বিরল রোগ, পৃথিবীতে এমন বহু মানুষ থাকেন যারা আমাদের মতো স্বাভাবিক ভাবেই বসবাস করে থাকে অথচ তাদের স্বাভাবিকের মধ্যে ভীষণরকম অসুস্থতা ও অস্বাভাবিক আছে। যা সত্যিই পৃথিবীতে বিরল বলা যায়।
অনেক রকম শারীরিক ও মানসিক বিরল রোগের কথা আমরা অনেকেই শুনেছি। তবে পৃথিবীতে এমন অনেক রোগ এমন আছে, যেগুলো আমাদের জানা নেই। সেই সব রোগের নাম ও তাদের ব্যাখ্যা শুনলে আপনি শিহরিত হতে বাধ্য।
যেমন আপনি কি কখনও শুনেছেন একটা মানুষের ৫ টি কিডনি? কিংবা মানুষের শরীর থেকে ধীরে ধীরে গাছ বেরিয়ে যাচ্ছে? কিংবা ধরুন কোনো মানুষ জীবন্ত পুড়ে যাচ্ছে ধীরে ধীরে? শোনেন নি তো?
তাই চলুন, আজ আপনাদের পরিচয় করাই এমন ৫ টি বিরল রোগের কথা ও সাথে সেই রোগীদের জীবন যাপনের কথা।
১) ইনগ্রেফিয়া রোগ :-
আশা করছি এই রোগের নাম আপনারা আগে শোনেননি।
২৫ বছর বয়সী সামারা রোজ নামের এক মহিলা ভুগছেন এই রোগে।
এই রোগে মানুষ ধীরে ধীরে রোজ পুড়ে যায় এবং শরীর সবসময় উত্তপ্ত হয়ে থাকে।
সারারাত রোজ এর শরীরে এরিথ্রোমেলালজিয়া ও রিনোউড নামের দুটি বিরল রোগ রয়েছে।
যার ফলে তার শরীরের তাপমাত্রা অতিরিক্ত গরম ও ধীরে ধীরে পুড়ে যায়। শরীর গরম হয়ে গেলে ভেতরের রক্ত সঞ্চালন বন্ধ হয়ে যায়, আর তখনই শরীর পুড়তে শুরু করে। তারপর দেহে কিছুক্ষণ পরে রক্ত সঞ্চালন স্বাভাবিক হলে দেহে পুড়ে যাওয়ার ব্যাথা অনুভব হয়, যা মৃত্যু যন্ত্রণার সমান।
সামারা’কে এই রোগের জন্য সবসময়ই ৬২° ফারেনহাইট বা ১৭° সেলসিয়াস তাপমাত্রায় থাকতে হয়।
দুটো করে পাচার সামনেও বসে থাকতে হয় তাকে। এই রোগের ব্যাথার জন্য সামারা রাতে ঘুমোতেও পারেনা।
সামারা’র বাবা ব্রায়ন-এর এই একই রোগের ছিলো। সামারা’র মা ক্যালিফোর্নিয়ায় একাই রোজগার করেন। খুব বেশি পয়সা না থাকার কারণে তাকে যেমন চিকিৎসা করাতে পারেনি, এমনটাও নয়। প্রায় ১০০ এর বেশি ডাক্তার দেখিয়েও কোনো লাভ হয়নি সামারা’র জীবনে।
ওর মা’র বিশ্বাস, একদিন সামারা ঠিক হয়ে যাবে এবং স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে পারবে।
২) কনজেনিটাল লেমেলার ইথিওসিস:-
ব্রাজিলের বসবাসকারী পালামা নামের এক মহিলার মধ্যে দেখা যায় এই বিরল রোগ।
এই রোগ’টি আসলে একটি জিনগত রোগ। এই রোগে মানুষের শরীরের চামড়া ভীষণ শুষ্ক হয়। এতটাই শুষ্ক যে পালামা’কে বারবার মুখ ধুতে হয়।
এই রোগের জন্য পালামা ঠিক করে কথাও বলতে পারে না। এই রোগের কোনো চিকিৎসাও নেই।
