সকালবেলা ঘুম দিয়ে উথেই গরম কাঁপে চুমুক দিয়ে যেই কাজটি করি সেটি হল মোবাইল নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ার নিউজ ফিড চেক করা। কি কি নতুন আপডেট আছে। তারপর যাবতীয় বাদবাকি কাজ। ৮ থেকে ৮০ বয়সী সকলেই বর্তমান যুগে সশ্যল মিডিয়ায় আসক্ত। এক সময় ছিল যখন মানুষ চায়ের কাঁপে চুমুক দিয়ে খবরের কাগজ নিয়ে বসত, গোটা দেশ – বিদেশের হাড়ির খবর জানতে। কিন্তু এখন সেসবের পর্ব চুকে গেছে । অত বড় পেপার সামলানো এখন ওল্ড ফ্যাশান দায় তাই চতুষ্কোনা ফোনটি নিউ ট্রেন্ড । হাড়ির খবরও পাওয়া যায়, বিনোদন আসে ভরপুর। বন্ধু, আত্মীয় পরিজনের সাথে চ্যাটে গল্পের আসর বসানো যায় ভার্চুয়ালি। আমরা সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করে অনেকেই প্রচুর উপকৃত হয়েছে তা অস্বীকার করার উপায় নে।, কারোর জীবনে রোজগার এসেছে, তো কারোর জীবনে এসেছে প্রেম, কেউ আবার চাকরির সন্ধান পেয়েছে, কেঊ আবার নিজের টাইমলাইনে নিজস্ব জীবন কাহিনীর বর্ননা দিয়ে অনেককে পাশে পেয়েছেন , কেউ আবার অন্যায়ের বিরুদ্ধে গর্জে উঠেছে বিদ্রোহী লেখনীর মাধ্যমে। কারোর প্রোফাইল পিকচারে লাইক, লাভ , কমেন্টের বন্যা বয়ে গেছে, কেউ আবার নিউজ ফিড থেকে অনেক গুরুত্বপূর্ন তথ্য জানতে পেরেছে। আমরা প্রতিদিন বিভিন্ন কারন অকারনে এই সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারে মত্ত থাকি ঠিকই কিন্তু তার অনেক বিষয় হয়তো আমরা জানি না, যেমন কোথাও কোন ট্রামস এন্ড কন্ডিশন না পড়েই এলাও করে । কিন্তু এতে যে কত বড় বিপদ ডেকে আনি আমরা ঘুনাক্ষরেও টের পাই না। আবার কখনও এমন কোন ঘটনা ঘটিয়ে বসাই যার মাসুল গুনতে হয় গোটা জীবন ধরে, আবার অনেকের জীবন হয়তো চলে যায়। অনেকেই সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করেন কিন্তু কি কি করা উচিৎ না সেই বিষয়ে অনেকেরই ধারনা নেই । তাই সোশ্যাল মিডিয়ার এমন কিছু বিষয় জানা উচিৎ যেগুলি কখনও করবেন না।
সোশ্যাল মিডিয়াতে কোন ৬ কাজ করার থেকে বিরত থাকবেন
১) ব্যক্তিগত তথ্য ‘publicly’ শেয়ার করবেন না
