কেউ সেক্স বদলে পেয়েছে ভালোবাসা কেউ বা নিজেকে।
কেউ শরীর বদলে পেয়েছে ভালোবাসা কেউ বা নিজেকে। দেশ, ধর্ম উপেক্ষা করে পাকিস্তানি প্রেমিকের জন্য কেউ গৌরব থেকে হয়েছে মীরা কেউ নিজেকে চেনায় নবীন থেকে অঞ্জলী। শারীরিক গঠন পুরুষ হলেও তারা আদপে ছিল নারী, কিংবা কিছু ক্ষেত্রে বাইরে থেকে পুরুষ হলেও নারী মন তাদের শান্ত থাকতে দেয় নি। তবে দিন শেষে আজ সব ক্ষেত্রেই তারা দৃষ্টান্তমূলক উদাহরণ।
সাধারণ সমাজের স্রোত থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পথ চলা সর্বদাই কঠিন। তবে জীবনে চলার পথের স্বাচ্ছন্দ্যবোধ উদযাপনে কোনো বাঁধাকেই প্রশ্রয় দেওয়া উচিত নয়। যেমন এনারাও দেননি। প্রতিকূল হলেও সব কিছু উপেক্ষা করে রূপান্তরের পথ বেছে নিয়েছেন এরা।
১) গৌরব থেকে গৌরী
গৌরব থেকে গৌরী, এই পরিবর্তনে একটি রিয়েলিটি শো তাকে উৎসাহিত করে তুলে ছিল। স্পিটসভিলা ৮ নম্বর সিজনের প্রতিযোগী গৌরব’ই হয়ে উঠেছে এখনকার জনপ্রিয় অভিনেতা ও মডেল গৌরী। কিন্তু কিভাবে! গৌরব বলেছেন ওই রিয়েলিটি শোয়ে তিনি একজন পুরুষ হিসেবে প্রবেশ করলেও ওই শোয়েই একজন তাকে প্রথম মহিলা অনুভব করান। কিন্তু তারপর বিভিন্ন কারণে তাদের মধ্যে সম্পর্কে অবনতি হয় আর সেই কারণেই প্রত্যাখ্যান সহ্য করতে না পেরে শো ছেড়ে বেরিয়ে আসেন তিনি। তারপর তিনি একজন মহিলা হিসেবে বাঁচার সিদ্ধান্ত নিয়েই নিজেকে গৌরব থেকে গৌরীতে রূপান্তরিত করেন।
২) নিকি চাওলা
নিকি চাওলা ভারতের প্রথম ট্রান্সজেন্ডার মডেল। নিকি ছোটবেলা থেকেই তার যৌনতা সম্পর্কে খুব সচেতন ছিলেন তাই মাত্র ১৭ বছর বয়সেই তিনি নিজেকে রূপান্তর করতে প্রস্তুত হয়ে ছিলেন কিন্তু তিনি তার বাবা-মা তাকে সম্মতি দেন নি। কিন্তু কিছু বছর পর তার বাবা, মায়ের সম্মতিতেই তিনি নিজেকে পরিবর্তন করে পুরুষ থেকে মহিলা হন। তারপরই তিনি মডেলিং আর ফ্যাশনের দুনিয়ায় উত্তীর্ণ হন। এখনো পর্যন্ত তিনি আনফ্রিডম, নাউ এন্ড দেন আর ফ্রেশ ব্লাডের মত ছবিতে অভিনয় করেছেন। তবে মহিলা হওয়ার পর তিনি বহু সমালোচনার শিকার হন।
৩) নবীন ওয়াহিবা থেকে অঞ্জলী লামা
