ফলের উপকারিতা সারাবছরই টের পাওয়া যায় কিন্তু এমন কিছু কিছু ফল রয়েছে যেগুলি কোন একটি বিশেষ ঋতুতে পাওয়া যায় এবং সেই ফলগুলি আমাদের স্বাস্থ্যের পক্ষে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। শীতকালে আমাদের শারীরিক ক্ষমতা অনেক সময় হ্রাস পেতে দেখা যায়। সর্দি কাশি জ্বর গলাব্যথা বিভিন্ন রকম রোগ-বিরোগ লেগেই থাকে। এই সব থেকে নিজের শারীরিক ক্ষমতাকে রক্ষা করার জন্য শুধু মাত্র খাওয়া দাওয়াই নয় সঠিক ফলাহারও অনেক কাজে দেয়। তবে চলুন আর দেরি না করে সেই দশটি শীতকালীন ফলের কথা জেনে নেওয়া যাক।
১. জাম্বুরা বা মুসাম্বি লেবুঃ
জাম্বুরা বা মুসাম্বি লেবু একটি শীতকালীন ফল। এই ফল সাধারণত ডিসেম্বর থেকে জানুয়ারির মধ্যে হয়, এই ফলে ভিটামিন সি ভরপুর থাকে। ভিটামিন-সি আমাদের শরীরে অনেক রকম ভূমিকা পালন করে যেমন- ভিটামিন-সি আমাদের শরীরের হাড়কে মজবুত করে তুলতে সাহায্য করে, আমাদের ইমিউনিটি সিস্টেম কে সব সময় সব চালু রাখতে সাহায্য করে, শরীরের যেকোনো ঘা বা ক্ষত কে তাড়াতাড়ি সারিয়ে তুলতে সাহায্য করে। অর্থাৎ বোঝাই যাচ্ছে এই ফলটির গুণগত মান অনেকাংশেই বেশি তাই এই ফলটি আমাদের রেগুলার খাবারের তালিকায় থাকাটা অতি আবশ্যক।
২. নাশপাতিঃ
নাশপাতি শীতকালীন ফলের মধ্যে একটি। এই ফলটির বিশেষত্ব হলো, এই ফলটি ভরপুর ফাইবারে ঠাসা। ফাইবার আমাদের শরীরের পক্ষে খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি উপাদান। ফাইবার আমাদের কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে, ফাইবার এমনকি হজম শক্তি বৃদ্ধিতেও কার্যকরী। ফাইবার আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ কাজে সাহায্য করে তা হল অতিরিক্ত ওজন কম করতে। অর্থাৎ যদি আপনার শরীরের অতিরিক্ত মেদ ঝরানোর প্রবল ইচ্ছে থাকে তবে কিন্তু আপনার খাদ্য তালিকায় নাশপাতি একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
৩. কমলালেবুঃ
কমলালেবু শীতকালীন ফলের মধ্যে একটি অন্যতম ফল। শীতকালে কমলালেবু খাওয়ার অনেক গুণাগুণ রয়েছে তা আমরা সবাই জানি। শুধুমাত্র গুনাগুন বিচার করেই নয় কমলালেবুর আধিপত্য এক আলাদা রকমে্মের। শীতকালে পিকনিক হোক বা ছোটখাটো ট্যুর, কমলালেবু ছাড়া বাঙালির ঘোরাঘুরি একপ্রকার অসম্পূর্ণই বলা চলে। কমলালেবুতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি রয়েছে। ভিটামিন সি যে আমাদের স্বাস্থ্যের জন্যে কতটা গুরুত্বপূর্ণ তা তো আমরা সবাই জানি। কিন্তু কমলালেবুর আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হলো ফাইটোকেমিক্যালস যা শরীরকে ক্যান্সারের আক্রমণ থেকে বাঁচায় এবং কিডনির সমস্যাতেও এর জুড়ি মেলা ভার। অর্থাৎ কমলালেবু শুধুমাত্র মন ভালো করার জন্যই নয় আমাদের স্বাস্থ্যের পক্ষেও খুবই উপকারি।
৪. পাকা পেঁপেঃ
