পৃথিবীর 10 টি বিখ্যাত স্ট্যাচুর নাম আপনারা কি জানেন ? বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রয়েছে দৃষ্টিনন্দন অনেক স্ট্যাচু। এগুলো ভাস্কর্য কারুশিল্পের একটি অনন্য শাখা। সাধারণত কাদামাটি, সিরামিক, বিভিন্ন রকম ধাতু, কাঠ, পাথর খোদাইয়ের মাধ্যমে ভাস্কর্য নির্মাণ করা হয়।তবে আধুনিক ভাস্কর্যগুলো তৈরিতে নতুন নতুন উপকরণ ও পদ্ধতি সংযোজন হচ্ছে। বর্তমানে ওয়েল্ডিং ও ঢালাইয়ের পদ্ধতিও ব্যবহার করা হচ্ছে।
আজকে আমরা জানবো পৃথিবীর 10 টি বিখ্যাত স্ট্যাচুর নাম :
১)স্ট্যাচু অফ লিবার্টি –
পৃথিবীর 10 টি বিখ্যাত স্ট্যাচুর নামের মধ্যে প্রথমেই যার নামনে পড়ে সেটা হল ইয়র্ক হার্বারের বুকে ৩০৫ ফিট ৬ ইঞ্চি উঁচু, স্ট্যাচু অব লিবার্টি নামের সেই মূর্তিটি বিশ্বের বুকে যুক্তরাষ্ট্রের অনন্য এক নিদর্শন। নিজেদের কালো অধ্যায়কে পেছনে ফেলে বিশ্বের বুকে আমেরিকার মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোর এক বার্তাই যেন দেয় এই ভাস্কর্য।’স্ট্যাচু অব লিবার্টি’ নামে বিশ্ববাসী এই মূর্তিটিকে চিনলেও এর প্রকৃত নাম ‘লিবার্টি এনলাইটেনিং দ্য ওয়ার্ল্ড’। বহু লোকের নিরলস পরিশ্রম ও ধৈর্যের ফসল এই ভাস্কর্য আজ মার্কিনীদের জাতীয়তাবোধের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। কয়েক দশক আগ পর্যন্তও এটি এলিস আইল্যান্ড হয়ে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশকারী অভিবাসীদের জন্য আশার একটি প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়ে থাকলেও এখন তা মার্কিন মুলুকের সবচেয়ে জনপ্রিয় প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
২) চীনের স্প্রিং টেম্পল মূর্তি :
এই মূর্তিটি চিনটব লুশানে ঝাওকুন শহরে অবস্থিত এখনো অব্দি সবথেকে উঁচু স্ট্যাচু। এই মূর্তি জনপদে অবস্থিত বৈরোকানা বুদ্ধকে চিত্রিত করে । 258 মিটার (82 ফুট) পদ্মের সিংহাসন বাদে 128 মিটার (420 ফুট) এ 182 মিটার উচ্চতা সম্পন্ন ভারতের গুজরাটে স্ট্যাচু অব ইউনিটির পরে এটি বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম মূর্তি ।এই স্টাচুটির মোট উচ্চতা 153 মিটার (502 ফুট)। ২০০৮ সালের অক্টোবর পর্যন্ত, যে পাহাড়ের উপরে মূর্তিটি দাঁড়িয়ে আছে, সেটিকে আবার আরও দুটি পদক্ষেপ তৈরি করা হচ্ছে, উপরেরটি 15 মিটার লম্বা। স্মৃতিসৌধের মোট উচ্চতা এখন 208 মিটার (682 ফুট) বলা হচ্ছে। এই তৈরি করতে 55 মিলিয়ন ডলার ব্যয় করা হয়েছিল, যার মধ্যে 18 মিলিয়ন ডলার মূর্তিটির জন্য ব্যয় করা হয়েছিল। এটি প্রাথমিকভাবে অনুমান করা হয়েছিল যে এই মূর্তিতে প্রায় তামার 1,100 টুকরা আছে ।
৩) ক্রাইস্ট দ্য রিডিমার :
