করোনা আমাদের জীবনকে করে তুলেছে বিপন্ন। আজ দীর্ঘ ৮ মাস ধরে এই পরিস্থিতির সাথে আমরা মোকাবিলা করে চলেছি। সমস্ত জায়গায় বিপদের সম্মুখীন হচ্ছি আমরা। তবুও বাহুল্য যে মানুষ আজও লড়ে চলেছে দৃঢ়তার সাথে একদিন সমস্ত ঝড় ঠিক হয়ে যাবে এই প্রত্যাশায়। এখন সমস্ত জায়গায় লকডাউন উঠে গিয়ে আনলক প্রক্রিয়া চালু হয়েছে। তবুও মেলেনি সুরাহা।করোনা মানুষের দৈনন্দিন জীবনযাত্রাকেও পাল্টে দিয়েছে।
১.পেট্রল ও ডিজেল :
করোনার ফলে বেশ কয়েকমাস সমস্ত কিছু বন্ধ ছিল আর সেই সময় পেট্রল ও ডিজেল – এর ব্যবহার কমে গেছিল। ফলে এখন তার মূল্যবৃদ্ধি ঘটেছে।কলকাতায় প্রতি লিটার পেট্রোলের দাম দাঁড়িয়েছে ৮৩.১৫ টাকা এবং ডিজেলের দাম ৭৪.৯৮ টাকা। পেট্রল ও ডিজেল এর দাম বাড়ার সাথে সাথে সমস্ত কিছুর দাম বেড়েছে অস্বাভাবিক ভাবে।
২.মেডিসিন :
সৌজন্যে : the bengal story সৌজন্যে : asianet news bangla
করোনা আবহে মূল্যবৃদ্ধি পেয়েছে প্রত্যেক ওষুধের। আমাদের প্রত্যেকের বাড়িতে ওষুধ অত্যাবশক একটি জিনিস। এখন প্রায় অধিকাংশ মানুষই নিত্য ওষুধ সেবন করেন। সেই জন্য সমস্ত মানুষেরই ভোগান্তির শেষ নেই। মূল্যবৃদ্ধির জন্য আমরা সমস্ত জিনিস নিয়ে বিপদের সম্মুখীন হচ্ছি। মেডিসিনের সাথে সাথে এখন আমাদের প্রয়োজনীয় কিছু জিনিস অত্যাবশকীয় তা হলো মাস্ক,সানিটাইজার ,হ্যান্ড গ্লাভস ইত্যাদি যার জন্যেও একটা টাকা আমাদের খরচ হচ্ছে নিয়মিত।
৩.যোগাযোগ ব্যবস্থা :
বাস,ট্রাম ,ট্রেনে যাতায়াত করতে আমরা ভয় পাচ্ছি তাই অনেকেই যাতায়াত করছে নিজের নিজের গাড়িতে। নিজের আলাদা গাড়িতে পরিবহনের জন্য একটা খরচ মানুষকে করতে হচ্ছে। এছাড়াও পেট্রল ও ডিজেলের দাম বেড়ে যাওয়ার জন্য সরকারি ও বেসরকারি পরিবহনে দাম বেড়েছে ভাড়া। অনেক জায়গায় এখনও পরিবহন ব্যবস্থা সঠিকভাবে চালু না হওয়ার কারণে মানুষ ভুগছে।
৪. খাদ্যসামগ্রী :
কাঁচা আনাজ থেকে শুরু করে সমস্ত খাদ্যসামগ্রীর মূল্য আজ সাধারণের কাছে আকাশছোঁয়া। একই মানুষের হাতে টাকা নেই তারপর এই ভাবে সমস্ত কিছুর মূল্যবৃদ্ধি মানুষকে বেসামাল করে তুলেছে। দুর্গাপুজোর পর থেকেই এই মূল্যবৃদ্ধির দ্রুততা বেড়েছে। লাগামছোঁয়া দামের পাশাপাশি অনেকে খাবার অর্ডার করছে অনলাইনে আর সেই সব অতিরিক্ত খরচও বেড়েছে তালেতালে।শাকসবজি,মাছ ,মাংস,ডিম , আলু, পেঁয়াজ নিত্যপ্রয়োজনীও খাদ্যসামগ্রী দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে সাধারণ মানুষ আছে খুব সংকটে ও চিন্তায়।
৫.বেকারত্ব :
করোনার কারণে বহু মানুষ হারিয়েছে তাদের কাজ। দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে বেকারত্বের সংখ্যা। বেকারত্বের ফলে মানুষের কাছে বেঁচে থাকার জন্য যে সমস্ত জিনিস প্রয়োজন সেই সমস্ত জিনিসও বাতুলতা হয়ে দাঁড়িয়েছে তাদের কাছে। চাকরি তো এই সময় পাওয়া খুব কঠিন তারপর আবার চাকরি চলে যাওয়ার সংখ্যা তো আছে প্রচুর। এই জন্য বহু মানুষের মানসিক অবস্থায় খুব খারাপ। ছোট খাটো ব্যবসায়ীদের অবস্থায়ও সঙ্কটজনক।
৬. ইন্টারনেট :
