নিজস্ব সংবাদদাতা: ২০১১ সালে বাম শাসনকে ক্ষমতা থেকে হঠিয়ে বাংলার মসনদে বসেছিলেন মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আর ঠিক তার ১ বছরের মধ্যে, ২০১২ সালে শুরু হয় তাঁর অন্যতম শ্রেষ্ঠ প্রকল্প কন্যাশ্রীর শুভযাত্রা। সে যাত্রা আজও আগের মতই স্বমহিমায় বহমান। মূলত, নারী ক্ষমতায়নের দিকে নজর দিয়েই এই প্রকল্প চালু করেছিলেন মমতা। পাশাপাশি মেয়েদের উচ্চ শিক্ষার সুযোগও করে দিয়েছিল রাজ্য সরকারের এই উদ্যোগ।
কন্যাশ্রী প্রকল্প অনুযায়ী, ১৩ বছর থেকে ১৮ বছর বয়সী মেয়েদের ক্লাস এইট থেকে বছরে ৭৫০ টাকা করে দেওয়া হবে। ১৮ বছর বয়স হলে অবিবাহিত মেয়ের উচ্চ শিক্ষার জন্য ২৫ হাজার টাকা দেবে সরকার। মূলত আর্থিক ভাবে পিছিয়ে পড়া মানুষের কথা ভেবেই রাজ্যের এই প্রকল্প। যে সব পরিবারে বার্ষিক রোজগার ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকা বা তার কম তারাই একমাত্র কন্যাশ্রীর সুবিধা পায়।
সরকারি তথ্য অনুযায়ী, ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২১ পর্যন্ত ২ কোটি ১৭ লক্ষ ২৯ হাজার ৮০২ টি আবেদন জমা পড়েছে। যার মধ্যে ২ কোটি ১৪ লক্ষ ১৯ হাজার ৭২৯ টি আবেদন পত্র এখনও মঞ্জুর হয়েছে। এই প্রকল্পে ইউনিক বেনিফিসিয়ারীর সংখ্যা ৭০ লক্ষ ৪ হাজার ৯৯৫ জন। বিশেষজ্ঞদের মতে, সামাজিক এবং অর্থনৈতিক দিক থেকে পিছিয়ে পড়ার কারণেই অনেক পরিবার পয়সার অভাবে ১৮ হওয়ার আগেই তাঁদের বাড়ির মেয়েদের বিয়ে দিয়ে দেন। তবে কন্যাশ্রী প্রকল্প শুরু হওয়ার পরে এই অবস্থা অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে এসেছে। বাম আমলে ২০০৫-০৬ সালে স্কুল ছুট ছাত্রীর সংখ্যা ছিল ৮৫ শতাংশ, যা বর্তমানে কমে হয়েছে ৩৩ শতাংশ।
মমতা সরকারের এই কন্যাশ্রী প্রকল্প ইতিমধ্যেই দেশে-বিদেশে সমাদৃত হয়েছে। উল্লেখ্য, সরকারি এই সাহায্য আসলে মেয়েটির সামাজিক ও মনস্তাত্বিক স্ফিয়ারে আরও পোক্ত হয়ে ওঠার অনুঘটক মাত্র। সামান্য আর্থিক সহায়তার বিনিময়ে সেই মেয়েটি পড়াশোনা জারি রাখবে। স্টাইপেন্ড একদিকে পড়ার খরচ বাঁচিয়ে দিচ্ছে, আবার এই স্টাইপেন্ডই মেয়েটিকে এনে দিচ্ছে সামাজিক ও মনস্তাত্বিক জগতে লড়ে বাঁচার বুক ভরা আত্মবিশ্বাস। যা নারী ক্ষমতায়নের গোড়ার কথা বলেই মত।
বর্তমানে বাংলার শিয়রে একুশের বিধানসভা ভোট। তার আগে গেরুয়া শিবির সর্বশক্তি নিয়ে ঝাঁপিয়েছে বাংলা দখলের লড়াইয়ে। তৃণমূল সরকারের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ নিয়ে বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব জনসভা থেকে সরব হচ্ছেন। এই পরিস্থিতিতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দলকে নির্দেশ দিয়েছেন রাজ্যের উন্নয়নের খতিয়ান হাতিয়ার করে জনতার দরবারে যেতে হবে। রাজ্য সরকারের অন্যান্য প্রকল্পগুলির মত কন্যাশ্রীর আওতায়ও রেকর্ড সংখ্যক নাম নথিভুক্ত হয়েছে। সেদিক থেকে বিচার করে রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের অনেকেরই মত, এই কন্যাশ্রী প্রকল্প তৃণমূলকে আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে বাড়তি মাইলেজ দেবে।