এই মূর্তিটি ব্রাজিলের এক গুরুত্বপূর্ণ শহর রিও ডি জেনিরিও তে অবস্থিত। এই মূর্তিটির বিশেষত্বের কারণেই লাখো মানুষ ছুটে যায় সেখানে। মূর্তিটিকে বিশ্বের বৃহত্তম ‘আর্ট ডেকো’ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ৭১৩ মিটার উচ্চতাসম্পন্ন করকোভাদো পাহাড়ের ওপর দাঁড়িয়ে আছে ভাস্কর্যটি।১৯২১ সালে ভাস্কর্যটি তৈরির দায়িত্ব দেওয়া হয় ফরাসি ভাস্কর পল ল্যান্ডোস্কিকে। ধীরে ধীরে এর কাজ চলতে থাকে। ভাস্করের পরিকল্পনা মাফিক প্রায় ১০ বছর পর এটির নির্মাণ কাজ শেষ হয়। সাল ১৯৩১। ভাস্কর্যটি তৈরির উদ্দেশ্য ছিল পর্তুগালের কাছ থেকে স্বাধীনতা লাভের প্রথম শতবার্ষিকী উদযাপন। গ্রানাইটের তৈরি এই ভাস্কর্যর্টি প্রায় ৩০ মিটার উঁচু। যে বেদিটির ওপর ভাস্কর্যটি স্থাপন করা হয়েছে তার উচ্চতা ৬ মিটার। মূর্তিটি এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে যেন দূর থেকে দেখতে মনে হবে যিশু তার দুই হাত প্রসারিত করে শহরটিকে আলিঙ্গন করছেন। পাহাড় আর পানি দিয়ে ঘেরা রিও ডি জেনিরিও শহরের সবচেয়ে দর্শনীয় জায়গাগুলোর মধ্যে এটি অন্যতম। যিশু খ্রিস্ট যেমন খ্রিস্টধর্মের প্রতীক, এ মূর্তিটিও তেমনি রিও এবং ব্রাজিলের প্রতীক।ক্রাইস্ট দ্য রিডিমার এতই বিশাল যে, সাধারণ কোনো ক্যামেরা দিয়ে এর ছবি তুলা অসম্ভব। অনেকেই পাহাড়ের চূড়ার নানা প্রান্ত থেকে ছবি তোলার চেষ্টা করেন কিন্তু কোনো না কোনো অংশ বাদ পড়ে যায়। আটলান্টিক সাগরের পাড়ে দাঁড়িয়ে থাকা যিশুর মুখমণ্ডল পর্যটকদের কাছে ভেসে ওঠে মেঘের ফাঁক দিয়ে। তারপর একটু একটু করে সরে যাওয়া মেঘের ফাঁক দিয়ে একটা হাত, তারপর আরেকটা হাত, তারপর ভেসে ওঠে গোটা শরীর। নিজ চোখে না দেখে সে অনুভূতি ভাষায় বর্ণনা করার নয়।
৪)দ্য মাদারল্যান্ড কল :
”একটি একটি ভাস্কর্য মূর্তি যা মমাইয়েভ কুরগানের শীর্ষে রয়েছে, এটি একটি পাহাড় যা ভলগোগ্রাড (পূর্বে স্টালিনগ্রাদ) শহরে অবস্থিত। যুদ্ধের ইতিহাসের অন্যতম রক্তক্ষয়ী স্টালিনগ্রাডের যুদ্ধকে স্মরণ করে বিস্তৃত শিল্পকর্মটি একটি বৃহত্তর স্মৃতিসৌধের কেন্দ্রস্থল।১৯৫৯ সালের মে মাসে বিশাল স্মৃতিস্তম্ভটির নির্মাণকাজ শুরু হয় এবং শেষ পর্যন্ত এটি ১৯৬৭ সালের অক্টোবরে শেষ হয়। সেই সময় এটি বিশ্বের দীর্ঘতম মূর্তি ছিল। এটি এর পরেও এই রেকর্ডটি হারিয়েছে, তবে ইউরোপের সবচেয়ে উঁচু মূর্তি এবং বিশ্বের এক মহিলার দীর্ঘতম প্রতিমা হিসাবে রয়ে গেছে।
৫) তিয়ান তান বুদ্ধ :
