প্রত্যেকদিন শরীরচর্চা করার জন্য বরাদ্দ সময় রাখতেই হয়। । কিন্তু তার মানে এই নয় যে সবসময়ই আপনাকে জিমে গিয়ে কসরৎ করতে হবে কিংবা দৌড়াতে হবে মাঠে নেমে । শরীর সুস্থ রাখার জন্য নিজের ঘরে থেকেই সময় সুযোগ মতো কিছু উপায় অবলম্বন করতে পারেন। বিশেষজ্ঞদের মতে দেহ মনে সচল ও নমনীয় থাকার অন্যতম উপায় হল স্ট্রেচিং বা অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ প্রসারণ। অনেক রকমের স্ট্রেচিং থাকলেও কোনটা আপনার জন্য বেশি উপকারী সেটা আগে বুঝে নিতে হবে ।
অনেকেই মনে করেন স্ট্রেচিং করে ওজন কমানো যায়না কিন্তু সেটি সম্পূর্ণ ভুল। শরীরের যে কোন অংশের মেদ ঝরানোর জন্য স্ট্রেচিং আসলে সবথেকে কার্যকরী উপায় ।
ফিটনেস বিশেষজ্ঞ সৌমেন দাসের কথায় “শরীরের ফ্লেক্সিবিলিটি বাড়াতে স্ট্রেচিং এর বিকল্প নেই । এই ব্যায়াম শরীর হালকা করে। এতে মাসল টোনড হয়। অনেক সময় আমাদের আলসেমিতে পায়, তখন কয়েকটা স্ট্রেচিং এক্সারসাইজ করলে চনমনে লাগে। স্ট্রেচিংয়ের সবচেয়ে বড় সুবিধা হল সাত বছরের বাচ্চা থেকে বয়স্করাও এগুলো করতে পারেন । ”
স্ট্রেচিং- এর জন্য জিমে যেতে হয়না বা সাধারণত কোন প্রশিক্ষক লাগেনা। নিজে বাড়িতে থেকেই করা যায় । তবে প্রথম দিকে চাইলে কোন বিশেষজ্ঞের কাছ থেকে ট্রেনিং নিতেও পারেন । ভুলভাবে হাত-পা স্ট্রেচ করলে আচমকা পেশিতে টান লেগে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে । তাই স্ট্রেচিংয়ের সময় শরীরের ভঙ্গি ঠিকঠাক হওয়া অত্যন্ত জরুরী ।
স্ট্রেচিংয়ের গতিপ্রকৃতি আর ভঙ্গিগুলোতে সামান্য বদল এনে দেহের বিভিন্ন অংশে আলাদা আলাদাভাবে জোর দেওয়া যায় । সৌমেন দাস কিছু সাধারন স্ট্রেচিং নিয়মিত করার পরামর্শ দেন যেগুলো সব রকম বয়সের মানুষই করতে পারেন । তবে অল্পবয়স কালীন স্ট্রেচিং-এর মতো এক্সারসাইজ শুরু করা অধিক নিরাপদ। বয়স্ক মানুষরা যদি আগে থেকেই শরীরচর্চার অভ্যেস রাখেন তবে তাঁরাও করতে পারেন ।
ফিটনেস বিশেষজ্ঞের মত অনুযায়ী যেভাবে আপনারা স্ট্রেচিং করতে পারেন –
১) শুরুতেই বড় করে শ্বাস নিন। এরপর মাথার পেছনে দুটো হাত রেখে লক করে নিন। দুপায়ের মধ্যে ফাঁক রাখুন। কাঁধ থাকবে সোজা। এবার শরীরটা একবার ডান দিকে হেলান একবার বাঁদিকে । পেটের দুপাশের পেশীতে টান অনুভব করবেন। এই পদ্ধতিতে ১৬বার করে গুনে মোট ৩টে সেট অভ্যাস করুন।
২) হাত আর পায়ের পজিশন উপরের এক্সারসাইজের মত এক রেখে শুধুমাত্র শরীর ডাইনে বাঁয়ে ঘোরান। পিঠ এবং কোমরের জন্য এটি খুবই ভালো ব্যায়াম।
