আদর্শ শিক্ষাব্যবস্থা একজন মানুষকে কেবল শিক্ষিতই করেনা, তাকে সমাজের একজন উপার্জনক্ষম মানবসপম্পদ করে তোলে।এখানকার স্কুলের পাঠ্যক্রমে ওয়ার্ক এডুকেশন বা কর্মশিক্ষা বলে একটি বিষয় থাকে যাতে পেশাদারিত্ব অর্জনের প্রাথমিক কিছু প্রশিক্ষণ ছেলেমেয়েদের দেওয়া হয় কিন্তু সেটুকু যথেষ্ট নয়। দ্রুত কর্মক্ষম হয়ে টাকা রোজগার করতে চাইলে আরও কিছু বিষয়ে দক্ষতা এখন জরুরী।তাই, উচ্চমাধ্যমিক পাশ করার পর সময় নষ্ট না করে কয়েকমাসের স্কিল ডেভেলপমেন্ট কোর্সে ভর্তি হয়ে যান।
স্কিল ডেভেলপমেন্ট কোর্স কি?

কর্মসংস্থানের সুযোগ এবং গবেষণা কার্যক্রমের উন্নতির উপর আরও বেশি জোর দিয়ে, দেশজুড়ে অনেক প্রতিষ্ঠান ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে দক্ষতা বাড়াতে উচ্চতর বিশেষায়িত একাডেমিক এবং শিল্প প্রশিক্ষণ কর্মসূচিতে নিযুক্ত রয়েছে। ২০১৫ সাল থেকে বিভিন্ন রাজ্য জুড়ে দক্ষতা বিকাশের প্রশিক্ষণ কার্যক্রম প্রচারের লক্ষ্যে বহু-স্তরের অভিযান পরিচালনা করার উদ্যোগ নিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। স্কিল ডেভেলপমেন্ট এর মতো প্রশিক্ষণই আগামীদিনে বেকারত্বের সমাধান বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। সারা দেশের শীর্ষস্থানীয় অগ্রণী প্রতিষ্ঠান এবং বিশ্ববিদ্যালয়সমূহ, যার মধ্যে এআইআইএম, আইআইএম, আইআইটি, এনআইটি, আইআইআইটি, আইআইএসসি, আইআইএসটি ইত্যাদি প্রতিবছরই একাধিক কর্মশালার আয়োজন করে এই বিষয়ে সচেতনতা বাড়াতে চেষ্টা করছে।
https://in.pinterest.com/pin/799600108825780253/
জেনে নিন যে ৭টি স্কিল ডেভেলপমেন্ট কোর্স আপনি উচ্চমাধ্যমিক পাশ হলেই করতে পারবেন-
১। ডিজিটাল মার্কেটিং
ইন্টারনেটের ব্যবহার দিন দিন বাড়ছে তাই ডিজিটাল মার্কেটিং এখন ভারতের অন্যতম প্রধান চাহিদাসম্পন্ন সেরা স্কিল ডেভেলপমেন্ট কোর্সে পরিণত হয়েছে।
ডিজিটাল বিপণনে ব্লগিং, অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং, সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং, মোবাইল মার্কেটিং , ওয়েব অ্যানালিটিক্স, ইমেল মার্কেটিং , বিক্রয় ফানেল, কনভেনশন রেট অপটিমাইজেশন, সার্চ ইঞ্জিন অপ্টিমাইজেশন, কনটেন্ট মার্কেটিং ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়।
ডিজিটাল মার্কেটিং শিখতে কোনও বিশেষ যোগ্যতার প্রয়োজন নেই। স্কুলে পড়তে পড়তে বা উচ্চমাধ্যমিকের পর বা স্নাতকস্তরের যে কোনও শিক্ষার্থী ডিজিটাল মার্কেটিং শিখতে পারেন।
সি আই এম এর মতো বড় কোনও প্রতিষ্ঠান থেকে এই কোর্স করলে ক্যাম্পাসিং-এ চাকরি পেয়ে যাবেন। অন্যান্য সংস্থা থেকে করলেও পোর্টফলিও তৈরি রেখে চাকরির পোর্টালগুলোয় আপলোড করলেই দ্রুত কাজ পাবেন।