এটি সবচেয়ে উঁচু বহিঃবিশিষ্ট ব্রোঞ্জ বৌদ্ধ। এটি হং কং এর Ngong Ping, Lantau দ্বীপে অবস্থিত। ওয়ে-এসেনসি, ফ্লিকার ডট কম, ক্রিয়েটিভ কমন্স লাইসেন্সআমাদের তালিকায় দশম বুদ্ধ শুধুমাত্র আধুনিক এক। হংকংয়ের তিয়ান টান বুদ্ধ 1993 সালে সম্পন্ন হয়। কিন্তু তিনি দ্রুত বিশ্বের সবচেয়ে বিখ্যাত বৌদ্ধদের মধ্যে একজনকে পরিণত হন। তিয়ান টান বুদ্ধ 110 ফুট (34 মিটার) লম্বা এবং 250 মেট্রিক টন (২80 টন টন) এর ওজনের। এটি হং কং এর Ngong Ping, Lantau দ্বীপে অবস্থিত। মূর্তিটিকে “তিয়ান তান” বলা হয় কারণ এর ভিত্তি হল বেইজিংয়ের স্বর্গের মন্দির তিয়ান টানের একটি প্রতিরূপ।তিয়ান টান বুদ্ধের ডান হাতটি দুঃখকষ্ট দূর করতে উত্থাপিত হয়। তার বাম হাত খুশি প্রতিনিধিত্ব, তার হাঁটু উপর rests। বলা হয় যে, একটি স্পষ্ট দিন, তিয়ান টান বুদ্ধকে ম্যাকাও হিসাবে দেখা যায়, যা হংকংয়ের 40 মাইল পশ্চিমে অবস্থিত।তিনি লেশান বৌথের পাথরের আকারে কোন প্রতিদ্বন্দ্বী নন, তবে তিয়ান তান বুদ্ধ পৃথিবীর সবচেয়ে বড় বহির্গত ব্রোঞ্জ বুদ্ধ। বিশাল মূর্তিটি ঢালাইতে দশ বছর লেগেছিল।
৬)বামিয়ানের বুদ্ধমূর্তি:
এটি বিশ্বের সবচেয়ে বড় বুদ্ধমূর্তিগুলির মধ্যে অন্যতম। ২০০১ সালের মার্চ মাসে তালিবানদের হাতে ধ্বংস হবার আগে পর্যন্ত ষষ্ঠ শতাব্দীতে তৈরি । প্রায় দেড় হাজার বছরের পুরনো এই ঐতিহাসিক মূর্তিদুটি মধ্য আফগানিস্তানের বামিয়ান উপত্যকায় সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ২৫০০ মিটার বা ৮২০০ ফিট উচ্চতায় একটি পর্বতগাত্রে খোদাই করা অবস্থায় দাঁড়িয়েছিল। বড় মূর্তিটির উচ্চতা ছিল ৫৫ মিটার আর ছোটটির উচ্চতা ছিল ৩৫ মিটার।এছাড়াও ঐ অঞ্চলের পর্বতগাত্রে আরও অনেক অপেক্ষাকৃত ছোট ছোট বুদ্ধমূর্তিও খোদাই দেখতে পাওয়া যায়। ঐতিহাসিকদের মতে খ্রিস্টিয় ৩য় থেকে ১০ম শতক পর্যন্ত এই অঞ্চলে বৌদ্ধধর্মের প্রভাবে প্রভাবিত যে বিশেষ ধরনের শিল্পকলা বিকাশ লাভ করেছিল, এগুলি সেই গান্ধার শিল্পেরই উৎকৃষ্ট নিদর্শন। ইউনেস্কো এই মূর্তিগুলিকে বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ হিসেবে ঘোষণা করেছিল। কিন্তু তালিবান নেতা মোল্লা মুহম্মদ ওমরের নির্দেশে ২০০১ সালের মার্চ মাসে বড় মূর্তিদুটিকে পাহাড়ের গায়ে ডিনামাইট বিস্ফোরণ ঘটিয়ে ধ্বংস করা হয়। বর্তমানে জাপান, সুইৎজারল্যান্ড, প্রভৃতি বিভিন্ন দেশের আন্তর্জাতিক উদ্যোগে মূর্তিদুটিকে পুনরায় তৈরি ও পুনঃস্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
৭) বুদ্ধ ডোরডেনমা :
এটি কুয়েসেল্ফোড্র্যাং নেচার পার্কের একটি পাহাড়ের চূড়ায় অবস্থিত এবং থিম্পু উপত্যকার দক্ষিণ প্রবেশদ্বারটি উপেক্ষা করেছেন। মূর্তিটি 8 ম শতাব্দীর এ.ডি.-এর পূর্ববর্তী একটি ভবিষ্যদ্বাণী পূর্ণ করেছে যা টেরটন পেমা লিঙ্গপা (ধর্মীয় ট্রেজার আবিষ্কারক) আবিষ্কার করেছিলেন এবং বলা হয় এই মূর্তি পুরো বিশ্বকে শান্তি ও সুখের আভা বজায় রাখে।শাক্যমুনির এই বিশাল মূর্তিটির উচ্চতা 51.5 মিটার ।এটি বিশ্বের বুদ্ধের বৃহত্তম মূর্তি হিসাবে ধরা হয়। মূর্তিটি ব্রোঞ্জ দিয়ে তৈরি এবং সোনায় সজ্জিত। বুদ্ধ ডোরডেনমা মূর্তির মধ্যে 125,000 ছোট বুদ্ধ মূর্তি স্থাপন করা হয়েছে; ১০,০০,০০০ মূর্তি যার মধ্যে 8 ইঞ্চি লম্বা এবং 25,000 মূর্তি যার 12 ইঞ্চি লম্বা। এই হাজার হাজার বুদ্ধের প্রত্যেককেও ব্রোঞ্জ এবং সজ্জিত করা হয়েছে। বুদ্ধ ডোরডেনমা যে সিংহাসনে বসে আছেন তা একটি বৃহত ধ্যান হল।
