একে অপরকে ডায়লগ দিতে আমরা সবাই  ভালবাসি – যেমন লাগলে টাকা দেবে গৌরি সেন, আমার কথাটি ফুরোলো নটে গাছটি মুরলো। আমরা এই সংলাপগুলি  ব্যবহার করি যখন কিছু গুরুত্বপূর্ণ, অর্থ সামঞ্জস্য পূর্ন কথা বোঝাতে হয়। এগুলো যদিও আমদের কাছে অভ্যাসবসত হয়ে গেছে, কারন মানুষ মাটি অভ্যাসের দাস।  এমন অনেক সিনেমার ডায়লগ থাকে যেগুলি খুব জনপ্রিয় হয়ে যায়, আর সকলের মুখে মুখে ঘোরে, কিন্তু সিনেমার সংলাপ মানেই তার মধ্যে যে অর্থসামঞ্জস্য নেই তা  কিন্ত মোটেই নয়। কারন সিনেমা আমাদের শিক্ষা দেয় বাস্তব জীবনের, তাই সিনেমার প্রতিটি সংলাপের মধ্যে থাকে অন্তর্নিহিত রূপক অর্থ। যা  আমাদের ভাবায়, ভাবতে শেখায়। কিছু সংলাপ আবার আমাদের জীবনে না বলা কিছু কথার মাধ্যম হয়ে ওঠে। আবার কিছু সংলাপ নেহাতি মজার হয়। জীবন যেমন মজা ও গুরুত্ব মিশ্রিত পথে চলমান , সংলাপ অনেকটা তাই। না বলা কথা সংলাপের মাধ্যমে ব্যাক্ত করা যায়।  কিছু দারুণ মজার আর কিছু কঠিন বাস্তবতার অর্থ। তাই আজ তেমনই টলিডের ১০টি সংলাপ নিয়ে আলোচনা করব।

বাংলা সিনেমার বিখ্যাত কিছু ডায়লগ

অ্যাডজাস্টমেন্ট মানেই হেরে যাওয়া নয় দিদিভাই ,

অ্যাডজাস্টমেন্ট মানে সুন্দর করে বাঁচা।”

২০১৭ সালে শিবপ্রসাদ মুখার্জি ও নন্দিতা রায় পরিচালিত সিনেমার বিখ্যাত ডায়লগ ‘অ্যাডজাস্টমেন্ট মানেই হেরে যাওয়া নয় দিদিভাই , এডজাস্টমেন্ট মানে সুন্দর করে বাঁচা’। যেখানে একজন গৃহবধূ ট্রেনের কামরায় উপস্থিত একজন কর্মরতা মহিলার উদ্দেশ্যে সংলাপটি বলছে। সে বলতে চেয়েছে সংসারে সকলকেই অ্যাডজাস্টমেন্ট করেই চলতে  হয়, তুমি অ্যাডজাস্টমেন্ট করছো  মানে এই নয় যে তুমি জীবনযুদ্ধে হেরে গেলে  বরং তুমি অনেক কিছু জিতে গেলে।

“ঐ অভ্যাস গুলো আমার কাছে প্রেম”

২০১৫ সালে শিবপ্রসাদ মুখার্জি ও নন্দিতা রায়ের হাতধরে মুক্তিপ্রাপ্ত বেলাশেষের মন ভারাক্রান্ত  করে দাওয়া সেই সংলাপ ‘ ঐ অভ্যাস গুলো আমার কাছে প্রেম‘। যে  মুহুর্তে স্ত্রী তার স্বামীর প্রতি  প্রেমের বক্তব্য পেশ করেছে, শেষ বয়সে এসেও যে প্রেমে পড়া যায় সেটি ব্যক্ত করেছে। সত্যিই বাস্তব  এটা,  যে সবসময়  ফুল, চকলেট  দামী উপহার বা হাটু গেড়ে বসেই প্রেমের আর্জি জানানো যায় তা কিন্তু না। অনেক সময় না বলা কথা ও অভ্যাসের মধ্যেও গভীর প্রেম লুকিয়ে থাকে।

জীবনে ভাত ,ডাল, আর বিরিয়ানির তফাৎটা বুজতে শেখো। ” প্রথমেরটা নেসেসিটি, পরেরটা লাক্সারি।

