সামরিক বাহিনী:-
ভারতীয় সেনাবাহিনী, ভারতীয় নৌবাহিনী ও ভারতীয় বিমানবাহিনী এবং একাধিক অন্যান্য আন্তঃ-পরিষেবা দাতা সংস্থাকে নিয়ে গঠিত ভারতীয় প্রজাতন্ত্রের সামরিক বাহিনী। স্থল, জল ও আকাশ সবের উপর এনাদের সজাগ দৃষ্টি আমাদের শান্তিতে থাকার আশ্বাস দিয়েছে অবিরত।
ভারতীয় সেনারা সীমান্তে অতন্দ্র প্রহরীর মতন আছেন বলেই আমরা নিশ্চিন্তে ঘুমাতে পারি, আনন্দে ও উৎসবে অংশ নিতে পারি, উদ্দাম জীবন উপভোগ করতে পারি।
কিন্তু আমরা কি জানি কেমন জীবনযাত্রা তাঁদের? মনে হয় ২০১৯ এর ২৭ শে ফেব্রুয়ারির পর কিছুটা আমরা সচেতন হই, সবাই মিলে প্রার্থনা করি অভিনন্দনের জন্য।
ফিরে এসেছিলেন তিনি, কোটি কোটি ভারতীয়ের প্রার্থনা ব্যর্থ হয়নি সেদিন।
১. ধীরেন্দ্র এস জাফা:-
ধীরেন্দ্র এস জাফা ভারতীয় বায়ু সেনার ফাইটার পাইলট এবং উইং কমান্ডার ছিলেন ১৯৭১ সালে যুদ্ধের সময় তিনি পাকিস্তানের হাতে যুদ্ধবন্দী হন ।
১৯৭১ সালের, ১ ডিসেম্বর পাকিস্তানের বিরুদ্ধে অভিযান চলাকালীন স্কোয়াড্রন লিডার ধীরেন্দ্র সিং জাফা ছিলেন ফাইটারবম্বার স্কোয়াড্রনের দায়িত্বে।
৪ ডিসেম্বর শত্রুরা যখন হুসেনিওয়ালা এলাকার একটি ছোট ছিটমহলে সেনার একটি ব্যাটালিয়নকে ঘেরাও করেছিল তখন তিনি নেতৃত্ব দেন।
যুদ্ধ বিমানে পাকিস্তানের আকাশে চক্কর দিতে দিতে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেছিলেন। আগুন ধরে ককপিটে। ‘ইজেক্ট’ হাতলে টান দিয়ে মুহূর্তেই হাওয়ায় উড়ে গেলেন তিনি। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে প্যারাসুট খুলে গেল, নিচের দিকে নামতে শুরু করলেন তিনি।
তার প্যারাসুট মাটি ছুঁতেই কানে এল ‘নারা-এ-তকবীর’ আর ‘আল্লাহু আকবর’ ধ্বনি। গ্রাম থেকে কয়েকশো লোক ঘিরে ফেলেছে ওই পাইলটকে। তারা কেউ হাতের দস্তানা খুলে নিচ্ছিল, কেউ পকেট থেকে পাকিস্তানি টাকা নিয়ে নিয়েছেন, কেউ গলার মাফলারও খুলে নিচ্ছিল, কেউ একজন বুট ধরে টানছিল, সেই সময়ে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর কয়েকজন সদস্য সেখানে পৌঁছে যান।
ভিড় থেকে কোনওমতে তাকে বাঁচানোর পর একজন লম্বা-চওড়া পাকিস্তানি অফিসার জানতে চেয়েছিলেন, ‘তোমার কাছে কোনও অস্ত্র আছে?’
