নিজস্ব সংবাদদাতা- দেশে দুর্নীতির অভিযোগ নতুন নয়, প্রতি মুহূর্তেই নানা স্তরে নানারকম দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। তার বেশিরভাগই সত্যি বলে প্রমাণিতও হয় কিন্তু তা বলে টাকার বিনিময় বিদেশ থেকে আসা যাত্রীদের কোয়ারেন্টিনে না রেখেই ছেড়ে দেওয়ার মতো ঘটনা ঘটবে, তা বোধহয় কল্পনারও অতীত ছিল! কিন্তু এই অভিযোগেই গতকাল মুম্বাই পুলিশ গ্রেপ্তার করে বেশ কয়েকজনকে।
সরকারের তরফ থেকে নিয়ম করা হয়েছে বিদেশ থেকে যে যাত্রী আসবেন তাদের ১৪ দিনের জন্য কোয়ারেন্টিনে থাকতে হবে। প্রথম দিকে নিয়ম ছিল সরকার নির্ধারিত কোয়ারেন্টিন সেন্টারে গিয়েই থাকতে হবে, যদিও পরবর্তীকালে নিয়ম করা হয় হোম কোয়ারান্টিনে থাকলেও চলবে। তবে ১৪ দিনের কোয়ারেন্টিন পর্ব শেষ হলে কোনো বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের কাছ থেকে সেই সংক্রান্ত সার্টিফিকেট নিতে হবে। এই বিষয়ে দেখভাল করার জন্য বৃহন্মুম্বাই পুরসভার পক্ষ থেকে গত ২৩ ডিসেম্বর মুম্বাই বিমানবন্দরে পুর কর্মী দীনেশ গাওয়ান্ডে-কে নিযুক্ত করা হয়। এই ব্যক্তিকেই কোয়ারেন্টিন নিয়ম সংক্রান্ত দুর্নীতিতে যুক্ত থাকার অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
জানা গিয়েছে দীনেশ গাওয়ান্ডে তার দুই সহকর্মী আশরফ সারঙ্গ এবং বিবেক সিংয়ের সঙ্গে হাত মিলিয়ে বিদেশ থেকে আগত যাত্রীদের টাকার বিনিময়ে ভুয়ো কোয়ারেন্টিন সার্টিফিকেট প্রদান করত। এই বিষয়ে তাদের সঙ্গে বিমানবন্দরের শুল্ক দফতরের অফিসারদেরও যোগাযোগ ছিল। এরা যাত্রী পিছু ৪ হাজার টাকার বিনিময় সুষ্ঠুভাবে কোয়ারেন্টিন পর্ব সম্পূর্ণ করার জাল সার্টিফিকেট সরবরাহ করত। এক্ষেত্রে মুম্বাইয়ের টাটা হসপিটাল, এশিয়ান হার্ট ইনস্টিটিউট, কেয়ার মেডিকেলের মতো হসপিটালগুলির জাল শংসাপত্র যাত্রীদের সরবরাহ করার সময় তাতে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারদের সই পর্যন্ত জাল করেছিল!
গত শুক্রবার দীনেশ বিমানবন্দরের শৌচাগারে ভুল করে নিজের একটি ব্যাগ ফেলে আসে পরে তার সেই ঘটনা মনে পড়লে দৌড়ে ব্যাগ আনতে যান। সেই সময় তিনি বিমানবন্দরের এক মহিলা হাউসকিপিং কর্মীকে সজোরে ধাক্কা পর্যন্ত মারেন। এই ঘটনা ঘটেছিল শুক্রবার ভোর ৫:৪৫ নাগাদ। ওই মহিলা বিমানবন্দরের নিরাপত্তা দায়িত্বে মোতায়েন সিআইএসএফ-কে গোটা ঘটনাটি জানালে তারা দীনেশকে ধরে। এই রকম উদ্ভ্রান্তের মতো দৌড়ে যাওয়ার কারণ জিজ্ঞেস করলে সে শৌচাগারে ব্যাগ ফেলে আসার কথা জানায়। সিআইএসএফ তখন তার ব্যাগে তল্লাশি চালায়। তারপরই এই সমস্ত জাল শংসাপত্র তার ব্যাগ থেকে উদ্ধার করা হয়। এমনকি তার ব্যাগে বৃহন্মুম্বাই পুরসভার জাল কোয়ারেন্টিন স্টাম্প পর্যন্ত পাওয়া গিয়েছে।
গ্রেপ্তার করার সময় দীনেশ গাওয়ান্ডের কাছ থেকে নগদ ১ লক্ষ ৪০ হাজার টাকা এবং ২০০ সৌদি রিয়াল উদ্ধার হয়। দুই সহকর্মী সহ দীনেশকে গ্রেপ্তার করেছে মুম্বাই পুলিশ। তাকে জেরা করে জানার চেষ্টা চলছে আর কে কে এই চক্রের সঙ্গে জড়িত আছে।