বিশ্বএডস্ দিবস দিনটি পালিত হয়ে আসছে সেই 1988 সাল থেকে, এই দিনটিকে আমরা উৎসর্গ করে থাকি সেই সব মানুষকে যারা HIV র মত ভাইরাসে সংক্রমিত হয়েছেন অথবা HIV ভাইরাসের প্রভাবে হওয়া AIDS রোগে মারা গেছেন । 2020 সালে দাড়িয়ে সবাই আমরা করোনা ভাইরাস নিয়ে ব্যস্ত কিন্তু সেই 20 শতকে প্রথমে আর্বিভূত এই HIV ভাইরাসটির মত এক মারাত্মক ভাইরাস কথা আমরা প্রায় ভুলতেই বসেছি । সমগ্র বিশ্বে লক্ষ্যাধিক মানুষ এই মারন ভাইরাসে আক্রান্ত, আজ এই 1 ডিসেম্বর বিশ্ব এডস্ দিবসে চলুননা একটু সচেনতা র পথে হাটি আমরা! না ! বাইরে রাস্তায় বেরিয়ে মিটিং মিছিলের দরকার নেই, বাড়ীতে বসে সোস্যাল মিডিয়ার সাহায্যে শুধুমাত্র একটা ক্লিকে ছরিয়ে দিন সচেনতা।
বিশ্বএডস্ দিবসে এক নজরে জেনেনিন এই HIV, AIDS সম্পর্কে কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য । নিজেও জানুন এবং অপরকেও জানতে সাহায্য করুন । HIV অথবা AIDS কিন্তু গুপ্তরোগ নয় । অনেক ধরনে শ্রুতি বা মীথ আমাদের সমাজে ছরিয়ে আছে এই HIV নিয়ে তাই কোন্ তথ্য গুলি সঠিক সেটাও জেনে নেওয়া একান্ত প্রয়োজন । একই সমাজে বসবাস করে শুধুমাত্র নিজে সচেতন হলেই কিন্তু বাকি মানুষ শুধরোবে না । সুতরাং, এই সচেতনতাই ছরিয়ে দিতে হবে প্রত্যেকটা মানুষের মধ্যে এবং ‘সচেতনতাই যে আসল প্রতিষেধক’ সেই জাগরীতি র পথে এক এক ধাপে এগিয়ে যেতে হবে সঙ্গবদ্ধ হয়ে ।
বিশ্বএডস্ দিবস টিকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) দ্বারা চিহ্নিত করা হয়েছে, ডব্লিউএইচও অনুযায়ী এই দিনটি বিশ্ব জনস্বাস্থ্য সচেতনতার উদ্দেশ্যে ঘোষিত, আটটি বিশেষ দিনের মধ্যে একটি । ইচআইভি বা হিউম্যান ইমিউনোডেফিসিয়েন্সি ভাইরাস মানুষের শরীরে প্রবেশ করে এডস্ (Acquired Immuno Deficiency Syndrome) নামক রোগটি সৃষ্টি করে । প্রাথমিকভাবে এই ভাইরাসটি মানুষের দেহের প্রতিরোধ ক্ষমতার হ্রাস ঘটায় এবং ক্রমে উন্নত পর্যায়ে এইচআইভি এডস্ রোগের কারণ হয়ে দারায় । এই রোগটিকে বিশ্ব ইতিহাসে ‘সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিশ্বস্বাস্থ্য সম্পর্কিত সমস্যা’ হিসাবে বিবেচনা করা হয় থাকে । UNAIDS নামক সংস্থানুসারে গত বছরে 1.7 মিলিয়ন মানুষ এইচআইভিতে নতুনভাবে সংক্রামিত হয়েছে এবং 2019 সালে এইডস-সংক্রান্ত অসুস্থতায় প্রায় 690,000 মানুষ মারা গিয়েছে।
বিশ্বএডস্ দিবসে প্রত্যেক বছর একটি বিশেষ বিষয় স্থির করা হয়, 2020 সালের বিষয় বা থীমটি হল ‘Ending the HIV/AIDS epidemic: Resilience and Impact.’ অর্থাৎ ‘মহামারীর সমাপ্তি: স্থিতিস্থাপকতা এবং প্রভাব’ ।