মানুষ আজ ঘরে বসে কাজ করা থেকে শুরু করে খাবার অর্ডার,বই অর্ডার,অনলাইন পরীক্ষা , বুকিং প্রভৃতি সমস্ত কিছুই আজ ইন্টারনেটের সঙ্গে জড়িত। প্রাপ্ত বয়স্কদের ইন্টারনেটের এই সব কাজে অসুবিধা না হলেও বয়স্কদের হচ্ছে সমস্যা মূলত যারা একা থাকেন। ইন্টারনেটের জন্যও একটা অতিরিক্ত খরচ আমাদের বেড়েছে। এই ব্যবস্থায় সুবিধা থাকলেও অসুবিধাও আছে।
৭.শিক্ষাব্যবস্থা :
করোনার কারণে শিক্ষাব্যবস্থা বন্ধ হলেও আমাদের পড়াশোনা থেমে থাকেনি। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলি অনলাইনের মাধ্যমে ক্লাস করাছে ফলে বহু গ্রামের মেধাবী ছাত্রছাত্রীদের অসুবিধায় পড়তে হচ্ছে। অনেক গ্রামে এখনও ভালোভাবে ইন্টারনেট পরিষেবা নেই।সেই জন্য বহু ছাত্রছাত্রীকে চরম ভোগান্তির মধ্যে দিয়ে যেতে হচ্ছে। বেসরকারি স্কুল গুলোর একটা বড়ো পরিমান বেতন যা দিতে হয় সেইসব নিয়েও মানুষকে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে।
৮.সঞ্চয় :
করোনার কারণে দৈনন্দিন জীবন চালানো হয়েছে বিপর্যস্ত। মূল্যবৃদ্ধির কারণে খরচ বেড়েছে আর সেই জন্য মানুষ সঞ্চয় করতে পারছেনা তেমন ভাবে। আমাদের জীবন বর্তমানের সাথে সাথে ভবিষৎ জীবনও অনিশ্চয়তায় ভুগছে। মানুষ সঞ্চয় করতে না পারলে বহু কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যাবে।
৯.বিদ্যুৎ :
দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির সাথে সাথে বিদ্যুতের মূল্যও বৃদ্ধি পেয়েছে। আমরা বৈদ্যুতিক ব্যবস্থা বিহীন থাকতে পারবনা। আমাদের জীবনে বৈদ্যুতিক ব্যবস্থা অত্যাবশক। এই সব পরিষেবাও অনলাইন হয়ে গেলেও বহু মানুষের অনলাইন ব্যবস্থা না থাকার কারণে এই সুবিধা তারা পাচ্ছে না জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বিল দিতে যেতে হচ্ছে তাদের।
১০.বিনোদন :
আমাদের বিনোদন জগতেও করোনার প্রভাব পড়েছে বিস্তর। বহু টেলিভিশন শো বন্ধ হয়ে গেছে , সিনেমার শুটিং প্রায় বন্ধ। এখানেও প্রায় বহু মানুষ কাজ হারিয়েছে। সঙ্গীত জগত থেকে সিনেমা জগত নাচের জগৎ সমস্ত কিছু বন্ধ হয়ে বহু মানুষ রুজিরোজকার হারিয়েছে। এখন আস্তে আস্তে শুরু হলেও তা স্বাভাবিক হতে অনেক অনেক সময় লাগবে।
শেষে বলা যাই এই অতিমারীর দাপট কতটা তা গোটা পৃথিবীর মানুষ দেখছে। আমরা বিভিন্ন স্বাস্থ্য সংস্থা ও খবরের মাধ্যমে সংক্রমণ ও আক্রান্তের সংখ্যা নিয়ে অবগত হচ্ছি। এর প্রভাব কতটা ভয়াবহ তা মানুষ দেখছে ও উপলব্ধি করছে।করোনা ভাইরাসের প্রতিষেধক এখন আয়ত্তের বাইরে। এর পাশাপাশি দেশের অর্থনৈতিক অবস্থাও বেহাল হয়ে পড়েছে।এই দেশের প্রত্যেকটা মানুষ আজ চিন্তিত। কোনো বৃহৎ ঘটনার পাশাপাশি থাকে ভালো দিক ও মন্দ দিক। কিন্তু এই ঘটনাতে ভালো দিক খুবই অল্প মন্দ দিকই বেশি। যেখানে ভারতের মতো বিপুল জনসংখ্যা বেষ্টিত দেশে দরিদ্রের সংখ্যা এতো বেশি সেখানে এতো মূল্যবৃদ্ধি আমাদের কোথায় নিয়ে দাঁড়াবে ? সে বিষয়ে মানুষ আজ অনিশ্চয়তায় ভুগছে। কবে কাটিয়ে উঠবো আমরা এই পরিস্থিতি থেকে তা আজ প্রত্যেক মানুষকে প্রশ্নের মুখে ফেলছে ?