নিজস্ব সংবাদদাতাঃ করোনা বিধি লঙ্ঘনের আশ্চর্যজনক নজির তৈরি হল কলকাতার দক্ষিণ শহরতলির বজবজে। এখানকার এক পঞ্চাশোর্ধ মহিলার করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হলে তার পরিবার পরিজনদের জোরাজুরিতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ যাবতীয় নিয়ম লঙ্ঘন করে মৃতার দেহ  পরিজনদের হাতে তুলে দেয়! এই ঘটনা ঘটে গতকাল সন্ধ্যাবেলায়। দেহ হাতে পেলেও তা স্বাভাবিকভাবেই সৎকার করতে ব্যাপক বাধার মুখে পড়েন মৃতার পরিজনেরা। শেষ পর্যন্ত স্থানীয় প্রশাসনের হস্তক্ষেপে আজ ভোরবেলায় দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জেলার আকড়া শ্মশানে দাহকার্য সম্পন্ন করা হয়েছে বলে জানা যাচ্ছে।

বজ বজ পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা ওই মহিলা দিন দশেক আগে সকালবেলায় বাথরুমে গিয়ে আর ফিরে আসেননি। ঘন্টাখানেক সময় পেরিয়ে যাওয়ার পরও তিনি বাড়িতে ফিরে না আসায়

পরিবারের লোকজনদের সন্দেহ হয়। তারা আশেপাশে খোঁজাখুঁজি করতে গিয়ে দেখেন বাড়ির কোনার মাঠে মহিলা অচৈতন্য অবস্থায় পড়ে আছেন তিনি। পরিবারের লোকজন তাকে তৎক্ষণাৎ কলকাতার নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজে নিয়ে যায়। সেখানে জরুরি বিভাগের চিকিৎসকরা পরীক্ষা করে জানান জনৈকা মহিলা হৃদরোগে আক্রান্ত হয়েছেন। স্বাভাবিকভাবেই হাসপাতলে ভর্তি করে নেন ওই মহিলাকে।

হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার ফলে ওই মহিলার দেহের একটি দিক অসাড় হয়ে যায়। পরে চিকিৎসকরা করোনা পরীক্ষা করলে রিপোর্ট পজেটিভ আসে। গত পরশু অর্থাৎ ৭ জানুয়ারি রাত ১ টার সময় তিনি মারা যান। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করে জানিয়ে দেন তারা যেন ৪-৫ জনের বেশি হাসপাতালে না আসেন, দূর থেকে তাদের দেহ দেখানো হবে।

এনআরএস কর্তৃপক্ষ করোনা বিধি মেনেই যাবতীয় ব্যবস্থা করেছিল। স্বভাবতই পরিবার-পরিজনকে দূর থেকে দেহ দেখানোর পর নিয়ম অনুযায়ী ধাপার বৈদ্যুতিক চুল্লিতে দেহ সৎকার হওয়ার কথা। কিন্তু ওই পরিবারটি হাসপাতালে গিয়ে জোর জুলুম করে দেহ তাদের হাতে তুলে দেওয়ার জন্য! তখন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাদের জানান তারা যদি পিপিই পড়ে আসেন তাহলে তাদের হাতে দেহ তুলে দেওয়া হবে!

মৃতার পরিবারের চারজন পিসিই কিট পড়ে হাসপাতলে হাজির হলে এনআরএস কর্তৃপক্ষ যাবতীয় নিয়ম-নীতি লঙ্ঘন করে পরিজনদের হাতে ওই করোনা আক্রান্ত মহিলার দেহ তুলে দেয়! কিন্তু বিধি বাম, এসপ্ল্যানেডের কাছে পুলিশের সন্দেহ হওয়ায় ওই করণ আক্রান্ত মহিলার দেহ বাহী গাড়িটিকে থামায়। ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকা পুলিশের পক্ষ থেকে পরিষ্কার জানিয়ে দেওয়া হয় করোনা আক্রান্ত ব্যক্তির মৃতদেহ এইভাবে নিয়ে যাওয়া যাবে না। এদিকে পরিবারের হাতে তুলে দেওয়ার পর আর কোনো দায়িত্ব নিতে অস্বীকার করে এনআরএস কর্তৃপক্ষ।

এই পরিস্থিতিতে মৃতার পরিজনেরা বজবজের বিধায়ক অশোক দেব এবং বজবজ পৌরসভার সরকারি পুর প্রশাসক গৌতম দাশগুপ্তর সঙ্গে যোগাযোগ করলেও তারা পরিষ্কার জানিয়ে দেন এক্ষেত্রে সরকারের যে করোনা বিধি জারি আছে তার বাইরে বেরিয়ে তারা কোনো সাহায্য করতে পারবেন না। জানা গিয়েছে শেষ পর্যন্ত আখড়া শ্মশানের কর্মীদের অনেক অনুরোধ করে করোনা আক্রান্ত ওই মহিলার দেহ তার পরিবার দাহ করতে সক্ষম হয়েছে।

করোনা বিধি লঙ্ঘন করে কীভাবে এই গোটা ঘটনাটি ঘটল তা নিয়ে যেমন প্রশ্ন উঠছে তেমনি বজবজের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের স্থানীয় বাসিন্দারা এই ঘটনায় যথেষ্ট আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন। কারণ যারা ওই মৃতদেহ নিয়ে সৎকারের উদ্দেশ্যে চারিদিকে ছুটাছুটি করেছিল, সেই ব্যক্তিরাই বাড়ি ফিরে এসে প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে! স্থানীয় বাসিন্দারা এই বিষয়ে প্রশাসনের দ্রুত হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

সূত্র- সমীর দাস, জাকারিয়া লস্ক্র,জায়েদ আনসারি