আজ বুধবার, হাতে গোনা মাত্র দুদিনের অপেক্ষা তারপরই সুর্য দেবতার নিকট নিজের ভক্তি সমর্পন করবে ভক্ত গন। অর্থাৎ দু দিন পর ছট পুজো। বিহারীদের প্রধান উৎসব। যদিও আমাদের ভারতবর্ষ ধর্মনিরপক্ষ দেশ। তাই বর্তমানে ছট পুজো শুধুমাত্র বিহারীদের সেটি বললে ভুল হবে। এই উৎসবটি বর্তমানে অন্য ধর্মাবলম্বী মানুষদের মধ্যেও পালিত হতে দেখা যায়। ধীরে ধীরে এই পার্বণ প্রবাসী ভারতীয়দের মাধ্যমে বিশ্বজুড়ে প্রচলিত হয়েছে। এই লৌকিক উৎসব পূর্ব ভারতের বিহার, ঝাড়খণ্ড, পূর্ব উত্তরপ্রদেশ এবং নেপালের তরাই অঞ্চলে পালিত হয়।
ছোট পুজোর আত্মকথা
এই পার্বনের নামকরন
ছট বা ছঠ, ষষ্ঠী নামের অপভ্রংশ। মূলত সূর্য ষষ্ঠী ব্রত হওয়ার দরুন একে ছট বলা হয়। ছট পুজো সূর্য দেবতা ও তার পত্নী ঊষার দেবীর প্রতি সমর্পিত হয়। সূর্য পত্নী ঊষা ছোটী মাঈ নামে সর্বত্র পরিচিত, ছট পুজোতে সূর্য ও ছোটী মাঈ-কে পৃথিবীতে জীবনের স্রোত বহাল রাখার জন্য ধন্যবাদ জ্ঞাপন ও আশীর্বাদ প্রদানের জন্য কামনা করা হয়। এছাড়া সন্তান লাভের জন্যো ছটি মায়ের পুজ করা হয়। ছটে কোনও মূর্তি পূজা করা হয় না সূর্যকেই এই পুজোর প্রধাণ আরাধ্য দেবতার আসনে বসানো হয়।
ছট পুজোর তিথি
কার্তিক মাসের অমাবস্যা তিথিতে দীপাবলি পালনের পর ছট পুজো পালিত হয়। চারদিন ব্যাপী এই পুজোর তিথি থাকে। এই চার দিনের ব্রত শুরু হয় কার্তিক শুক্লা চতুর্থী থেকে আর চলে সপ্তমী অবধি। এই পুজোর সবচেয়ে কঠিন ও তাৎপর্যপূর্ণ রাত্রি হল কার্তিক শুক্লা ষষ্ঠী। বিক্রম সংবৎ-এর কার্তিক মাসের শুক্লা ষষ্ঠী তিথিতে এই ব্রত উদযাপিত হওয়ার কারণে এর নাম ছট রাখা হয়েছে।
ভারতে সূর্য্যোপাসনার জন্য প্রসিদ্ধ পার্বণ হল ছট পূজা। এটি বছরে দুবার পালিত হয় — প্রথমবার চৈত্র মাসে (চৈতী ছট) এবং দ্বিতীয়বার কার্তিক মাসে (কার্তিকী ছট)। পারিবারিক সুখ-সমৃদ্ধি তথা মনোবাঞ্ছিত ফল লাভের জন্য নারী-পুরুষ নির্বিশেষে এই ব্রত পালন করে থাকে।
মহাকাব্যে ছট পুজোর অঙ্গীকার
রামায়ণ এবং মহাভারত দুই মহাকাব্যেই ছট পুজোর উল্লেখ রয়েছে। সূর্য বংশের সন্তান হওয়ার কারণে শ্রীরামচন্দ্র নিয়মিত ছট পুজো করতেন। বনবাস কাটিয়ে অযোধ্যা ফেরার সময় রাম ও সীতা সূর্য দেবের উদ্দেশ্যে পুজো ও উপবাস করেন। সেই থেকেই ছট পুজোর সূচনা বলে মনে করা হয়।
আবার মহাভারত অনুযায়ী, সূর্যদেব ও কুন্তীর পুত্র কর্ণ। কথিত, কর্ণ এই সময় সূর্যের আলোয় আবক্ষ জলে দাঁড়িয়ে দরিদ্রদের মধ্যে প্রসাদ বিতরণ করেছিলেন। আবার নিজেদের রাজ্য ফিরে পাওয়ার জন্য দ্রৌপদী ও পাণ্ডবরাও এই পুজো করেছিলেন বলেও কথিত রয়েছে।
অন্য এক আখ্যান মতে, পাণ্ডু ঋষি হত্যার পাপের প্রায়শ্চিত্তের কারণে পত্নী কুন্তীর সঙ্গে বনে থাকায় পুত্র প্রাপ্তির জন্য সরস্বতী নদীর পারে সূর্য্য উপাসনা এবং ব্রত করেছিলেন।
ছট পুজোর ‘খরনা’ রিতী কি?
ছোট পুজর কোন মন্ত্র নেই।। ভক্তগন মন থেকে এ পার্থনা করে, বা যে ভক্তিতে পুজো করে সেটিই মন্ত্র । ছট পুজো দির্ঘ চারদিন ব্যাপী চলে। চারদিন ধরে ব্রত পালনের রিতী রয়েছে। এই ব্রত খুবই কঠিন ব্রত প্রবল নিষ্ঠা, একাগ্রতা, দৈর্য্যের সহিত পালন করতে হয়।
প্রথম দিন, ঘরবাড়ি পরিষ্কার পরচ্ছন্ন করে, নিজেকে শুদ্ধিকরন করে নিরামিষ ভোজন গ্রহন করতে হয়। বিশেষ করে কুমড়োর সবজি দিয়ে ভাত খেয়ে তারপর ১২ ঘণ্টা উপবাসে থাকবে।
দ্বিতীয় দিন, থেকে উপবাশের পালা শুরু, দিনভর নির্জলা থেকে উপবাস পালনের পর সন্ধ্যায় পুজোর শেষে ক্ষীরের ভোগ গ্রহণ করতে হয়। এই জন্য এই রীতির নাম ‘খরনা’ রীতি।
তৃতীয় দিন, নিকটবর্তী নদী বা জলাশয়ের ঘাটে গিয়ে অন্যান্য ব্রতীদের সঙ্গে অস্তগামী সূর্যকে অর্ঘ্য অর্থাৎ দুধ, ফল অর্পণ করা হয়।
চতুর্থ দিন, অর্থাৎ ব্রতের শেষ দিন গঙ্গা ঘাটে গিয়ে উদীয়মান সূর্যকে পবিত্র চিত্তে অর্ঘ্যপ্রদানের পর উপবাসভঙ্গ করে মিষ্টান্ন, ক্ষীর, ঠেকুয়া, নাড়ু এবং আখ, কলা, মিষ্টি লেবু প্রভৃতি ফল খেয়ে উপবাস ভঙ্গ করতে হয় ও পরিচিত সকলকে প্রসাদ বিতরন করা হয়।
এই ভাবে যুগ যুগ ধরে চলছে ছট পুজোর রীতি। যা সকলেই অর্থাৎ বিহারের অধিবাসী ছাড়াও প্রায় হিন্দুধর্মাবলম্বী সকলেই এই পুজো করে থাকে।
[…] আরও পড়ুন : ছোট পূজোর আসল দেবতা কে?? […]