এমন অনেকেই আছেন যারা প্রবলভাবে সোশ্যাল মিডিয়ায় অ্যাক্টিভ। সকাল হেকে রাত অবধি কি কি করছেন, কোথায় গেছেন, কি খাচ্ছেন , কার সাথে সময় কাটাচ্ছেন সকল বিষয়ে আপডেট দিতে ভালোবাসেন। কেউ আবার সোশ্যাল মিডিয়ায় নিজেকে জাহির করতেও সাচ্ছ্যন্দবোধ করেন। কোথাও পরিবারের সাথে কোন ট্রিপে গেলেন সেটাও সোশ্যাল মিডিয়ায় আপডেট দেওয়া ম্যন্ডেটারি। পারলে নিজের ব্যক্তিগত তথ্য শেয়ার করে দেয়, নিজের ফোন নাম্বার থেকে বাড়ির অ্যাড্রেস কিংবা ইমেল । নিজেকে ওপেন টু ওল করতে চান। তারা ভুলে যায় ওপেন টু ওল সোশ্যাল মিডিয়ার ক্ষেত্রে অত্যন্ত বিপদজনক । আর এই সকল বিষয় কিন্তু ডেকে আনতে পারে আপনার জীবনে ঘোর বিপদ। এর ফলে বাড়িতে চুরি থেকে, আপনার ছবি নিয়ে নোংরা ভিডিও তৈরি করতে পারে , আপনার জন্ম সাল উল্লেখ থাকলে তার সাহায্যে আরও ভয়ঙ্কর কিছু প্ল্যান ও সাজাতে পারে , জালিয়াতি হতে পারে । তাই সর্বদা প্রাইভেসি বজায় রাখুন, আপনার নিজস্ব তথ্য পাবলিক না করে ‘অনলি মি ‘বা ‘অনলি ফ্রেন্ডস’ করে রাখুন। ফলে বাইরের কোন অচেনা আপনার তথ্য পাবে না। ভুলেও সোশ্যাল মিডিয়াতে ব্যক্তিগত তথ্য শেয়ার করবেন না।
২)অচেনা বন্ধু হতে সাবধান
সোশ্যাল মিডিয়াতে অচেনা কেউ রিকোয়েস্ট পাঠালে এড়িয়ে চলুন নয়তো প্রোফাইল ভ্যরিফাই করে রিকোয়েস্ট সাক্সেপ্ট করুন। কারন অনেকেই ফেক অ্যাকাউন্ট তৈরি করে অন্যের নাম ভিড়িয়ে রিকোয়েস্ট পাঠায় তাই এই সকল ঠকবাজ থেকে বিরত থাকুন। তাদের লক্ষ্য মুখোশের আড়ালে থেকে কিছু অসৎ উদ্দেশ্য চরিতার্থ করা যা খারাপ বৈকি ভালো নয়। তারা চ্যাটের মাধ্যমে বন্ধুত্বপুর্ন সম্পর্ক স্থাপন করে বিশ্বাস অর্জন করে ব্যক্তিগত তথ্য, ছবিই আরও কিছু হাতিয়ে নেওয়ার চেষ্টায় থাকে, অনেক সময় হুমকি, বদনাম করার ভয়ও দেখায়। তাই কোন অচেনা ব্যক্তিকে নিজের ফ্রেন্ড লিস্টে না রাখাই শ্রেয়।
৩) একই পাসয়ার্ড সকল সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাক্যাউন্টে ব্যবহার না করা
প্রতেকেরই একের বেশী অ্যাকাউন্ট থাকে সোশ্যাল মিডিয়াতে। আর সেগুলি সুরক্ষিত করতে হয় পাসওয়ার্ড মাধ্যমে। কিন্তু অনেকেই পাসওয়ার্ডে মনে রাখতে পারে ভুলে যায়, বা একটা অন্যটার মধ্যে চালিয়ে দেয়। তাই মনে রাখার সুবিধার্থে একই পাসওয়ার্ড সকল অ্যাকাউন্ট দিয়ে থাকে। কিন্ত এটাই সবচাইতে ভুল করে থাকে। তাই সকল অ্যাকাউন্টের পাসওয়ার্ড আলাদা আলাদা হওয়া উচিৎ, তাতে অ্যাকাউন্ট সুরক্ষিত থাকে, কারন যদি হ্যাকাররা একটি অ্যাকাউন্টের পাসওয়ার্ড পেয়ে যায় তাহলে খুব সহজেই বাদ বাকি অ্যাকাউন্ট গুলোর এক্সেস পেয়ে যাবে, ফলে হ্যাক করতে সুবিধা হবে।
৪)যে কোন অ-স্বীকৃত সাইটে প্রবেশ করবেন না
