মুকেশ আম্বানি বনাম অনিল আম্বানি

ভারতের ব্যবসায়ীদের শীর্ষস্থানীয় ব্যাক্তিদের মধ্যে দু’জন অন্যতম হলেন মুকেশ আম্বানি ও অনিল আম্বানি।মুকেশ আম্বানি এবং অনিল আম্বানি দুই ভাই ছিলেন,তারা দু’জনেই ছিলেন ব্যবসায়িক শীর্ষস্থানীয়।সম্প্রতি ব্যাবসায়িক সমস্যা জনিত কারণে তারা আলাদা ব্যাবসা শুরু করেন।
ব্যক্তিগত জীবন ও শিক্ষাগত যোগ্যতা:-
•মুকেশ আম্বানি

মুকেশ আম্বানির জন্ম ১৯ এপ্রিল ১৯৫৭ সালে।ধনকুবের এই ব্যক্তির বাবার নাম ধিরুভাই আম্বানি এবং মা ছিলেন কোকিলাবেন আম্বানি। তিনি তার বাবা-মায়ের প্রথম সন্তান। অনিল – মুকেশ আম্বানির আরও এক ভাই ও দুই বোন রয়েছে।


তিনি স্কুল বয়সেই অনন্য মেধার স্বাক্ষর রেখেছেন।বিশেষ করে মুম্বাই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করার পর যুক্তরাষ্ট্রের স্টানফোর্ড থেকে এমবিএ করেন। এরপর ১৯৮০ সালে তিনি স্টানফোর্ড থেকে পড়াশোনা শেষ করেন।রিলায়েন্স কোম্পানি, ইন্ডাস্ট্রিজের আজকের এই ব্যবসায়িক অনন্য উচ্চতা কিন্তু শুধু মুকেশ আম্বানির মেধা আর শ্রমের ফসল নয়। যদিও রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজের মাধ্যমেই আজকে ভারতের শীর্ষ ধনী মুকেশ আম্বানি। এই রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজের শক্ত ভিত গড়ে দিয়েছিলেন মুকেশ আম্বানির বাবা ধিরুভাই আম্বানি। ধিরুভাই আম্বানিকেও ভারতীয় শিল্প ইতিহাসের নায়ক বলেই মানা হয়।তিনি রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের চেয়ারম্যান, ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং বৃহৎ শেয়ারের মালিক।


মুকেশ ১৯৮৫ সালে নীতা আম্বানির সাথে বিবাহ করেন। তাদের দুই পুত্র ও এক কন্যা। বড় পুত্র অনন্ত আম্বানি এবং ছোট পুত্র আকাশ আম্বানি রিলায়েন্স জিও ইনফোকমের কৌশলগত বিভাগের প্রধান। কন্যা ইশা আম্বানি জিও ও রিলায়েন্স রিটেলের বোর্ড মেম্বার।

•অনিল আম্বানি

অনিল আম্বানি জন্ম ৪ই জুন ১৯৫৯ সালে।বাবা ধিরুভাই আম্বানি এবং মা কোকিলাবেন আম্বানির দ্বিতীয় সন্তান ছিলেন অনিল আম্বানি।
অনিল আম্বানি বোম্বে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিজ্ঞান স্নাতক এবং পেনসিলভেনিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্য ওয়ার্টন স্কুল থেকে এমবিএ ডিগ্রি অর্জন করেছেন। বর্তমানে তিনি ওভারটনের ওয়ার্টন বোর্ডের সদস্য হিসাবে দায়িত্ব পালন করছেন।
অনিল আম্বানির স্ত্রী ছিলেন টিনা আম্বানি,যিনি ছিলেন বলিউডের অভিনেত্রী।তাদের দুই পুত্র আনমোল ও জয় আনশুল।

•মুকেশ আম্বানি বনাম অনিল আম্বানির বিবাদ


২০০২ সালে ধিরুভাই আম্বানি তিনি মারা যাওয়ার পর দুই ভাই ব্যবসার দেখাশোনা করতেন। কিন্তু ব্যবসা পরিচালনা নিয়ে তাদের মধ্যে তীব্র মতবিরোধ তৈরি হওয়ার পর দুই ভাই রিলায়েন্স গ্রুপ ভেঙে আলাদা হয়ে যান।মুকেশ এই গ্রুপের পেট্রোকেমিক্যালস ফ্ল্যাগশিপ, রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজ, ইন্ডিয়ান পেট্রোকেমিক্যাল কর্পস লিমিটেড, রিলায়েন্স পেট্রোলিয়াম এবং রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিয়াল ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেড  রেখেছিলেন এবং রিলায়েন্সের নাম রেখেছিলেন। অনিল অনিল ধিরুভাই আম্বানি গ্রুপ  নিয়ে রিলায়েন্স কমিউনিকেশনস ,

