শনিবার রাত থেকেই একটা টানটান উত্তেজনায় মগ্ন ফুটবল প্রিয়রা।কোপা আমেরিকার ফাইনালে আর্জেন্টিনা বনাম ব্রাজিল। অন্যদিকে মেসি বনাম নেইমার।অবশেষে রুদ্ধশ্বাস মহারণ শুরু হলো রবিবার ভোরে। ঘুমপ্রিয় বাঙালিও ভোরের এলার্মে চোখ কোচলে বসলো টিভি অথবা ফোনের সামনে। টানটান উত্তেজনায় কেউ গলা ফাটালেন নেইমারের হয়ে আবার কেউ L.M.10. দেশের বাইরে অন্যদেশের সাপোর্টে যা নেট দুনিয়ায় ‘মেরি দুসরি কান্ট্রি’ নামেও পরিচিত। তবে নেইমার জানালেন নেইমারের দুনিয়ায় মেসির জন্য কোনো ‘বনাম’ নেই,আছে শুধুই বন্ধুত্ব।নেইমার ঠিক এতটাই শ্রদ্ধা করেন তাঁর প্রাক্তন সতীর্থ মেসিকে। আর কেনই বা করবেন না! ২০১৩ সালে স্যান্টোস থেকে ব্রাজিলের ‘ওয়ান্ডার কিড’ হয়ে বার্সেলোনায় আসে নেইমার।
সাও পাওলোর ২১ বছরের ছেলেটা যখন ২০১৭ সালে বার্সা ছেড়ে প্যারিস সাঁ জাঁয় খেলতে ঢুকল ততদিনে তার সুপারস্টার তকমা জুটে গিয়েছে। বিশ্ব ফুটবল দেখে নিয়েছে ‘এমএসএন’ (মেসি-সুয়ারেজ-নেইমার) ত্রয়ীকে। স্প্যানিশ জায়ান্টদের হয়ে খেলতে খেলতে পাঁচ বছরের বড় মেসিই হয়ে গিয়েছিল তাঁর সবচেয়ে কাছের বন্ধু। এক সঙ্গে মাঠে রক্ত-ঘাম মাখামাখি করা থেকে ট্রফিতে কামড় বসানো! অবসরের আনন্দে মেতে ওঠা। এসবই বন্ধু মেসির সঙ্গে তাঁর স্মৃতিতে জ্বলজ্বল করে। এক-আধ বছর তো নয়। টানা পাঁচ বছর মেসির সঙ্গে ড্রেসিংরুম থেকে সবুজ গালিচা ভাগ করে নিয়েছেন নেইমার। জিতেছেন আটটি ট্রফি (ব্যাক-টু-ব্যাক লা লিগা, কোপা দেল রে-র হ্যাটট্রিক, একবার সুপারকোপা দে এসপানা, একবার উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ও ফিফা ক্লাব বিশ্বকাপ)।নেইমার চেয়েছিলেন বটবৃক্ষ মেসির ছায়া থেকে বেরিয়ে এসে আলাদা ভাবে কিছু করতে।তাই স্পেন ছেড়ে চলে আসেন প্যারিসের ক্লাবে। কিন্তু গাছের ছায়ায় যে নেইমারও সমৃদ্ধ হয়েছে প্রতিদিন। তাঁর দেখা জীবনের সেরা ফুটবলারের থেকে রোজ শিখেছেন কিছু না কিছু।
তাই দেশের হয়ে কোপা যুদ্ধের প্রাক্কালেও নেইমারের মুখে শুধুই মেসির স্তুতি। সাংবাদিকদের নেইমার বলছেন, “আমি আগেও বলেছি আবার বলছি, মেসির চেয়ে ভাল প্লেয়ার দেখিনি। আমার দারুণ বন্ধু ও। কিন্তু এখন আমরা ফাইনাল খেলছি, তাই প্রতিদ্বন্দ্বিতা। আমি সত্যিই দেশের জন্য কোপা আমেরিকা জিততে চাই। মেসিও চায় দেশের জন্য ট্রফি জিততে। এটা ওর বহু বছরের স্বপ্ন। যখন কোনও টুর্নামেন্টে ব্রাজিল খেলেনি, আর্জেন্টিনা খেলেছে আমি কিন্তু ওর সমর্থনে গলা ফাটিয়েছি। ২০১৪ বিশ্বকাপ ফাইনালে জার্মানি ম্যাচ থেকে করে আসছি। হয়তো ফাইনালের জন্য এখন বন্ধুতার সমীকরণ অন্যরকম ঠিকই। কিন্তু আমাদের পারস্পরিক সম্মান এখনও অসাধারণ। এরকম একটা সম্পর্ক যে বন্ধুতা ভুলে যাওয়া অসম্ভব। একটা উদাহরণ দিচ্ছি আমরা তো ভিডিও গেমস খেলার সময়েও বন্ধুকে হারাতে চাই। ফাইনালেও সেটাই হবে।”নেইমারের লড়াই নিজের দেশের জন্য,মেসির বিরুদ্ধে নয় তা আবারও প্রমান হয়ে গেলো ম্যাচ শেষের দুই তারকা ফুটবলারের আলিঙ্গনে। তাঁরা দুজনেই যেমন নিজের দেশের প্রতি,ফুটবলের প্রতি কমিটেড তেমনই প্রতিজ্ঞাবদ্ধ নিজেদের বন্ধুত্বের প্রতি। আর্জেন্টিনার জার্সি গায়ে ট্রফি নিয়ে আজ আনন্দে মাতলেন ক্যাপ্টেন মেসি,আগামী দিনে কখনও নেইমারের কোনো জয়ে একই ভাবে মেসিও আনন্দিত হবেন এই আশা রাখাই যায়।স্বপ্নের ফাইনালে ট্রফি পেয়েছেন মেসির দল,চোখে জল এসেছে ব্রাজিল সমর্থকদেরও।মেসির জন্য এই জয় প্রার্থনা করেছেন অনেক ব্রাজিল সমর্থকও। চেয়েছেন গোটা ম্যাচে দুর্দান্ত পারফরম্যান্স রাখা নীলসাদা জার্সির ঘরেই আসুক ফাইনালের জয়ধ্বজা।
আর্জেন্টিনা সমর্থকরা দমবন্ধ পরিস্থিতি কাটিয়ে স্বস্থির নিঃশাস ফেলেছে। জয়ধ্বনিতে কান পাতলেই ভেসে উঠেছে একটাই নাম ‘মেসি’।ফাইনালে হেরে গিয়েও বন্ধুর জয়তে নেইমারের খুশিও নিঃসন্দেহে মন ছুঁয়েছে সকলের।স্পোর্টম্যান স্পিরিট তো একেই বলে। অনেক ট্রফি নিজের ঝুলি তে থাকলেও আজ প্রথমবার কোপা আমেরিকার ট্রফিতে চুম্বন লিও-র।ফুটবল প্রেমীদের কাছে এ এক অন্য ভোর হয়ে থাকবে।