নিজস্ব সংবাদদাতা- পশ্চিমবঙ্গের এবারের ভোটে তারা যে নির্লজ্জ সাম্প্রদায়িক তাস খেলার চেষ্টা করছে তারা আরও একবার প্রমান করে দিল বিজেপি নেতৃত্ব। পশ্চিমবঙ্গবাসীর মধ্যে সাম্প্রদায়িক বিভাজন ঘটানোর লক্ষ্যে এর আগে বিজেপি নেতৃত্ব একের পর এক পদক্ষেপ নেয়। তবে আজকের ঘটনা বোধহয় সমস্ত কিছুর সীমা ছাড়িয়ে গেল। এক বিতর্কিত টুইট করে রাজ্য বিজেপির কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক কৈলাস বিজয়বর্গীয় দাবি করেন তৃণমূল ক্ষমতায় আসলে উপমুখ্যমন্ত্রী মতো গুরুত্বপূর্ণ পদে বসবেন ফুরফুরা শরীফের পীরজাদা আব্বাস সিদ্দিকী।
টুইটে কৈলাস বিজয়বর্গীয় লিখেছেন, “পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক সমীকরণ- তৃণমূল কংগ্রেস ক্ষমতায় আসলে উপমুখ্যমন্ত্রী হবেন আব্বাস সিদ্দিকী! এদিকে বাম-কংগ্রেস জোটের মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী আব্দুল মান্নান!! কলকাতার মেয়রের নাম ফিরহাদ হাকিম!!! এ বাংলা কোন দিকে এগিয়ে চলেছে? বাংলার মানুষের এবার ভাববার সময় এসে গিয়েছে।”
কৈলাস বিজয়বর্গীয়র টুইটে ইঙ্গিত পরিষ্কার তিনি রাজ্যের গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক পদগুলি মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষের হাতে চলে যাওয়ার দিকে ইঙ্গিত করেছেন। ঘটনা হল তিনি এই ইঙ্গিত করতে গিয়ে মিথ্যা তথ্যের আশ্রয় পর্যন্ত নিয়েছেন। কারণ বাম-কংগ্রেস জোটের সঙ্গে আব্বাস সিদ্দিকের দল ইন্ডিয়ান সেকুলার ফ্রন্ট জোট বাঁধা নিয়ে আলোচনা করলেও তিনি বিজেপির পাশাপাশি তৃণমূলের তীব্র বিরোধিতা করেছেন। তাই আব্বাস সিদ্দিকী কিভাবে রাজ্যের উপমুখ্যমন্ত্রী হবেন সেটা কারোর কাছে পরিষ্কার নয়!
এদিকে বামফ্রন্ট ও কংগ্রেস এবারে জোট বেঁধে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার বিষয়ে ইতিমধ্যে সম্মত হলেও জোটের মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী হিসেবে কারোর নাম ঘোষণা করা হয়নি। সেখানে আব্দুল মান্নানের নাম তোলাটা কেবলমাত্র খেয়াল ছাড়া আর কিছুই নয়। বিশেষত কিছুদিন আগেই বিধানসভার বিরোধী দলনেতা আব্দুল মান্নান জানিয়েছেন তিনি এবারের নির্বাচনে আর প্রতিদ্বন্দিতা করবেন না।
রাজ্য বিধানসভার বিরোধী দলনেতা আব্দুল মান্নান বা কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম, এরা দুজনেই এ রাজ্যের রাজনীতিতে নিজেদের যোগ্যতায় জায়গা করে নিয়েছেন। কোনো যোগ্য মানুষকে পিছনে ঠেলে দিয়ে তারা সামনের সারিতে উঠে এসেছেন ব্যাপারটি মোটেও সেরকম নয়। মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষ বিভিন্ন পদে বসে থাকার দিকে ইঙ্গিত করে কৈলাস বিজয়বর্গীয়র এই টুইটের মূল উদ্দেশ্যই হল ভোটের আগে রাজ্যের হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষের মনে মুসলমান ক্ষমতায়ন নিয়ে ভয় ঢুকিয়ে দেওয়া।
এরাজ্যে সংখ্যালঘু ভোটের পরিমাণ ৩০ শতাংশ। উল্টোদিকে ৭০ শতাংশ মানুষ সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দু সম্প্রদায়ের। রাজনৈতিক মহলের মতে পশ্চিমবঙ্গের ক্ষমতা দখলের উদ্দেশ্যে বিজেপি সংখ্যাগুরু ভোটব্যাংকে একত্রিত করার চেষ্টা করছে। তারা সংখ্যালঘু ভোট পাওয়ার আশা একরকম ত্যাগ করে সংখ্যাগুরুর ভোট যত বেশি সম্ভব পাওয়ার মধ্য দিয়ে রাজ্যের ক্ষমতা দখলের পরিকল্পনা সাজিয়েছে। তাদের এই পরিকল্পনা স্বাধীনতা পরবর্তী পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতির ক্ষেত্রে অশনিসঙ্কেত বলা যায়।