কলকাতা শহরের বয়সটা যত বাড়ছে, তার সঙ্গে পাল্লা দিয়েই যেন বেড়ে চলেছে তিলোত্তমার রহস্য। এই শহরের আনাচে কানাচে লুকিয়ে আছে ৩৩০ বছরের পুরোনো গন্ধ। আর তাই বিজ্ঞান প্রযুক্তি যতই শহরটাকে মুড়ে ফেলুক না কেন, ইতিহাসকে তা মুছে দিতে পারে না কখনোই। ইতিহাসকে সঙ্গে নিয়েই কলকাতার বুকে দাঁড়িয়ে থাকে শত শত বছরের পুরোনো সব বিল্ডিং। কখনো আবার জানান দেয় “তেনাদের” অস্তিত্ব!
হ্যাঁ ঠিকই ধরেছেন। তেনাদের কথাই বলছি। সন্ধ্যাবেলা যাঁদের নাম নিতে নেই। আপনি যদি ভয়কাতুরে হন, যদি মাঝরাতে ভয়ের সিনেমা চালিয়ে আপনার গায়ে কাঁটা দিয়ে ওঠে কিন্তু তাও সাহস করে সিনেমা বন্ধ করে দিতে পারেন না কিছুতেই, তাহলে আজকের এই প্রতিবেদন আপনার জন্যেই। কারণ আজকের আলোচনার বিষয় তেনারাই। অর্থাৎ ভূত।
ভূতের অস্তিত্ব অনেকেই মেনে নেন আবার অনেকেই বলে থাকেন এসব পাগলামো। কিন্তু নিন্দুকরা যাই বলুক না কেন, পৃথিবীতে মানুষের পাশাপাশি ভূতের অস্তিত্বটা যে বেশ গোলমেলে, আর তাকে যে একেবারেই হেসে উড়িয়ে দেওয়া যায় না, তা কিন্তু জানেন অনেক বিজ্ঞানীই। আর তাই অনেকেই আজও গবেষণা করে চলেছেন ভূতবিদ্যা নিয়ে। মৃত্যুর পর মানুষের দেহ বিলীন হয় পঞ্চভূতে, কিন্তু আত্মার গন্তব্য কোথায়? তারা কি আদেও বিলীন হয়? নাকি আমাদেরই আশেপাশে কোথাও নিজেদের জন্য জায়গা খুঁজে নেয়? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজে চলেছেন বিজ্ঞানীরাও। তাই ভূতের অস্তিত্বকে জ্ঞানের ঔদ্ধত্যে একেবারে উড়িয়ে দেওয়া শুধু বোকামিই নয়, অজ্ঞানতাও বটে।
খাস কলকাতার বুকেই দিন দুপুরে কোথাও কোথাও উঁকি মারে এমন রহস্য যার কোনো ব্যাখ্যা জ্ঞানী বিজ্ঞানীরা দিতে পারেন নি। আসুন একবার ঢুঁ মেরে আসা যাক কলকাতার সেই সমস্ত “ভুতুড়ে” জায়গায়।
https://www.banglakhabor.in/wp-admin/post.php?post=9523&action=edit
১) কলকাতার ন্যাশানাল লাইব্রেরি:
ব্রিটিশ আমলে ১৯০৩ সালে কলকাতায় তৈরি করা হয়েছিল ভারতের বৃহত্তম এই ন্যাশনাল লাইব্রেরি। বহু প্রাচীন দুর্মূল্য বইয়ের সম্ভারের সঙ্গে সঙ্গে ন্যাশনাল লাইব্রেরিতে গেলে দেখা মেলে ভূতেরও। অন্তত ভুক্তভোগীরা জানিয়েছেন তেমনটাই। সচক্ষে ভূত দেখা না দিলেও ন্যাশানাল লাইব্রেরিতে গেলে ভূতের অস্তিত্ব যে অনুভব করাই যায়, সে বিষয়ে দ্বিমত নেই কারোরই। কলকাতার এই প্রাচীন লাইব্রেরিটির দুর্নাম রয়েছে ভুতুড়ে কার্যকলাপের জন্য। যাঁরা এখানে পড়াশোনা করতে যান তাঁদের অনেকেই বলেছেন, পড়াশোনা করতে করতে আচমকা ঘাড়ে অদৃশ্য কারোর নিঃশ্বাস অনুভব করেছেন। কেউ বা বলেন,স্তব্ধ দুপুরে শুনেছেন অশরীরি কারোর পদচারণার শব্দ। শোনা যায়, ন্যাশনাল লাইব্রেরী বল ডান্সের ফ্লোর থেকে এখনও নাকি ভেসে আসে কনসার্টের সুর। লর্ড মেটকাফ নামে এক সাহেবের স্ত্রীর অশরীরি আত্মাই নাকি এখনও বিরাজ করছেন কলকাতার ন্যাশনাল লাইব্রেরিতে।
