বিগত কয়েক বছরে ভারতীয় রাজনীতিতে ‘লাভ জিহাদ’-র নামে হানাহানি শুরু করেছে একটি বিশেষ রাজনৈতিক দল ও সম্প্রদায়। বিশেষত বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলিতেই ‘লাভ জিহাদ’ বিরোধী তৎপরতা বেড়েছে চোখে পড়ার মতো। উত্তরপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশের মতো রাজ্যে আনা হয়েছে ধর্মান্তর বিরোধী আইনও। আর এবার সেই লাভ জিহাদের ছায়া দেখা গেল রাজ্যের মাটিতেও।
বিবাহের উপযুক্ত নথিপত্রে দেখানো সত্ত্বেও শুধুমাত্র স্বামী-স্ত্রীর ধর্ম আলাদা হওয়ার কারণে হোটেলে ঘর ভাড়া দেওয়া হল না জনৈক দম্পতিকে, এমনটাই অভিযোগ উঠেছে হুগলির এক হোটেল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে। জানা গেছে, পদবী দেখে দম্পতির ধর্ম সনাক্ত করেন হোটেল কর্তৃপক্ষ। আর তারপরেই তাঁদের ঘর ভাড়া না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এই ঘটনা প্রকাশ্যে আসতেই ইতিমধ্যেই তোলপাড় শুরু হয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়।
ঠিক কী ঘটেছিল? সূত্রের খবর, সম্প্রতি হুগলির চুঁচুড়ায় পিকনিক করতে যান বর্ধমানের বাসিন্দা তৌসিফ হক নামের এক ব্যক্তি। চিত্রশিল্পী হিসাবে তিনি সোশ্যাল মিডিয়াতেও যথেষ্ট খ্যাতিসম্পন্ন। সেদিন তাঁর সঙ্গে ছিলেন স্ত্রী জয়ন্তী বিশ্বাস। পিকনিকের মাঝে হঠাৎই অসুস্থ হয়ে পড়েন জয়ন্তী দেবী। এরপরই স্ত্রীকে নিয়ে বর্ধমানে বাড়ি ফেরার বদলে গোবিন্দপুরের সুলেখা লজে যান তৌসিফ বাবু। ঠিক করেছিলেন, সেই দিনটা সেখানেই কাটিয়ে পরদিন সকালে বাড়ি ফিরবেন।
কিন্তু হোটেল কর্তৃপক্ষের কাছে নাম জানাতেই পদবী শুনে বেঁকে বসেন তাঁরা। অভিযোগ, বিয়ের বৈধ প্রমাণপত্র দেখিয়েও কোনো সুরাহা হয় না। ওই নথি জাল বলেও উড়িয়ে দেওয়া হয়। অসুস্থ স্ত্রীকে নিয়ে অসহায় তৌসিফ বাবু খানিক কথা কাটাকাটির পর অন্য হোটেলে যান। পরে জয়ন্তী দেবীর শারীরিক অবস্থার উন্নতি হলে বর্ধমানের বাড়িতে ফিরে যান তাঁরা। বাড়ি ফিরে তিক্ত অভিজ্ঞতার কথা সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করেন তৌসিফ হক। এরপর মুহূর্তেই ভাইরাল হয় তাঁর পোস্ট। হোটেলের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দেন নেটিজেনরা।
তৌসিফ হকের অভিযোগ অবশ্য উড়িয়ে দিয়েছে হুগলির সুলেখা লজ কর্তৃপক্ষ। তাঁরা জানিয়েছেন, ওই দম্পতি বিবাহের নথি দেখাতে অস্বীকার করেন, সে কারণেই ঘর দিতে রাজি হন নি তাঁরা। শুধু তাই নয়, তৌসিফ হকের বিরুদ্ধে রীতিমতো তান্ডব চালানোর পাল্টা অভিযোগও এনেছেন কর্তৃপক্ষ। তবে দু’পক্ষের কেউই এখনও অবধি পুলিশে কোনো অভিযোগ দায়ের করেনি। এদিকে, খাস বাংলায় এই ঘটনাই যেন নিয়ে এল লাভ জিহাদের ছায়া- এমনটাই মনে করছেন নেটিজেনদের একাংশ।