কফি নামক পাণীয়টি কোথা থেকে এলো বলুন তো ? বিশ্বের সবচেয়ে দামী কফি কিভাবে তৈরী হয় জানেন কি ? কোন ধরনের কফি আপনার সবচেয়ে প্রিয় ? কফি র আবার ধরন আছে নাকি ! এই সব প্রশ্নের উত্তর খুজতে অবশ্যই পড়ুন আজকের ‘শীত স্পেশ্যাল’ প্রচ্ছদটি ।
চা নিয়ে বাঙালীদের মধ্যে একটি বিশেষ ইমোশ্যান প্রায়োশই লক্ষ্য করা যায় কিন্তু শীতের আমেজ পরতে না পরতেই বাঙালীদের মনে পরে যায় ‘কফি হাউসের সেই আড্ডাটা’ র কথা । বেশীরভাগ বাঙালীদের কাছেই শীতের বিকেলে বা মাঝে মধ্যে বৃষ্টির বিকেলে কফি খাওয়াটা হল নস্ট্যালজিয়া । আর এই কফি ই হল আজকের প্রচ্ছদের মূল বিষয় ।
কফি কবে কোথায় কি ভাবে আবিষ্কার হল ?
কফি কোন দেশে প্রথম আবিষ্কৃত হয় সেই নিয়ে দুটি দেশের মধ্যে মতবিরোধ আছে, ইথিওপিয়ার দক্ষিণ পশ্চিমে কাফা প্রদেশের লোকেরা বলেন বহু বছর আগে এক ভেড়া পালক ভেড়া চরাতে গিয়ে লাল রঙের ফলের হদিস পান যা খেলে ঘুম কেটে যায় আর সেই লাল ফলই নাকি আজকের কফি । কাফা প্রদেশের নাম থেকেই নাকি উৎপত্তি এই কফি নামটির । আবার আরব রা বলেন কফি আবিষ্কারের কীর্তি তাদের । কফি শব্দটি আরবি শব্দ ‘কাওয়া’ থেকে এসেছে যার অর্থ ‘খিদে না পাওয়া’ । তবে কফি র ইতিহাস ঘাটলে আরব দেশের নামটিই বারংবার উঠে আসে । ক্রমে এই আরব থেকে তুরস্ক এবং ইউরোপে কফির প্রচলন শুরু হয় ।
এখনকার জনপ্রিয় বাঙালী লেখক কৌশিক মজুমদার তার লেখা বই ‘নোলা’ তে কফি নিয়ে বিভিন্ন মজার গল্পের কথা উল্লেখ করেছেন তার মধ্যে অন্যতম মজার গল্পটি হল এই যে, ক্লু নামে এক ফরাসি, রাজা পঞ্চদশ লুইয়ের কাছ থেকে রাজার অজান্তে কফি গাছের চারা চুরি করে এনে ক্যারাবিয়ান দ্বীপপুঞ্জের মার্তিনিক দ্বীপে কফি গাছের চাষ শুরু করেন এবং এখান থেকেই কফি বিস্তার লাভ করে আমেরিকায় ।
ভারতবর্ষে অনেক পরে কফি র উৎপাদন শুরু হয়। ভারতীয় প্রেক্ষাপটে, কফির উত্থান এক ভারতীয় মুসলিম সাধক বাবা বুদানের সাথে শুরু হয়েছিল । ইনি তীর্থ করতে গিয়ে ইয়েমেন থেকে কফির বীজ মহীশূরে নিয়ে আসেন । শুরুতে এই বীজ গুলি তিনি চন্দ্রগিরি পাহাড়ের গায়ে রোপন করেছিলেন, যা বর্তমানে সন্তের নামানুসারে চিক্কামাগলুরু জেলার অন্তর্গত ‘বাবাকে বুদন গিরি’ নামে পরিচিত । 1670 সালে প্রথম ভারতবর্ষে কফি বীজ থেকে কফি তৈরী করা হয় । পরবর্তি সময়ে কর্ণাটকের আশেপাশের পাহাড়ে, তামিলনাড়ুর নীলগিরীতে কফি চাষ শুরু হয় এবং এখনও এই সমস্ত জায়গায় এই চাষ হয়ে থাকে ।
“Coffee is a lot more than just a drink; it’s something happening. Not as in hip, but like an event, a place to be, but not like a location, but like somewhere within yourself. It gives you time, but not actual hours or minutes, but a chance to be, like be yourself, and have a second cup.”
