অভিবাসী দিবস:-
প্রতি বছর ১৮ই ডিসেম্বর জাতিসংঘের সকল সদস্য দেশ মিলে পালন করে আন্তর্জাতিক অভিবাসী দিবস।
প্রতি বছর বিশ্বের বহু দেশ, সরকারী সংগঠন, বিভিন্ন বেসরকারী সংস্থা যথাযোগ্য মর্যাদায় এই দিবসকে ঘিরে বিভিন্ন ধরনের অনুষ্ঠান পালন করে। তার মধ্যে আলোচনা সভা, পথসভা, শোভাযাত্রা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, মানববন্ধন উল্লেখযোগ্য। এ সকল বিষয়গুলোর সবটুকুই অভিবাসীদের উপজীব্য করে অনুষ্ঠিত হয়।
অভিবাসী দিবসের উৎপত্তি:-
১৯৯০ সালে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ অভিবাসী শ্রমিক ও দেশে রেখে আসা তাদের পরিবারের নিরাপত্তা রক্ষায় একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলন করেছিলেন। এবং তাদের স্বার্থ রক্ষায় ১৮ ডিসেম্বর একটা চুক্তি প্রস্তাব আকারে গ্রহণ করেছিলেন। এবং এই উদ্দেশ্যে “মাইগ্রেন্ট রাইটস্ ইন্টারন্যাশনাল”, “ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন অন মাইগ্রেন্টস রাইটস্” সহ বিশ্বের অনেক সংগঠন অভিবাসীদের স্বার্থ রক্ষার্থে বিশ্ব জুড়ে প্রচার চালায়। ১৯৯৭ সাল থেকে ফিলিপিনো এবং অন্যান্য এশীয় অভিবাসী সংগঠনগুলো দিবসটি পালন করতে শুরু করে। শুরুর দিকে তারা ১৮ ডিসেম্বরকে নির্ধারণ করে এবং অভিবাসীদেরকে ঘিরে ‘আন্তর্জাতিক ঐক্য দিবস’ হিসেবে ঘোষণা করে।অবশেষে ১৯৯৯ সালের শেষ লগ্নে অন লাইনে ব্যাপক প্রচারের ফলে জাতিসংঘের মুখপাত্র এ দিবসটিকে ‘আন্তর্জাতিক অভিবাসী দিবস’ হিসেবে ঘোষণা করতে বাধ্য হন। এবং ২০০০ সাল থেকে ১৮ ই ডিসেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ বিশ্বব্যাপী এই দিবসটি উদযাপনের সিদ্ধান্ত নেয়।
মূলতঃ বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা ব্যাপক হারে অভিবাসন প্রক্রিয়া ও বিপুলসংখ্যক অভিবাসীদের স্বার্থ সংক্রান্ত বিষয়াকে ঘিরেই এই দিবসের উৎপত্তি।
অভিবাসন আসলে কী?
