নিজস্ব সংবাদদাতা: বাম আমলে এই কেন্দ্র থেকে জিততেন তৎকালীন অর্থমন্ত্রী অসীম দাশগুপ্ত। সেই জমানায় পাঁচ দফায় খড়দহ কেন্দ্র থেকে জিতেছিলেন তিনি। এর পরে দু’দফায় অসীমবাবুকে হারিয়ে বিধানসভায় যান তৃণমূলের অমিত মিত্র এবং কাকতালীয়ভাবে তিনিও রাজ্যের অর্থমন্ত্রী হন। তাই স্বাভাবিকভাবেই টানা ৩৫ বছর ধরে যে কেন্দ্র রাজ্যের অর্থমন্ত্রীদের উপহার দিয়েছে, সেই খড়দহ কেন্দ্রের ভোট নিয়ে মানুষের মনে আগ্রহ তো থাকবেই।
এদিকে, স্বাস্থ্যের অবনতির কারণে অমিতবাবু এ বারের ভোটে লড়ছেন না। তাঁর বদলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রার্থী করেছেন খড়দহের ঘরের ছেলে কাজল সিংহকে। খড়দহ বইমেলা থেকে শুরু করে করোনা-আক্রান্তদের জন্য সেফ হোম তৈরি- সব কিছুতেই বরাবর অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে দেখা গিয়েছে কাজলবাবুকে। এমনকি স্থানীয় পুরসভার কাউন্সিলরও হয়েছেন। তাই জেতার বিষয়ে খুবই আত্মপ্রত্যয়ী তিনি। আর সেই আত্মবিশ্বাসের সুরেই বললেন, ‘‘এলাকায় আমাকে চেনেন না এমন মানুষ একটাও নেই।’’
ইতিমধ্যেই এলাকার বিশিষ্টজনেরা কাজলবাবুকে জেতানোর জন্য ভোটারদের কাছে আবেদন করে লিফলেট বিলিও শুরু করেছেন। তবে খড়দহে গিয়ে এমন কথাও শোনা গেল, “তৃণমূলের প্রার্থী আদৌ ভবিষ্যতে তৃণমূলে থাকে নাকি সেটাই প্রধান বিষয়। এখানকার বিজেপি প্রার্থী তো তৃণমূল ঘুরে আসা।” উল্লেখ্য, এই কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী শীলভদ্র দত্ত কিছু দিন আগেও ছিলেন পাশের ব্যারাকপুর কেন্দ্রের তৃণমূল বিধায়ক। বহু টানাপড়েনের পরে গত ডিসেম্বরে শুভেন্দু অধিকারীর সঙ্গেই বিজেপিতে চলে গিয়েছেন তিনি।
সেই বিজেপি প্রার্থী শীলভদ্র বাবুর কথায়, ‘‘তৃণমূলে কাজ করতে পারিনি। পলিটিক্যাল লোক আমি। তাই কাজ করতে চেয়েছি। কিন্তু পারিনি।’’ তাহলে এ বার? তিনি বলছেন, ‘‘প্রচারে বেরিয়ে লোকের বাড়ি বাড়ি গিয়ে তৃণমূলের দুর্নীতির কথাই বলছি। এক বার পাতুলিয়া, বন্দিপুর এলাকায় যান। দেখবেন, এখনও পানীয় জল নেই, রাস্তা নেই। বছরের পর বছর এই কেন্দ্র থেকে জিতে প্রার্থীরা রাজ্যের অর্থমন্ত্রী হয়েছেন। তাতে এখানে কী পরিবর্তন হয়েছে?’’ শীলভদ্রের দাবি, ‘‘যদি মানুষ নির্বিঘ্নে ভোট দিতে পারেন, তা হলে তৃণমূলের এখানে চিন্তা রয়েছে।’’
এদিকে এই কেন্দ্রের সংযুক্ত মোর্চার প্রার্থী একদা এসএফআই-এর রাজ্য সম্পাদক দেবজ্যোতি দাস। সিপিএম যে এক ঝাঁক তরুণ-তরুণীকে এ বারের নির্বাচনে বাংলার বিভিন্ন কেন্দ্রে প্রার্থী করেছে, দেবজ্যোতি তাঁদেরই মধ্যে এক জন। তবে তাঁকে নিয়ে তাঁর বিরোধী দুই প্রার্থীর ব্যক্তিগত ভাবে কোনও কিছুই বলার নেই বলে জানালেন। শীলভদ্রবাবু বললেন, ‘‘ছাত্র রাজনীতি থেকে যারা উঠে আসে, তারাই তো ভবিষ্যতের হাল ধরবে। কিন্তু সিপিএম সমর্থকেরা কি আদৌ নিজেদের প্রার্থীকে ভোট দেবেন? আইএসএফের সঙ্গে জোট কিন্তু অনেক বাম সমর্থকই ভাল চোখে দেখছেন না।’’ তবে সেসব কথার তোয়াক্কা না করে পদ্ম আর ঘাসফুলের সঙ্গে লড়াই করে খড়দহে লাল গোলাপ ফোটানোর স্বপ্ন নিয়ে ছুটে চলছেন দেবজ্যোতি। তাঁর মোবাইলে ফোন করলেও রিংটোন- ‘আমার সকল কাঁটা ধন্য করে ফুটবে ফুল ফুটবে। আমার সকল ব্যথা রঙিন হয়ে গোলাপ হয়ে উঠবে।’