৮) লিটল মার্মইড :
এটি হ’ল এডওয়ার্ড এরিকসেনের একটি ব্রোঞ্জের মূর্তি, যেখানে একজন জলবায়ু মানুষ হয়ে উঠেছে। ডেনমার্কের কোপেনহেগেনের ল্যাঙ্গেলিনি প্রদেশে ওয়াটারসাইডের কাছে একটি শিলায় ভাস্কর্যটি প্রদর্শিত হয়েছে। এটি ১.২৫ মিটার (৪.১ ফুট)উঁচু । এই মূর্তিটির ওজন ১৭৫ কিলোগ্রাম (৩৮৫ পাউন্ড)।ডেনিশ লেখক হান্স ক্রিশ্চিয়ান অ্যান্ডারসনের একই নামে 1837 রূপকথার উপর ভিত্তি করে, ছোট এবং অব্যবহিত মূর্তিটি কোপেনহেগেন আইকন এবং 1913 সালে এটি উন্মোচন হওয়ার পর থেকে এটি একটি বড় পর্যটকদের আকর্ষণ ছিল ।
৯) ক্রাইস্ট অব ভাং টাও :
1993 সালে সমাপ্ত, কংক্রিটের এই স্মৃতিস্তম্ভটি প্রায় 120 ফুটের চিত্তাকর্ষক সম্মিলিত একটি মূর্তি। এটির উচ্চতা প্রায় 100 ফুট । এটি ভিয়েতনামের নো পাহাড়ের উপরে অবস্থিত এই ক্রিশ্চাল ক্রাইস্টকে আরো 15 ফুট উঁচু প্ল্যাটফর্ম দ্বারা উন্নত করা হবে। মূর্তিটির অভ্যন্তরে দর্শনার্থীরা একটি সিঁড়ি বেয়ে উঠতে পারেন যা বাইরের ইনসেটের সাথে উইন্ডোজ দেখার সাথে সাথে শরীরের উপরে উঠে যায়।
১০) স্ট্যাচু অব ইউনিটি :
ঐক্যের মূর্তি (স্ট্যাচু অব ইউনিটি নামেও পরিচিত) ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের অন্যতম নেতা বল্লভভাই পটেলের স্মৃতির উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদীর উদ্যোগে নির্মিত একটি শ্রেষ্ঠ ভাস্কর্য। ১৮২ মিটার লম্বা এই ভাস্কর্য বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু ভাস্কর্য যা প্রায় ৬০ তলা ভবনের সমান উঁচু।এটি ভারতের গুজরাট রাজ্যের সাদু বেট আইল্যান্ডে নর্মদা নদীর পাশে অবস্থিত। ভাস্কর্যটি ২০,০০০ বর্গ মিটারেও বেশি এলাকা জুড়ে অবস্থিত এবং ১২ বর্গ কিঃ মিঃ ক্ষেত্র বিশিষ্ট একটি কৃত্রিম হ্রদ দ্বারা পরিবেষ্টিত।শুরুতে ভারত সরকার এই প্রকল্পের আনুমানিক ব্যয় হয় ৩,০০১ কোটি টাকা । পরবর্তীতে ২০১৪ সালের অক্টোবরে লারসেন এন্ড টুব্রো তার সর্বনিম্ন দর ₹ ২,৯৮৯ কোটি দিয়ে নকশা, নির্মাণ এবং রক্ষণাবেক্ষণ করার কাজ পায়। ২০১৩ সালের ৩১ অক্টোবরে নির্মাণ কাজ শুরু হয় এবং ২০১৮ সালের অক্টোবরের মাঝামাঝি কাজ শেষ হয়। ২০১৮ সালের ৩১ অক্টোবর বল্লভভাই প্যাটেলের ১৪৩তম জন্মবার্ষিকীতে মূর্তির উদ্বোধন করেছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।
আরও পড়ুন, https://www.banglakhabor.in/আত্মরক্ষার-মারাত্মক-5-অস্/amp/