ঘুমের মধ্যে নাক ডাকার বিষয়টা খুবই স্বাভাবিক। কিন্তু এটাকে একদমই হালকা ভাবে নেবেন না। এই নাক ডাকা আপনার শরীরে লুকিয়ে থাকা রোগের ইঙ্গিত ও হতে পারে। সাধারণত উচ্চ রক্তচাপ, স্থুলতা, হৃদরোগ, স্ট্রোক, ডাইবেটিস থাকবে নাক ডাকার সমস্যা হয়ে থাকে। ঘুমের সময় নাকের মাংসপেশি খুব বেশি শিথিল হয়ে গেলে নাক ডাকা শুরু হয়। যখন নিঃশ্বাস-প্রশ্বাস চলাচল করে তখন এই শিথিল মাংসপেশিতে স্পন্দন হয়ে শব্দ তৈরী হয়। সম্প্রতি একটি গবেষণায় জানা গিয়েছে, নাক ডাকার প্রবণতা থাকলে মস্তিষ্কের ক্ষমতা ধীরে ধীরে কমতে শুরু করে। ফলে আই কিউ তো কমেই, সেইসঙ্গে স্মৃতিশক্তিও ঝাপসা হতে শুরু করে।
স্বাভাবিকের চেয়ে বেশী জোরে নাক ডাক্লে সেটিকে ডাক্তারী ভাষায় অবস্ট্রাক্টিভ স্লিপ অ্যাপনিয়া বা (OSA) বলা হয়। এই OSA লক্ষণ হল যিনি নাক ডাকেন তার শ্বাস কয়েক সেকেন্ড থেকে ২ মিনিট পর্যন্ত বন্ধ থাকতে পারে। যার ফলে রক্তের অক্সিজেন এর মাত্রা কমে যায়। এর কারণে মাথাব্যাথা ও ক্লান্তি বোধ হতে পারে। তাহলে চলুন আজ জেনে নি এই নাক ডাকার কারণগুলি কি আর তা সমাধানের উপায় সম্পর্কে।
নাক ডাকার কারণঃ-
১) অতিরিক্ত নাক ডাকার ফলে আপনার ঘুমের মধ্যে হার্ট অ্যাটার্কের ঝুঁকি অনেকাংশে বেড়ে যায়।
২) বয়স বেড়ে যাওয়ার কারণে শরীরে চামড়া ঝুলে যায়, পুরু হয় ও গলার কিছু পেশীও ফুলে যায়। এরজন্য বয়স্করা নাক ডাকেন তুলনামূলক বেশি।
৩) থাইরয়েডের সমস্যা বা গ্রোথ হরমোনের আধিক্যজনিত রোগ থেকে থাকলেও নাক ডাকার প্রবণতা দেখা যায়।
৪) গর্ভাবস্থায় নাক ডাকলে তা গর্ভস্থ সন্তানের পক্ষে অত্যন্ত ক্ষতিকর। এর প্রভাবে গর্ভস্থ সন্তানের ওজন হ্রাস পেতে পারে।
এছাড়া অপর্যাপ্ত ঘুম, নিয়মিত ঘুমের ঔষধ সেবন করা, প্রয়োজনের অধিক খাবার খাওয়ার, অপর্যাপ্ত জল পান বা শোয়ায় ধরণ সঠিক না হলে নাক ডাকার সমস্যা দেখা দিতে পারে।
নাক ডাকার সমস্যা সমাধানের উপায়ঃ-
ঘর পরিষ্কার রাখুন
ধুলোকণায় এলার্জিন থাকার কারণে তা নিশ্বাসের মাধ্যমে আমাদের নাকের ভিতর প্রবেশ করে অনেক ধরনের সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে। তাই ঘর নিইয়মিত পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখুন।
পর্যাপ্ত ঘুম
রোজকার ব্যাস্ত জীবনে অনেকেই পর্যাপ্ত ঘুম ঘুমোতে পারেন না। সাধারণত একজন প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষের জন্য ৭ থেকে ৮ ঘন্টা ঘুমকে পর্যাপ্ত ঘুম হিসাবে ধরা হয়। অতিরিক্ত ক্লান্তি শরীরের পেশীগুলোকে অলস করে দেয় যা নাক ডাকার আরেকটি কারণ।
ধূমপান থেকে নিজেকে বিরত রাখুন
সিগারেটের ধোঁয়া নাকের ভেতরে ও গলার মেমব্রেন টিস্যুর ক্ষতি করে। গলার ভেতরে জ্বালাপোড়ার সৃষ্টি করে অনেক সময় এর ফলে মাংসপেশী ফুলে যায়। যার কারণে নাক ডাকার সমস্যা দেখা দিতে পারে।
ঘরের আর্দ্রতা বজায় রাখুন
শুষ্ক বাতাসে শ্বাসকষ্টের প্রবণতা বাড়ে। তাই কক্ষের আর্দ্রতা স্বাভাবিক থাকলে নাক ডাকা কমানো সম্ভব। এটা আপনার স্বাস্থ্যের পক্ষেও উপকারী।
প্রাণায়াম করুন
এটি মুলত শ্বাস প্রশ্বাস নিয়ন্ত্রণের ব্যায়াম। নিয়মিত প্রাণায়াম করলে আপনার নিঃশ্বাস প্রশ্বাসের পথ প্রশস্থ হবে ফলে নাক ডাকার সমস্যাও অনেকটা কমে যেতে পারে।
উপরিউক্ত নিয়ম গুলি মেনে চললে মুক্তি পেতে পারেন নাক ডাকার হাত থেকে। তবে এর পর ও যদি না কমে তবে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।