অঞ্জলী লামা নেপালের একটি ছোট্ট গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ছোটবেলায় তার নাম ছিল নবীন ওয়াহিবা। ছোট থেকেই তিনি তার যৌনতা নিয়ে খুব অস্থির থাকতেন। কলেজে ওঠার পর তিনি ট্রান্সজেন্ডার কমিউনিটির সাথে পরিচিত হয়ে তার আসল রূপ জানতে পারেন। তবে তার পরিবার পরিবর্তিত অঞ্জলীকে কখনো মেনে নিতে পারে নি। আন্তর্জাতিক মডেলিং -এর সাথেও তার যোগাযোগ অপ্রত্যাশিত ভাবেই। যদিও তাকে বহু রিজেকশন ফেস করতে হয় তাও তিনি হার না মেনে এগিয়ে আজ পরিবর্তিত নারীদের মধ্যে একটি দৃষ্টান্তমূলক উদাহরণ রূপে বিদ্যমান।
৪) ব্যালিয়ান বুসচবাম
প্রাক্তন জার্মান পোল ভোল্টার ইউভনে বুসচবাম নিজেকে পরিবর্তিত করে ব্যালিয়ান বুসচবাম হন। ১৯৯৯ সালে পোল ভোল্টার চ্যাম্পিয়নশিপে বিজেতা হন। ২০০৭ সালে তিনি খেলা ছেড়ে নিজেকে একজন পুরুষে পরিবর্তন করার সিদ্ধান্ত নেন। বর্তমানে তিনি একজন প্রতিষ্ঠিত অভিনেতা, মোটিভিসনাল স্পিকার ও একজন সুখী স্বামী হয়ে তার জীবন অতিবাহিত করছেন।
৫) নুং পয়
সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারকারী আমরা প্রত্যেকেই এই নামটির সাথে কম বেশি পরিচিত। প্রকৃত নাম ত্রিচদা পেটচরত হলেও নুং পয় নামটির সাথে বেশি পরিচিত এই থাই শিল্পী। ‘মিস ইন্টারন্যাশনাল কুইন’ এর অধিকারি নুং পয় ছোটো থেকেই তার যৌনতা নিয়ে সচেতন ছিলেন। ১৭বছর বয়সে তিনি অপারেশন করে নিজেকে সম্পুর্ন রূপে নারীতে পরিণত করেন।
৬) রবার্টা ক্লোজ
ব্রাজিলিয়ান মডেল রবার্টা ক্লোজ প্রথম ট্রান্সজেন্ডার মডেল যিনি ব্রাজিলিয়ান প্লেবয় ম্যাগাজিনের জন্য শ্যুট করেছিলেন। রিও ডি জেনেরিও’ র রবার্টার শৈশবের নাম ছিল লুইস রবার্ট। লুইসের ১৭ বছর থেকে মেয়েদের পোশাকের এক মোহ তাকে আকৃষ্ট করতে থাকে এবং তখন থেকেই তিনি ফিমেল হরমোন ইঞ্জেকশন নিতে থাকে। প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর তিনি একাধিক টিভি শো এবং সিনেমায় কাজ করেন যার মধ্যে ‘দ্যা শার্লট স্কর্পিয়ন’ অন্যতম। তাকে ব্রাজিলের অন্যতম সুন্দরী হিসেবেও গণ্য করা হতো।
৭) গৌরব থেকে মীরা
পাকিস্তানি প্রেমিকের জন্য লিঙ্গ পরিবর্তন করলেন ভারতের কত্থক শিল্পী। পাক প্রেমিক রিজওয়ানের জন্য লিঙ্গ পরিবর্তন করে পুরুষ থেকে মহিলা হয়ে উঠেছেন তিনি, নতুন নাম মীরা। লক্ষ্ণৌ ঘরানার নৃত্যশিল্পী মীরা সুফি কাব্যের উপর বইও লিখেছেন। রিজওয়ানের সঙ্গে তাঁর আলাপ ফেসবুকে। তবে শারীরিক সম্পর্ক নয় এক আধ্যাত্মিক যোগ তাদের সম্পর্কের কারণ। ভালবাসা যে সত্যিই কোনও বাধা মানে না তা আরও একবার প্রমাণ করলেন মীরা-রিজওয়ান।
আরো জানুন…