পাকা পেঁপেও শীতকালীন ফলের মধ্যে আরেকটি অন্যতম ফল। শীতকালে পাকা পেঁপে খাওয়ার প্রচুর উপযোগিতা রয়েছে। এই ফলে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও মিনারেল রয়েছে। অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট আমাদের হার্টের পক্ষে খুবই উপকারী। মিনারেল সাধারণত আমাদের কোলোনের জন্য খুবই কার্যকর একটি উপাদান। তাই পাকা পেঁপে শীতকালীন ফল হিসেবে আমাদের স্বাস্থ্যের পক্ষে খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি ফল।
৫. বেদানাঃ
বেদানার গুনাগুন সম্পর্কে আমরা সবাই অবগত। তবে শীতকালীন ফল হিসেবে বেদনার গুরুত্ব কিন্তু অপরিসীম। তাই খাদ্য তালিকায় বেদানার মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ ফল রাখা অতি আবশ্যক। বেদানায় মোটামুটি 26 রকমের মিনারেলস, প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও সাথে ফাইবার ও রয়েছে। বেদানা শরীরে আয়রনের ঘাটতিও দূর করতে সক্ষম। তুলনামূলক যাদের শরীরে রক্তের পরিমাণ কম তাদের ডাক্তাররা বেদানা খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। এই ফলটি যদিও এখন 12 মাসেই আপনি দেখতে পাবেন কিন্তু এই ফলটির ফলন আগে শীতকালেই দেখতে পাওয়া যেত। তবে বেদানার গুনাগুন আপনাকে সারা বছর বিভিন্ন রোগের থেকে রক্ষা করবে। তাই এই গুরুত্বপূর্ণ ফলটিকে নিজের খাবারের তালিকায় অবশ্যই রাখবেন।
৬. আঙ্গুরঃ
শীতকালীন ফলের মধ্যে আঙ্গুরও আর একটি অন্যতম ফল। আঙ্গুর খেতে ও যে রকম সুস্বাদু ঠিক সেরকমই এর প্রচুর গুনাগুন রয়েছে। আঙ্গুরে পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন সি রয়েছে। আমরা জানি ভিটামিন-সি আমাদের বিভিন্ন রকম ক্ষত বা ঘা সারিয়ে তুলতে খুবই উপকারী। এছাড়াও সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হলো পটাশিয়াম। আঙ্গুর পটাশিয়ামের একটি জৈবিক উৎস। আঙ্গুর খাওয়ার ফলে মানুষের শরীরে পটাশিয়ামের ঘাটতি থাকে সেটি সঠিকভাবে পূরণ করে। পটাশিয়ামের ঘাটতি জন্য মানুষের শরীরে ব্লাড প্রেসার, হার্ট অ্যাটাক এবং স্ট্রোকের আশঙ্কা বৃদ্ধি পায়। আঙ্গুর শরীরে পটাশিয়ামের মাত্রা ঠিক করার সাথে সাথেই এইসব রোগগুলি থেকে প্রতিরক্ষা করে। এছাড়াও আঙ্গুরে প্রচুর পরিমাণে মিনারেল থাকার কারণে বহু চিকিৎসক উচ্চ ব্লাড প্রেসারে ভোগা রোগীকে নিজের খাদ্যতালিকায় আঙ্গুর রাখার পরামর্শ দেন। তাহলে বুঝলেন আঙ্গুর আমাদের জন্য কতটা উপকারী।
৭. কুমকোয়াটসঃ
কুমকোয়াটস এই ফলটির বিশেষত্ব হলো এটি এই ফলটির চাষ শুরু হয় গরমকালে ও ফলটির ফলন হয় শীতকালে। এটি একটি ভীষণ রকমের সুস্বাদু ফল। এই ফলের মধ্যে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি, এ ও বি রয়েছে। এই ফলটি স্বাস্থ্যের পক্ষে যথেষ্ট ভাল তবে এই ফলটির একটি সমস্যা হল এটি অন্যান্য ফলের তুলনায় একটু বেশি দামি। তবে যদি আপনি ফলটি আপনার খাদ্য তালিকায় রেগুলার বেসিসে রাখতে পারেন, তাহলে এই ফলটি না শুধু আপনার মুখের স্বাদ বইকি পাল্টে দেবে বরং এটি আপনার স্বাস্থ্য কেও উন্নত করবে। আবার লোকমুখে শোনা যায় কুমকোয়াটস নাকি বাড়িতে রাখা অত্যন্ত শুভ হয়। তাহলে কি ভাবছেন একবার এনেই দেখুন।
