” পুষ্পাঞ্জলি দিতে যাচ্ছিস পাঞ্জাবি পরবিনা? ” মায়ের নজরে যাতে না পরি তাই পা টিপে টিপে বেরোচ্ছিলাম বাড়ি থেকে। কিন্তু ব্যর্থতা তো আমার প্রেমে অনেকদিন আগেই পড়েছে, সেকথা মনে থাকেনা সবসময়। কোনোদিনই পাঞ্জাবি পরতামনা অষ্টমীতে। শেষবার নিজে থেকেই পরেছিলাম বলে এই প্রত্যাশিত প্রশ্ন।
” গরম লাগছে ” – আমি বলে বসলাম। লেখকদের আর কতক্ষণ লাগে একটা অজুহাত খুঁজতে! যাই হোক, আমি বেরোলাম হাতে কিছু খুচরো নিয়ে।


অঞ্জলীর শেষে একজনকে বলতে শুনলাম, ” phonepe নিচ্ছেন ঠাকুরমশাই? “
সত্যিই তো একটা qr code রাখা থাকলে সত্যিই সুবিধে হতো। ভগবান ডিজিটাল ভাবে আশীর্বাদ করে যদি ডিজিটাল ওয়ালেটেও টাকা ঢোকে, একি ব্যাপার। চলে আসছিলাম মণ্ডপ থেকে পুষ্পাঞ্জলি শেষে। এক বয়স্কা মহিলা এসে বললেন, ” শেষ ব্যাচে এসছো যখন আরতি অবধি থেকে যাও। “
আমার পকেটে ফোন ছিল, মণ্ডপের বাইরে চেয়ারও ফাঁকাই ছিল, তাই আমি আর ওনার কথা ফেললাম না।

রোদটাও কম আজ। ওদিকে পুজো চলতে লাগলো, এদিকে আমি ফোনে আঙ্গুল ঘষতে লাগলাম। হেডফোনটা সাথে থাকলে একটা আস্ত সিনেমাই দেখা হয়ে যেত, যা সময় নিচ্ছেন ঠাকুর মশাই। বাড়ি চলে যেতে ইচ্ছে করেছে অনেকবার কিন্তু সেই দিদা আমার সমান্তরালেই একটা চেয়ার নিয়ে বসে আছেন। কাউকে দুঃখ দেওয়াটা আমার স্বভাবে কোনোদিন ছিলোও না আর এখনও নেই। অবশেষে ঠাকুর মশাই আসন থেকে উঠে ঢাকিদের উদ্দেশ্যে সেই থ্রি ম্যাজিকাল ওয়ার্ডস্ বললেন, ” আরতি শুরু হবে । “


পঞ্চপ্রদীপ নিয়ে শুরু হলো ঠাকুর মশাইয়ের নাচ। কিন্তু সহ পুরোহিতকে একটু কেমন উদ্বিগ্ন লাগছে তখন, কিন্তু বয়সটা তার নিতান্তই কম হওয়ায় কাউকে বলতে সাহস পারছেনা তার অসুবিধের কথা। আমি সেটা বুঝেই এগিয়ে গেলাম তার দিকে।
” কি হয়েছে ভাই? এরম অস্থির কেনো? ” তার চোখ কেমন একটু ছল ছল করছে।
” কর্পূর! পাচ্ছিনা গো, কোথায় যে রাখলাম মনে পরছেনা। “
শূন্য কৃষ্ণকায় কর্পূর দানি দেখে আমি বললাম, ” তুমি ঠাকুর মশাই কে নাচ জারি রাখতে বলো আমি সামনের দোকান থেকে এক্ষুনি নিয়ে আসছি। “

কর্পূর


দৌড় লাগালাম দোকানের দিকে। কাউকে বুঝতে দিলামনা কিছু। কর্পূর পকেটে করে নিয়ে এসে সেই ছেলের হাতে তুলে দিয়ে বললাম, ” কাউকে কিছু বলার দরকার নেই, অঙ্গুল তোলার লোকের অভাব নেই পৃথিবীতে। “
ছেলেটার কৃতজ্ঞতার হাসিতে আরতি অবধি সেখানে থাকাটা সার্থক হলো। কিন্তু আমি ভুলে গেছিলাম যে একজনের নজর সবসময় আমার ওপর ছিল। বেরোতে যাবার আগে তিনি এলেন, এসেই সেই দিদার প্রশ্ন, ” মাঝে তুমি তাড়াহুড়ো করে কোথায় গেছিলে? আমি তো ভাবলাম উবে গেলে তুমি। “
আমি একটু হেসে বললাম, ” সবার মানসিকতা কর্পূরের মতো হয়না গো দিদা। “