তিনি বলেছিলেন, ‘রিভলভার ছিল, কিন্তু মনে হয় ভিড়ের মধ্যে কেউ সেটা ছিনিয়ে নিয়েছে।’
হাতে চোট লেগেছিল ধীরেন্দ্র জাফার। চায়ের কাপটাও ধরতে পারছিলেন না ভালমতো। একজন পাকিস্তানি সেনা চামচে করে তাকে চা খাইয়ে দিয়েছিলেন।
হাসপাতালে জাফার কোমরে প্লাস্টার করার পরে তাকে যুদ্ধবন্দিদের শিবিরে পাঠানো হয়েছিল।
সেখানে রোজ জেরা চলত তাঁর। যখন টয়লেটে যাওয়ার প্রয়োজন হতো, তখন বালিশের ঢাকনা পরিয়ে দেওয়া হত তার মাথায়, যাতে চারদিকে কী আছে সেটা দেখতে না পান তিনি।
একদিন ওই ভবনটিরই অন্য একটি ঘরের দিকে নিয়ে যাওয়া হল তাকে। সেখানে তিনি দেখতে পান ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট দিলীপ পারুলকরকে। তিনি জড়িয়ে ধরেছিলেন স্কোয়াড্রন লিডার ধীরেন্দ্র জাফাকে। সেখানে আরও দশজন যুদ্ধবন্দি ভারতীয় পাইলট ছিলেন। অনেকদিন পরে নিজের দেশের, নিজের বাহিনীর সঙ্গীদের দেখা পেয়ে চোখে জল চলে এসেছিল ধীরেন্দ্র জাফার।
মুক্তি পাবার পর তাঁকে বীর চক্র পুরস্কার দেওয়া হয়। বন্দিদশার কাহিনি তিনি লিখছেন তাঁর ‘Death Wasn’t Painful’ বইতে।
২. ক্যাপ্টেন সৌরভ কালিয়া:-
পঞ্জাবের অমৃতসরের ছেলে সৌরভ কালিয়া। হিমাচলের পালামপুরের ডিএভি স্কুলে পড়াশোনা তাঁর। প্রথম থেকে শেষ অবধি দুর্দান্ত রেজাল্ট, পড়াশোনা শেষ করেন স্কলারশিপ পেয়ে। কিন্তু মেধাবী ছাত্ররা যে জীবন বেছে নেয় সেদিকে ফিরেও দেখেননি তিনি। স্নাতক হওয়ার পরে যোগ দিলেন সেনাবাহিনীতে। কম্বাইন্ড ডিফেন্স সার্ভিসের পরীক্ষা দিয়ে নির্বাচিত হলেন। জাঠ রেজিমেন্টের চতুর্থ ব্যাটেলিয়নের হয়ে প্রথম পোস্টিং হল কার্গিলে।
১৯৯৯-এর ১৫ মে ২২ বছরের সৌরভ কালিয়া কার্গিলের কাকসারে ডিউটিতে ছিলেন। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেলে ১৪ হাজার ফিট উঁচুতে বজরঙ্গ পোস্টে।
সোরভই প্রথম রিপোর্ট করেন‚ LOC পেরিয়ে পাকিস্তানিরা অনুপ্রবেশ করছে। কাকসারে তাঁর সঙ্গে কর্মরত ছিলেন আরও পাঁচ জওয়ান। সিপাই অর্জুন রাম, ভনওয়র লাল বাগারিয়া, ভিখা রাম, মূলা রাম ও নরেশ সিং। গাছহীন রুক্ষ লাদাখি প্রান্তর থেকে ক্রমাগত লড়াই চলছিল পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সঙ্গে ।যুদ্ধ করতে করতে একসময় তাদের সংগ্রহের গোলাবারুদ ফুরিয়ে যায়। ততক্ষণে সৌরভ-সহ পাঁচ জওয়ানকে ঘিরে ধরেছে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীদের বিশাল দল।
