টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে এই প্রথম কোনও দল টিম ইন্ডিয়ার বিরুদ্ধে টেস্ট ক্রিকেটে 378 রানের বড় লক্ষ্য চেস করল। ইংল্যান্ড শুধু এই লক্ষ্যই অর্জন করেনি, যেভাবে একতরফাভাবে এই লক্ষ্য অর্জন করেছে, তাতে টিম ইন্ডিয়ার অনেক ত্রুটিই উন্মোচিত হয়েছে। রোহিত শর্মার অনুপস্থিতিতে এই ম্যাচের নেতৃত্ব দেওয়া হয়েছিল জাসপ্রিত বুমরাহর হাতে। প্রথম ইনিংসে বুমরাহ যেভাবে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে অধিনায়কত্ব করেছিলেন তাতে সবাই মুগ্ধ হয়েছিল, কিন্তু দ্বিতীয় ইনিংসে তার অভিজ্ঞতার অভাব স্পষ্টভাবে দেখা গিয়েছিল।
ভারত প্রথম ইনিংসে 416 রান করার পর প্রথম ইনিংসে ইংল্যান্ডকে 284 রানে আটকে দিয়েছিল। এরপর দ্বিতীয় ইনিংসে মাত্র 245 রানে অলআউট হয়ে যায় টিম ইন্ডিয়া। 378 রানের টার্গেট যথেষ্ট মনে হচ্ছিল, কিন্তু জো রুট ও জনি বেয়ারস্টো যেভাবে রান চেস করেছেন তা অনুযায়ী 500 রানের টার্গেটও কম পড়ত। জো রুট 142 ও বেয়ারস্টো 114 রান করে অপরাজিত প্যাভিলিয়নে ফেরেন। ইংল্যান্ড সাত উইকেটে ম্যাচ জিতে সিরিজে 2-2 সমতায় আনে। 2021 সালে শুরু হওয়া টেস্ট সিরিজের এমন সমাপ্তি খুব কম ক্রিকেটপ্রেমীই কল্পনা করেছিলেন।
আশ্বিনের প্রথম একাদশে না থাকা
একাদশে নেই আর অশ্বিন। এজবাস্টনের পিচ স্পিন বান্ধব, এমন পরিস্থিতিতে চারজন ফাস্ট বোলার নিয়ে মাঠে নামা টিম ইন্ডিয়ার অনুচিত হয়েছে বলে বিশেষজ্ঞের অনুমান। অশ্বিন যে ধরনের বোলার, তিনি জানেন কীভাবে সবচেয়ে বড় ব্যাটসম্যানদেরও প্যাভিলিয়নে ফেরাতে হয়। এজবাস্টন টেস্টের একাদশে তাঁর অনুপস্থিতি টিম ইন্ডিয়ার জন্য একদমই উপযোগী ছিলনা।
প্রথম ইনিংসে টপ অর্ডার ব্যাটিং ফ্লপ
প্রথম ইনিংসে 98 রানে পাঁচ উইকেট হারিয়েছিল টিম ইন্ডিয়া। শুভমান গিল, চেতেশ্বর পূজারা, হনুমা বিহারী, বিরাট কোহলি এবং শ্রেয়াস আইয়ার তাঁদের প্রমাণ করতে অক্ষম হয়েছিলেন। ঋষভ পন্ত এবং রবীন্দ্র জাদেজা সেঞ্চুরি না করলে এবং বুমরাহ স্টুয়ার্ট ব্রডের এক ওভারে 35 রান না করলে, এই ম্যাচে টিম ইন্ডিয়া কখনই এগিয়ে থাকত না।
ইংল্যান্ডকে প্রথম ইনিংসে ঘুরে দাঁড়ানোর সুযোগ দেওয়া
416 রান করার পর, টিম ইন্ডিয়া 83 রানে ইংল্যান্ডের পাঁচ ব্যাটসম্যানকে প্যাভিলিয়নে পাঠায়। জনি বেয়ারস্টোকেও পুরোপুরি সেট হিসেবে দেখা যায়নি। বিরাট কোহলির স্লেডিং বেয়ারস্টোকে যেন উজ্জীবিত করে তোলেন, তার পরে আর থামার নাম নেননি বেয়ারস্টো। বেয়ারস্টোর সেঞ্চুরিতে প্রথম ইনিংসে কিছুটা হলেও সম্মানজনক পরিস্থিতিতে ছিল ইংল্যান্ড। কিন্তু প্রথম ইনিংস ছিল শুধুই ট্রেলার। মনে হচ্ছিল ভারত অন্তত 200-এর লিড নেবে, কিন্তু বেয়ারস্টো টিম ইন্ডিয়ার এই স্বপ্ন পূরণ হতে দেননি।
দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটিংয়ের প্রতি উদাসীন মনোভাব
প্রথম ইনিংসের ভিত্তিতে লিড পাওয়ার পর, দ্বিতীয় ইনিংসে টিম ইন্ডিয়ার ব্যাটসম্যানদের অনেক বেশি স্বস্তিতে থাকতে দেখা গেছে। চেতেশ্বর পূজারা এবং ঋষভ পন্ত ছাড়া কেউই পঞ্চাশের স্কোর অতিক্রম করতে পারেননি। ভারতের দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটিংয়ে আলগা মনোভাব, শর্ট বল হাঁটু গেড়ে বসে থাকা ছেড়ে দেওয়া, এই ছিল এমন কিছু ভুল যা ম্যাচ হেরে ভারতকে শুধরে নিতে হবে।
দুর্বল ফিল্ডিং এবং প্রথম থেকেই একটা চাপের মধ্যে থাকা
ব্রেন্ডন ম্যাককালাম ইংল্যান্ডের প্রধান কোচ হওয়ার পর থেকে একটা বিষয় পরিষ্কার, এই দল তার অভিধান থেকে চাপের অর্থ মুছে ফেলেছে। ইংলিশ ব্যাটসম্যানরা যেভাবে 378 রানের টার্গেট চেস করল, তা সারা বিশ্বের কাছে একটি উদাহরণ। ওপেনারদের সেঞ্চুরি জুটি ইংল্যান্ড উপহার দিলেও তার পর দ্রুত তিন উইকেটের পতন ঘটে। জো রুট এবং জনি বেয়ারস্টোকে নিয়ে টিম ইন্ডিয়ার ফিল্ড সেটিংয়ে বুমরাহের অনভিজ্ঞতা স্পষ্টভাবে দৃশ্যমান ছিল। বাউন্ডারি বাঁচাতে মগ্ন টিম ইন্ডিয়া, দুজনেই সিঙ্গেল-ডাবল করে ম্যাচকে ভারতের নাগালের বাইরে নিয়ে যায়। বেয়ারস্টো যে ধরনের ফর্মে আছেন, এমনকি তাঁকে একটি জীবনদানও দেওয়া উচিত নয় এবং ভারতীয় দল তাঁকে দুটি জীবনদান দিয়েছে। ইংল্যান্ডের প্রশংসা করতেই হবে, কিন্তু টিম ইন্ডিয়া যেভাবে ইংল্যান্ডকে এই জয় উপহার দিয়েছে, তাতে দলের পারফরম্যান্সের একটা পর্যালোচনা করাটা দরকার ছিল।