Gertrude Stein
বিশ্বদরবারে বিখ্যাত 4 ধরনের কফি:
ক্যাপুচিনো: সিসিডি, স্টার বাকস্ বারিস্তা কতকি সব কফির দোকান । এই সব জায়গায় গেলেই বুঝতে পারবেন কত প্রকার কফি হয় ! একটা কফির মেনু কার্ড নাকি দুই থেকে তিন পাতার । আর দাম ! ওরে বাবা একটা মাসের মাইনের আর্ধেক । সে যাই হোক, এত কফি র মধ্যে সবচেয়ে ওপরে প্রথম সারিতেই যেই নামটি আমরা পাই সেটি হল ক্যাপুচিনো । তথ্যানুসারে এই কফি টির নাম এসেছে ক্যাপুচিন নামক সন্যাসীদের থেকে । ক্যাপুচিন কথাটির আক্ষরিক অর্থ হল আলখাল্লা । ‘যা: বাবা আলখাল্লা কফি হল কি করে’ ? কারন এই ক্যাপুচিন সন্যাসীরা কফি রঙের আলখাল্লা পড়তেন আর সেই জন্যই এই কফি র নাম ক্যাপুচিনো । এই কফির বৈশিষ্ঠ হল এই কফির ওপরে দুধ দিয়ে ফেনার সৃষ্টি করা হয় যাতে কফি অনেক্ষন গরম থাকে ।
এসপ্রেসো: কফি র আরেকটি ধরন হল এসপ্রেসো । 1896 সালে ইংল্যান্ডের একটি প্রর্দশনীতে এসপ্রেসো মেসিন জনসমক্ষে আসে । কিন্তু এই কফি র স্বাদ ছিল বিচ্ছিরি । অবশেষে এই মেসিন আরো উন্নত করে 1901 সালে প্রশংশিত হন মিলানের বিজ্ঞানী লুইজি বেজেরা । ওনার তৈরী এই মেসিন এখনও ব্যবহার হচ্ছে এসপ্রেসো কফি বানানোর জন্য । এক্ষেত্রে কফি বীজকে গুড়িয়ে বাষ্পের সাহায্যে এই কফি বানানো হয়ে থাকে । সাধারন কফি র থেকে এই কফি তারাতারি তৈরী হয় তাই এর নাম এসপ্রেসো । আজকাল অফিস, হোটেল, ক্যান্টিন বিভিন্ন জায়গায় এসপ্রেসো কফি মেসিন দেখা যায় । কাজের ফাকে ঝিমুনি এলে এই মেসিনটিই আমাদের উদ্ধার করে , তাই না ?
আইরিশ কফি: এটি একটি ককটেল কফি । ভাবা যায় বলুনতো কফি কিনা আবার ককটেল ! এই কফি আইরিশ হুইস্কি, চিনি এবং ক্রিমের সংমিশ্রনে তৈরী হয় । এই কফি প্রায় 100 বছর আগে আবিষ্কৃত হয় । সান ফ্রান্সিসকোর একজন ভ্রমণ লেখক স্ট্যান্টন ডেলাপ্লেন শ্যানন বিমানবন্দরে আইরিশ কফি খেয়ে তার পদ্ধতি যুক্তরাষ্ট্রে নিয়ে এসেছিলেন। 1952 সালে 10 নভেম্বর সান ফ্রান্সিসকোতে বুয়েনা ভিস্তা ক্যাফেতে এই কফি র বিক্রি শুরু করেন ।
আবার অনেকে বলে যে আইরিশ কফি র মূল নির্মাতা হলেন জোসেফ জ্যাকসন, জ্যাকসনের হোটেল (বাল্যফোফি কাউন্টি ডোনেগাল), যিনি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের লড়াইয়ের সময় তার সঙ্গীদের জেগে থাকার প্রচেষ্টা চালিয়ে এই ককটেল কফি টি তৈরি করেছিলেন। জার্মান সৈন্যদের কাছ থেকে যুদ্ধের পরে তিনি সেই কফি টি নিয়ে এসেছিলেন যা তিনি ডোনেগলে ফিরে আইরিশ কফি নাম দেন ।
