আর হার না মানার নাছোড়বান্দা মানসিকতা যে মানুষকে এনে দেয় প্রকৃত সাফল্য, মহারাষ্ট্রের জ্যোতি আমগে তারই অনন্য নজির।