হাওয়ালা লেনদেন কি, কারা করেন, কেন করে এইসকল বিষয় নিয়ে এখনও আমাদের মধ্যে ধোঁয়াশা রয়েছে। আজ এই বিষয় গুলোই নিয়ে আলোচনা করবো এবং জেনে নেব হাওয়ালা লেনদেন সম্বন্ধে সমস্ত তথ্য।
! হাওয়ালা আইনত নয় ! এটি একটি অপরাধ !
হাওয়ালা কি ?
হাওয়ালা লেনদেন হল এক বিশেষ ধরনের লেনদেন এর প্রথা যেটি সরকারের চোখে ধুলো দিয়ে অর্থাৎ সরকারকে ফাঁকি দিয়ে কালো টাকা লেনদেন করার প্রক্রিয়া। সাধারণত হাওয়ালার অর্থ হল বিশ্বাস। কিন্তু এক্ষেত্রে ব্যাপারটি আলাদা এবং খানিকটা পেঁচানো । চলুন তবে জেনে নেওয়া যাক ব্যাপারটির গভীরতা।ধরে নিন আপনি বিদেশে কোথাও বসবাস করেন।তাও বেআইনি ভাবে।অর্থাৎ যেখানে আপনি ভিসা ছাড়া বসবাস করেন বা অন্য কোনো বেআইনি ব্যাপারের সাথে জড়িত হাওয়ায় আপনি সরকারি কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারবেন না । ই অবস্থায় আপনি সেখান থেকে আপনার বাড়িতে অর্থাৎ দেশে টাকা পাঠানোর দরকার হলে আপনি ব্যাকিং ব্যবস্থার সহায়তা পাচ্ছেন না। যেহেতু বেআইনি ভাবে আপনি বিদেশে বসবাস করছেন সেইক্ষেত্রে আপনার টাকা পাঠাবার একমাত্র মাধ্যম হলো এই হাওয়ালা ব্যবস্থা।
কারা করে এই লেনদেন ?
হাওয়ালা কি তা তো জেনে নিলেন কিন্তু কারা করে এই কাজ কিভাবেই বা করে তাও আমাদের জানা উচিত।
আসলে এই লেনদেন এর জন্য রয়েছে বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন প্রান্তে অসংখ্য হাওয়ালা এজেন্ট। এরা খানিকটা গুপ্তচরের মত ।যাদের কোনো অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায় না।এই লেনদেন প্রথার উদ্যেশ্য ই হলো যাতে লেনদেন ও সম্পূর্ণ হয় অথচ কারোর কোনো পরিচয় ও সামনে না আসে। এই এজেন্ট রা এই লেনদেন এর কাজ করে এবং এদের পাওয়াও দুসাধ্যযোনক ব্যাপার।
বেআইনি করবার এর সাথে জড়িত থাকার জন্য এই সকল এজেন্ট দের পরিচয় গোপন করে থাকতে হয় এবং স্বাভাবিক ভাবে দেখে বোঝার যাবে না যে এরা এই কাজের সাথে জড়িত।
এবার জেনে নেওয়া যাক সম্পূর্ণ প্রক্রিয়াটি কিভাবে কাজ করে। প্রথমের ন্যায় ধরুন আপনার টাকা পাঠানোর হলে আপনি বিদেশের কোনো এক হাওয়ালা এজেন্ট এর সাথে যোগাযোগ করবেন এবং তাকে সেই টাকা টি দিয়ে দেবেন । এর পর সে ভারতের একজন হাওয়ালা এজেন্ট এর সাথে যোগাযোগ করবে ও তাকে সেই টাকাটি পাঠিয়ে দেবে এবং এরপর সেই স্থানীয় এজেন্ট সেই টাকাটি সুরক্ষিত ভাবে যথাযথ জায়গায় নিয়ে গিয়ে উপযুক্ত লোক কে সেটা দিয়ে দেবে এবং সেখান থেকে নিজেদের কমিশন কেটে নেবে ।
সম্পূর্ণ ভাবে এই প্রক্রিয়াটি অসংখ্য পাস – কোড নিয়ে সম্পন্ন হয় যাতে কোনো ভুল এর সম্ভাবনা অনেক কম থাকে এবং শুরু থেকে শেষ অবধি সম্পূর্ণ প্রক্রিয়াটি তে প্রত্যেকে প্রত্যেকের পরিচয় গোপন রেখে বিদেশি মুদ্রা দেশীয় মুদ্রায় যথাযথ স্থানে কোনো রকম ব্যাংকিং পরিষেবার সাহায্য ছাড়াই চলে যাবে।
হাওয়ালা লেনদেন একটি অপরাধ!