জীবন্ত অবস্থায় সৌরভদের ধরে নিয়ে যাওয়া হয় যুদ্ধবন্দি হিসেবে। ভারতীয় সেনাবাহিনীর অন্যদল যখন বজরঙ্গ পোস্টে পৌঁছয় তখন সেখানে সৌরভদের কোনও চিহ্ন নেই। আর পাকিস্তানের স্কার্দু রেডিওতে সম্প্রচারিত হচ্ছে‚ ক্যাপ্টেন সৌরভ কালিয়াকে যুদ্ধবন্দি করেছে পাকিস্তান। এতক্ষণে ভারতীয় সেনাবাহিনী দেখতে পায়‚ LOC পেরিয়ে ভারতীয় সীমায় আকাশছোঁয়া পাহাড়চূড়া দখল করেছে কয়েক হাজার পাকিস্তানি গেরিলা বাহিনী। তাদের রসদ আসছে পাক অধিকৃত কাশ্মীর থেকে।
পাকিস্তান সেনা ১৯৯৯ সালের ৯ জুন কালিয়ার ছিন্নবিচ্ছিন্ন দেহ ভারতকে ফিরিয়ে দেয়, সাথে অন্যান্য সিপাহীর।
ময়নাতদন্ত করে জানা যায়, অমানুষিক নির্যাতন চালানো হয়েছে সৌরভ কালিয়ার ওপর। তাঁর দেহে দেখা যায় অসংখ্য সিগারেটের ছ্যাঁকার দাগ, কানে ছিল গরম লোহার রড ঢোকানোর দাগ, তীক্ষ্ণ অস্ত্র দিয়ে চোখ উপড়ে নেওয়া হয়, প্রায় সব হাড় আর দাঁত ছিল ভাঙা, মাথায় ছিল গভীর আঘাত, ঠোঁট কেটে ফেলা হয় ,নাক ছিল তোবড়ানো, যৌনাঙ্গ-সহ দেহের অন্য অঙ্গ প্রত্যঙ্গ কুচি কুচি করে ফেলা হয়েছিল … এত অত্যাচারের পরে গুলি করে হত্যা করা হয়। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট দাবি করেছে‚ যুদ্ধবন্দিদের উপর প্রতিটি শারীরিক নির্যাতন করা হয়েছিল জীবন্ত অবস্থায়। যুদ্ধবন্দিদের উপর এমন পৈশাচিক অত্যাচার করে লঙ্ঘন করা হয়েছিল জেনেভা চুক্তি।
আজও শিউরে উঠতে হয় সৌরভ কালিয়ার পরিণতিতে।
মাত্র ২২ বছরের ছেলেটির সব স্বপ্ন শেষ করে দিয়েছিল বিদেশি তথা পাকিস্তানি সৈনিকেরা। কী নিদারুণ যন্ত্রণা ভোগ করে দেশের কোনো তথ্য স্বীকার না করে শারীরিক নির্যাতন ও মৃত্যু স্বীকার করে নিয়েছিলেন এই ক্যাপ্টেন। তারই ফলশ্রুতি ‘অপারেশন বিজয়ে’ সাফল্য।
৩. কম্বম্পতি নচিকেতা রাও:-
১৯৯৯ সালের ২৬ মে মিগ-২৭ যুদ্ধবিমান নিয়ে পাকিস্তানি অনুপ্রবেশকারীদের উপর হামলা চালাতে গিয়েছিলেন ২৫ বছরের নচিকেতা।
কার্গিল যুদ্ধের নির্দেশ অনুযায়ী বোমা মেরে পাক জঙ্গি ও হানাদারদের ছোট ছোট ঘাঁটিগুলি উড়িয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা ছিল তাঁর। কিন্তু নচিকেতা বোমা ফেলতে ফেলতে খুব নিচু দিয়ে উড়ছিলেন।সে সময় কার্গিলের শিখর থেকে লাগাতার ছোট ছোট ক্ষেপণাস্ত্র ছুঁড়ছিল পাক সেনারা। রেঞ্জের মধ্যে থাকায় পাকিস্তানে তৈরি ‘আনজা মার্ক ওয়ান’ ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে আগুন ধরে যায় নচিকেতার মিগের ইঞ্জিনে। ফলে বিমানটি ভেঙে পড়ে পাকিস্তানের ভূমিতে।