অনেক সময় সোশ্যাল মিডিয়াতে গেম বা কোন বিনোদন বিষয়ক আনন্দ লাভের জন্য আমরা কিছু সাইট গিয়ে আক্টিভেট এলাও করে দি। যা খুবই ভয়ঙ্কর এতে অ্যাকাউন্ট সুরক্ষিত রাখা যায়না বরং বড় কোন ক্ষতি হতে পারে। বিচার না করে কখন কোন সাইট এলাও করবেন না, তাতে তারা আপনার ফোনের এক্সেস পেয়ে যাবে, যার দরুন সে আপনার গোপনীয় যাবতীয় তথ্য, ব্যঙ্ক ডিটেতইল, ছবি, হ্যাক করে নিতে পারবে, এতে আপনি অনেক বিপদে পরতে পারেন , আপনার অজান্তেই আপনার ফোনের দ্বারা কোন অসৎ কাজ হয়ে যেতে পারে।
৫) সোশ্যাল মিডিয়াতে নিজস্ব ব্যঙ্কের নথি প্রকাশ্যে ন আনাই শ্রেয়
আমরা অনেক সময় সোশ্যাল মিডিয়াতে এমন অনেক অপশন দেখতে পাই যার দ্বারা মানি ট্রানফার হতে পারে কিন্তু কেউই তার সত্যতা যাচাই করি না। আদৌ সেটি সুরক্ষিত কিনা। ব্যঙ্কের সাথে পরামর্শ না করেই এই সকল বিষয়ে লিপ্ত হয়ে যাই। যা অত্যন্ত ভয়ঙ্কর । এগুলো একধরনের ট্র্যাপ যার দ্বারা আপনার ব্যাঙ্কের অ্যাকাঊন্ট থেকে টাকা নিমেষের মধ্যে উধাও হয়ে যেতে পারে।
৬) তথ্যের সত্যতা যাচাই না করে তথ্য প্রেরন করবেন না
সোশ্যাল মিডিয়া থেকে উড়ে আসা যে কোন খবর পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে বিচার করা উচিৎ। কারন বর্তমানে প্রচুর ভুয়ো খবর সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে ছড়ায়। যার ফলে মানুষকে অনেক বিপদের সম্মুখীন হতে হয় এবং সঠিক তথ্যের বিনিময়ে ভুল তথ্যে জ্ঞাত হয়। বিভিন্ন হোয়াটসঅ্যাপ ম্যাসেজ ফরওয়ার্ড, ফেসবুকে ভাইরাল অনেক তথ্যই মিথ্যার ভিত্তিতে তৈরি হয় তাই সেই সকল খবর যাচাই করেই অপরকে সঠিক তথ্য প্রেরন করুন । অজথা ভুয়ো খবর ছড়িয়ে অন্যদের বিব্রত করবেন না। এতে আপনার ও আপনার আসে পাশে থাকা মানুষের ভয়ানক ক্ষতিসাধন হতে পারে এমনকি আপনার এই কৃতকর্ম ভারতীয় দণ্ডবিধিতে অপরাধ বলেও গন্য হতে পারে।
সকল বিষয়ই ঠিক মুদ্রার এপিঠ ওপিঠের মতো, ভালো থাকলে খারাপও বর্তমান। সোশ্যাল মিডিয়া যেমন আমাদের অনের অজানা তথ্য প্রদান করে, দুরকে কাছের করে, সাবলম্বী হওয়ার প্রেরনা যোগায় তেমনই ব্যতিক্রম আছে। তাই খুব ভেবে চিনতে এই মিডিয়াকে ব্যবহার করুন, যাতে আসন্ন বিপদের সম্মুখীন হতে না হয়। তাই সোশ্যাল মিডিয়ার ব্যবহার সমন্ধে ভালো ভাবে জ্ঞাত হয়ে তারপর সেটি চালনা করাই শ্রেয়। আর হ্যাঁ অবশ্যই উপরিউক্ত বিষয়গুলি মাথায় রেখে সোশ্যাল মিডিয়ার কিনারাহীন সমুদ্রে ঝাঁপ দিন।