জীবনে ভাত ,ডাল, আর বিরিয়ানির তফাৎটা বুজতে শেখো। ” প্রথমেরটা লাক্সারি, পরেরটা লাক্সারি।এই উক্ত সংলাপটি সৃজিত মুখার্জির পরিচালিত  ‘বাইশে শ্রাবণ’ সিনেমাতে ব্যবহার করা হয়েছে। সংলাপটি অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক। সত্যিই জীবন ভাত ডাল ছাড়া চলবে না কিন্তু বিরিয়ারি ছাড়া চলবে। এখানে সাধারন জীবনযাত্রার  প্রয়োজনীতার সাথে তুলনা করা হয়েছে ভাত ডালের বিষয়টি  ও অন্যদিকে  আড়ম্বড়তার সাথ তুলনা করা হয়েছে বিরিয়ানির।  আড়ম্বরযুক্ত জীবন বেশী দিনের হয়য় না। মানুষকে খেটে খেতে তাই পরিশ্রমী মানুষরা সাধা মাটা জীবনে অভ্যস্ত হতে পারে ,কিন্তু আড়ম্বরতা হাতছানি দিয়ে চলে গেলে সাদা মাটা  জীবনে ফেরা কঠিন।

“বউ হারালে বউ পাওয়া যায়, কিন্তু মা হারালে মা পাওয়া  যায় না রে পাগলা”

 চিরঞ্জিত পরিচালিত ‘ সংসার সংগ্রাম’ সিনেমায় চিরঞ্জিতের সেই সংলাপ ‘ বউ হারালে বউ পাওয়া যায়, কিন্তু মা হারালে মা পাওয়া  যায় না রে পাগলা’ আজও সকলের মুখে মুখে ঘুড়ে বেড়ায়। সংলাপটি সম্পূর্ন মা জাতির উদ্দেশ্যে । ‘মা” হল প্রতিটি সন্তানের জীবনের এক বিরাট সম্পদ। যা হারিয়ে গেলে সেই ক্ষতিপূরণ অধরাই থেকে যাবে। হাজারো চেষ্টা করলে ফিরে পাওয়া যাবে না। তাই মাকে অবহেলা নয় যত্ন, স্নেহ করতে হয়।  কারন মা এক ও অদ্বিতীয় হয়। তাই তাকে কোনদিন হারানো যাবেনা।  কিন্তু বউ হারালে দ্বিতীয় বিয়ে করলেই  বউ পাওয়া যাবে।

“আই উইল গো টু দ্যা টপ ধ্যা টপ দ্যা টপ”

১৯৬৬ সালে  সত্যজিৎ রায় পরিচালিত নায়ক সিনেমার বিখ্যাত সংলাপ “আই উইল গো টু দ্যা টপ ধ্যা টপ দ্যা টপ”। কালজয়ী এই সংলাপটি শোনা গেছে মহানায়ক উত্তমকুমারের মুখে। জীবনের চলার পথে লক্ষ্য থাকা উচিৎ শিখরে পৌছানোর। বহু মানুষের অবসাদ থেকে মুলস্রোতে ফেরার সঙ্গী এই সংলাপ। আজও উচ্চাঙ্খী বহু মানুষের চলার পথের দিশারী এই সংলাপটি।

“রেপ  আর মলেস্টটেশন আর মধ্যে তফাৎ তা ঠিক কি?”

১৯৯৭সালে কালজয়ী পরিচালক ঋতুপর্ন ঘোষের পরিচালনায় সৃষ্ট দহন।  সেই সিনেমার বিখ্যাত ডায়লগ ‘রেপ  আর মলেস্টটেশন আর মধ্যে তফাৎ তা ঠিক কি?’  অতীত থেকে বর্তমান এমনকি ভবিষ্যতের এই রেপ ও মলেস্টটেশনের মতো ঘৃন্য অপরাধ চলতেই থাকবে। দহন সিনেমায় ৪ ৫ জন গুন্ডা একটি সভ্রান্ত পরিবারের বউয়ের সাথে প্রতিশোধের বশে শ্লীলতাহানি করে, আর সেই নিয়ে চলে দির্ঘ লড়াই।সেই বিষয়ে ঋতুপর্নার বক্তব্য ছিল রেপ  আর মলেস্টটেশন আর মধ্যে তফাৎ তা ঠিক কি? সে বলতে চেয়েছিল এই দুই বিষয়ের মধ্যে কোন অন্তর নেই উভয়েই এক অতি ঘৃন্য একটি কাজ, যা বাহিত হয় নিচ মনের মানুষের দ্বারা।

“জানার কোন শেষ নেই, জানার চেষ্ঠা  বৃথা তাই”