৮. স্টার ফ্রুট বা কামরাঙাঃ
স্টার ফ্রুট বা কামরাঙা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এই ফলটি দেখতে পাওয়া যায়। এই ফলটির বিশেষত্ব হলো এটির আকার। এই ফলটি কিছুটা দেখতে স্টার এর মত। ফলটির স্বাদ বেশ অন্য রকম। ফলটি খেতে যতটাই না ভালো ঠিক ততটাই এর গুরুত্ব অপরিসীম। কামরাঙায় প্রচুর পরিমাণে ফাইবার ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে। যা আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী। এছাড়াও এই ফলের আরো একটি বিশেষত্ব হলো এটি ওজন কমানোর জন্য খুবই উপকারী। তাই যদি ভাবেন যে কি খেয়ে ওজন কমাতে পারবেন তাহলে বলব এই ফলটি আপনার রেগুলার ডায়েটে অবশ্যই রাখুন।
৯. প্যাশন ফ্রুটঃ
প্যাশন ফ্রুট এর একটি প্রধান বিশেষত্ব হল এটি দেখতে বেশ অন্যরকম। প্যাশন ফ্রুট এর খোলসটা পুরো বেগুনি রংয়ের হয় ও ভিতরে ছোট ছোট দানার মতো মাংস থাকে। এই ফলটির গুণগতমান কিন্তু অনেকটাই বেশি। এই ফলে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন বি ও এ মজুত থাকে। ভিটামিন ডি ও ই আমাদের শরীরের পক্ষে খুবই উপকারী। ভিটামিন ডি আমাদের শরীরের হারকে মজবুত রাখতে সাহায্য করে ও ভিটামিন ই আমাদের ইমিউন সিস্টেমকে রোগ প্রতিরোগ এর হাত থেকে রক্ষা করে। এই ফলটি বিশেষভাবে বাচ্চাদের খাদ্যতালিকায় রাখার জন্য খুবই উপকারী। বাচ্চাদের শরীরের ইমিউনিটি সিস্টেম কে অনান্য রোগ থেকে প্রতিরোধ করার জন্য পাশন ফ্রুট একটি অন্যতম ফল।
১০. ক্রানবেরিঃ
ক্রানবেরি সাধারণত একটি বেরি বিশেষ ফল। ক্রানবেরিতে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে যার কারণেই এই ফলটিকে সুপারফুড বলা হয়ে থাকে। দেখতে ছোট হলেও এই ফলটির গুরুত্ব কিন্তু অপরিসীম। এই ফলটিতে এত পরিমাণে নিউট্রিয়েন্ট ও মিনারেলস থাকে যা আমাদের ইউরেনারিকে বিভিন্ন রকম ইনফেকশন থেকে রক্ষা করে এছাড়াও বিভিন্ন রকম হার্টের রোগ যেমন স্ট্রোক হার্টঅ্যাটাক প্রভৃতি থেকেও আমাদের শরীরকে রক্ষা করে। অর্থাৎ এই ফল খাদ্যতালিকায় রাখাটাও খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তবে ক্রানবেরি একটি অসুবিধা বলতে এটি সব জায়গায় পাওয়া যায় না।
ফলের গুনাগুন শুধুমাত্র শীতকাল বলেই নয় সারা বছরই আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী। দিনে অন্তত একটি ফল আমাদের খাদ্য তালিকায় রাখা খুবই প্রয়োজন। তাহলে কি ভাবছেন উপরের যেকোন ফল আপনি আপনার রোজকার খাদ্য তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করুন এবং আমাদের অবশ্যই জানান যে আপনার কোন কোন ফল গুলি ভালো লাগে। সাথে সাথেই এটিও জানান যে আপনি কোন ফলগুলি রোজকার খাবারের তালিকায় রাখেন।