যে পদগুলোতে কাজ পেতে পারেন- ডিজিটাল মার্কেটিং শিখলে ডিজিটাল কনটেন্ট ডেভেলপার, ওয়েব ডেভেলপার, সোশ্যাল মিডিয়া ম্যানেজার, ডিজিটাল সিআরএম অ্যানালিস্ট , ই-কমার্স এক্সিকিউটিভ প্রভৃতি পদে কাজ পাবেন বহুজাতিক বিভিন্ন সংস্থায়।
২. অ্যানিমেশন এবং ভিএফএক্স

বিজ্ঞাপন থেকে শুরু করে সবধরনের বিনোদন এবং শিক্ষামূলক প্রকল্পে অ্যানিমেশন ক্রমশ জনপ্রিয় হচ্ছে।যেকোনো প্রকল্প বা ধারণার আকর্ষণীয় ও সহজ উপস্থাপনায় অ্যানিমেশন প্রযুক্তির বিকল্প নেই। এই প্রযুক্তির প্রশিক্ষণ নেওয়া থাকলে কাজ পেতে পারেন যেকোনো প্রতিষ্ঠানে।কোর্সে ভর্তি হবার যোগ্যতা দ্বাদশ শ্রেণী পাশ।
অ্যানিমেশন হল ফটোগ্রাফ এবং আঁকা ছবি ব্যবহার করে সেটিকে গতি দিয়ে কার্টুন তৈরি করার কৌশল।
অ্যানিমেশন শিখে সাধারণভাবে উপার্জন করতে চাইলে অ্যানিম্যাটর ইলাস্ট্রেটর, ডিজিটাল চিত্রশিল্পী, লেআউট শিল্পী, গেম ডেভেলপার ভিডিও সম্পাদক হিসেবে কাজ পাবেন।
আপনি যদি পেশাদার অ্যানিমেটার হতে চান তবে আপনি অ্যানিমেশন এবং ভিএফএক্সে ডিপ্লোমা করতে পারেন। এরিনা মাল্টিমিডিয়ার মতো স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে অ্যানিমেশন এবং ভিএফএক্সে স্নাতক ডিগ্রি পেলে আপনি ভাল ক্যারিয়ার তৈরি করতে পারেন। আপনার যদি ভাল জ্ঞান এবং দক্ষতা থাকে তবে বিভিন্ন ধরণের শিল্প রয়েছে যেখানে আপনি চাকরি পেতে পারেন, যেমন-
ভিডিও গেম শিল্প
অ্যানিমেশন স্টুডিও
ফিল্ম প্রোডাকশন হাউস
টেলিভিশন শিল্প
গণমাধ্যম ইত্যাদি
৩। গ্রাফিক ডিজাইন কোর্স
যাঁরা শৈল্পিক, উদ্ভাবনী, সৃজনশীল তাদের জন্য দ্বাদশ শ্রেণী পরবর্তী একটি উপযুক্ত কোর্স হতে পারে গ্রাফিক ডিজাইনিং।গ্রাফিক ডিজাইন হ’ল বিজ্ঞাপন, সংবাদপত্র, ম্যাগাজিন, বই, লোগো, কাপড়, ইউটিউব থাম্বনেইল এবং ফটোতে পাঠ্য, সংখ্যা এবং ছবি একত্রিত করার শিল্প বা দক্ষতা। ফটোশপ, ইলাস্ট্রেটর প্রভৃতি শিখে আপনি এই কাজ করতে পারবেন।
গ্রাফিক আর্টিস্ট সব সংস্থারই লাগে। এই কোর্সটি শেষ করার পরে আপনি যেকোনো মিডিয়া বা গনমাধ্যম সংস্থা, বিজ্ঞাপন সংস্থা, এবং আইটি সেক্টরগুলোতে কাজ পেয়ে যাবেন।
গ্রাফিক ডিজাইনিংয়ে আপনার যদি দক্ষতা বা কমান্ড থাকে তবে আপনি কয়েকটি পদে কাজ করতে পারেন, যেমন-
গেম ডিজাইনার
ফ্যাশন ডিজাইনার
বইয়ের কভার ডিজাইনার
ওয়েব ডিজাইনার
থ্রি-ডি চিত্রকর
বিবাহের ডিজাইনার
ইউটিউব থাম্বনেইল ডিজাইনার
প্যাকেজিং ডিজাইনার
কোম্পানির লোগো ডিজাইনার
৪। স্পোকেন ইংলিশ অথবা অন্যান্য বিদেশি ভাষা শেখার কোর্স