জখম অবস্থায় ককপিট থেকে বেরিয়েছিলেন নচিকেতা। আগুনে পুড়ে যায় তাঁর ফ্লাইং কস্টিউম। কোনওক্রমে উঠে দাঁড়িয়ে তিনি পিস্তল বের করে পালাতে থাকেন। এদিকে পাক টহলদার বাহিনীও তাঁকে মরিয়া হয়ে খুঁজতে থাকে। কিন্তু দুর্গম পাহাড় পর্বত টপকে দ্রুত নিয়ন্ত্রণরেখার কাছে পৌঁছানো ছিল অসম্ভব তাঁর পক্ষে। ফলে দু’তিন ঘণ্টা লুকোচুরির পর তিনি পাক টহলদার বাহিনীর হাতে ধরা পড়ে যান।
পাথরের আড়ালে পজিশন নেওয়ার আগেই তাঁকে ঘিরে ধরে একদল পাক সেনা। এরা সবাই জঙ্গিদের ছদ্মবেশে ছিল।
এরপর রাওয়ালপিণ্ডিতে পাক সেনার সদর দপ্তরে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল তাঁকে। একবারের জন্যও আত্মবিশ্বাস ও সাহস হারাননি পুণের ন্যাশনাল ডিফেন্স অ্যাকাডেমির এই প্রাক্তনী।
নচিকেতা ধরার পর তাঁকে মুক্ত করতে পাকিস্তানের উপর ভারতের প্রবল কূটনৈতিক চাপ পড়েছিল। আট দিন পরে রেডক্রসের মাধ্যমে ভারতের হাতে ফেরত দেওয়া হলেও অমানুষিক অত্যাচার করা হয়েছিল তাঁর উপর, এমনটাই অভিযোগ। প্রধানমন্ত্রী অটলবিহারী বাজপেয়ী ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী জর্জ ফার্নান্ডেজ করমর্দন করে নচিকেতার সাহসের ভূয়সী প্রশংসা করেছিলেন।
কার্গিল যুদ্ধে অবদানের জন্য তাঁকে বায়ুসেনা মেডেলে সম্মানিত করেছিল ভারত সরকার। নচিকেতা জানিয়েছিলেন, প্রচণ্ড চাপ দেওয়া সত্ত্বেও লাগাতার জেরার সামনে তাঁকে দিয়ে কিছুই বলাতে পারেনি পাক সেনা। ভারতীয় বিমানবাহিনীর কৌশল ও ভিতরের খবর তিনি কিছুই জানাননি। আন্তর্জাতিক চাপে পড়ে সুস্থ ও অক্ষত অবস্থায় তাঁকে আট দিন পরে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়েছিল পারভেজ মুশারফের পাকিস্তান।
ভারতীয় মিডিয়া ব্যাখ্যা করেছিল, ক্ষুধার্ত হায়নার মুখ থেকে যেন খাবার (নচিকেতাকে) কেড়ে নিলেন ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ব্রজেশ মিশ্র এবং অটলবিহারী বাজপেয়ী। ওই বছরই ৩ জুন ওয়াঘা সীমান্তে ভারতের হাতে তাঁকে তুলে দিতে বাধ্য হয় পাকিস্তান সরকার।
৪. অজয় আহুজা:-
রাজস্থানের কোটা শহরে জন্মগ্রহণ করেন তিনি।
