উত্তর কোরিয়া। পৃথিবীর ভৌগোলিক সীমানার মাঝেই অবস্থিত একটি দেশ। মাত্র ১ লক্ষ ২০ হাজার বর্গ কিলোমিটারের এই ছোট্ট দেশটার দেখা পাওয়া যায় ভারতের উত্তর পূর্ব কোণ বরাবর চীন পেরিয়ে গেলেই। বিশ্বের মানচিত্রে উত্তর কোরিয়ার অবস্থান ক্ষুদ্র, কিন্তু এটি যে বিশ্বের সবচেয়ে বিতর্কিত দেশ, সে বিষয়ে কোনো সন্দেহের অবকাশ নেই।
উত্তর কোরিয়াকে পৃথিবীর সবচেয়ে দুর্গম দেশ গুলির মধ্যে অন্যতম বলা যায়। না, ভৌগোলিক অবস্থানের জন্য উত্তর কোরিয়া দুর্গম নয়, উত্তর কোরিয়া আক্ষরিক অর্থেই দুর্গম তার রাজনৈতিক পরিস্থিতির জন্য।
উত্তর কোরিয়ার প্রচলিত শাসনব্যবস্থা হল একনায়কতান্ত্রিক। শুধু তাই নয়, বিশ শতকের প্রথমার্ধে জার্মানির হিটলারী শাসনকে মনে করায় উত্তর কোরিয়া। এই দেশের একনায়কতান্ত্রিক শাসক হলেন কিম জং উন। তিনিই দেশের সর্বেসর্বা। আদ্যপান্ত গোপনীয়তায় মোড়া কিম জং উনের উত্তর কোরিয়া। ওই দেশের প্রাচীরের ওপারে কী চলছে, তা গোটা বিশ্ব কানাঘুষো গুজবে অনুমান করে নেয় মাত্র। আর মাঝে মাঝে উত্তর কোরিয়ায় দুর্ভেদ্য প্রাচীর ডিঙিয়ে প্রাণ হাতে করে পালিয়ে এসে কেউ কেউ বর্ণনা দেয় বিভীষিকাময় জীবনের। এহেন উত্তর কোরিয়া সম্পর্কে আজ জেনে নেব কয়েকটি চাঞ্চল্যকর তথ্য, যা শুনলে বিস্মিত হবেন আপনিও।
১) উত্তর কোরিয়ার নাগরিকের আয়:
একনায়কতান্ত্রিক উত্তর কোরিয়ায় প্রতিটি নাগরিকের জন্য রয়েছে নির্দিষ্ট আয়ের পরিমাণ। ওই নির্দিষ্ট পরিমাণের বেশি রোজগার কেউ করতে পারেন না। সেখানকার নাগরিকদের বার্ষিক আয় ১ হাজার থেকে ২ হাজার ডলার, উন্নত বা উন্নয়নশীল দেশের ক্ষেত্রে যা খুবই সামান্য। উত্তর কোরিয়ায় সেরা চাকরির একটি হলো কোনো শিল্পপার্কে যন্ত্রপাতি নির্মাণ করা। আর এ চাকরি যারা করেন তাদের মাসে ৬২ ডলারের মতো পান।
২) উত্তর কোরিয়ায় পর্ণোগ্রাফি:
পর্ণোগ্রাফি দেখা নিয়ে অনেক দেশেই আপত্তি তোলা হয়। কিন্তু কিম জং উনের দেশ উত্তর কোরিয়ায় পর্ণোগ্রাফি দেখলে আর রক্ষা নেই। এর শাস্তি একেবারে মৃত্যুদন্ড। ক্ষমা বলে কিছু নেই উত্তর কোরিয়ায়।
৩) উত্তর কোরিয়ার শাসকের যৌন জীবন:
উত্তর কোরিয়ায় কিম জং উন নিষিদ্ধ করেছেন পর্ণোগ্রাফি। পর্ণোগ্রাফি দেখার অপরাধে নির্ধারণ করেছেন চরম শাস্তিও। কিন্তু তার মানে কি তিনি যৌনতা বিরোধী? বলা বাহুল্য, তা কিন্তু নয়। কিম জং উন দেশের বাকীদের পর্ণোগ্রাফি দেখা নিষিদ্ধ করেছেন ঠিকই কিন্তু তাঁর ব্যক্তিগত যৌন জীবন আদতেই ঘৃণ্য। শোনা যায়, ২০০০ জন যৌনদাসী নিয়ে কিম জং উন এবং তাঁর দলের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা দিন কাটান। যৌনদাসীরা প্রত্যেকেই নাকি স্কুল পড়ুয়া।
৪) উত্তর কোরিয়ার ধর্ম:
বস্তুত, উত্তর কোরিয়ায় মানুষজনের কোনো ধর্ম স্বীকার করা হয় না। অর্থাৎ সকলেই সেখানে নাস্তিক। যদিও খুব স্বল্প পরিমাণে খ্রিষ্টান এবং বৌদ্ধ ধর্মের অস্তিত্বের কথা শোনা যায়, কিন্তু সেই সঙ্গে শোনা যায় আরো এক বিদঘুটে নিয়মের কথাও। উত্তর কোরিয়ায় কোনো ব্যক্তির কাছ থেকে যদি বাইবেল পাওয়া যায়, তবে সেই ব্যক্তির জন্য নির্ধারিত হয়েছে মৃত্যু দন্ড।
৫) উত্তর কোরিয়ার কাজের সময়:
সপ্তাহে ৫ দিনের পরিবর্তে আপনাকে ছ’দিন কাজ করতে বললে আপনার মুখ ভার হয়ে যায়। কিন্তু উত্তর কোরিয়ায় সাতদিনই কাজ করতে হয়! ছ’দিন অফিসের পর জোড় করে মানুষকে সমাজসেবা করতে পাঠানো হয় উত্তর কোরিয়ায়। এখানে সব বাড়িতেই বসানো রয়েছে সরকারি রেডিও। যা ২৪ ঘণ্টা চলে। বন্ধ করার নিয়ম নেই!
৬) উত্তর কোরিয়ায় গাড়ি:
পরিশ্রম করে টাকা জমিয়ে চার চাকার গাড়ি কেনাই কি আপনার স্বপ্ন? তাহলে উত্তর কোরিয়ায় গেলে আপনার স্বপ্ন চুরমার হতে খুব বেশি সময় লাগতো না। নিজের ইচ্ছে মতো গাড়ি কেনা যায় না এই দেশে। সরকারি আমলা ও মিলিটারি অফিসিয়ালরা ছাড়া এই দেশে কারও নিজের গাড়ি রাখার নিয়ম নেই। এমনকি বিশিষ্ট ব্যক্তি ছাড়া কোনও সাধারণ মানুষের ইন্টারনেট ব্যবহার করার ক্ষমতাও নেই। রেড স্টার নামের নিজেদের একটি সিস্টেম চলে ওখানে।
৭) উত্তর কোরিয়ায় বন্দী:
জানা যায়, কিম জং উনের দেশে প্রায় ২.৫ লাখ উত্তর কোরিয়ান বন্দিদশা কাটাচ্ছেন। এই বন্দিদের একটি শিবিরে আটকে রাখা হয়েছে যা ইলেকট্রিক তার দিয়ে ঘেরা। শুধু তাই নয়, শাস্তির নিষ্ঠুর প্রথা অনুযায়ী এই দেশের কোনো পরিবারে কেউ একজন অপরাধ করলে সেই পরিবারের তিন প্রজন্মকে শাস্তি ভোগ করতে হয় বলেও জানা যায় বিভিন্ন সূত্রের খবর থেকে।
উত্তর কোরিয়ার শাসক কিম জং উন এবং তাঁর দলের পক্ষ থেকে অবশ্য এই সমস্ত তথ্যের অনেকটাই অস্বীকার করা হয়, কিন্তু উত্তর কোরিয়ার মিলিটারি শাসনের কবল থেকে যাঁরা প্রাণ নিয়ে পালাতে পেরেছেন, দক্ষিণ কোরিয়ার মাটিতে নেমে যাঁরা ফেলেছেন স্বস্তির নিঃশ্বাস তাদের অনেকেই এই তথ্য গুলি সমর্থন করেছেন।