লুয়াক কফি: এবার আসি আরেকটি কফি র কথায় । এই কফি হল বিশ্বের সব থেকে দামী কফি গুলির মধ্যে একটি । তবে এই কফি র মূল বৈশিষ্ঠ হল এই কফি তৈরী হয় সীভেট নামক বেড়ালের মল থেকে । ‘অ্যা’ !!! নাঃ নাক সীটকোনোর কিছু নেই, কফি টি খেতে অসাধারন । ইন্দোনেশিয়ায় এই কফি তৈরী হয় । ইন্দোনেশিয়ার বিভিন্ন কফি ফার্ম গুলিতে সীভেট অথবা ভাম বিড়ালকে পোষা হয়ে থাকে । কফি বীজ গুলিকে এই প্রানীটিকে প্রথমে খাওয়ানো হয়ে থাকে তারপর এই প্রানীটির পরিপাক নালীর মধ্যে কফি বীজটির গাঁজন হয়। সীভেট প্রানীটি প্রোটিএজ নামক পাচক রস কফি বীজের মধ্যে প্রবেশ করায় এবং ফলে ক্ষুদ্রতর পেপটাইড এবং অন্যান্য মুক্ত অ্যামিনো অ্যাসিড কফি বীজে প্রবেশ করে। এরপর সীভেট তার পরিপাক নালির মাধ্যমে কফি বীজ গুলিকে মলের অন্যান্য অংশের সাথে বার করে দেয় ।
এরপর বিভিন্ন প্রসেস্ এর মাধ্যমে লুয়াক কফি তৈরী করে বিভিন্ন দেশে রপ্তানী করা হয় । যেহেতু লুয়াক কফি র কোনো প্রজাতি না হয়ে একটি প্রক্রিয়াকরণ পদ্ধতিতে তৈরী হয় তাই এই কফি তৈরী করা খরচা সাপেক্ষ । একে বিশ্বের সবচেয়ে ব্যয়বহুল কফির মধ্যে একটি বলা হয়েছে যার মূল্য প্রতি কিলোগ্রাম 550 পাউন্ড বা 700 ডলারের কাছাকাছি । এছারা ফিলিপাইন এর ব্লাক আইভরি কফি র দামের প্রতি কিলোগ্রাম 850 পাউন্ড বা 1100 ডলারের মত। তবে এখানে উল্লেখ্য এই কফি প্রক্রিয়ার ফলে সীভেট র সংখ্যা কমে আসছে তাই সরকারের এবং প্রানী ওয়েল ফেয়ারের অনুমতি ছারা এই কফি বানানো নিষিদ্ধ ।
এই সমস্ত কফি ছারাও আরও নানা ধরনের কফি বাজারে পাওয়া যায় । আমরা সচরাচর যে কফি খাই সেগুলি বেশীর ভাগ ক্যাপুচিনো অথবা এসপ্রেসো কফি । ভারতবর্ষে এই কফি গুলির চাষ করা হয়ে থাকে । কফি গাছে একটি বিশেষ সময়ে কফি ফুল ফোটে সেই সময় কফি বাগান গুলির সৌন্দর্য থাকে দেখার মত । চা বাগন তো আমরা প্রায়সই দেখি কিন্তু কফি বাগান ও যে কত সুন্দর তা না দেখলে বিশ্বাস করা মুশকিল । কর্নাটক এবং তামিলনাড়ু র বিভিন্ন অঞ্চলে কফি বাগান দেখা যায় । বছরের বিভিন্ন সময়ে বহু পর্যটক এখানে বেড়াতে আসেন । কিছু সরকারি কফি বাগান গুলিতে সস্তায় কফি ও কিনতে পাওয়া যায়, বাইরে সেই কফি গুলির দাম হয়ত অনেকটাই বেশী ।
আজকের লেখাটি কেমন লাগলো অবশ্যই জানান আমাদের কমেন্ট বক্সে এবং আপনিও যদি কোনো কফি কাহিনী জানেন সেটাও লিখে জানাতে দ্বিধাবোধ করবেন না ।
[…] যেমন চকলেট, আঙুরের রস, পনির কিংবা কফি খেলেও মাথা ব্যাথা শুরু হতে পারে […]
[…] । রুটি অথবা পরোটা ছারা সামান্য এক কাপ কফির সাথেও আপনি স্নাক্স হিসেবেও খেতে […]