রিলায়েন্স ক্যাপিটাল , রিলায়েন্স এনার্জি এবং রিলায়েন্স ন্যাচারাল রিসোর্সেস লিমিটেড গঠন করে। গ্রুপের পেট্রোকেমিক্যালস ফ্ল্যাগশিপ, মুকেশ এই গ্রুপের পেট্রোকেমিক্যালস ফ্ল্যাগশিপ, রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজ , ইন্ডিয়ান পেট্রোকেমিক্যাল কর্পস লিমিটেড, রিলায়েন্স পেট্রোলিয়াম এবং রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিয়াল ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেড রেখেছিলেন এবং রিলায়েন্সের নাম রেখেছিলেন।  অনিল ধিরুভাই আম্বানি গ্রুপ  নিয়ে রিলায়েন্স কমিউনিকেশনস , রিলায়েন্স ক্যাপিটাল , রিলায়েন্স এনার্জি  এবং রিলায়েন্স ন্যাচারাল রিসোর্সেস লিমিটেড গঠন করে। ইন্ডাস্ট্রিজ , ইন্ডিয়ান পেট্রোকেমিক্যাল কর্পস লিমিটেড, রিলায়েন্স পেট্রোলিয়াম এবং রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিয়াল ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেড রেখেছিলেন এবং রিলায়েন্সের নাম রেখেছিলেন। অনিল ধিরুভাই আম্বানি গ্রুপ  নিয়ে রিলায়েন্স কমিউনিকেশনস , রিলায়েন্স ক্যাপিটাল , রিলায়েন্স এনার্জি  এবং রিলায়েন্স ন্যাচারাল রিসোর্সেস লিমিটেড  গঠন করে।

•মুকেশ আম্বানি বনাম অনিল আম্বানির কর্মদক্ষতা

বিশ্বের চতুর্থ ধনী ব্যক্তি মুকেশ আম্বানি।ফরচুন ম্যাগাজিন, আগস্ট ২০০৪ দ্বারা প্রকাশিত ব্যবসায়ের সর্বাধিক শক্তিশালী ব্যক্তিদের মধ্যে ২৫ জনের তালিকার মধ্যে ১৩ তম স্থান অর্জন করেছে।এশিয়া সোসাইটি, ওয়াশিংটন ডিসি, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, মে ২০০৪ দ্বারা এশিয়া সোসাইটি লিডারশিপ অ্যাওয়ার্ডকে সম্মানিত করেছে।ওয়াশিংটনে “গ্লোবাল ভিশন” ২০০৭ সালের জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র-ভারত ব্যবসায়িক কাউন্সিলের নেতৃত্বের পুরষ্কারকে সম্মানিত হয়েছেন।

বিশ্বের ষষ্ঠ ধনী ব্যক্তি হলেন অনিল আম্বানি। ঐতিহ্যবাহী ব্যবসা থেকে ব্যবসায়ের সুযোগ সরিয়ে নিয়েছে (স্থান পরিবর্তন)এবং অ্যাডল্যাব, জাপাক, বিআইজি এফএম, বিগাদদা ইত্যাদি সংস্থাগুলির সাথে এডিএজি ট্যাগের আওতায় শিল্প কিনেছে।২০০৩ সালের সেপ্টেম্বরে ‘এমটিভি যুব আইকন অফ দ্য ইয়ার’ ভোট দিয়েছেন।
তিনি ২০০৪ সালের জুনে সমাজবাদী পার্টির সমর্থন নিয়ে ভারতের সংসদ সদস্য – রাজ্যসভার উচ্চ-সভায় নির্বাচিত হয়েছিলেন। তবে ২০০৬ সালের মার্চ মাসে তিনি এই পদ থেকে পদত্যাগ করেন।


