কে বা কারা এই সাতোশি নাকামোতো? কোথায় থাকে তারা?
কৌতূহলের সাথে জ্ঞানের মাত্রা বাড়াতেও চোখ রাখতে হবে আজকের এই খবরে। সাতোশি নাকামোতো, নামটা কি চেনা ঠেকছে? যদি না হয় তবে আসুন জেনে নেই কারা এই সাতোশি নাকামোতো! কোথায় তাদের দেশ? তাদের দেশ সেই সুদূর জাপানে। জাপানের সাথে আমাদের দেশের সম্পর্ক ভারতবর্ষের স্বাধীনতার লগ্ন থেকেই ভীষণ আন্তরিক। স্বামী বিবেকানন্দ তাঁর “The Complete Works of Swami Vivekananda/Volume 5/Conversations and Dialogues/VI – X” গ্রন্থের “ Hinduism in Japan” প্রবন্ধে বলেছিলেন, ‘In my opinion, if all our rich and educated men once go and see Japan, their eyes will be opened.’ আমরা আমাদের জ্ঞানচক্ষু উন্মীলিনের জন্য আজ তাই চলুন জাপানের অচেনা এক অংশ নেড়ে চেড়ে দেখি। সাতোশি নাকামোতো এক ধরণের ছদ্মনাম যা এক বা একাধিক ব্যাক্তি দলগতভাবে ব্যবহার করেন।
আমরা সকলেই জানি জাপান প্রযুক্তিতে খুব উন্নত একটি দেশ। এরকম দেশে লেনদেনের প্রক্রিয়াও সাধারণ পদ্ধতি নির্ভর হবে না সেটাই অভিপ্রেত। প্রযুক্তির বরদান কম্পিউটার টেকনোলজি, আর সেই টেকনোলজি থেকে উদ্ভূত ডিজিটাল কারেন্সি। সাতোশি নাকামোতো ব্যাক্তি বা ব্যাক্তিগোষ্ঠীর মানুষেরা মিলে প্রথম আবিষ্কার করেন ব্লকচেন (Blockchain) ।
ডিজিটাল কারেন্সির প্রথম বিকেন্দ্রীকরণকে করেন সুদূরপ্রাসারি। এঁরাই আবিষ্কার করেন বিটকয়েন (Bitcoin)। কিন্তু এই বিটকয়েন আসলে কি? ২০০৭ সালে সাতোশি নাকামোতো ব্যাক্তি বা ব্যাক্তিগোষ্ঠীর মানুষেরা বিটকয়েন শুরুর প্রথম ধাপ রচনা করেন কোড বা সাংকেতিক ভাষা ব্যবহার করে।
২০০৮ সালের শেষের দিকে সংকেতলিপি রচনার বিদ্যার একটি মেইলিং তালিকাতে সংকেত মুদ্রাকে “বিটকয়েন (Bitcoin: A Peer-to-Peer Electronic Cash System)” বলে উল্লেখ করেন। ২০০৯ সালে UK এর একটি পত্রিকায় প্রকাশিত হয় “জেনেসিস ব্লক অফ বিট কয়েন (genesis block of bitcoin)” নামে যার মধ্যে ছিল ৫০টি বিটকয়েন। বিটকয়েন সফটওয়্যারকে আরও উন্নত করতে ২০১০ সালের মাঝামাঝি নাগাদ সাতোশি নাকামোতো ব্যাক্তি বা ব্যাক্তিগোষ্ঠীর মানুষেরা অন্যান্য ডেভেলপারদেরও সাহায্য নিয়ে থাকেন।
এভাবে আসতে আসতে বিটকয়েন গোষ্ঠীর সদস্য সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে থাকে। বিটকয়েনের দ্বারা আয়ও হয় ক্রমবর্ধমান গতিতে যা মাত্র দশ বছরেই মূল্যের নিরিখে ছাপিয়ে যায় বাকি সব ডিজিটাল কারেন্সিকে।২০১৭ সাল পর্যন্ত বিটকয়েন ইউ.এস ডলার ১৯ বিলিয়ন আয়ের মাধ্যমে উচ্চতর শিখরে অবস্থান করে এবং সাতোশি নাকামোতোকে বিশ্বের ৪৪তম ধনী ব্যাক্তি করে তোলে।
