সন্তান নেবার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার সঙ্গে সঙ্গে অনেকে গর্ভধারণ করার চেষ্টা শুরু করেন। আশা করেন পরবর্তী ঋতুচক্রেই সফল হবেন, কিন্তু অনেক সময়েই তা হয়না। বিশেষজ্ঞদের মতে তখনই ভেঙ্গে পড়বেন না। হতাশ হবেন না। মনে রাখবেন এই প্রাণ সৃষ্টির পদ্ধতি কিন্তু বেশ শর্তসাপেক্ষই। সন্তান হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে যে ৫টি উপায়ে, সেগুলো জেনে নিন।
গর্ভধারণের সম্ভাবনা বৃদ্ধির মূল মন্ত্র বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে যৌনজীবন পালন । তবে যান্ত্রিক যৌনজীবন কিন্তু সন্তান উৎপাদনের ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে। নারী পুরুষের আভ্যন্তরীণ বোঝাপড়া ও ভালবাসার নির্যাসেই পূর্ণতা পায় একটি ভ্রূণ। তাকে নিজের শরীরে বহন কড়া থেকে শুরু করে পৃথিবীর আলো দেখানো এবং যথাযথ লালন- এসবকিছুর পরিকল্পনার স্বপ্নই মিশে থাকে সন্তানধারণে। সন্তান উৎপাদনের ক্ষেত্রে নারী ও পুরুষ দুজনের ভূমিকাই সমান গুরুত্বপূর্ণ, একথা ভুললে চলেনা। পুরুষরা এই সময়ে তাঁর জীবনসঙ্গিনীকে সমস্তভাবে সহায়তা করলে তবেই এই যৌথ স্বপ্নপুরন সম্ভব হয়।
যে যে শর্তগুলো মেনে চললে গর্ভধারণের সম্ভাবনা বাড়ে, সেগুলো জেনে নিন।
১। চেষ্টা করুন তিরিশের আগে
নারীর বয়স অনুযায়ী সন্তানধারণের শারীরিক শর্ত বদলায়। কর্মব্যস্ততার যুগে আধুনিক নারীর পক্ষে অনেক সময়েই তিরিশ বছর বয়েসের আগে বিবাহ এবং সন্তানধারণ সম্ভব হয় না। কিন্তু বৈজ্ঞানিক ভিত্তিতে পঁচিশ থেকে আঠাশই কিন্তু প্রথমবার সন্তানধারণের পক্ষে আদর্শ সময়। যদি তিরিশ পরবর্তী সময়ে সন্তানধারণ পরিকল্পনা করেন তবে অবশ্যই আগে একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিন এবং নির্দিষ্ট জীবনযাপন প্রণালি মেনে চলুন।
২। ঋতুচক্র অনুযায়ী সম্ভবনাময় দিন হিসেব করে নিন
স্বাভাবিক ঋতুচক্রে রজস্রাব শুরু হবার দুসপ্তাহ আগেই কিন্তু গর্ভধারণের উপযুক্ত সময়। আঠাশদিনের মধ্যে সেই সম্ভাবনাময় সপ্তাহের দিনগুলিতে পরিতৃপ্ত সঙ্গম করুন। যদি ঋতুচক্র অনিয়মিত হয় তবে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে আপনার সম্ভাবনাময় উর্বর দিনগুলি জেনে নিন। প্রয়োজনে পিরিয়ড ট্র্যাকারের মতো অ্যাপগুলি ইন্সটল করে নিজের ঋতুচক্র অনুযায়ী ডিম্বাণু বপনের দিন হিসেব করে নিন।
৩। হাসিখুশি থাকুন দুজনেই