১৯৯৯ সালের ২৭ মে কার্গিল যুদ্ধের সময় মিগ-২১ যুদ্ধবিমান নিয়ে একটি নিখোঁজ মিগ-২৭, যাতে করে কম্বম্পতি নচিকেতা রাও পাকিস্তানের বুকে নিখোঁজ হয়েছিলেন
সেটিকে খুঁজতে গিয়েছিলেন
স্কোয়াড্রন লিডার ৩৬ বছরের অজয় আহুজা।
ঠিক তখনই পাকিস্তানের একটি ‘সারফেস টু এয়ার মিসাইল’ তাঁর মিগ-২১ কে আঘাত করে। নিরাপদে প্যারাশুটে ঝাঁপ দিয়ে পাকিস্তানের বুকেই নেমেছিলেন অজয়। কিন্তু তিনি আত্মসমর্পণ করতে চাননি। পিস্তল বের করে গুলি চালাতে শুরু করেছিলেন। তাঁর গুলিতে জখম হন দু’জন পাক সেনা।
এরপর তাঁকে প্রায় কুড়ি জন পাক সেনা ঘিরে ফেলে বুকের ডান দিকে গুলি করেছিল। এরপর পাথর দিয়ে ডান হাঁটুর মালাইচাকি গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল।
যখন অসহনীয় যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছিলেন তখন পাক সেনারা তাঁকে ‘পয়েন্ট ব্ল্যাঙ্ক রেঞ্জ’ থেকে ডান কানের ভিতরে গুলি করে। সবশেষে ভোজালি দিয়ে শতবার কোপানো হয়।
স্কোয়াড্রন লিডার অজয়ের মৃতদেহ বিকৃত করে, তাঁর গুলিবিদ্ধ এবং ছুরি দিয়ে কোপানো ক্ষতবিক্ষত দেহ ১৯৯৯ সালের ২৮ মে ফেরত দিয়েছিল পাকিস্তান সরকার। জেনেভা কনভেনশনের নীতি লঙ্ঘন করে তাঁকে ঠাণ্ডা মাথায় খুন করেছিল পাক সেনা।
তাঁর বীরত্বকে শ্রদ্ধা জানিয়ে ওই বছর কার্গিল যুদ্ধ শেষে স্বাধীনতা দিবসের দিন অজয় আহুজাকে মরণোত্তর বীর চক্রে সম্মানিত করেছিল ভারত সরকার।
পরে গোয়েন্দা তথ্যে জানা গিয়েছিল, ধরা পড়ার পর তাদের চ্যালেঞ্জ না করে অর্থাৎ গুলি না ছুঁড়ে আত্মসমর্পণ করেছিলেন নচিকেতা, তাই তাঁকে জীবিত রেখেছিল পাক সেনা ও জেহাদিরা। আর অজয় আহুজা আত্মসমর্পণ করতে না চাওয়ায় তাঁকে খুন করা হয়েছিল।
যুদ্ধবন্দিদের প্রতি আন্তর্জাতিক আইন মেনে ব্যবহার করার সুনাম নেই যদিও পাকিস্তানের। কিন্তু এর একজন বীরকে আমরা হারালাম সেই কারণে।
৫. অভিনন্দন বর্তমান:-
অভিনন্দন বর্তমান প্রাক্তন এয়ার মার্শাল সিম্হাকুট্টি বর্তমানের ছেলে তিনি।
কার্গিল যুদ্ধের সেই যুদ্ধবন্দিদের পরিণতি হয়তো কালের গর্ভে হারিয়ে যেতে বসেছিল। সৌরভ কালিয়া, অজয় আহুজার শহীদ হওয়ায় ঘটনা স্মৃতির মণিকোঠায় লুকিয়ে গিয়েছিল। তার দীর্ঘ ২০ বছর পর সেই স্মৃতি জেগে উঠল। ২০১৯ এর ১৪ ই ফেব্রুয়ারি পুলওয়ামার চল্লিশ জন শহীদের মৃত্যুর প্রতিবাদে ২৬ শে ফেব্রুয়ারি ভারতের বায়ুসেনা সার্জিক্যাল স্ট্রাইক করে। এই বিরোধ কালে পাকিস্তানের মাটিতে ভেঙে পড়ে ভারতের যুদ্ধবিমান মিগ ২১। বিমানে ছিলেন উইং কম্যান্ডার অভিনন্দন বর্তমান, তিনি পাক হেফাজতে রয়েছে।