সত্যজিৎ রায়ের হীরক রাজার দেশে সিনেমার এই সংলাপ। যেখানে অত্যাচারী রাজা রাজ্যে জ্ঞানের প্রসার হওয়া থেকে রাজ্যবাসীকে আটকাতে চান,  যাতে তারা বেশী শিক্ষিত না হয়ে যায় তাই সে প্রজাদের উদ্দ্যেশে বলেন “জানার কোন শেষ নেই, জানার চেষ্ঠা  বৃথা তাই”। কারন শিক্ষিত হলেই রাজার সকল কুকর্ম ফাস হয়ে যাবে। কারন   জ্ঞান মানুষের চিন্তাশক্তি বৃদ্ধি করে,  বুদ্ধি ও  ভাবনার উন্মোচন ঘটায়। জ্ঞানের ফলেই কোনটা ভুল কোনটা ঠিক বোঝার বোধগম্য হয়।

“মারব এখানে লাস পড়বে শ্মশানে”

ফাটাকেষ্ট সিনেমার বিখ্যাত এই ডায়লগ সবার মুখে মুখে ঘোরে। ৮ হোক কিংবা ৮০ সবাই এই ডায়লগটা বলতে খুবই ভালোবাসে বিশেষ করে যদি কারোর সাথে ঝগড়ার সম্পর্ক থাকে তো তার মুখে “মারব এখানে লাস পড়বে শ্মশানে” ডায়লগটি শোনা যাবেই যাবে। মিঠুন চক্রবর্তীর এই ডায়লগ সকল ডায়লগকে একদম ছক্কা মেড়ে বাউন্ডারির বাইরে বার করে দিয়েছে।

“দড়ি ধরে মারো টান রাজা হবে খান খান”

হিরক রাজার দেশে শেষের দৃশ্যে এই সংলাপটি ব্যবহার করা হয়। অন্যন্ত শিক্ষদায়ক এই সংলাপ, এতে লুকিয়ে  রূপক অর্থ।  এই সংলাপ শেখায় অন্যায়ের বিরুদ্ধে  কিভাবে প্রতিবাদ মুখর হয়ে উঠতে হয়। পাপের ঘড়া যখন পূর্ন হয় তখন তার পতন নিশ্চিত। এই সংলাপের মূল বক্ত্যবই এটি। হিরকের রাজা নিজেকে ভগবান বলে প্রজাদের উপর শোষণ চালাত, তাঁদের  অশিক্ষার আঁধারে নিমজ্জিত করে রাখত  তাই   জল যখন  মাথায় উঠে গেছিল তখন সকল প্রজারা  সম্মিলিত হয়ে প্রতিবাদ করে রাজা রাজতান্ডবকে ধুলিষ্যাত করে দিয়েছিল “দড়ি ধরে মারো টান রাজা হবে খান খান” এই সংলাপের মাধ্যমে। অন্যায়কে প্রশ্রয় না দিয়ে প্রতিবাদ করতে হয় এই সংলাপ তারই প্রমান।   

“বিসর্জন না হলে হয়তো সত্যি বিজয়া হত না”

বিজয়া সিনেমায় ডায়লগ “বিসর্জন না হলে হয়তো সত্যি বিজয়া হত না” সত্যি একটি অন্তনিহিত অর্থ  বহন করে। যা বাস্তব জীবনের সাথে অত্যন্ত যুক্তিযুক্ত। পিছুটান না  কাটালে নতুন পথের উন্মোচন সম্ভব নয়। তাই জীবনের কিছু মূল্যবান জিনিষকে বিসর্জন দিতে হয় নয়তো শুভ কিছু বিজয়া রূপে আসেনা ।  দুর্গা বিসর্জনের পড়ে যেমন বিজয়া আসে তেমনই জীবনের ক্ষেত্রেও এর অন্যথা হয়না। জীবনেও  বসর্জনের পরই বিজয়া আসে।

প্রতি সিনেমার মাধ্যমেই আমরা কোন না কোন সংলাপ পেয়েই থাকি তারপর সেটি আমরা আমদের নিজেদের জীবনের সাথে যুক্ত করে নি যেটি আমাদের ব্যক্তিগত জীবনের সাথে প্রাসঙ্গিক মনে হয়। এই ১০টি সংলাপের মধ্যে আপান্দের কোন ডায়ালগ টি পছন্দ, কোন সংলাপটি বলতে আপনি বেশী পছন্দ করেন, আমদেরকে কমেন্ট করে জানিয়ে দিন।