ধর্মনিরপেক্ষ ভারতের সমাজে ধর্মের অবস্থান বোঝা বড় দায়। একটা শব্দের সাথে আমরা বর্তমানে সবাই পরিচিত ‘Multiculturalism’। যে কোন দেশে ‘Multiculturalism’ সংস্কৃতি গড়ে ওঠে সেই দেশের ধর্মীয় স্বাধীনতা, ধর্মীয় উদারতা, পরধর্ম সহিষ্ণুতার উপর ভিত্তি করে। ভারত ধর্মনিরপেক্ষ ও বৈচিত্র্যপূর্ণ দেশ হওয়ায়, সারা বিশ্ব থেকে নানা ধর্মের মানুষ ভারতে আসে আর এদেশের বাক্ স্বাধীনতা ও ধর্মীয় স্বাধীনতার জন্য বসতি স্থাপন করে। বর্তমানে কিছু স্বার্থপর মানুষের জন্য সাম্রদায়িক বিভেদ বেড়েছে।
ভারতের সংবিধানে বা কোনো ধর্মগ্রন্থে লেখা নেই, পরের ধর্মীয় অনুষ্ঠানে অপর ধর্মের মানুষ অংশ গ্রহণ করতে পারবে না। যদি কোনো হিন্দু মুসলমানদের ধর্মীয় অনুষ্ঠানে অংশ গ্রহণ করে তবে পরধর্ম প্রতি তাঁর সহিষ্ণুতা প্রকাশ পায়। কিন্তু কোন হিন্দুর ধর্মীয় অনুষ্ঠানে মুসলমান অংশ গ্রহণ করলে অন্যন্যা মুসলমানরা সহজভাবে গ্রহণ করে না।
সম্রতি কিছু ঘটনা আমাদের এ ব্যাপারে ভাবতে বাধ্য করেছে। বাংলা সিনেমা জগতের অভিনেত্রী নুরসত জাহান এক হিন্দু পরিবারের সাথে বৈবাহিক সম্পর্কে আবদ্ধ হয়। হিন্দু শাস্ত্রানুযায়ী নুরসত জাহানের পোশাক ও সাজসজ্জায় এক মুসলিম সংস্থা তাঁর উদ্দেশ্যে অযৌক্তিক ও ধর্মীয় মন্তব্য করে।
শুধু তাই নয়, কলকাতার এক কালীপূজার উদ্বোধন অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের খ্যাত ক্রিকেটার ‘ শাকিব -উল-হাসান ‘ – এর উপস্থিতি নিয়ে বাংলাদেশের মুসলমানরা যথেষ্ট আপত্তি জানায়। অথচ, শাকিব- উল- হাসান কলকাতার হয়ে ভারতে আই পি এল খেলতে আসে তখন সে দেশের মানুষরা আপত্তি জানায় না।
কিন্তু হিন্দু ধর্মীয় অনুষ্ঠানে সে দেশের মানুষের আপত্তিতে ধর্মীয় গোঁড়ামি প্রকাশ পায়। যে কোনো ধর্মীয় গোঁড়ামি বিকৃত মানসিকতার পরিচয় দেয়। ধর্মীয় গোঁড়ামি কখনই কোন ধর্মকে অন্য ধর্মের থেকে মহান বা শ্রেষ্ঠ প্রমাণ করে না।
আমাদের সমাজে হিন্দু ও মুসলমান উভয়েরই প্রয়োজনীয়তা আছে। যদি শুধুই হিন্দু নিয়ে এ সমাজ চলত তবে বিজ্ঞান জগত ‘এ. পি. জে. আব্দুল কালাম’ – এর মত বিজ্ঞানী পেত না। অপর দিকে যদি শুধুই মুসলমানদের নিয়ে সমাজ চলত তবে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মত সাহিত্যিক আমরা পেতাম না।