HIV ভাইরাসটি রেট্রোভিরিডে ফ্যামিলির অন্তর্গত একটি পরিবেষ্ঠিত RNA ভাইরাস, অনেকটা করোনা ভাইরাসের অনুরূপ । ভাইরাসটি মানবদেহে প্রবেশ করে রোগ প্রতিরোধক কোষ গুলি কে আক্রমন শুরু করে যেমন CD4 কোষটিতে রির্ভাস ট্রান্সক্রিপটেজ এনজাইমের দ্বারা RNA জিনোমটি পরিনত হয় দ্বৈত মান DNA তে । এই DNA টি আস্তে আস্তে শরীরের বাকি কোষ গুলিতে সক্রমন শুরু করে । ফলে শরীরের সাময়িক রোগপ্রতিরোধক ক্ষমতা হ্রাস পায় । এই সময় শরীর এতটাই দুর্বল থাকে যে অনান্য রোগেরও সঞ্চার ঘটে শরীরে ।
HIV সংক্রমণের অগ্রিম পর্যায়ে AIDS রোগের আগমন ঘটে শরীরে, এইচআইভি সংক্রমণের প্রাথমিক পর্যায়েই চিকিত্সা শুরু করা উচিত, অন্যথায় এইডস সম্ভবত বিকাশ লাভ করে এবং শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা ধীরে ধীরে হ্রাস পায়। AIDS মানবদেহে ক্যান্সারের মতো অন্যান্য মারাত্মক রোগকেও ট্রিগার করতে পারে। সুতরাং খুব দেরী হওয়ার আগে যদি আপনি জানতে পারেন যে আপনার শরীর HIV ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত তাহলে, অবিলম্বে আপনার ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করুন এবং সতর্কতা অবলম্বন করুন।
বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই HIV ছরায় অরক্ষিত যৌন সম্পর্ক স্থাপনের মাধ্যমে তবে আক্রান্ত ব্যাক্তির রক্তের মাধ্যমে অথবা গর্ভবতী মায়ের মাধ্যমেও শিশুদের মধ্যেও এই ভাইরাসের সঞ্চার ঘটা সম্ভব । কিন্তু নানাধরনে মীথ আছে যেগুলি মানুষকে বিভ্রান্ত করে এই রোগ নিয়ে । আমরা যেই সমাজে বাস করি মানুষ সেখানে রোগের থেকেও বেশী ভয় পায় রোগে আক্রান্ত ব্যাক্তিটির থেকে ।
‘HIV Positive’ কথাটি সাধারন মানুষের কাছে নেগেটিভ বাক্য। HIV সংক্রান্ত কিছু ভুল ধারনা মানুষ বয়ে নিয়ে চলেছে আর বিশ্বএডস্ দিবস পালনের মূল মন্ত্রই হল সবার আগে HIV নিয়ে ভুল ধারনা গুলোকে দূর করা । প্রথমত চুম্বন বা kissing র মধ্যে দিয়ে HIV সংক্রমিত হয় না কিংবা HIV জল বা বায়ু বাহিত নয়। এমনকি কোন আক্রান্ত ব্যক্তিকে ছুলেও এই রোগের কোনো সম্ভাবনা থাকে না। ম্যালেরিয়া বা ডেঙ্গির মত মশা কামরালেও HIV সংক্রমন হয়না।
যততারাতারি এই ধারনা গুলি থেকে আমরা মুক্ত হব ততই বিশ্বএডস্ দিবস পালনের সার্থকতা বজায় থাকবে। 2020 তে যখন চারিদিকে করোনা ভাইরাস নিয়ে তোলপার সেখানে শুধু আজকের দিনটা কি আমরা HIV ভাইরাসটিকে নিয়েও একটু ভাবতে পারি না? রোজই কত ছবি বা মেমস্ শেয়ার করি আমরা আজ না হয় একটু ঐক্যবদ্ধ হয়ে আমরা সচেতনতা শেয়ার করি !
কতটা ভুল ভাঙলেন নিজের, এই বিশ্বএডস্ দিবসে ? অবশ্যই লিখে পাঠান আমাদের কমেন্ট বক্সে ।
আরও পড়ুন: