নিজস্ব প্রতিবেদনঃ আবারও বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে ডোনাল্ড ট্রাম্প! গত দুদিন ধরে তার একটি অডিও টেপকে কেন্দ্র করে শোরগোল পড়ে গিয়েছিল আমেরিকার রাজনৈতিক মহলে। দলমত নির্বিশেষে সাধারণ মানুষ ছি! ছিক্কারে ভরিয়ে দিয়েছিলেন মার্কিন রাষ্ট্রপতিকে। তবে এবার আরও সাংঘাতিক কান্ড ঘটিয়ে বসলেন আমেরিকার এই বিদায়ী রাষ্ট্রপতি। আমেরিকার নব নির্বাচিত রাষ্ট্রপতি জো বাইডেনকে জয়ের চূড়ান্ত সার্টিফিকেট দেওয়ার আগেই তিনি অনৈতিক চাপ দিতে শুরু করেন উপরাষ্ট্রপতি মাইক পেন্সকে। ট্রাম্পের দাবি জো বাইডেনকে জয়ের শংসাপত্র না দিয়ে বরং পেন্স তার সংবিধানিক ক্ষমতা কাজে লাগিয়ে তা প্রত্যাখ্যান করুন।
গোটা বিষয়টি বুঝতে গেলে আমেরিকার নির্বাচনী ব্যবস্থা সংক্ষেপে জেনে নেওয়া জরুরী। সেই দেশে ভোটাররা প্রত্যক্ষভাবে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন করতে পারেন না। প্রতিটি রাজ্যের ভোটার যুযুধান প্রার্থীদের পছন্দমতো ভোট দিয়ে থাকেন। যে রাজ্যে যে দলের প্রার্থী সবচেয়ে বেশি ভোট পান সেই রাজ্যের প্রতিটি ইলেকটোরাল কলেজের ভোট সংশ্লিষ্ট প্রার্থীর দিকে চলে যায়। এক্ষেত্রে ইলেকটোরাল কলেজের ভোট ভাগাভাগির কোনো প্রশ্ন নেই। এর আগে বেশ কিছু নির্বাচনে দেখা গিয়েছে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে সর্বাধিক ভোট পেয়েও কোনো প্রার্থী ইলেকটোরাল কলেজের ভোট কম পাওয়ায় নির্বাচনে হেরে গিয়েছেন। ডোনাল্ড ট্রাম্প সেইভাবেই আমেরিকার রাষ্ট্রপতি হয়েছিলেন। হিলারি ক্লিনটন তার থেকে বেশি ভোট পেলেও ইলেকটোরাল কলেজের ভোট ট্রাম্প বেশি পাওয়ায় তিনি আমেরিকার রাষ্ট্রপতি হন।
এবারের নির্বাচনে অবশ্য ডেমোক্র্যাট প্রার্থী জো বাইডেন প্রায় ৭০ লাখ ভোট বেশি পাওয়ার পাশাপাশি ৩০৬-২৩২ ব্যবধানে ইলেকটোরাল কলেজের ভোটেও ট্রাম্পকে হারিয়েছেন। স্বাভাবিকভাবেই জো বাইডেনের আমেরিকার পরবর্তী রাষ্ট্রপতি হওয়ার কথা। কিন্তু ট্রাম্প ভোট গণনার গোড়া থেকেই নির্বাচনী ফল মেনে নিতে চাননি। তার দাবি নির্বাচনে কারচুপি করে তাকে হারিয়ে দেওয়া হয়েছে। এই বিষয়ে তার দলের পক্ষ থেকে ডজনখানেক মামলা করা হলেও আমেরিকার সুপ্রিম কোর্ট সহ বিভিন্ন রাজ্যের আদালত মামলাগুলি খারিজ করে দেয়। এরপরই ট্রাম্প জর্জিয়ার স্টেট সেক্রেটারিকে ফোন করে প্রায় ১২ হাজার ভোটের কারচুপি করার জন্য চাপ দিতে থাকেন, যে কথোপকথনের টেপ দুদিন আগেই প্রকাশ্যে এসে গিয়েছে।
এই পর্যন্ত পড়ে অনেকের ধারণা হতে পারে শেষ পর্যন্ত উপায় না দেখে ট্রাম্প রণে ভঙ্গ দিয়ে দিয়েছেন! কিন্তু বিষয়টি মোটেও তা নয়। আমেরিকার সংবিধান অনুযায়ী সে দেশের পার্লামেন্টের দুটি কক্ষ অর্থাৎ হাউজ অব রিপ্রেজেন্টেটিভ এবং সেনেটের যৌথ অধিবেশন ডেকে নবনির্বাচিত রাষ্ট্রপতির জয়ের শংসাপত্রে সীলমোহর দেওয়া হয়। সাংবিধানিক ক্ষমতায় যৌথ অধিবেশনে সভাপতিত্ব করে থাকেন আমেরিকার উপরাষ্ট্রপতি। ঠিক এই সুযোগটাকেই কাজে লাগাতে চেয়েছেন ট্রাম্প। তিনি গতকাল টুইট করে প্রকাশ্যেই দাবি করেন উপরাষ্ট্রপতি মাইক পেন্সের উচিত বাইডেনের জয়ের শংসাপত্রে সীলমোহর না দিয়ে তা প্রত্যাখ্যান করা!
আমেরিকার রাজনৈতিক মহল সূত্রে জানা গিয়েছে ট্রাম্প টুইট করার পাশাপাশি এই বিষয় নিয়ে সরাসরি পেন্সের সঙ্গে কথাও বলেন। তিনি চাপ দিতে থাকেন বাইডেনকে জয়ের শংসাপত্র না দেওয়ার বিষয়ে। যদিও তাতে বিশেষ ফলাফল হয়নি, উপরাষ্ট্রপতি মাইক পেন্স সরাসরি ট্রাম্পকে জানিয়ে দেন তিনি সাংবিধানিক অধিকারের বাইরে গিয়ে কোনো কাজ করতে পারবেন না। পেন্সের দাবি তিনি বিশ্বাস করেন না জয়ী প্রার্থীর শংসাপত্র প্রত্যাখ্যান করার মতো কোনো অধিকার সংবিধান তাকে দিয়েছে। এরপরই গতকাল আরেকটি টুইট করে ট্রাম্প জানিয়ে দেন পেন্স যদি তার কথা মতো কাজ না করেন তাহলে তার সঙ্গে সম্পর্ক নষ্ট হয়ে যাবে।
শত চেষ্টা করার পরও ট্রাম্পকে হতাশ করে দিয়েই আজ দুপুর একটার সময় আমেরিকার সংসদের দুই কক্ষের যৌথ অধিবেশন বসার কথা। এই অধিবেশন থেকেই জো বাইডেনকে জয়ের চূড়ান্ত শংসাপত্র দিয়ে দেওয়া হবে। আগামী ২০ জানুয়ারী হোয়াইট হাউসে প্রবেশ করে দেশের দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নেওয়ার কথা জো বাইডেনের। জানা গিয়েছে ট্রাম্পের এই আচরণের ফলে তার দলের একাধিক প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি ক্ষুব্ধ। সেইসঙ্গে ট্রাম্পের কথা শুনে যৌথ অধিবেশন বয়কট করতে অস্বীকার করেছেন বেশিরভাগ রিপাবলিকান সংসদ সদস্য।