সেই কোন অতীত থেকেই মানুষ জীবন-জীবিকার তাগিদে, ভালভাবে বাঁচার স্বপ্নে, আসন্ন সংকট মোকাবেলার উপায় হিসেবে অভিবাসনকে বেছে নিয়েছে।
এক অঞ্চল থেকে অন্য অঞ্চলে মানুষের স্থানান্তরের বিষয়টাই আসলে অভিবাসন। বিশেষ বিশেষ জনগোষ্ঠী বা মানুষের গ্রাম থেকে শহরে এসে বাড়ি নির্মাণ, স্থান বদল, বহু বছর নিজের আদি বা স্থায়ী বাড়ি থেকে অনুপস্থিতি থাকা, সাময়িক অভিবাসন বা স্থায়ী আবাস পরিবর্তন ইত্যাদি সবই অভিবাসনের মধ্যে পড়ে।
অভিবাসনের মাধ্যমে মানুষ ভাগ্যের অন্বেষণে স্বল্প সম্ভাবনাময় স্থান থেকে অধিক সম্ভাবনাময় স্থানে যেতে চায়। যেমন দেশের ভিতরেও এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যেতে চায়, ঠিক তেমনি এক দেশ থেকে ভিন্ন দেশেও অভিবাসন ঘটে।
অভিবাসনের প্রকারভেদ:-
অভিবাসনের ক্ষেত্রে স্থানান্তরের দূরত্ব, আন্তর্জাতিক ও জাতীয় সীমারেখা ইত্যাদি বিষয়কে মাথায় রেখে সাধারণত অভিবাসনকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়।
১. আন্তর্জাতিক অভিবাসন:-
আন্তর্জাতিক অভিবাসনে মানুষ মূলত দেশের বা রাষ্ট্রের সীমারেখাকে অতিক্রম করে যায়। বর্ডার ক্রস করে নিজের দেশের বাইরে অবস্থান করে।
২. অভ্যন্তরীণ অভিবাসন:-
অভ্যন্তরীণ অভিবাসন ঘটে রাষ্ট্রীয় সীমারেখার মধ্যে। যেমন, এক জেলা হতে অন্য জেলায়, গ্রাম হতে বিভাগীয় শহরে বা রাজধানীতে।
কেন পালিত হয় এই অভিবাসী দিবস:-
১. অর্থনৈতিক উন্নয়ন এই দিবস পালনের এক অন্যতম কারণ।
২. জীবিকার তাগিদও এর কারণ।
৩. সম্প্রীতি ও সৌহার্দ্যরে সেতুবন্ধন করা এর অপর উদ্দেশ্য।
৪. বিশ্বব্যাপী অভিবাসীর মর্যাদা এবং তার পরিবারের সদস্যদের অধিকার নিশ্চিত করা এর মুখ্য কারন।
১৯৯০ সালে জাতিসংঘ অভিবাসী শ্রমিক ও দেশে রেখে আসা তাদের পরিবারের নিরাপত্তা রক্ষায় আন্তর্জাতিক সম্মেলন করেছিল।
আন্তর্জাতিক অভিবাসী দিবসের মূল প্রতিপাদ্য বিষয়:-
২০১৬ সালে উদযাপিত আন্তর্জাতিক অভিবাসী দিবসের মূল প্রতিপাদ্য বিষয় নির্ধারণ করা হয়েছিল…
” উন্নয়নের মহাসড়কে-অভিবাসীরা সবার আগে!”
২০১৯ সালে আন্তর্জাতিক অভিবাসী দিবসের মূল প্রতিপাদ্য বিষয় হয়ে ওঠে…
“দক্ষ হয়ে বিদেশ গেলে, অর্থ-সম্মান দুইই মেলে”
অভিবাসী ভারতীয়:-
