অতুল্য ঘোষ, সিদ্ধার্থশঙ্কর রায় থেকে জ্যোতি বসু, বুদ্ধদেব ভট্টচার্য – বাংলায় জনপ্রিয় নেতার তালিকা বেশ লম্বা। এনারা প্রত্যেকেই একটি নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি। সেটাই স্বাভাবিক। কিন্তু কারও মনে প্রশ্ন উঠতেই পারে, এঁরা কি নির্দল হয়ে দাঁড়ালে জিততে পারতেন?
সেই তো আসল নেতা যার কাছে ম্লান হয়ে যায় দলীয় রাজনীতি। ক্ষমতাশালী দলের ছত্রছায়ায় নয়। ব্যক্তিগত ক্যারিশ্মায় যিনি ফিকে করে দিতে পারেন দলের প্রতীককেও। একেবারে নির্দল প্রার্থী হয়েও ভোটে জিতে আসার ক্ষমতা রয়েছে যাঁদের। এখানে বাংলার তেমনই ৫ নেতা-নেত্রীকে নিয়ে আলোচনা করব আমরা। যারা দলের তোয়াক্কা করেন না। একক ক্ষমতায় জিতে আসার মতো কবজির জোর যাদের ভরপুর।
১। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় – মহাকরণের অলিন্দ থেকে মমতার চুলের মুঠি ধরে বের করে দিচ্ছে জ্যোতিবাবুর পুলিশ। আর তিনি চিৎকার করছেন, একদিন এখানে আসব। কেউ আটকাতে পারবেনা। পারেওনি। পুলিশ মেরে মাথা ফাটিয়ে দিয়েছে। প্রাণে মেরে ফেলার চেষ্টা হয়েছে। তারপরেও দাপটের সঙ্গে দাপিয়ে বেড়িয়েছেন বাংলার মাঠ-ঘাট-অলিগলি। সিঙ্গুর, নন্দীগ্রাম, নেতাই যেখানে অন্যায়, অবিচার সেখানে ছুটে গিয়েছেন মমতা। অসহায়, আর্তের পাশে দাঁড়িয়েছেন। হয়ে উঠেছেন বাংলার প্রকৃত জননেত্রী। আর আজ বাংলার রাজনীতিতে তিনি নিজেই ব্র্যান্ড। সমালোচকরা বলেন, তৃণমূল টিকে আছে মমতার জন্য। আসলে তিনি নিজেই দল। ভারতের খুব কম নেতা-নেত্রীরই এমন ক্যারিশ্মা আছে। যে কোনও প্রতীকেই জিতে আসার ক্ষমতা আছে মমতার।
২। অধীর চৌধুরি – সমালোচকরা বলেন, বেতাজ বাদশা। বহরমপুরবাসী আদর করে ডাকে, রবিনহুড। বর্তমান প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতিকে যে নামেই ডাকা হোক, তিনি অপরাজেয়। সিপিএম পারেনি। তৃণমূলও নয়। গোটা মুর্শিদাবাদ জোড়াফুলের ছত্রছায়ায় এলেও অধীরের গড় হয়ে থেকে গেছে বহরমপুর। এমনও হয়েছে, কংগ্রেসের প্রার্থী পছন্দ না হওয়ায় নির্দল হিসাবে দাঁড় করিয়েছেন পছন্দের লোককে। ফল বেরনোর সময় দেখা গেছে, হাঁসতে হাঁসতে জিতেছে ‘অধীরের প্রার্থী’। কংগ্রেস প্রার্থী গোহারা হেরেছেন। স্থানীয়রা বলেন, অধীরের নাম করে বহরমপুর থেকে ল্যাম্প পোস্টকে দাঁড় করালেও সেই ভোটে জিতবে। এটাই অধীর ম্যাজিক।
৩। শুভেন্দু অধীকারী – তমলুকের রাজা। বাম আমলে লক্ষণ শেঠের নামে যখন বাঘে গরুতে একঘাটে জল খেত তখন শুভেন্দু বিরোধী শিবিরের সৈনিক। মমতার নেতৃত্বে নন্দীগ্রাম আন্দোলনে সামনে থেকে লড়াই করেছেন। সেখান থেকেই উত্থান। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলেন, তৃণমূলে মমতা ছাড়া আর যদি কারও জনভিত্তি থাকে সেটা শুভেন্দু। এটা কথার কথা নয়। নন্দীগ্রামে প্রায় ৭০ শতাংশের কাছাকাছি ভোট পেয়ে জিতেছেন। দলে থেকে দলীর প্রতীকের উর্ধে উঠতে পেরেছেন তিনি। এটা হয়ত তৃণমূলের কাছে মাথাব্যাথার কারণ হয়ে উঠতে পারে। কিন্তু তমলুক থেকে শুভেন্দু নির্দল হয়েও জয় হাসিল করে নিতে পারেন অনায়াসে।
৪। অর্জুন সিং – ভাটপাড়া মুকুটহীন সম্রাট। একসময় এই শিল্পাঞ্চল বামেদের দখলে ছিল। কিন্তু লাল পার্টির ভরা সময়েও ২০০১ সালে তৃণমূলের হয়ে এই অঞ্চলে জিতেছিলেন অর্জুন। মূলত হিন্দীভাষী নেতা। কিন্তু বাঙালি ভোট জেতার কৌশলও তাঁর জানা আছে। বিজেপির টিকিটে দাঁড়িয়েও তৃণমূলের দীনেশ ত্রিবেদীকে হারিয়ে জয় হাসিল করে নিয়েছেন। বোঝাই যায়, ভাটপাড়ায় অর্জুন সিংই শেষ কথা। সে নির্দল প্রার্থী হয়ে দাঁড়ালেও জয়মালা উঠবে অর্জুনেরই গলায়।
৫। রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় – তৃণমূলের তরুণ তুর্কি। ২০১৬ সালে ডোমজুড় বিধানসভা কেন্দ্র থেকে তিনিই সবচেয়ে বেশি ব্যবধানে জিতেছেন। বাবা ছিলেন পেশায় সাংবাদিক। রাজীব নিজেও লেখালিখি করেন। গান এবং আবৃত্তিতেও তাঁর ঝোঁক আছে। আর আছে সমাজসেবায়। এটাই রাজীবের ইউএসপি। এলাকার যে কোনও কাজে তিনি আছেন। ডাক্লেই তাঁকে পাওয়া যায়। ডোমজুড়বাসীও রাজীব বলতে অজ্ঞান। এই এলাকা থেকে নির্দল প্রার্থী হয়েও জেতার ক্ষমতা তাঁর আছে।
তবে এছাড়াও আছেন সবংয়ের মানস ভুঁইঞা, মালদার গনি পরিবার, হাবড়ার জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক প্রমুখ। যদি আপনার এলাকার কোনও নাজনৈতিক দলের নেতা নির্দল প্রার্থী হয়েও ভোটে জিততে পারেন বলে মনে করেন, তবে তাঁর নাম উল্লেখ করুন কমেন্ট বক্সে।