অযথা দুশ্চিন্তা না করে আনন্দে থাকুন। কাজকর্মে ব্যস্ত থাকলেও ফাঁক ফোকরে পর্যাপ্ত বিস্রাম নিতে এবং নিজেকে সময় দিতে ভুলবেন না। নিজের প্রতি অবজ্ঞা এবং অবহেলা অনেকসময় সন্তানধারণে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। মন ভাল রাখার জন্য বই পড়ুন, গান শুনুন, সিনেমা দেখুন কিংবা যা ভাললাগে করুন। প্রয়োজনে কিছুদিন ছুটি নিয়ে দুজনে ঘুরে আসুন। স্বামী স্ত্রীর মধ্যে সহমর্মিতা এবং বন্ধুত্ব অখন্ড রাখা জরুরী। মনে রাখবেন, কৃত্রিম সাহচর্য ও সম্পর্কের জটিলতা সন্তানধারণের পক্ষে হানিকর।
৪। কোন কোন খাবার খাবেন জেনে নিন
অপুষ্টি জনিত কারণে বহু নারী সন্তানধারণে অক্ষম হন। সন্তান গর্ভে এলেও অনেকসময় কেবলমাত্র প্রয়োজনীয় পুষ্টিকর উপাদানের অভাবেই গর্ভপাত হয়ে যায়। নারী এবং পুরুষ উভয়্নেরই জননক্ষমতা বাড়ানোর জন্য প্রয়োজন নিয়মিত পুষ্টিকর খাদ্যগ্রহণ। প্রতিদিনের ডায়েটে অবশ্যই বেশি রাখুন প্রোটিনের পরিমাণ। সেই সঙ্গে সহজপাচ্য খাবার খান, অতিরিক্ত তেলমশলা যুক্ত খাবার শরীরের নানা ক্ষতি করার পাশাপাশি প্রয়োজনীয় পুষ্টি সংগ্রহে বাধা দেয়। সঙ্গে খান প্রচুর ফলমূল এবং ভিটামিন সমৃদ্ধ শাকসবজি। ডাল ও শুঁটি জাতীয় খাবার, ব্রকলি, অ্যাভোকাডো , রসুন প্রভৃতি নিয়মিত খেলে তা নারী ও পুরুষের দেহে উর্বরতা শক্তি বৃদ্ধি করে। খাদ্যতালিকায় ভাজাভুজি বাদ দিয়ে শুধুমাত্র পুষ্টিকর খাদ্য রাখলে দ্রুত সন্তানধারণে সফল হতে পারেন।
৫। সমস্ত রকমের ক্ষতিকারক নেশার থেকে দূরে থাকুন
যেকোন রকম নেশাদ্রব্যের সংসর্গ ত্যাগ করুন। নেশার আসক্তি সন্তানধারণে প্রবলভাবে বাধা দেয়। পুরুষের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত ধূমপান বা মদ্যপান লিঙ্গ শিথিলতা এবং বীর্যহীনতার মতো সমস্যা তৈরি করে, সেক্ষেত্রে সন্তানধারণ একপ্রকার অসম্ভব হয়ে পরে। নারীর ক্ষেত্রে অধিক ধূমপান এবং মদ্যপানের অভ্যেস গর্ভাশয়ে জটিলতা সৃষ্টি করে। জরায়ুতে সিস্ট এবং অনিয়মিত ঋতুচক্রর মতো সমস্যা থাকলে নেশাদ্রব্যের ব্যবহার বন্ধাত্য সৃষ্টি করতে পারে।
বিয়ের সঙ্গে সঙ্গেই সন্তানধারণের পরিকল্পনা থাকলে অনেক সময়েই প্রতিকূলতার সম্মুখীন হতে হয়। দাম্পত্যের নিয়মিত ছন্দ বজায় রেখে গর্ভধারণ করতে স্বাভাবিক সময় লাগতে পারে চারবছর। কারও কারও আরেকটু বেশি। তাই শুরুতেই অধীর না হয়ে পরস্পরের প্রতি আস্থা রেখে সুন্দর জীবন শুরু করুন।
সন্তানের আগমন কামনা করলে দম্পতির উভয়কেই কিছু সতর্কতা মেনে চলতে হবে। নতুন প্রাণকে স্বাগত জানানোর আনন্দে বদলে ফেলুন নিজেদের অভ্যস্ত জীবনপ্রনালি। মনে রাখবেন, সন্তানকে সুস্থভাবে পৃথিবীর আলো দেখানর দায়িত্ব একা নারীর নয়, পুরুষেরও এতে সমান দায়িত্ব রয়েছে। উভয়ে মিলে হাতেহাত রেখে সন্তানধারণের ক্ষেত্রে যত্নশীল হন এবং উপরিউক্ত নিয়মাবলী মেনে চলুন।