১৯৭১ বা ১৯৯৯ এ ছিল না সোশ্যাল মিডিয়ার এত রমরমা বা মিডিয়ার এত প্রচার। তাই সেই সমস্ত যুদ্ধবন্দির কথা কম মানুষের কাছে গিয়ে পৌঁছেছিল। কিন্তু অভিনন্দনের বন্দির খবর মুহূর্তে ছড়িয়ে পড়ে সর্বত্র।
ভারতীয় বায়ুসেনার বীরত্বে মুগ্ধ পাক মিডিয়াও। যুদ্ধবিমান ভেঙে মাটিতে আছড়ে পড়ার পরমুহূর্ত থেকে যে ভাবে পাকিস্তানের মাটিতে দাঁড়িয়ে তাদের চোখে চোখ রেখে নিজের বক্তব্যে অনড় থেকেছেন অভিনন্দন, তা প্রশংসা কুড়িয়েছে সে দেশেও।
অবশেষে ৫৫ ঘণ্টা বন্দি দশা কাটিয়ে হিরোর মত ফিরলেন তিনি। কিন্তু তাঁকে ফেরানো নিয়েও পাকিস্তান কম টালবাহানা করেনি। দুবার সময় পরিবর্তন। জেনেভা চুক্তি ভঙ্গ। সারাদিন সমস্ত ভারতবাসীকে অপেক্ষা করিয়ে অবশেষে রাত 9:15 তে ওপার সীমান্ত থেকে তাকে তাঁকে হেঁটে আসতে দেখা যায়। 9:21 এ তিনি ভারতের মাটিতে পা দেন।
১৯৯৯ এর যুদ্ধবন্দি নচিকেতার কথায়, ‘ভারতীয় সেনাবাহিনীর ট্রেনিং তাঁর প্রত্যেক আধিকারিককে এ ধরণের পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত রাখে। এবং অভি অত্যন্ত সাহসী একজন অফিসার। ও এই কঠিন পরিস্থিতিতেও শান্ত হয়ে পেশাদার সেনানীর মতো ব্যবহার করছে, সেটা আমরা সবাই দেখেছি। আমার প্রার্থনা এবং শুভকামনা রয়েছে ওর সাথে। পাকিস্তান যখন ওকে যুদ্ধবন্দি করার কথা ঘোষণা করেছে, তখন সেটা অত্যন্ত পজিটিভ একটা খবর। আশা করি, ও খুব দ্রুত মুক্তি পেয়ে নিজের ইউনিটে যোগ দেবে অভিনন্দন।’
দেশে ফেরার পর নচিকেতার প্রায় ৩ বছর সময় লেগেছিল সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে ফের ককপিটে ফিরতে। আজ, পাকিস্তান থেকে মুক্তি পাবার কতদিন পর ফের নিজের ইউনিটে ফিরতে পারেন উইং কম্যান্ডার অভিনন্দন বর্তমান সেটা অবশ্য সময় বলবে। কিন্তু, নচিকেতার বিশ্বাস তিনি ফিরবেনই। কারণ তাঁর কথাতেই, ‘দিনের শেষে একজন পাইলটের হৃদয় পড়ে থাকে ককপিটেই।’
অভিনন্দন ফিরেছেন ভারতে… তিনি নিজের পোস্টেও ফিরবেন। কিন্তু যে সময়টা তিনি পার করেছেন, সে অভিজ্ঞতা একান্ত তাঁরই।bengali.oneindia. com:
সেনাদের জন্যই আমরা নিশ্চিন্তে ঘুমাই প্রতিদিন। তারাই আমাদের এক শান্তির অভ দিয়েছে।তাই তাঁদের স্যালিত। আমরা সেই বলেই বলীয়ান হয়ে গেয়ে উঠি…
ভারত আবার জগৎ সভায় শ্রেষ্ঠ আসন লবে…