রাষ্ট্রসঙ্ঘের নতুন হিসেব অনুযায়ী পৃথিবীতে সবথেকে বেশি আন্তর্জাতিক অভিবাসী ভারতীয়। থেকে একথা জানা যাচ্ছে। ২০১৯ সালে সারা পৃথিবীতে ১৭.৫ মিলিয়ন ভারতীয় অভিবাসী (Migrants) রয়েছেন বলে জানা গিয়েছে। সারা পৃথিবীতে অভিবাসীর সংখ্যা ২৭২ মিলিয়ন। রাষ্ট্রসঙ্ঘের ‘ডিপার্টমেন্ট অফ ইকনোমিক অ্যান্ড সোশ্যাল অ্যাফেয়ার্স’ বা ডেসা-র ২০১৯ এর জনসংখ্যা ডিভিশনের তথ্যপঞ্জিতে অভিবাসীদের বয়স, লিঙ্গ ও কোন দেশ থেকে আগত সেই সব বিবরণও রয়েছে। ওই তালিকায় সমস্ত আন্তর্জাতিক অভিবাসীর উৎস হিসেবে চিহ্নিত সেরা দশটি দেশ থেকেই এক-তৃতীয়াংশ অভিবাসী রয়েছেন। এক্ষেত্রে ভারতের পরেই স্থান মেক্সিকোর। ১১.৮ মিলিয়ন মেক্সিকান ছড়িয়ে রয়েছেন পৃথিবীর নানা দেশে।
যে সমস্ত ভারতীয় যে কোনো কাজের জন্য বাইরে থাকে তাদেরই আমরা অভিবাসী ভারতীয় বলতে পারি। অভিবাসী ভারতীয়রা আজ গোটা বিশ্বে তাঁদের কাজের জন্য প্রশংসিত৷ যে দেশেই তাঁরা থাকুন না কেন, সেখানকার সমাজে তাঁদের অবদান অনস্বীকার্য৷
ভারতে অভিবাসীর সংখ্যা:-
আর ভারতে রয়েছেন ৫.১ মিলিয়ন অভিবাসী। ২০১৫ সালে হিসেবটা ছিল ৫.২ মিলিয়ন। ২০১০ থেকে ২০১৯ সালের হিসেবে ভারতের মোট জনসংখ্যায় অভিবাসীর সংখ্যা ০.৪ শতাংশেই স্থির রয়েছে।
ভারতে উদ্বাস্তুর সংখ্যা ২,০৭,০০০। ভারতে আন্তর্জাতিক অভিবাসীদের অধিকাংশই আসেন বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও নেপাল থেকে।২০১৯ সালের হিসেব অনুযায়ী আন্তর্জাতিক অভিবাসীর পরিসংখ্যান…
ইউরোপ: ৮২ মিলিয়ন… সর্বোচ্চ।
উত্তর আমেরিকা: ৫৯ মিলিয়ন
উত্তর আফ্রিকা ও পশ্চিম এশিয়া: ৪৯ শতাংশ
জার্মানি ও সৌদি আরব: ১৩ মিলিয়ন। রাশিয়া:১২ মিলিয়ন
সংযুক্ত আরব আমিরশাহি: ৯ মিলিয়ন ফ্রান্স, কানাডা ও অস্ট্রেলিয়া: ৮ মিলিয়ন ইতালি: ৬ মিলিয়ন
অবৈধ অভিবাসী:-
অবৈধ অভিবাসী হলেন তিনি যিনি কোনো রাষ্ট্রে সরকারী অনুমতি ব্যতীত বসবাসকারী ব্যক্তি। ভারত সরকারের অনুমতি ব্যতীত যারা ভারতে বসবাস করেন তারা ভারতের অবৈধ অভিবাসী। ২০০০ সালে আনুমানিক হিসাব অনুযায়ী, ভারতে অবৈধ বাংলাদেশি অভিবাসীর সংখ্যা দাঁড়ায় প্রায় ১.৫ কোটি এবং প্রতি বছর প্রায় ৩ লাখ। অবৈধ বাংলাদেশী ভারতে প্রবেশ করেছে। ২০০১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী, ভারতের বৃহত্তম অভিবাসী আসেন
পাকিস্তান থেকে। ২০০১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী ভারতে ৩০,৮৪,৮২৬ জন লোক বসবাস করে, যারা বাংলাদেশ থেকে এসেছিল।ভারতে বসবাসরত ৫০,০০০-১,০০,০০০ বার্মিজ অভিবাসীদের বেশিরভাগই ভারতীয় রাজ্য মিজোরামে পাওয়া যায়। কিছু দিল্লিতেও আছে। ২০০৯ সালের হিসাবে ভারতে বসবাসকারী অবৈধ কয়েক হাজার পাকিস্তানী মানুষ রয়েছে। এর সংখ্যা ৭,৭০০ জনের এরও বেশি।
২০০৯ সাল নাগাদ ভারতে আফগানিস্তানী ১৩ হাজার অবৈধ অভিবাসীরা ছিল।