উত্তরপ্রদেশে নয়া জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ বিল,কংগ্রেস ও সমাজবাদী নেতাদের বিরোধ – শিরিন শবনম পারভীন

গতকাল,১১ই জুলাই ছিল বিশ্ব জনসংখ্যা দিবস।ভারতের সবচেয়ে জনবহুল রাজ্য উত্তরপ্রদেশের সার্বিক উন্নয়নের লক্ষ্যে উত্তরপ্রদেশ সরকার গতকাল এক নতুন আইন প্রণয়নের কথা জানিয়েছে।কাল উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ নিজের রাজ্যের জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের কথা বলতে গিয়ে বলেন , তাঁরা আগামী ২০২৬ এর মধ্যে ইউপির জনসংখ্যা ২.১ হারে কমাতে চান কারণ তাঁর মতে জনসংখ্যা বৃদ্ধিই হল সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে বৈষম্যের কারণ।সেইজন্যই তাঁরা দ্বি-সন্তান নীতি চালু করার কথা ভাবছেন।রাজ্য সরকার সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষের কথা ভাবনা চিন্তা করেই এই আইন আনবে বলে তাঁর মতামত।তিনি আরও বলেন যে,”জনসংখ্যা আইন শুধুমাত্র বাড়ন্ত জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণেই সহায়তা করবেনা এটি নাগরিকদের জীবনে খুশি এবং উন্নতি আনার পথ দেখাবে”।

এই আইনের খসড়া তৈরির পর জনগণের মতামত চাওয়া হবে।মূলত জনসংখ্যা ইস্যুই আগামী বছরের বিধানসভা নির্বাচনের প্রধান রাজনৈতিক ইস্যু হয়ে দাঁড়িয়েছে।

এই খসড়া আইনটির প্রস্তাবনা হিসাবে বলা হয়েছে যে,যাদের দুই সন্তানের অধিক সন্তান থাকবে তারা স্থানীয় ভোটে দাঁড়াতে পারবেন না,সরকারি চাকরি পাবেন না এবং অন্যান্য সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হবেন। এমনকী সরকারি চাকুরেদের পদোন্নতিও আটকে দেওয়া হবে।

অন্যদিকে,যাঁরা এই বিল মেনে চলবেন সরকারিভাবে তাঁদের জন্য সুযোগসুবিধাও দেওয়া হবে। উত্তরপ্রদেশ আইন কমিশনের চেয়ারম্যান আইনজীবী এ এন মিত্তল এ দিন বলেন যে বিল অনুসারে,”যে সমস্ত সরকারি চাকুরীজীবী দ্বি সন্তান নীতি মেনে চলবেন,তাঁরা পুরো চাকুরীজীবন ধরে তাঁদের মাইনের সঙ্গে দুটি অতিরিক্ত ইনক্রিমেন্ট পাবেন।মাইনে এবং অন্যান্য সুযোগ সুবিধার সঙ্গে ১ বছরের মাতৃত্বকালীন ছুটি এবং সেরকম অবস্থায় পিতৃত্বকালীন ছুটি পাবেন এবং ন্যাশনাল পেনশন স্কিমের অন্তর্গত ইপিএফ ফান্ডে ৩% বৃদ্ধি পাবেন।এ ছাড়াও সন্তানের স্বাস্থ্য ও শিক্ষায় ফ্রী পরিষেবা পাবেন।যাঁরা সরকারি চাকুরীজীবী নন তারা জল এবং ইলেক্ট্রিসিটি বিলে ছাড় পাবেন।এছাড়া গৃহকর ও গৃহঋণের সুদেও ছাড় পাবেন।”

যদিও বিরোধীপক্ষ হিসাবে কংগ্রেসের মতামত,”এটি একটি রাজনৈতিক বিষয়” এবং সমাজবাদী পার্টি এটিকে “গনতন্ত্রের হত্যা” বলে অভিহিত করেছে।

population
livelaw.in

কেন্দ্রীয় মন্ত্রী মুখতার আব্বাস নাকভি বলেছেন,যদি উত্তরপ্রদেশ সরকার জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে সচেতনতা আনার জন্য এটি করে থাকে তাহলে এটিকে অবশ্যই “স্বাগতম” জানানো উচিত।১৯৭০ এর কংগ্রেসের প্রচেষ্টার কথা মনে করিয়ে দিয়ে তিনি আরও বলেন,”একসময় কংগ্রেস এইরকম একটি আইন প্রণয়নের জন্য ঘৃণ্য প্রচেষ্টা চালিয়েছিল,ফলে এটি ব্যর্থ হয়।কিন্তু মানুষের মধ্যে ভালোভাবে সচেতনতা আনাই যায়”।বলা বাহুল্য,১৯৭০ সালের কংগ্রেসের প্রচেষ্টা দেশজুড়ে ক্ষোভের সঞ্চার করেছিল।

আসামের মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত বিশ্ব শর্মা জনসংখ্যা কমাতে ইতিমধ্যেই মুসলিমদের সাহায্য চেয়েছেন।
শনিবারে তিনি বলেছেন যে,রাজ্য সরকার স্বেচ্ছাসেবী নির্বীজন এবং অন্যান্য জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ পদক্ষেপের উপর আজ,সোমবারের বিধানসভা সেশনে একটি “বড়সড় ঘোষণা” করতে চলেছে।

সম্বলের সমাজবাদী পার্টির এম এল এ ইকবাল মাহমুদ গতমাসে বলেন,যে কোনো রকমের জনসংখ্যা আইন আদতে মুসলিমদের বিরুদ্ধে একটি “ষড়যন্ত্র”।প্রেস ট্রাস্ট অফ ইন্ডিয়াকে তিনি বলেন,”ভারতের জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণ আসলে দলিত এবং আদিবাসীরা।মুসলিমরা ইতিমধ্যেই দুই সন্তান বা তিন সন্তানের প্রয়োজনীয়তা বুঝেছে।”

সমাজবাদী পার্টির MLC আশুতোষ সিনহা পিটিআইকে বলেন, “এই বিল আনা মানেই গনতন্ত্রের হত্যা।উত্তরপ্রদেশ সরকারের এই সিদ্ধান্ত একেবারেই অপরিণত সিদ্ধান্ত।”

কংগ্রেসের উত্তরপ্রদেশের মুখপাত্র অশোক সিং এক হিন্দি টুইটে বলেন,” আরএসএস ও বিজেপিরা সবসময় জনসংখ্যা বাড়ানোর কথা বলেন।আসলে তাদেরই জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ দরকার। যোগিজি আসলে উত্তরপ্রদেশের আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনের কথা মাথায় রেখেই এই বিল আনতে চলেছেন।”