যোগাযোগের উন্নতি
ভূমিসংস্কার
এই দেশের উন্নয়নে ব্রতী হয়েছেন এমন শাসকের কথা মনে পড়লে শের শাহের নাম মনে পড়তে বাধ্য। আসলে বিগত হাজার বছরের রাজনৈতিক ইতিহাস ঘেঁটে দেখলে আমরা জানতে পারব এমন অনেক শাসকের কথা, যাঁদের শাসনকাল হয়তো তেমন দীর্ঘমেয়াদী নয়, অথচ এদেশের নানান উন্নতি সাধনে বিশেষ অবদান রেখে গিয়েছেন যাঁরা। শেরশাহ সূরী ছিলেন এমনই এক রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব। এঁর শাসনকাল ছিল মাত্র পাঁচ বছর, অথচ ভারতবর্ষের মানুষ আজও এই সুলতানকে মনে রেখেছে তাঁর কীর্তির জন্যেই।
যে সময়ের কথা বলা হচ্ছে তা আজ থেকে পাঁচশ বছরেরও বেশি পুরনো এক সময়ের কথা । বাবর দিল্লি অধিকার করার পর তাঁর পর সিংহাসনে বসেন তাঁর পুত্র হুমায়ুন। এই হুমায়ুনকে চৌসা আর বিলগ্রামের যুদ্ধে পর্যুদস্ত করে দিল্লি তথা ভারতবর্ষের পরিচালনার ভার নেন বিহারের এক সামান্য জায়গিরদারের ছেলে ফরিদ খান। পরবর্তীকালে যাঁর নাম হয় শের শাহ। মাত্র পাঁচ বছর রাজত্ব করবার পরই এক দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয় শের শাহের। অথচ ভারতবর্ষের নানান ক্ষেত্রে নানান সংস্কার সাধনের জন্য আজও এদেশের মানুষ শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করে তাঁকে।
যা করে গিয়েছেন শের শাহhttps://www.britannica.com/biography/Sher-Shah-of-Sur
ভুমিসংস্কার আইন– এটা যে সময়ের কথা তখন সারা দেশের জমি জরিপ বা ভুমি সংস্কারের কোনও আইন ছিল না। ফলে অরাজকটা চলত অতিরিক্ত পরিমাণে। শাসক হিসেবে শের শাহই প্রথম ভূমির রাজস্ব সংক্রান্ত সমস্যার সমাধান করে কবুলিয়ত এবং পাট্টার প্রথার প্রচলন করেন। এই নিয়ম পরবর্তী কয়েক শতাব্দী জুড়ে মান্য করা হত।
সেনাবাহিনীর উন্নতি-– শের শাহের আগের কোনও শাসকই শাসকগোষ্ঠীর সেনা ও ঘোড়ার কোনও নির্দিষ্ট হিসেব রাখার বন্দোবস্ত করে উঠতে পারেননি। ফলে যেকোনো সময় যে কেউ সেনাবাহিনী ছেড়ে চলে যেতে পারত, নতুনভাবে যোগদানও হত আচমকাই ।শের শাহ ই প্রথম তাঁর সেনাকে শনাক্ত করার জন্য ‘হুলিয়া’ এবং ঘোড়া চিহ্নিত করার জন্য ঘোড়ার গায়ে বিশেষ ধরনের ছাপ মারার প্রথা চালু করেন যাকে বলা হয় ‘দাগ’।
মুদ্রা– বাজারের অর্থনীতি নিয়ন্ত্রনে রাখার জন্য ‘দাম’ নামের নির্দিষ্ট এক মুদ্রা চালু করেছিলেন শের শাহ। এইখান থেকে তাঁর দেখানো পথ ধরেই পরবর্তী সময়ে বেচাকেনার জন্য নির্দিষ্ট মুদ্রার ব্যবহার কঠোরভাবে শুরু করা হয়।
যোগাযোগ– শের শাহের সবচাইতে উল্লেখযোগ্য কীর্তি হল পূর্ববঙ্গের সোনারগাঁ থেকে পেশোয়ার পর্যন্ত ১৪০ কিলোমিটার দীর্ঘ সড়ক নির্মাণ। এটি আজও রয়েছে এবং মানুষ আজও এই পথে চলাচল করে। এই সড়ক গ্র্যান্ড ট্রাঙ্ক রোড নামে বিখ্যাত আজ। এছাড়াও ঘোড়ার পিঠে ডাক যোগের সমস্যা অনেকখানি নির্মূল করেন ক্ষণস্থায়ী এই সুলতান।
পরগণা বিভাগ– শাসনকার্যের সুবিধার জন্য সমস্ত সাম্রাজ্যকে সাতচল্লিশটি সরকার এবং প্রত্যেক সরকারকে কয়েকটি পরগণায় ভাগ করে দিয়েছিলেন শের শাহ। এই প্রত্যেক পরগণায় আইন শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য, ভুমি তথা রাজস্বের সমস্ত ক্রিয়াকলাপ পরিচালনার জন্য কয়েকজনকে নিয়োগ করা হয়েছিল। এছাড়াও ছিলেন শিকদার, মুন্সেফ, আমিন, কানুনগো প্রমুখেরা।
ফলে আমাদের বুঝতে অসুবিধা হবার কথা নয় যে ভারতবর্ষের শাসনব্যবস্থা নিপুণভাবে ঢেলে সাজাতে চেয়েছিলেন শের শাহ। মাত্র পাঁচ বছরেই তিনি যা করে দেখিয়েছেন, তা অনেক শাসক কয়েক দশকেও করে উঠতে পারেন না। তাঁর অবদান ও কীর্তির জন্য আমরা আজও তাঁর কাছে ঋণী!https://banglakhabor.in/2020/11/10/%e0%a6%b9%e0%a7%8d%e0%a6%af%e0%a6%be%e0%a6%b0%e0%a6%bf-%e0%a6%aa%e0%a6%9f%e0%a6%be%e0%a6%b0-%e0%a6%8f%e0%a6%b0-%e0%a6%9a%e0%a6%b0%e0%a6%bf%e0%a6%a4%e0%a7%8d%e0%a6%b0%e0%a7%87%e0%a6%b0%e0%a6%be/