যারা সরকারি স্কুলে বাংলা মাধ্যমে পড়াশুনো করেছেন অনেকসময়ই ইংরিজিতে কথা বলার আত্মবিশ্বাস পান না। ভালো ইংরিজি লিখতে পারলেই যে কার্যক্ষেত্রে ইংরিজিতে চটজলদি কথা বলতে পারবেন এমনটা নয়। বিশ্বায়নের যুগে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ যোগাযোগের ভাষা হল ইংরিজি। তাই এই ভাষাটি ভালোভাবে রপ্ত করে ফেলুন। উচ্চমাধ্যমিক শেষে সরকারি বা বেসরকারি কোন নামকরা প্রতিষ্ঠান থেকে স্পোকেন ইংলিশের একটা সার্টিফিকেট কোর্স করে নিন। এতে ভবিষ্যতে অনেকদিক থেকে কাজের সুবিধে পাবেন। যদি একটু বেশি খরচা করতে রাজি থাকেন তবে ব্রিটিশ কাউন্সিল থেকে পেশাদার ইংরিজিতে ডিপ্লোমা করার কথাও ভাবতে পারেন।
অন্যদিকে যারা ইংরিজি ও হিন্দি মাধ্যমে পড়াশুনো করার কারণে ইংরিজি ভালো জানেন তাঁরা অন্যান্য বিদেশী ভাষা যেমন- ফরাসি, জার্মান, স্প্যানিশ, চাইনিস শিখলে খুবই সুবিধে পাবেন। বিভিন্ন সংস্থায় দোভাষী এবং অনুবাদক প্রয়োজন হয়। কোম্পানিতে যুক্ত হয়ে অথবা বাড়ি বসে কখনই আপনার কাজের অভাবে হবেনা।
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাষা বিভাগ, গোলপার্ক রামকৃষ্ণ মিশন খুব কম খরচে বিভিন্ন ভাষা শেখায়। সেখানে খোঁজ নিতে পারেন।
ইংরিজি, বাংলা ও হিন্দি ভাষায় দক্ষতা থাকলে এবং একাধিক ভাষা জানলে ভারতবর্ষে চাকরির অভাব নেই। আপনি কাজ পেতে পারেন যেকোনো রাজ্যের সংবাদমাধ্যম, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কিংবা বহুজাতিক বিজ্ঞাপন সংস্থায়।
৫। সাংবাদিকতা এবং জনসংযোগ
জার্নালিজম বা সাংবাদিকতা অত্যন্ত সম্মানজনক একটি কাজ। এই কাজের প্রশিক্ষণ নেওয়ার জন্য যোগ্যতা উচ্চমাধ্যমিক হলেই চলে। সাংবাদিকতা এবং জনসংযোগ কোর্সে প্রতিবেদন লেখা, সম্পাদনা করা এবং দল পরিচালনা করার মতো অনেক পেশাদারিত্বের তালিম দেওয়া হয়।
যদি আপনার স্বপ্ন থাকে সাংবাদিক হবার তবে উচ্চমাধ্যমিক পাশ করেই কলকাতার কিছু সরকারি কলেজে এই কোর্সে ভর্তি হয়ে যেতে পারেন।এছাড়া যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে জনসংযোগের একটি ডিপ্লোমা কোর্স করানো হয় যেটি অত্যন্ত কম খরচার এবং কার্যকরী। এই কোর্সের পর আপনি সাংবাদিকতা নিয়ে মাস্টার্স ও করতে পারেন।
কোর্স চলাকালীনই ক্যাম্পাসিং-এ চাকরির প্রস্তাব আসে বিভিন্ন কোম্পানি থেকে।আপনি চাইলে তখনি উপার্জন করতে শুরু করে দিতে পারেন অথবা ভালো কোন সংবাদ সংস্থায় ঢুকতে চাইলে কিছুদিন ট্রেনি হয়ে অভিজ্ঞতা বাড়ান।
এই কোর্সের পর যে সমস্ত পদে চাকরি আপনি পেতে পারেন-
সংবাদপত্র সম্পাদক
রিপোর্টার
খবর পাঠক
ডিজিটাল নিউজ কন্টেন্ট এডিটর
কনটেন্ট রাইটার ইত্যাদি।
৬। ফিনান্স বা অর্থের কোর্স
