আমদের রোজকার জীবনে মৌরি একটি খুবই পরিচিত নাম। খাওয়া-দাওয়ার পর আমরা অনেকেই মুখে মৌরি নিয়ে চিবিয়ে থাকি। মৌরি এমনিতেও মাউথ ফ্রেশনার হিসেবে খুবই কার্যকরী ।কিন্তু আপনি কি জানেন এই মৌরি আপনাকে বাঁচতে পারে অনেক রোগ ও সমস্যার হাত থেকে ?

পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম, জিঙ্ক, ম্যাংগানিজ, ভিটামিন সি, আয়রন, সেলেনিয়াম আর ম্যাগনেশিয়ামের মতো খনিজ উপাদান আছে মৌরিতে। তাই মৌরি যে আপনার রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করবে, তা নিয়ে কোনও সন্দেহই নেই।।তাহলে চলুন আজ জেনে নেওয়া যাক মৌরীর কিছু অজানা গুনাগুন।

moeri

১) লিভার সুরক্ষিত রাখে এবং কার্যকারিতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য :

মৌরিতে থাকা প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদানগুলি দেহের লিভারের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করে। সাধারনত, মৌরিতে থাকে সেলেনিয়াম নামক একটি উপাদান। সেই উপাদানটি লিভার থেকে বের হওয়া এনজাইমগুলির নিঃসরণ এবং তাদের কার্যকারিতা বৃদ্ধি করে। ফলে লিভারে উপস্থিত টক্সিক পদার্থগুলি সহজেই বেরিয়ে যায়। তবে এই বিষয় নিয়ে এখন আরও গবেষণা চলছে। তবে ২০১১ সালের একটি গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে মৌরি লিভার ক্যান্সার প্রতিরোধেও সাহায্য করে ।

২. ওজন কমাতে সাহায্য করে :

মৌরিতে থাকা ফাইবার যেমন হজম ক্ষমতা বাড়ায়, তেমনই আবার দীর্ঘক্ষণ পেট ভরিয়ে রাখে। ফলত ক্ষুধাভাব কমে। তাই পেট ভরে খাবার পরেও টুকটাক মুখ চালানোর অভ্যেস যাদের রয়েছে, তাদের কাছে এই মৌরি খুবই উপকারী। খাবার ভালোভাবে পরিপাক ও হজম হওয়ার ফলে শরীরের ইতিউতি মেদ জমে যাওয়ার ভয় থাকে না। নিয়মিত মৌরি খেলে প্রস্রাবের পরিমাণ বাড়ে, বাড়ে মেটাবলিজমের হারও। তাই মৌরি খেলে শরীরে জমে থাকা অতিরিক্ত জল প্রস্রাবের সঙ্গে বেরিয়ে যায়।

৩) হাঁপানি ও অন্যান্য শ্বাসজনিত সমস্যা কমায় :

ঠান্ডা লেগে বুকে জমে থাকা কফ বা কারোর শ্বাসজনিত রোগ থাকলে শ্বাসকষ্ট বা হাঁপানির সমস্যা কমাতে সাহায্য করে মৌরি। মৌরি ফুসফুসের ক্ষমতা বাড়ায়। পাশাপাশি শুকনো কাশি, বুকে শ্লেষ্মা জমা, ব্রংকাইটিস ও অন্যান্য শ্বাসনালী সংক্রান্ত্র রোগের প্রকোপ কমাতে পারে এবং দ্রুত নিরাময় করতেও সাহায্য করে।মৌরিতে থাকা ‘ফাইটোনিউট্রিয়েন্ট’ সাইনাসের প্রকোপ কমায়। মৌরি বীজে আছে এক বিশেষ উপাদান যা শীতকালে দেহের ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে লড়াই করে রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা শক্তিশালী করে এবং শরীরকে দ্রুত সুস্থ করে তোলে।মৌরির পাতা গরম জলে সেদ্ধ করে নিয়ে তার থেকে ওঠা ধোঁয়ার ভাপ নিলে ব্রংকাইটিস বা অ্যাজমা রোগ সারে। তবে অনেকের আবার মৌরি খেলে শ্বাসকষ্ট বেড়ে যাওয়ার প্রবণতা দেখা যায় । তাই অ্যাজমাজনিত গুরুতর কোনও সমস্যা থাকলে বা প্রবল শ্বাসকষ্ট হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়ার পর তাঁর অনুমতি নিয়ে প্রথাগত চিকিৎসার পাশাপাশি কাজে লাগাতে পারেন মৌরি দিয়ে বানানো ঘরোয়া কিছু টোটকা।

৪)খাদ্য হজমে সাহায্য :

