২০২১ সালের কোলকাতা বইমেলা কি হবে? কি ভাবছে গিল্ডের সবাই?
সার বিশ্বের দরবারে কোলকাতা নগরীর পরিচিতি গড়ে ওঠার পিছনে যে কয়টি কারণ আছে তার মধ্যে বইমেলা মধ্যমণি। এর পূর্ব পরিচিতি ক্যালকাটা বুক ফেয়ার নামে হলেও বর্তমানে তা আন্তর্জাতিক কোলকাতা বইমেলা বা ইন্টারন্যাশানাল কোলকাতা বুক ফেয়ার। এটি পশ্চিমবঙ্গ বা ভারতবর্ষেরই নয় সমগ্র এশিয়ার বৃহত্তম বইয়ের মেলা। ফ্র্যাঙ্কফারট বুক ফেয়ার (https://www.tradefairdates.com/Frankfurt-Book-Fair-M95/Online.html) ও লন্ডন বুক ফেয়ারের (https://www.londonbookfair.co.uk/) পরে কোলকাতার বইমেলাই হল বিশ্বের তৃতীয় বৃহদ বইয়ের ঘন সন্নিবেশ।
১৯৭৬ সালে শুরু হওয়া এই বইমেলায় প্রতি বছর অন্তত দুই থেকে আড়াই মিলিয়ন মানুষ আসে। বইমেলার আয়োজক হল পাবলিশার্স ও বুকসেলার্স গিল্ড। (http://www.kolkatabookfair.net/) সর্বশেষ আন্তর্জাতিক কোলকাতা বইমেলা আয়োজিত হয় ২০২০ সালের ২৯শে জানুয়ারি থেকে ৯ই ফেব্রুয়ারি কোলকাতার করুণাময়ীর সেন্ট্রাল পার্ক মেলা প্রাঙ্গণে। ৪৪তম এই বইমেলার থিম দেশ ছিল রাশিয়া আর ম্যাসকট ছিল “টিটো” নামের প্যাঁচা।
২০২১ সালের বইমেলা নিয়ে আশঙ্কার মেঘ ঘনীভূত হয়েছে অন্যদিকে। সারা ভারতবর্ষ জুড়ে করোনা ভাইরাসের তান্ডব লীলা এখনও বর্তমান। এই অবস্থায় সামাজিক দূরত্ববিধি মেনে ৪৫তম আন্তর্জাতিক কোলকাতা বইমেলা কিভাবে করা সম্ভব সে বিষয় নিয়ে নানা মহলে প্রশ্ন উঠেছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা থেকে প্রাপ্ত নির্দেশিকা মেনে দশদিন ব্যাপী এত মানুষের জনসমাগমকে নিয়ন্ত্রণ করার বিধিও সুপরিকল্পিত করতে বদ্ধ পরিকর পাবলিশার্স ও বুকসেলার্স গিল্ড।
আন্তর্জাতিক কোলকাতা বইমেলা ২০২১ সালের জানুয়ারি মাসের শেষ সপ্তাহে হওয়ার মোটামুটি একটা সম্ভাবনা থাকলেও পাবলিশার্স ও বুকসেলার্স গিল্ডের নতুন কার্যনির্বাহী দল এই বিষয়ে রাজ্য সরকারের সুপরামর্শ চেয়েছেন। বইমেলার আয়োজন করার জন্যও যথেষ্ট সময় হাতে থাকা দরকার। কোভিড পরিস্থিতি দেখে গিল্ড একথা নিশ্চিতভাবে এখনও বলে উঠতে পারে নি যে ২০২১ সালের আন্তর্জাতিক কোলকাতা বইমেলা জানুয়ারি মাসে হবে কি হবে না!
সরকারি নির্দেশিকার উপর আগামী বইমেলার হওয়া না হওয়া নির্ভর করছে। কিন্তু পাবলিশার্স ও বুকসেলার্স গিল্ডের সাধারণ সম্পাদক সুধাংশু দে আশ্বস্ত করেন যে বইমেলা মেলা প্রাঙ্গণে করার অনুমতি না পেলে তা ভার্চুয়ালি করার দিকটিও তারা অনুসন্ধান করে দেখবেন। বইপ্রেমীদের নিরাশ হতে দেবেন না বলেই তিনি দাবী করেন। এ বিষয়ে গিল্ডের সভাপতির মত জানতে চাইলে তিনিও বলেন যে মেলা প্রাঙ্গণে করা না গেলেও ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে ৪৫তম আন্তর্জাতিক কোলকাতা বইমেলা করার সম্ভাবনা তারা খতিয়ে দেখবেন।
“Today if big public examinations can be held online, if malls and markets are using digital platforms for exhibitions and sale, it should be possible for the book fair also,” Tridib Chatterjee (Guild President)
পাবলিশার্স ও বুকসেলার্স গিল্ডের সভাপতি ত্রিদিব কুমার চট্টোপাধ্যায় ২০২০ সালের বইমেলা শেষ হওয়ার পর অ্যামিড মাচ ফ্যানফেয়ারে ঘোষণা করেছিলেন ২০২১ সালে ৪৫তম আন্তর্জাতিক কোলকাতা বইমেলার মুখ্য দেশ হবে বাংলাদেশ। ২০২১ হল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের জন্মশতবর্ষ। তাঁকে সম্মান জানিয়ে ও ভারত – বাংলাদেশ দুই দেশের মধ্যে মৈত্রী বন্ধনকে আরও দৃঢ় করতে আগামী বইমেলায় বঙ্গপিতা মুজিবরকে শ্রদ্ধা জানানো হবে।
বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক বিষয়ক মন্ত্রী কে. এম. খালিদ জানান বাংলাদেশ প্রধানমন্ত্রী ও শেখ মুজিবর কন্যা শেখ হাসিনা ৪৫তম আন্তর্জাতিক কোলকাতা বইমেলার উদ্বোধন করবেন। বঙ্গবন্ধুকে উৎসর্গ করা ২০২১ এর বইমেলা কতটা আর কিভাবে বাস্তবায়িত হয় সেটাই দেখার।
২০২০ সালের বইমেলায় মোট ৬০০টি ছোট বড়ো স্টল মিলিয়ে আয় হয়েছিল আনুমানিক ২৩ কোটি টাকা। করোনা পরিস্থিতিতে সারা দেশ তথা রাজ্যের অর্থনীতিতে তাই বইমেলার প্রভাব অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বইমেলার সাথে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে অনেক মানুষ জড়িয়ে থাকে। মেলা একেবারে বন্ধ হয়ে গেলে বা অনলাইন হলে তাদের অবস্থাটাও বিচার করা প্রয়োজন।
মেলা প্রাঙ্গণে হলে বইমেলায় যত মানুষের ঢল নামে ইন্টারনেট ব্যবহার করে কতজন আসলে বই কিনতে পারবেন সেই বিষয়টিও ভাববার দরকার রয়েছে। প্রতি বছর একদিনে মেলায় আসা আড়াই লক্ষ মানুষের ঠিক কত শতাংশ মানুষ প্রযুক্তির রোশনাই গায়ে মাখতে পারবে? গিল্ডের আয় এত বছরের অনুপাতে বৃদ্ধি পাবে না হ্রাস পাবে? ঠিক কি হবে ২০২১ সালের ৪৫তম আন্তর্জাতিক কোলকাতা বইমেলার গাণিতিক চিত্রটি? সব প্রশ্নের উত্তরের জন্য অপেক্ষা আরও প্রায় মাসখানেক। বইয়ের প্রতি ভালোবাসা বজায় রেখে সেই অপেক্ষা হোক আগামীদিনের সুসংবাদবাহক।