পশ্চিমী ঝঞ্ঝা কেটে যেতেই ফের শীত পড়েছে বঙ্গে। করোনা আবহে খুব একটা প্রয়োজন ছাড়া বাইরে না বেরোলে বেশ ভালোই লেপের তলায় শুয়ে বসে কাটিয়ে দিচ্ছে বঙ্গবাসী। আপনিও হয়তো ব্যতিক্রম নন। কিন্তু এই শীতে ঠিকঠাক পরিমাণ মতো জল খাচ্ছেন তো? শীতকালে জলের থেকে আমরা সকলেই কমবেশি দূরত্ব বজায় রেখে চলি। স্নানটাও গরম জল না হলে নিতান্ত বাদ পড়ে। তবে পানীয় জলের সঙ্গে কিন্তু আপোষ করা যাবে না একেবারেই।
শীত হোক বা গ্রীষ্ম, একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষের শরীরে প্রতিদিন কমপক্ষে ৪ লিটার জল প্রয়োজন। কিন্তু শীতকালে অনেকেই জলের তেষ্টা ঠিকমতো বুঝতে পারেন না। তাই জল খাওয়ার পরিমাণ অনেক ক্ষেত্রেই বেশ কমে যায়। অথচ এই শীতকালেই কিন্তু শরীরে জলের চাহিদাটা সবথেকে বেশি থাকে। হ্যাঁ, গরমকালের থেকেও বেশি। কারণ শীতে শরীর শুষ্ক থাকে, এবং তার উপর লেপ, কম্বল, কাঁথা কিংবা সোয়েটার প্রভৃতি গরম জামা শরীরকে ভিতর থেকে গরম করে তোলে। টুকিটাকি উৎসবের মরশুমে শীতে ভালো মন্দ খাওয়া দাওয়াটাও নেহাত বাদ পড়ে না। ফলে বারবার জল খাওয়ার দরকার হয়। তা নইলে কিন্তু গ্যাস অম্বল বদহজম আর অ্যাসিডিটির মতো সমস্যায় ভুগতে হবেই আপনাকে।
এছাড়াও শীতে কেক, পায়েস কিংবা পিঠে পুলির কথাও এক্ষেত্রে বিশেষ ভাবে উল্লেখযোগ্য। পৌষ পার্বণে দুধ আর নারকেলের তৈরি পিঠে পুলি শরীরে হজম করানোর জন্য জলের প্রয়োজন প্রচুর। শীতকালে আপনার শরীরে জলের ঘাটতি হচ্ছে কিনা, তা ঠিক কোন কোন লক্ষণ দেখলে বুঝবেন জানেন কি? আসুন দেখে নেওয়া যাক জল না খেলে কী কী হতে পারে।
মাথা ধরা ও ক্লান্তিভাব:
মাথা ধরা কিংবা ক্লান্তিভাবকে আমরা শারীরিক অসুস্থতা হিসেবে তেমন আমল দিই না ঠিকই। কিন্তু নির্দিষ্ট সময়ের জন্য শরীরকে রীতিমতো কাবু করায় মাথা ধরার জুড়ি নেই। শীতকালে সকলের প্রায়শই মাথা ধরে, আমরা ভেবে নিই ঠান্ডায় ঘোরাঘুরি করার ফল। কিন্তু আসলে শরীরে জলের ঘাটতির অন্যতম লক্ষণ এগুলি। এছাড়াও চোখ ব্যথা, শরীরে অস্বস্তি থাকেই। গলাও শুকিয়ে যায় বারবার।
খিদে না থাকা:
নির্দিষ্ট সময়ে খিদে না পেলে এড়িয়ে যাবেন না একেবারেই। এর ফল হতে পারে মারাত্মক। আপনার কি দুপুরে বা রাতে খিদে পাচ্ছে না? মনে হচ্ছে সব খাবার গলার কাছে আটকে আছে? এটা আর কিছুই নয়, আপনার শরীরে জলের অভাবের লক্ষণ। এই সমস্যা দূর করতে বারবার হালকা গরম জল খান।
মুখে গন্ধ:
সকালে উঠেই মুখে দুর্গন্ধ হয়? তারপর সারাদিনই কমবেশি গন্ধ থাকে? ঠিকমতো জল না খেলে অনেক সময় এমন হয়ে থাকে। স্যালাইভা তৈরিতে ও মুখের মধ্যে জমে ওঠা ব্যাকটেরিয়া তাড়াতে জলের খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে। তাই দিনে অন্তত ৫ লিটার করে জল খান।
কোষ্ঠকাঠিন্য:
কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা কম জল খাওয়ার অন্যতম রোগলক্ষণ। কোলন জল শোষণ করে এবং তা শরীরের কঠিন বর্জ্য জমা রাখার প্রধান স্থান। আপনি জল না খেলে মল থেকেও তা জল শোষণ করে নেবে, এর ফলে মল হয়ে পড়বে কঠিন। তাই কোষ্ঠকাঠিন্যে জলের কোনো বিকল্প নেই। এমনকি পেট খারাপেরও অন্যতম কারণ জলের ঘাটতি। শরীরের যাবতীয় বিষাক্ত পদার্থ জল বের করে দেয়। তাই জল না খেলে ক্ষতিকর পদার্থ বেরিয়ে যেতে পারে না।
ত্বক শুকিয়ে যাওয়া:
জল না খেলে ত্বক শুকিয়ে শুকিয়ে যাবে, এ আর নতুন কি? শীতকালে এমনিতেই চামড়া শুকনো থাকে। বাতাসে আর্দ্রতা কম থাকায় এইসময় জলের প্রয়োজন হয় আরো বেশি করে। নিয়মিত তেল ক্রিম ব্যবহার করার পরেও যদি দেখেন আপনার ত্বকের ঔজ্জ্বল্য ফিরছে না, বুঝতে হবে জলের ঘাটতি হয়েছে।
মূত্রে সমস্যা:
শরীরে জলের ঘাটতি হলে মূত্রত্যাগেও আসবে সমস্যা। শীতকালে জল কম খেলে মূত্রস্থান শুকিয়ে যায়। ফলে সারাক্ষণ একটা চুলকানির ভাব থাকে। এর ফলেই হয় নানা ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণও।
তাই শীতকাল বলে জলে অরুচি রাখবেন না। শরীরকে সুস্থ আর তরতাজা রাখতে প্রচুর জল খান আর সম্পূর্ণ সুস্থ থাকুন।