হজমের গোলযোগ বা গ্যাস-অম্বলের সমস্যা কমায় মৌরি। মৌরি ভেজানো জল খেলে এই সমস্যা অনেকটাই কমে যায় । মৌরির রস বিশেষভাবে বায়ুরোগ নাশক। মৌরি পেটের নানারকম অস্বস্তি ও বদহমের সমস্যা কমায় ও তা দূর করে। গ্যাস্ট্রিক এনজাইম তৈরীতেও মৌরির বিশেষ ভূমিকা রয়েছে। মৌরিতে থাকা কিছু এসেন্সিয়াল তেল রক্তের সঙ্গে মিশে পাচক রসের ক্ষরণ বাড়ানোর পাশাপাশি পেট ও অন্ত্রের প্রদাহ কমায়। তাই মৌরি খেলে খাবার ভালোভাবে হজম হয়। এবং এর ফলে খাদ্যে থাকা সমস্ত পুষ্টিগুণ শরীরে মিশে যায় এবং ধীরে ধীরে তা হজম ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে ।

মৌরি

৫)দৃষ্টিশক্তি বাড়াতে সাহায্য :

মৌরিতে রয়েছে ভিটামিন-এ, যা চোখের জন্য খুবই উপকারী। এই ভিটামিন-এ চোখের জ্যোতি বাড়ায়, দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখে এবং চোখের নানারকম রোগ প্রতিরোধ করে। চোখের একটি মারাত্মক সমস্যা- গ্লুকোমা। এর ফলে দৃষ্টিশক্তি ক্রমশ ক্ষীণ হতে থাকে। এই রোগের সঙ্গেও মোকাবিলা করতে পারে মৌরি।

৬. মুখের দুর্গন্ধের সমস্যা কমায় :

অনেকের ক্ষেত্রেই মুখ খুললেই নিঃশ্বাসের সঙ্গে বাজে গন্ধ বেরোয় । ফলে, লোকজনের সঙ্গে কথা বলার সময় ভীষণ বিড়াম্বনায় পড়েন তারা । আর এই সমস্যার সমাধানও রয়েছে মৌরির কাছে। মৌরি মুখে দিয়ে চেবালে মুখে লালার নিঃসরণ বেড়ে যায়। ফলে দুর্গন্ধ সৃষ্টিকারী ব্যাকটেরিয়াগুলি আর দাঁতের ফাঁকে আটকে থাকতে পারে না। এছাড়া মৌরিতে থাকে অ্যান্টি ব্যাক্টেরিয়াল কিছু উপাদান। এই উপাদানগুলি মুখের মধ্যে থাকা জীবাণু যা দুর্গন্ধের সৃষ্টি করে, তাদের নিমেষের মধ্যে মেরে ফেলে। অতএব, এবার থেকে মুখের দুর্গন্ধ দূর করুন মৌরির সুগন্ধ দিয়ে।

9cabcde2 0234 49f5 9d1a f8b1bf582fcb

৭)উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা কমায় :

যাদের হাই ব্লাড প্রেসার বা উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা রয়েছে, তাদের প্রত্যেকদিন নিয়ম করে মৌরি খাওয়া উচিৎ। কাঁচা মৌরি চিবিয়ে খেলে লালারসে নাইট্রাইটের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। ফলে তা লালার সঙ্গে রক্তে প্রবেশ করে রক্তচাপকে নিয়ন্ত্রণ করে। এছাড়াও মৌরিতে আছে ম্যাগনেশিয়াম, পটাশিয়াম ও ক্যালশিয়াম এর মতো দুই অত্যাবশ্যকীয় খনিজ। এগুলি রক্তে মিশে রক্তে সোডিয়ামের মাত্রাকে নিয়ন্ত্রণে রাখে। ফলে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে এবং বেশী থাকলে রক্তচাপ কমাতেও তা সাহায্য করে।

৮) ডায়াবেটিক রোগীদের সুগার লেভেল নিয়ন্ত্রণে রাখেঃ

ডায়বেটিসে প্রচুর মানুষ ভোগেন। তবে এই রোগ হলেও রক্তে শর্করার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে রেখে সুস্থভাবে বেঁচে থাকা যায়। তবে ভয়ের বিষয় হল, এই মারণ রোগে আক্রান্তের সংখ্যা দিনকে দিনে বেড়েই চলেছে। যাদের পরিবারে ডায়বেটিস রোগটি ইতিমধ্যে হানা দিয়েছে, তাদের নিয়মিত মৌরি খাওয়া উচিৎ। মৌরিতে থাকা ভিটামিন-সি, বিটা-ক্যারোটিন এবং একাধিক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান রক্তে শর্করার মাত্রা কমায় এবং নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রাখে। সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, মৌরি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় যা ডায়বেটিক রোগীদের জন্য অত্যন্ত জরুরি। এছাড়াও নিয়মিত মৌরি খেলে ডায়বেটিস সম্পর্কিত বিভিন্ন সমস্যা দূর হয়। এছাড়া মৌরি বীজের মধ্যে থাকে কম পরিমাণ গ্লাইকেনিক ইনডেক্স। তাই ডায়াবেটিক রুগীদের খাবারের তালিকায় একে রাখা খুবই উপকারী।তাহলে জেনে নিলেন তো মৌরীর কত গুণ ! তাহলে আর দেরি না করে মৌরি খান এবং সুস্থ থাকুন।