৩) কোমরের সমস্যা না থাকলে ফ্রন্ট বেন্ডিং আর ব্যাক বেন্ডিং করুন। ও। হাত দিয়ে পায়ের পাতা স্পর্শ করুন তারপর একবার সামনে ঝুঁকুন এর একবার পেছনে ঝুকুন। খেয়াল রাখবেন সামনে ঝোঁকার সময় কোনভাবেই যাতে হাঁটু ভাঁজ না হয়। পিছনে যাওয়ার সময় অল্প হাঁটুভাঁজ হলেও চলবে ।
৪) এবার আসি সাইড ক্রসিংয়ে । এটি করার সময় দুপায়ের মধ্যে ফাঁক রেখে দাঁড়ান। হাঁটু ভাঁজ না করে নিচু হয়ে ডান হাত দিয়ে বাঁ পায়ের পাতা আর বাঁ হাত দিয়ে ডান পায়ের পাতা স্পর্শ করতে হবে।
৫)এরপর মাটিতে উপুড় হয়ে শুয়ে পড়ুন। হাত দুটো বুকের পাশে রেখে ভর দিয়ে শরীরের উপরের অংশ স্ট্রেচ করুন। কনুই ভাঁজ করবেন না ।
৬) মেঝেতে বসে একটা পা ছড়িয়ে দিন, একটা পা মুড়ে রাখুন। এবার হাত দিয়ে পায়ের পাতা ধরার চেষ্টা করুন। মাথাটা হাঁটুতে ঠেকানোর চেষ্টা করবেন। এই অবস্থায় ১০ গুনতে থাকুন । প্রতি পায়ে পাঁচবার করে করতে পারেন। এই স্ট্রেচিং সারা শরীরে দারুন প্রভাব ফেলে।
৭) লাঞ্জেস খুব ভালো স্ট্রেচিং এক্সারসাইজ। এতে থাই এবং হ্যামস্ট্রিং দুটিই টোনড হবে। এই স্ট্রেচিং-এর ক্ষেত্রে একটি পা সামনে এগিয়ে হাটু ভাজ করতে হবে, আর একটা পা পিছনে দিয়ে স্ট্রেচ করে বসার মত করে শরীরটা আপডাউন করতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে কাঁধ যেন সোজা থাকে ।এটি প্রথমে ১০টি করে প্রতি পায়ে তিনবার যথেষ্ট ।
৮) হ্যামস্ট্রিংয়ের ব্যায়ামের জন্য চেয়ারের উপরে পা তুলে দিয়ে বেন্ড হয়ে হাত দিয়ে পায়ের পাতা ধরতে হবে। মাথাও যতটা সম্ভব নিচু করতে হবে। মেঝের সমান্তরালে পা একদম সোজা থাকবে চেয়ারে।
এই দুটি ব্যায়াম খুব সহজ কিন্তু অত্যন্ত উপকারী। এক পায়ের উপরে দাঁড়িয়ে অন্য পা অল্প তুলে সামনের দিকে এগোন। এবার পায়ের পাতা ক্লকওয়াইজ এবং এন্টি ক্লকওয়াইজ ঘোরান। ১৬বার হয়ে গেলে অন্য পায়ে করুন ।বয়স্করা এটি চেয়ারে বসে করতে পারেন। হাতের কব্জিও এভাবে ঘোরাতে হবে। দুটো হাত সামনের দিকে ছড়িয়ে হাত মুঠো করে রেস্ট মুভমেন্ট করুন ।
উপরের সব কটি এক্সারসাইজ অনায়াসে করা যায় আরও অনেক ধরনের স্ট্রেচিং হয় কিন্তু এই বেসিক কিছু স্ট্রেচিং রোজকার ফিটনেস ফ্লেক্সিবিল্টি্র জন্য যথেষ্ট। এর সঙ্গে স্পট জগিং বা এক কিলোমিটার দূরত্বে প্রতিদিন হাটা গেলে সোনায় সোহাগা। আপনি পেয়ে যাবেন মনের মতো ফলাফল। শরীরের বাড়তি মেদের সমস্যা কিংবা কোনোরকম গাঁট বা পেশির সমস্যা থেকে সহজেই রেহাই মিলবে এতে।
[…] আরও পড়ুন : স্ট্রেচিং-এ লুকিয়ে সৌন্দর… […]