শুনতে ব্যাপারটি বেশ ভালো লাগলেও ব্যাপারটি যে অপরাধজনক তা নিঃসন্দেহে। স্বভাবতই বেআইনি ভাবে কোনো জায়গা থেকে বিদেশি মুদ্রা স্থানীয় দেশীয় মুদ্রায় পাঠানোর জন্য ব্যাংকিং পরিষেবার সাহায্য নিতে হয় যা সম্পূর্ণ ভাবে রিজার্ভ ব্যাংক অফ ইন্ডিয়ার চোখের সামনে থাকে । তাই বেআইনি প্রক্রিয়ায় পাঠানোর জন্য এই হাওয়ালা র সাহায্য নিতে হয়।
এই লেনদেন ও সম্পূর্ণ ব্যাংকিং ব্যবস্থার সমান্তরালে চলে অর্থাৎ ব্যাপারটি অনেকটা একই। তবে আইনত অপরাধ মূলক হওয়ার জন্য এই লেনদেন এর এজেন্টদের এবং এর সাথে যুক্ত ব্যক্তিদের কঠোর শাস্তি আইনে রয়েছে । তবে দেখা যাক সরকার কিই লেনদেন এর বিরুদ্ধে কোনো যথাযথ ব্যবস্থা নিচ্ছে বা কিভাবে এই লেনদেন বন্ধ করে তুলবে সরকার তাই দেখবার বিষয়।
বর্তমানে এই হাওয়ালার মধ্যমে প্রচুর কালো টাকার পাচার কার্য্য সম্পন্ন হচ্ছে যার ফলে দেশে অর্থনৈতিক অবস্থা দিনের পর দিন ক্রমশ নানান সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছে। এই কালো টাকার সমস্যাকে আমাদের দেশের প্রধান মন্ত্রী নরেন্দ্র দামোদর মোদী সন্ধানের উদেশ্যে সমগ্র দেশ জুড়ে নোটবন্দি চালু করায় ।দেশের মানুষ রাতারাতি নাজেহাল হয়ে পড়ে ।হাসপাতাল ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপারগুলোর ক্ষেত্রেও নানান রকম সমস্যার সৃষ্টি হতে দেখা দেয় ।
এরপর মানুষের চাকরি যাবার ঘটনা তো রয়েইছে ।তবুও এসব সত্বেও যে কালো টাকার পাচার সম্পূর্ণ রূপে আমাদের দেশে বন্ধ হয়ে গেছে এ বিষয়ে প্রশ্ন তুললে আজও কোনো উত্তর পাওয়া যাবেনা ।আদৌ কি সরকারের প্রচেষ্টা সফল হলো?
তবে ভবিষ্যতে যদি সরকার এই হাওয়ালার মত অপরাধমূলক জিনিস কে গোড়া থেকে বন্ধ করবার জন্য কোনো পদক্ষেপ নেন এবং তা যদি যথাযথ এবং যুক্তিযোগ্য হয় তবে নিঃসন্দেহে ভারতবাসীর সেই সিদ্ধান্ত কে মেনে দেশের সহায়তা করা উচিত ।