নিজস্ব সংবাদদাতা: ভোটের ফলাফল প্রকাশের পর থেকেই অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগে জেরবার রাজ্য বিজেপি। কেন্দ্রের ৩ পর্যবেক্ষকের ওপর চাপা ক্ষোভ তো ছিলই। সাথে এবার রাজ্য বিজেপির অন্দরেই প্রবল দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হলো। ভোটে সেলিব্রিটি-প্রার্থীদের নিয়ে তথাগত রায়ের বিস্ফোরক অভিযোগের প্রেক্ষিতে জবাব দিলেন দিলীপ ঘোষ। নাম না করে বিজেপি রাজ্য সভাপতি বললেন, “আমি পালানোর রাজনীতি করি না। কেউ কল্পনার জগতে থাকতেই পারেন। কিন্তু, আমরা বাস্তবে লড়াই করেছি।”
তথাগতর নাম না করেই দিলীপ বলেন, আমরা লড়াই করেছি। এটা অসম যুদ্ধ। বঙ্গ রাজনীতির ইতিহাসে এখনও পর্যন্ত রেকর্ড সিট আমরা জিতেছি। যেটা কেউ কল্পনা করেননি। আমরা এখনও লড়াই করছি। যে কর্মীরা হাতে প্রাণ নিয়ে তৃণমূলের বিরুদ্ধে লড়াই করছেন আমরা তাঁদের সঙ্গে আছি। আগামী দিনেও লড়াই জারি থাকবে। তাঁর আরও দাবি, “আগের থেকে ভাল ফল হয়েছে। আজ নয়তো কাল পরিবর্তন হবেই।”
তথাগত মন্তব্যের প্রেক্ষিতে নিজের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন বিজেপি নেতা রাহুল সিনহাও। তিনি বলেন, “এখন নিচুতলার কর্মীদের পাশে দাঁড়ানো দরকার। কর্মীদের উদ্ধার করা দরকার। এটাই প্রথম কাজ। পরে হারার বিভিন্ন কারণের ময়নাতদন্ত করা যাবে।” উল্লেখ্য, দু’শোর টার্গেট নিয়ে লড়াই করতে নেমে, একশোও ছুঁতে পারেনি বিজেপি। কিন্তু, খোদ নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহ বাংলায় ঝাঁপিয়ে পড়ার পরও বিজেপির এরকম ভরাডুবি কেন? তা নিয়ে কাটাছেঁড়া শুরু হয়েছে দলের অন্দরে।
এর মধ্যেই খারাপ ফল নিয়ে সামনে চলে এল বিজেপির অন্তর্দ্বন্দ্ব। ঠিক ভোটের মুখে বিজেপিতে আসা একগুচ্ছ তারকাকে প্রার্থী করে ভোটের ময়দানে নামিয়েছিল বিজেপিও। কিন্তু, এদের মধ্যে হিরণ চট্টোপাধ্যায় ব্যতীত একজনও জিততে পারেননি। এই প্রেক্ষাপটে সবেমাত্র রাজনীতিতে আসা তারকাদের প্রার্থী করা নিয়ে সরাসরি রাজ্য এবং কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের নাম করে, তাঁদের দিকে প্রশ্ন ছুড়ে দিয়েছেন বিজেপির প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি তথাগত রায়।
টুইটারে তিনি লিখেছেন, তাঁদেরকে টিকিট দিয়েছিল কে? দিলীপ ঘোষ, কৈলাশ বিজয়বর্গীয়, অরবিন্দ প্রভুরা এই বিষয়ে একটু আলোকপাত করবেন কি? কেনই বা তাঁদের ভোটে লড়ার জন্য টিকিট দেওয়া হয়েছিল? শুধু তাই নয়। তথাগত রায়ের রোষে পড়েন তারকা-প্রার্থীরাও। তিনি বলেন, এই সব তারকাদের সঙ্গে রাজনীতির কোনও সম্পর্ক নেই। অথচ বরানগর থেকে পার্নো মিত্র , বেহালা পশ্চিম থেকে শ্রবন্তী চট্টোপাধ্যায়, বেহালা পূর্ব থেকে পায়েল সরকারকে নির্বাচনে টিকিট দিয়েছে বিজেপির নির্বাচনী কমিটি।
এরপর তিনি বলেন, “এই মহিলারা রাজনৈতিকভাবে এমনই বুদ্ধিহীন যে তাঁরা তৃণমূলের নেতা মদন মিত্রের সঙ্গে স্টিমারে চেপে প্রমোদ ভ্রমণে গেছিলেন নির্বাচনের মাত্র একমাস আগে। এমনকী তাঁর সঙ্গে সেলফিও তুলেছেন। এঁরা প্রত্যেকেই হেরে ভূত হয়েছেন। পার্নো মিত্র অবশ্য প্রমোদ ভ্রমণে যাননি। কিন্তু এই মহিলাদের মধ্যে রাজনৈতিক কী গুণ আছে?” বর্ষীয়ান নেতা আরও বলেন, এটা ভুলে গেলে চলবে না যে বিজেপির টিকিট পেলে নির্বাচনের কাজের জন্য যথেষ্ট অর্থও পাওয়া যায়। এর কি অন্য কোনও উদ্দেশ্য আছে তাহলে?
তবে এই মন্তব্যের তীব্র সমালোচনা করে, বিজেপি নেতা তথাগত রায়ের দিকে পাল্টা চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছেন বেহালা পশ্চিমের পরাজিত বিজেপি প্রার্থী অভিনেত্রী শ্রাবন্তী চট্টোপাধ্যায়। বলেন, কোনো প্রমাণ আছে টাকা নিয়েছি? মহিলা সম্পর্কে এমন মন্তব্য করছেন। একজন সিনিয়র নেতা হয়ে কী করে বলেন? এদিকে, যে মদন মিত্রর সঙ্গে বিজেপির তারকা প্রার্থীদের নৌকোবিহার নিয়ে তথাগত রায়ের এই ক্ষোভ, তিনি অবশ্য বিষয়টিতে গুরুত্বই দিচ্ছেন না। স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতে তথাগত রায়ের উদ্দেশে কটাক্ষ ছুড়ে দিয়েছেন তিনি। বলেন, আমি রাজনীতির প্লে বয়। উনি হতে পারেননি। তাই এত রাগ!”