নিজস্ব সংবাদদাতা: গতকাল বাংলার তৃতীয় দফার নির্বাচনে দক্ষিণ ২৪ পরগণার ১৬ টি কেন্দ্রে একসাথে ভোট হয়েছে। শাসক-বিরোধী সকলেই মানতে বাধ্য যে, এই ১৬টি আসনই বহুদিন ধরে তৃণমূলের দুর্ভেদ্য গড়। নির্বাচনের সময় এখানে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের চোখ এড়িয়ে একটা গাছের পাতাও নড়েনা, সেখানে ভোট অন্যদিকে পড়া তো অনেক দূরের ব্যাপার! অভিষেক যদি এই গড়ের অবিসংবাদিত সম্রাট হন, চাণক্য ছিলেন তবে শোভন চট্টোপাধ্যায়। পরিষ্কার করে বললে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের একসময়ের আদরের ‘কানন’।

কিন্তু নিয়তির খেল এমনই তৃণমূল থেকে বেরিয়ে বিজেপিতে যখন সদ্য জমাট বাঁধতে শুরু করেছে তাঁর অস্তিত্ব, তখনই তিনি ব্রাত্য হলেন। পছন্দমতো পদ না পেয়ে দল ছেড়ে অন্তরালে চলে গেলেন। গোটা বাংলা তাকিয়ে ছিল যুবরাজ আর চাণক্যের লড়াই দেখবে বলেই, অথচ সেই শোভনের অনুপস্থিতিতেই ভোটনাট্য মঞ্চস্থ হচ্ছে। আর তিনি, দিদির ‘কানন’ যেন কাব্যে উপেক্ষিত হয়েই থেকে গেলেন। এটাই কি পাওনা ছিল তাঁর?

২০১৯-এর লোকসভা ভোটের আগে থেকেই শোভনের সঙ্গে তাঁর পুরনো দলের সম্পর্কের সুতো ছিড়ে যায়। শোভন ক্রমেই বিজেপির দিকে পা বাড়ান, সঙ্গে ছিলেন বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়। বিজেপি শোভনকে পেয়ে হাতে চাঁদ পেয়েছিল, কারণ দক্ষিণ চব্বিশ পরগণায় সিঁদ কাটতে তাঁর চেয়ে সুযোগ্য ব্যক্তি আর কে হতে পারত! কিন্তু দলের সঙ্গে তাঁদের (শোভন-বৈশাখী) সম্পর্কটা ছিল বরাবরই ঠাণ্ডা। তবে শোভন নিজেকে প্রমাণও করেছিলেন। ভোটের মুখে দলকে তিনি একরকম পাইয়ে দিয়েছিলেন ডায়মন্ড হারবারের বিদায়ী তৃণমূল প্রার্থী দীপক হালদারকে। তাঁর হাত ধরেই দক্ষিণ গমনের ঝোঁক বিজেপির।

কিন্তু তালিকা সামনে আসতেই দেখা গেল বিজেপির প্রার্থী তালিকায় শোভনের নাম নেই। শোনা যায়, শোভন লড়তে চেয়েছিলেন রত্না চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে মুখোমুখি। কিন্তু দল তাঁকে না দাঁড় করিয়ে ‌বেহালা পূর্বে প্রার্থী করে রাজনীতিতে নবাগতা অভিনেত্রী পায়েল সরকারকে। শোভন বিষয়টি ভালো ভাবে নেননি। তাই অন্য কোথাও দাঁড়ানো তো দূরে থাক, দলের সঙ্গে সম্পর্কটাই পুরোপুরি ছিন্ন করে ফেলেন। অতএব একরকম ঠাঁইহারা হলেন তিনি। সঙ্গত কারণেই প্রশ্ন ওঠে, শোভন কী বিজেপিতে পুরোপুরি ব্যবহৃত হয়ে গেলেন? একা হয়ে যাওয়ার নিয়তিটা কেন এড়াতে পারলেন না তিনি!

এমনটা হোক তা চায়নি তাঁর শত্রু শিবিরও। ছেলে সপ্তর্ষি মায়ের হয়ে সর্বাত্মক প্রচার করেছেন। কিন্তু বারংবার সংবাদমাধ্যমে বলেছেন, “বাবা রাজনীতির লোক, চাইব তিনি রাজনীতিতেই থাকুন, বিরোধী দলে থাকলেও আপত্তি নেই।” তাঁর প্রতি বিশ্বাস অটল বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়েরও। এই আপাত সন্ন্যাসকেই চিরকালীন ধরে নিতে রাজি নন তিনি। বারংবার বলছেন, “ওঁর ধর্মই রাজনীতি। অনেকেই যোগাযোগ রাখেন তাঁর সঙ্গে, যখন তখন ফিরতে পারেন রাজনীতির ময়দানে।” কিন্তু কোন ঘরে ফিরবেন! কালীঘাটের পুরোনো বাড়িতে আজ কি আর তাঁর জায়গা হবে? নাকি হেস্টিংসে বিজেপির অফিসে ফিরে যাবেন তিনি? জল কোনদিকে গড়ায়, তা দেখতেই উদগ্রীব বাঙালি।