এই রোগের জন্য ছোটো থেকেই পালামা শারীরিক ও মানসিক বিভিন্ন যন্ত্রণার সম্মুখীন হয়। স্কুলের বাচ্চারাও তাকে ব্যঙ্গ করত।
পালামা যখন তার মা’র গর্ভে ছিলো, তখন ডাক্তার বলেছিলেন যে তার বাচ্চা অস্বাভাবিক হবে। তাই বাচ্চাটিকে নষ্ট করে দেওয়া উচিত।
কিন্ত পালামা’র মা সান্দ্রা তা করেনি। পালামা বড়ো হয়েছে, হাঁটছে, তাদের সাথে আছে এতেই তারা খুশি।
৩) ইউটেরাস ডিডেলফিস:-
ওয়েসলস হল, ইউ.কে এর বাসিন্দা এলিজাবেথ এর শরীরে দেখা গেছে এই বিরল রোগ। যা শোনার পর আপনি শিহরিত হয়ে যাবেন।
এই রোগের জন্য এলিজাবেথ এর শরীরে আছে একটার বেশি ২ টি জরায়ু।
সাধারণ কোনো মহিলার একটি করেই জেরায় থাকে, কিন্তু এলিজাবেথ-এর শরীরে আছে দুটি জরায়ু অর্থাৎ দুটি সারভিক্স ও দুটি স্ত্রী জননাঙ্গ।
ছোটো থেকেই প্রতিদিন বমি, মাথা ঘোরার মতো ঘটনা ঘটেই থাকে।
সাধারণত এই রোগে বাচ্চা জন্ম দেওয়া অসম্ভব, তবে এলিজাবেথ জন্ম দিয়েছে এই মেয়ের। এবং ২০১৫ সালে যখন তার রোগ আরও বাড়তে থাকে তখন তার এই বিরল রোগের কথা ধরা পড়ে।
তবে এলিজাবেথ মানসিক ভাবে ভীষণ শক্তিশালী। তার এই বিরল রোগ থেকে অন্যান্য মহিলাদের সতর্ক করতে সে অনেক রকমের কাজ করে চলেছে।
৪) হেরিডেটরি এক্সোটসিস:-
USA এর নাগরিক ডেন আজায়া নামক এক ব্যক্তি জন্মগ্রহণ করেন এই বিরল রোগ নিয়ে।
সাধারণত মানুষের শরীরে ২০৬ টি করে হাড় থাকে। তবে এই বিরল রোগে মানুষের শরীরে ২৯৮ টি হাড় রয়েছে।
ডেন আজায়া নামক এই ব্যক্তির শরীরেও ২৯৮ টি হাড় রয়েছে এবং সেটি জন্মগত।
অনেক চিকিৎসা ও অপারেশনের পর তার শরীর থেকে ৪২ টি হাড় বের করা গেছে।
এই রোগের জন্য ডেন’কে ছোটো থেকেই অনেক সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়।
৫) এপিডারমো-ডিসপ্লেসিয়া ভার্সিফর্মিস:-
আচ্ছা বনে, জঙ্গলে গাছপালা বেরোনোর কথা আমরা সবাই জানি। তবে আপনি কি জানেন যে মানুষের শরীর থেকেও গাছ বেরোয়?
অবাক হওয়ার বিষয় হলেও এটাই সত্যি।
এটি একটি বিরল রোগের, যার নাম এপিডারমো-ডিসপ্লেসিয়া ভার্সিফর্মিস। এই রোগের মানুষের শরীর থেকে ধীরে ধীরে গাছ বেরিয়ে আসে। পৃথিবীতে মোট ৬ জনের এই রোগের আপাতত আছে।
যার মধ্যে বাংলাদেশের আবুল বাজানদার একজন উল্লেখিত রোগী। ছোটো থেকেই ধীরে ধীরে তার শরীরে এই রোগ দেখা যায়।
এই রোগের জন্য সে নিজে হাতে খেতেও পারেনা আর নিজের মেয়েকে আদর করতেও পারেনা।
একবার অপারেশন করিয়াছিলেন যদিও আবুল তবে সেটি সম্পূর্ণ না করেই হাসপাতাল থেকে চলে আসে সে। এবং তার পরিণাম এখন তার এই অবস্থা।
সত্যিই পৃথিবীতে এমন বিচিত্র মানুষের জন্য আমরা দুঃখিত।