এ পর্যন্ত স্পষ্ট হলেও আসল ক্ষেত্রেই কুয়াশার মেঘ বিস্তৃত হয়ে আছে। সাতোশি নাকামোতো কি করেছেন এবং কেন তিনি আলোচনার শীর্ষে তা বোঝা গেল। কিন্তু কে এই সাতোশি নাকামোতো? আসল পরিচয় নিয়ে দ্বন্দ হওয়ার প্রধান কারণ সাতোশি নাকামোতর আসল পরিচয় নির্ভর করছে সংকেতলিপি রচনার বিদ্যা ও কম্পিউটার সায়েন্সের বিশেষজ্ঞতার উপর। এখনও পর্যন্ত আনুমানিক ১৭ জন সাতোশি নাকামোতো হওয়ার দাবি করেছেন আর এরা সবাই-ই জাপান বহির্ভূত অন্য দেশের নাগরিক।
হাল ফিনি (Hal Finney)
ক্যালিফোর্নিয়া নিবাসী এই ব্যাক্তি প্রুফ অফ ওয়ার্ক সিস্টেম কে পুনরায় ব্যাবহারের যোগ্য করে তোলেন। প্রথম বিটকয়েনের প্রাপক হিসেবে তাঁর নাম উঠে আসে। সাতোশি নাকামোতো ও হাল ফিনি দশ বছর ক্যালিফোর্নিয়ার টেম্পল সিটিতে পরবর্তীকালে থাকার সুবাদে জল্পনা করা হয় যে তিনিই সাতোশি নাকামোতো। কিন্তু ফিনি নিজেই সে কথা অস্বীকার করেন এবং বিবৃতি দেন তিনি সাতোশি নাকামোতো নন।
নিক জাবো (Nick Szabo)
নিক জাবো হলেন ইউনাইটেড স্টেটস্ এর বাসিন্দা। কম্পিউটার সায়েন্স ও ডিজিটাল কারেন্সি নিয়ে তাঁর কাজ যথেষ্ট প্রশংসিত হয়েছে। সংকেতলিপি রচনার বিদ্যা ও প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ নিয়ে তাঁর কাজ সাতোশি নাকামোতো হওয়ার জল্পনাকে বেশ খানিকটা উস্কে দেয়। অর্থনীতি বিশেষজ্ঞ ও লেখক ডমিক ফ্রিসবি (Domic Frisby ) এবং নাথানিয়েল পপার (Nathaniel Popper) দাবী করেন জাবোই হল আসল সাতোশি নাকামোতো। জাবো অবশ্য সে দাবী খারিজ করেন।
ডোরিয়ান সাতোশি নাকামাতো (Dorian Satoshi Nakamoto)
ইনি একজন জাপানি-আমেরিকান, যিনি ক্যালিফোর্নিয়াতে বসবাস করেন। ডোরিয়ান সাতোশি নাকামোতো একবার বিটকয়েনের সাথে তাঁর সমস্ত সূত্র নস্যাৎ করেন আবার কখনো তিনি বিটকয়েনের ব্যাপারে যে কোনও প্রশ্নের উত্তর দিতে আগ্রহী হন। কিছু বছর পর তিনি ডোরিয়ান নাকামোতো হওয়ার দাবী নাকোচ করে দেন এবং বলেন পূর্ববর্তী সব মেসেজ তাঁর অ্যাকাউন্ট হ্যাক হওয়ার দরুন হয়। বিভিন্ন রকম বক্তব্যের কারণে জল্পনা থেকেই যায়।
এছাড়াও যাদের সাতোশি নাকামোতো হওয়ার গুজব রয়েছে তারা হল – ক্রেগ রাইট, জসুয়া ডেভিস, ভিলি লেহডনভারতা, নীল কিং, ভ্লাদিমির অক্সম্যান, চার্লস ব্রাই, শিনিচি মোসিজুকি, গেভিন অ্যান্ড্রেসন, জেদ ম্যাক্লেব, রস আলব্রিচ, অ্যাডম ব্যাক, ইলন মাস্ক প্রভৃতি। এমনকি ২০১৯ সালে সাংবাদিক ইভান র্যাটলিফ ড্রাগ ডিলার পল দি রাউক্সকে সাতোশি নাকামোতো বলেও দাবী করেন।
আরও বিশদে জানতে চোখ রাখুন এই লিঙ্কে – https://www.economist.com/blogs/economist-explains/2015/11/economist-explains-1 এরকম আরও কিছু খবর পেতে পড়তে থাকুন বাংলা খবর।
[…] […]
[…] […]
[…] […]
[…] […]
[…] […]