২) কলকাতার রবীন্দ্র সরোবর মেট্রো স্টেশন:
কলকাতা শহরের সুড়ঙ্গ পথেও কিন্তু রয়েছে অশরীরি উপস্থিতি। অন্তত প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান তেমনটাই। মেট্রোর লাইনে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যার ঘটনা কলকাতায় নতুন কিছু নয়। কিন্তু জীবনের প্রতি বীতশ্রদ্ধ হয়ে যাঁরা নিজেকে হত্যা করার পরিকল্পনা করেন তাঁরা বেশিরভাগই কেন ঝাঁপ দেওয়ার জন্য বেছে নেন রবীন্দ্র সরোবর মেট্রো স্টেশনকে, তা এখনও রহস্য। আত্মহত্যার ৮০ শতাংশই ঘটে রবীন্দ্র সরোবর স্টেশনে। এই পরিসংখ্যান অনিবার্য ভাবে জায়গাটিকে ঘিরে তৈরি করেছে ভুতুড়ে আমেজ। আত্মহত মানুষদেরই আত্মা নাকি এই স্টেশনে সন্ধের পরে আড্ডা বসায়। রাত্রে এই স্টেশন থেকে শেষতম মেট্রোতে চড়েছেন যাঁরা তাঁরা অনেকেই দাবি করেন, ট্রেনের জন্য অপেক্ষা করার সময়ে প্রায়-নির্জন স্টেশনে তাঁরা বিভিন্ন ছায়ামূর্তিকে ঘুরে বেড়াতে দেখেছেন। ভুতুড়ে অস্তিত্বের দাবি করেছেন মেট্রো চালকেরাও।
৩) কলকাতার পুতুল বাড়ি:
আহিরীটোলায় অবস্থিত এই বাড়িটি নিয়ে আজও রহস্যের শেষ নেই। এই বাড়িটিতে এখনো রাত্রি হলে কেউ আর দোতলা বা তিনতলায় ওঠার সাহস পান না। শুধুমাত্র রাত্রিবেলা নয়, ভরদুপুরে অশরীরীর উপদ্রব বুঝতে পারা যায়। তবে এই বাড়িটির পিছনে একটি ছোট রহস্য গল্প রয়েছে। এক সময় বাড়িটিতে এক বড়লোক বাস করতেন। বাড়িটি পুরো দেখাশোনার জন্য ছিল প্রচুর দাসী। মনিব সেই দাসীদের উপর যৌন অত্যাচার করতেন। দাসীরা একদিন এর বিরোধিতা করেছিলেন। এর ফলে তাদেরকে হত্যা করা হয়। হত্যা করা হলে তাদের লাশ বাড়ির পিছনে মাটি চাপা দিয়ে দেওয়া হয়। ধরে নেওয়া হয়, এই কারণে আজও সেই দাসীদের আত্মা এই বাড়িটিতে ঘুরঘুর করে। শোনা যায় কান্নার শব্দ।
৪) কলকাতার নিমতলা শ্মশান ঘাট:
শ্মশানের নাম শুনলেই ছমছম করে ওঠে গা। আর ভুতুড়ে জায়গার তালিকায় শ্মশানের নাম থাকবে না তা ভাবাই যায় না। অনেকেই মনে করেন, নিমতলা শ্মশান ঘাটে নাকি তেনারা প্রায়ই ঘুরে বেড়ান। এমনকি অমাবস্যার রাতে নানান রকম অলৌকিক ঘটনাও ঘটে থাকে এখানে।
৫) কলকাতার লোয়ার সার্কুলার রোড সিমেট্রি:
এই কবরস্থানটি ভৌতিক ক্রিয়াকলাপের জন্য সুপরিচিত। এখানকারই একটি কবরে শায়িত আছেন স্যর উইলিয়াম হে ম্যাকনাটেন। স্যর উইলিয়াম প্রথম ইঙ্গ-আফগান যুদ্ধে নির্মমভাবে নিহত হন। তাঁর ছিন্নভিন্ন মৃতদেহটি আফগানিস্তান থেকে নিয়ে এসে এই সেমেটারিতে কবরস্থ করেন স্যর উইলিয়ামের স্ত্রী। কথিত আছে, এখনও তাঁর কবরের কাছাকাছি কেউ গেলে উইলিয়ামের ক্ষুব্ধ আত্মার আস্ফালনে দিনের আলোতেও গায়ে কাঁটা দিয়ে ওঠে।