মুকেশ আম্বানি বনাম অনিল আম্বানির ব্যাবসায়িক আদর্শ

মুকেশ আম্বানিকে ব্যবসায়িক শৈলীর সাথে রিলায়েন্স প্রতিষ্ঠাতার সাথে ম্যাচ করার জন্য বিবেচনা করা হয়েছে।তাছাড়াও, তাকে সবসময়
পরবর্তী ধীরুভাই আম্বানির মতো দক্ষ দিসাবে মানা হয়।আম্বানির রিলায়েন্স গ্রুপ, সর্বদা বড় পরিমাণে কাজ করতে বিশ্বাস করে।

অপরদিকে,অনিল আম্বানি ব্যাবসায়ের নতুন লাইন গঠন করেন। নতুন যুগের ব্যবসায়িক নীতি অনুসরণ করেন বলে বিশ্বাস করা হয়, তার এডিএজি গ্রুপ সংস্থাগুলি পরিচালনায়।

•মুকেশ আম্বানি বনাম অনিল আম্বানির ব্যাবসায়িক উত্থান পতন

বিশ্বজুড়ে করোনা সংকটের মধ্যেই একের পর এক শিখর স্পর্শ করে চলেছেন তিনি মুকেশ আম্বানি। বর্তমানে বিশ্বের চতুর্থ ধনীতম ব্যক্তি হলেন রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজের কর্ণধার। এই যাত্রায় পিছনে ফেলে দিয়েছেন ইউরোপের ধনীতম ব্যক্তিকে।কয়েক সপ্তাহে সবাইকে চমকে দিয়ে বিশ্বের একের পর এক ধনকুবেরকে পিছনে ফেলে দিয়েছেন ভারতের ধনীতম ব্যক্তি মুকেশ আম্বানি।

অপরদিকে, রিলাইয়েন্স কমিউনিকেশনের কর্ণধার অনিল আম্বানির যিনি কিনা একসময় ছিলেন বিশ্বের ষষ্ঠ ধনী ব্যক্তি। কালের ফেরে আজ তাঁর দেউলিয়া অবস্থা। সব বন্ধ কোম্পানি। সব রাস্তাও বন্ধ রোজগারের।পরিস্থিতি এতটাই সঙ্গিন যে সামান্য উকিলের খরচ মেটাতে তাঁকে নিজের গয়না বিক্রি করতে হচ্ছে। সম্প্রতি ব্রিটেনের এক আদালতে এমনটাই জানিয়েছেন এশিয়ার সবচেয়ে ধনী ব্যক্তির মুকেশ আম্বানির ভাই।

সম্প্রতি জানা যায়,আদালতে অনিল আম্বানি জানিয়েছেন, এই মুহূর্তে তাঁর তেমন উল্লেখযোগ্য কোনও সম্পত্তি নেই। তিনি একটিমাত্র গাড়ির মালিক। এমনকী, জীবনধারণের জন্যও তিনি স্ত্রী-সন্তানের উপর নির্ভরশীল। শুধু তাই নয়, একসময়ের প্রথম সারির শিল্পপতি নাকি এখন একজন সাধারণ মানুষের মতোই জীবনযাপন করেন। আদালতে তিনি বলেন,”আমার জীবনযাত্রা খুব সাধারণ। এখন আমার খরচ স্ত্রী এবং পরিবার বহন করে। এমনকি আমার আইনি খরচও গয়না বিক্রি করে শোধ করেছি।” রিলায়েন্স কমিউনিকেশনের কর্ণধারের দাবি, তিনি গয়না বেঁচে যে ৯ কোটি ৯০ লক্ষ টাকা পেয়েছিলেন সেটাও শেষ। এখন আরও খরচ করতে হলে যৎসামান্য যা সম্পত্তি আছে, সেটাও বেঁচে দিতে হবে তাঁকে।

সুপ্রিম কোর্টের দেওয়া নির্দিষ্ট মেয়াদ শেষ হওয়ার ঠিক একদিন আগে সুইডিশ টেলিকম সংস্থা এরিকসনকে টাকা ফিরিয়ে দিয়ে জেলের মুখ দেখার থেকে একটুর জন্য বাঁচলেন দেশের শিল্পপতি অনিল আম্বানি । তাঁর এই অসময়ে পাশে থেকে সময়মতো বাঁচানোর জন্য নিজের ভাই, তথা দেশের সবথেকে ধনী ব্যক্তি মুকেশ আম্বানিকে ধন্যবাদ জানালেন অনিল আম্বানি।

কথায় আছে,কারোর পৌষ মাস কারোর সর্বনাশ।

লেখা কেমন লাগলো কমেন্ট করে জানাতে ভুলবেন না আমাদের কমেন্ট বক্সে।