আজ বাড়ি থেকে বেড়িয়েছিলাম, সবার মতো। আমার গায়েও নতুন জামা, পায়ে নতুন জুতো, সদ্য কেনা সব সামগ্রীর ভিড় শরীরে।
– ” পুজোটা কখন শুরু ঠাকুমা? ” , একটা বাচ্ছা মেয়ের গলা শুনে যেনো একটা অচেনা ঘোর কাটলো আমার।
– ” পুজো তো শুরু হয়ে গেছে দিদিভাই, সেইজন্যই তো তুমি নতুন জামা পরেছো। “
নাতনি – ঠাকুমার কথোপকথনে আমি একটু কান পাতলাম।
- – ” কই? মায়ের হাত তো খালি। মা তো সাজেনি এখনো! “
- – ” এখনো মহিষাসুর আসেনি তো, তাই মা এখন শান্ত। দুষ্টু মহিষাসুর এলে তারপর মা অস্ত্রধারণ করবেন। “
- – ” ওই তো মহিষাসুর, বুক দিয়ে রক্ত পড়ছে। শুধু শুধুই রক্ত পড়ছে যে। একিকরে সম্ভব? “
- – ” ওই যে সিংহ মামা আছে যে। কামড়ে দিয়েছে তো। “
- – ” আচ্ছা ঠাকুমা, সিংহ মামাই তো মেরে দিতে পারতো দুষ্টু মহিষাসুরকে। মা দুর্গার তো প্রয়োজনই ছিলনা। “
- – ” শোনো মেয়ের কথা। মহিষাসুর তো খুব দুষ্টু। সিংহ মামা কি একা পারে? “
- – ” হম্। আচ্ছা মহিষাসুর যখন এতটাই দুষ্টু তাহলে মহিষাসুরেরও পুজো হয় কেনো? “
- শক্ত কথা সহজ করে বুঝিয়ে বলাই যেনো বড়দের কাজ। কতই না কল্পনা, কতই না জানা অজানা দেশে ছোটদের মন ঘুরে বেড়ায়। ৫০ – ৬০ বছরের দীর্ঘ কঠিন বাস্তবের সংঘর্ষে ক্ষয়ে ক্ষয়ে আর কি কল্পনার অস্তিত্ব থাকে? আমরা যখন অভিভবক হই, তখন আমাদের উত্তরসূরিরা আমাদেরকে আবার খুঁজে এনে দেয় সেই হারিয়ে যাওয়া কল্পনা গুলোকে। তাই হয়তো মানুষ দ্বিতীয়বারের জন্য অভিভাবক হওয়ার স্বপ্ন দেখে। সেই নেশাতেই হয়তো নিয়তির আয়ুক্ষয় রোধ করতে সক্ষম হয় কিছুদিনের জন্য। অজান্তেই হয়তো ভুল করে বলে ফেলে, ” নাতি – নাতনির মুখটা দেখে যেতে পারবো তো? ” অজান্তেই হয়তো কিছুটা চাপ দিয়ে ফেলেন তাদের নতুন গৃহবধূদের।
- এসব ভাবছি হঠাৎ করে দেখি সামনে কেউ নেই। শেষ উত্তরটা তো শোনা হলনা। তাহলে কি ঠাকুমার ঝুলি থেকে আর কোনো সরল গল্প বেরোলো না? সত্যিই তো কিভাবেই বা বেরোবে? দুষ্ট আর দুষ্ট বুদ্ধির দমনকে কিভাবে সরলরুপে পৃথক করা যায় ? কিভাবে পাপী আর পাপকে পৃথক করবে সরল ভাষায়? তাহলে কি উত্তর পেলনা সেই ছোট্ট মেয়ে? হার মেনে নিল অভিজ্ঞতা? একটু এগিয়ে গিয়ে দেখলাম ঠাকুমা একা দাঁড়িয়ে। বাচ্ছা মেয়েটি নেই আশেপাশে। আমি আর ধরে রাখতে পারলাম না নিজেকে।
- – ” শেষ প্রশ্নের উত্তরে তুমি কি বললে ঠাকুমা? “
- ঠাকুমা হাসলেন।
- – ” আমি দিদিভাই কে বললাম, তুমি যখন দুষ্টুমি করো তখন তোমার বাবা তোমায় বকে তো? তাবলে কি তোমায় আর কেউ ভালোবাসবে না? “