নিজস্ব সংবাদদাতা- কার্তিক বন্দ্যোপাধ্যায় হলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছোট ভাই। এর আগে তার নাম মূলত নানান সমাজসেবামূলক কাজ কর্মের ক্ষেত্রেই শোনা গিয়েছে। তবে তিনি দীর্ঘদিন ধরেই স্বামী বিবেকানন্দের জন্ম দিবস উপলক্ষে ১২ জানুয়ারি থেকে একটি মেলা আয়োজন করে আসছেন। সেইসঙ্গে ‘বিবেক’ নামে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের মাধ্যমে সমাজের নানা স্তরের মানুষজনের সেবা করার উদ্দেশ্যে কাজকর্ম করে থাকেন তিনি।
ঘটনা হল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় শুরুর দিন থেকেই তাঁর পরিবারের আর কোনো সদস্যকে রাজনীতির সামনের সারিতে নিয়ে আসেননি। কিন্তু রাজ্যের ক্ষমতা দখল করার পর তিনি ধীরে ধীরে ভাইপো অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে সামনে নিয়ে আসেন। অথচ পরিবারের বাকি ভাইপো বা অন্য ভাইদের সেভাবে সামনের সারিতে নিয়ে না আসায়, কালীঘাটের ব্যানার্জি পরিবারের অন্দরমহলে কান পাতলে এই নিয়ে চাপা ক্ষোভের কথা অজানা থাকবে না। মাঝে একবার পরিবারের মধ্যে অন্তর্দ্বন্দ্ব প্রবল আকার ধারণ করলে তৃণমূল নেত্রী বাড়ি ছেড়ে দলীয় দপ্তরে থাকতে শুরু করেছিলেন। যদিও কিছুদিন পর সেই অন্তর্দ্বন্দ্ব ধামাচাপা পড়ায় তিনি আবার বাড়ি ফিরে আসেন।
মুখ্যমন্ত্রীর দুই বড় ভাই অজিত বন্দোপাধ্যায় ও স্বপন বন্দ্যোপাধ্যায় কলকাতা ময়দানে মোটামুটি একচেটিয়া আধিপত্য বিস্তার করে নিয়েছেন। কানাঘুষো শোনা যায় তাদের অনেক কার্যকলাপে সন্তুষ্ট না হলেও পরিবারের একতার কথা মাথায় রেখেই বিশেষ কিছু বলেন না তৃণমূল নেত্রী। এদিকে ২০১৯ এর লোকসভা নির্বাচনে দলের ফলাফল বেশ খারাপ হলে জয় হিন্দ বাহিনী নামে একটি নতুন সংগঠন তৈরি করা হয় তৃণমূলের পক্ষ থেকে। জয় হিন্দ বাহিনীর মাথায় সেই সময় বসানো হয়েছিল কার্তিক বন্দ্যোপাধ্যায়কে। যদিও প্রথমদিকে কিছু কর্মসূচি নেওয়ার পর এই মুহূর্তে আর খুব একটা ময়দানে দেখা যাচ্ছেনা জয় হিন্দ বাহিনীকে।
শোনা যায় ভাইপো অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের দাপট এবং একচেটিয়া ক্ষমতা বিস্তারের নীতিতে যথেষ্ট বিরক্ত এবং অসন্তুষ্ট কাকা কার্তিক বন্দ্যোপাধ্যায়, বলতে গেলে ভাইপোর সঙ্গে তাঁর মুখ দেখাদেখিও প্রায় বন্ধ। এদিকে তৃণমূলের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি সম্বন্ধে এবং নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে যারা দীর্ঘদিন কাছ থেকে দেখছেন, তাদের মতে অভিষেককে ধীরে ধীরে দলের শীর্ষ পদে বসানর লক্ষ্যেই কাজ করে চলেছেন দলনেত্রী।
রাজনৈতিক মহল মনে করছে তৃণমূল নেত্রীর পরিবারের সদস্যদের ক্ষমতার ভাগ পাওয়া এবং পারিবারিক সম্পর্কের টানাপোড়েনের ছাপ পড়তে চলেছে বঙ্গ রাজনীতিতে। মুকুল রায়, শুভেন্দু অধিকারীর মতো তৃণমূলের শীর্ষস্তরের দুই নেতাই এখন বিজেপিতে। তারা স্বাভাবিকভাবেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পরিবারের রাজনৈতিক সমীকরণ আর পাঁচজনের থেকে অনেক ভাল জানেন। তৃণমূল নেত্রীকে অস্বস্তি এবং বিড়ম্বনায় ফেলতে স্বভাবতই বিজেপির পক্ষ থেকে চেষ্টা করা হচ্ছে তার পরিবারের মধ্যে ভাঙ্গন ধরিয়ে কয়েকজনকে যদি পদ্ম শিবিরের সামিল করা যায়। এই সম্ভাবনা আরও ইন্ধন পেয়েছে কার্তিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের কিছু মন্তব্যের জন্য।
গতকাল তৃণমূল নেত্রীর ছোট ভাই বলেন, “পশ্চিমবঙ্গে স্বৈরতান্ত্রিক ও একনায়কতন্ত্র শাসনের অবসান হওয়া জরুরী।” অনেকেই মনে করতে পারেন তিনি হয়তো সরাসরি দিদি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দিকেই আঙুল তুলেছেন! কিন্তু বিশেষজ্ঞ মহল বলছেন তার লক্ষ্য দিদি নয়, ভাইপো অভিষেক। আর এই মতের সমর্থন তৃণমূলের অভ্যন্তর থেকে ভালোভাবেই উঠে আসছে। শোনা যায় বর্তমানে দলীয় বিষয়ে যাবতীয় কিছু সিদ্ধান্ত অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় একাই নিয়ে থাকেন, কেবলমাত্র পিসি’কে তা একবার জানিয়ে দেন।
কয়েকদিন আগেই খড়দহের জনসভা থেকে শুভেন্দু অধিকারী হুমকি দিয়েছিলেন কালীঘাটের বন্দ্যোপাধ্যায় পরিবারে গিয়েও পদ্ম ফুল ফোটাবেন। সম্ভবত খুব দ্রুতই সেই সম্ভাবনা বাস্তবায়িত হতে চলেছে পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে!