২০২০ টা আর দশটা বছরের মত শুরু হলেও আবহ কিন্তু আর দশটা বছরের মত কাটেনি। বিশ্ব জুড়ে ত্রাস সৃষ্টিকারী নাম করোনা ভাইরাস। অনেক নতুন শব্দের সাথে পরিচিত হয়েছি আমরা… লকডাউন, কোভিড পজিটিভ, আনলক-১, stay at home, কোয়ারেন্টাইন ইত্যাদি।
স্বন্ত্রস্ত জীবন কেটে চলেছে আজও পর্যন্ত। কী জানি আগামীতে করোনা কী রূপ নেবে। আমারা সবাই প্রতীক্ষায় কবে ভ্যাকসিন আসবে…?
কথায় আছে, ‘একে রামে রক্ষে নেই, তার সুগ্রীব দোসর।’
এক করোনাতেই ত্রাহী ত্রাহী রব চারিদিকে। নভেল করোনা ভাইরাস… মানুষের স্বাভাবিক গতি রোধ করে দিয়েছে। তারই মাঝে অন্য আরো নতুন নতুন রোগ মনের অন্তঃস্থলে ভীতির সঞ্চার করছে।
বেশ কিছু রোগের কোনো হদিশই পাওয়া যায়নি এখনো..
১. ২০২০ র জুলাই… করোনা আবহে মানুষের মনে ভীতি সঞ্চার করতে বীরভূমের মাড়গ্রামে এল এক অজানা রোগ।
উপসর্গ: বমি ও হাল্কা জ্বর।
আক্রান্ত: শিশুরা। মাত্র পনের দিনে পাঁচ জন শিশু মারা গিয়েছে।
২. ২০২০ ডিসম্বরের ৫ তারিখ থেকে অন্ধ্রপ্রদেশের এলুরুতে এক অজানা রোগ হানা দিয়েছে।
উপসর্গ: খিঁচুনি, মাথা ঘোরা, বমি বমি ভাব, মুখে ফেনা ওঠা আর অজ্ঞান হয়ে যাওয়া।
আক্রান্ত: ইতিমধ্যেই কমপক্ষে ৪৬৭ জন আক্রান্ত হয়েছেন, যাদের মধ্যে ১২ বছরের নীচে প্রায় ৪৫ জন শিশু রয়েছে।
‘ এইমস’, ‘ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ নিউট্রিশন’, ‘ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ কেমিক্যাল টেকনোলজি ও সেন্টার ফর সেলুলার অ্যান্ড মলিকিউলার বায়োলজি’ থেকে প্রতিনিধি দল এলুরু গিয়ে আক্রান্তদের রক্তের নমুনা সংগ্রহ করেন। আক্রান্তদের রক্তে মিলেছে সীসা ও নিকেল।
এই অজানা রোগের কারণে ইতিমধ্যেই ৪৬ বছরের এক প্রৌঢ়ের মৃত্যু হয়েছে।
এমন কিছু ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়া ঘটিত রোগ আছে, যা করোনা আবহে নতুন করে ভয়ের সঞ্চার করছে সবার মনে। আপনি কী জানেন সে নাম? আসুন জেনে নিই সেই সমস্ত রোগের ব্যাপারে…
১. আতঙ্কের নতুন নাম লাসা
করোনা আবহে ফেব্রুয়ারিতে হঠাতই নাইজেরিয়ার তিনটি প্রদেশে লাসা আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
আক্রান্তT:- মৃত্যু প্রায় একশ। আক্রান্তের সংখ্যাও পাঁচশ ছাড়িয়েছে।
সংংক্রামক:- এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ছে মূলত নেংটি
ইঁদুর থেকে। ইঁদুরের প্রস্রাব দ্বারা দূষিত খাদ্য এবং ইঁদুরের স্পর্শ করা খাবার থেকে এই রোগ ছড়ায়। প্রধানত মলমূত্র ও গৃহস্থালীর জিনিসপত্রের মাধ্যমে মানুষের শরীরে প্রবেশ করে।
উপসর্গ: জ্বরের সাথে সাথে মাথাব্যথা, মুখে ঘা, মাংসপেশিতে ঘা, ত্বকের নীচে রক্তরক্ষণ, হৃদযন্ত্র বা কিডনি অচল হয়ে যেতে পারে। এই জ্বরে আক্রান্ত হলে ২১ দিন পর্যন্ত পর্যবেক্ষণে রাখা হয়। সংস্পর্শ থেকেই এই রোগ ছড়ায়। এছাড়াও আক্রান্ত ব্যক্তির শরীর থেকে অন্য কারও শরীরে রক্ত বা রক্তজাতীয় পদার্থের সঞ্চালনের মাধ্যমেও এই রোগ ছড়াতে পারে।
১৯৬৯ সালে নাইজেরিয়ার লাসা শহরে এ রোগটি প্রথম দেখা দিয়েছিল।
২. সোয়াইন ফ্লুতে কম্পমান বাংলা:-
মার্চে যখন হু করোনাকে মহামারী ঘোষণা করছে, ঠিক তখনই পশ্চিমবঙ্গের মণিপুরে
সোয়াইন ফ্লু মারণ আতঙ্ককে দ্বিগুণ করে তুলল।
আক্রান্ত:- পশ্চিমবঙ্গে এই জ্বরে আক্রান্ত ২ শিশু সহ কমপক্ষে ১৩ জন।
সংক্রামক:- এইচ ১ এন ১ ভাইরাস থেকে সোয়াইন ফ্লু হয়। এই ভাইরাস শূকরের শ্বাসনালীকে সংক্রমিত করে। এবং শূকরের মাধ্যমে মানুষের শরীরে ছড়িয়ে পড়ে।
উপসর্গ:- জ্বর, মাথা ব্যথা, গলা ও সারা শরীর ব্যথা, শ্বাসকষ্ট, ক্ষিদে না পাওয়া, শরীরে আলস্য বোধ করা এবং ওজন কমে যাওয়া। যাঁদের রোগ প্রতিরোধক ক্ষমতা কম এমন মানুষদেরই আগে আক্রমণ করে এই মারণ জ্বর। এছাড়া হাঁপানি এবং হৃদরোগের সমস্যায় ভোগা মানুষজনেরও
এই ধরণের অসুখ থেকে বিশেষভাবে সাবধান থাকা উচিত।
২০০৯-২০১০ এ পৃথিবী ব্যাপী এই রোগ ছড়িয়ে পড়ে।
৩. হান্টা ভাইরাস:-
করোনা ভাইরাস চিনেই উদ্ভূত গোটা পৃথিবীকে নাজেহাল করে দিয়েছে৷ এরই মাঝে চিনে নতুন মারণ ভাইরাসের দাপট৷ এবারের ভাইরাসের নাম হান্টা৷
আক্রান্ত:- এক জন মারা গেছে মার্চেই।
সংক্রামক:- ইঁদুরের মল থেকে এই রোগ ছড়ায়৷ এই রোগেও শেষমেষ মানুষ ফুসফুসে সংক্রমণ হয়েই মারা যায়৷
উপসর্গ:- জ্বর, সর্দি, পেটের গণ্ডগোল, দুর্বলতা ও মাথা ঘোরা।
৪. এস এফ টি এস (SFTS):
২০২০ সালের জুন মাসে নাগাদ বিজ্ঞানীরা চিনে এক নতুন ফ্লু ভাইরাসের সন্ধান পান।
আক্রান্ত:- চিনে মৃতের সংখ্যা ৭ ও আক্রান্ত ৩৭ জন।
সংক্রামক:- এস এফ টি এস নামে এক ভাইরাসের প্রভাবে এই রোগটি হচ্ছে। যার সংক্রামক এক ধরনের পোকা। পোকা থেকে এই ভাইরাস মানব শরীরে এলেও, মানব শরীর থেকে অন্য মানব শরীরে এটি ছড়াতে বেশি সময় লাগবে না।
উপসর্গ:- জ্বর থাকে, থাকে কাশি। এছাড়াও রক্তাল্পতার সমস্যা দেখে হতে থাকে।
২০১১ তে চিনেই এর প্রথম সংক্রমণ হয়।
৫. ইবোলা
২০২০ র মে মাস নাগাদ কঙ্গো গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্রে ইবোলা ভাইরাসজনিত রোগের নতুন প্রাদুর্ভাব ঘটেছে।
আক্রান্ত:- এ বছর মে মাসে ওয়াঙ্গাটাতে ছয় জনের ইবোলা সনাক্ত হয়েছে, যার মধ্যে চারজন মারা গেছেন। ইবোলা ভাইরাসে মৃত্যু হার ৫০ শতাংশের মতো।
সংক্রামক:- বানর অথবা ফলাহারী বাদুড় এর রক্ত বা শরীর রসের সংস্পর্শ থেকে ছড়ায়। মানব শরীরে একবার সংক্রমণ ঘটলে মানুষের মধ্যে এই রোগ ছড়িয়ে পড়তে পারে।
উপসর্গ:- জ্বর, গলা ব্যথা, পেশীর ব্যথা, এবং মাথা ধরা। সাধারণত এর পর গা গোলানো, বমি, এবং ডাইরিয়া হয়, সঙ্গে লিভার ও কিডনীর কর্মক্ষমতা হ্রাস পেতে থাকে। এই জায়গাতে এসে কিছু মানুষের রক্তপাতজনিত সমস্যা শুরু হয়।
১৯৭৬ সালে এ ভাইরাসের অস্তিত্ব আবিষ্কৃত হয়।